ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Tuesday, August 22, 2017

অনন্যা নামটা রোহানের কাছে অনেক প্রিয়।

রোহানের আজ মন খারাপ!
কোন কথা বার্তা নেই হঠাৎ করেই রোহানের বাবা
ওর
বিয়ে ঠিক করে ফেলছেন। রোহানের সেই
ছোট বেলা
থেকে কত স্বপ্ন অনন্যা নামের কোন মেয়ে
সাথে প্রেম
করে বিয়ে করবে। অনন্যা নামটা রোহানের
কাছে অনেক
প্রিয়।কিন্তু কি আর করা যাবে অনন্যা নামের কোন
মেয়ে হয়তো রোহানের কপালে নেই । আর
রোহানের
বাবা উনি খুব রাগি মানুষ যা বলেন তাই করেন। উনার কথা
অমান্য করার মত সাহস রোহানদের পরিবারের
কারোরি
নেই। রোহানের কিছুদিন হল লেখাপড়া শেষ
হয়েছে ।
এখনো কোন জব টব পায়নি। আপাতত রোহান
একটা
কোচিং এ পড়ায় এটা দিয়েই কোন রকম ভাবে চলে
যায়
ওর। রোহানের বাবা রোহান কে শহর থেকে
গ্রামে
আনছেন মিথ্যা কথা বলে। রোহানের বাবাও ভাল
করে
জানেন সত্যিটা বললে রোহান কখনোই আসতো
না।
অতঃপর....
রোহান ওর রুমে একা বসে আছে ইতিমধ্যেই
রোহানের
ছোটবোন প্রত্যাশার আগমন গঠলো রোহানের
রুমে...
< আচ্ছা প্রত্যাশা তুই কি ঐ মহিলার নাম টা জানিস ?
( রোহান)
< কোন মহিলার কথা বলতেছো ভাইয়া?( প্রত্যাশা)
< ঐ যে মহিলা টা । (রোহান)
< আরে ভাইয়া কোন মহিলার কথা বলতেছো আমি
তো
কিছুই বুঝতেছি না? ( প্রত্যাশা )
< আরে ঐ যে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছে
আব্বা।
< ও তাই বলো, তো ভাইয়া ঐ
মহিলার নাম দিয়ে তুমি কি করবা...?( প্রত্যাশা)
< আরে কোথাকার কোন মেয়েকে বিয়ে
করবো আমি তা
জানতে হবে না আমার?( রোহান)
< হইছে তোমার না জানলেও চলবে, যা জানার
আব্বাই
জানে। আমি শুধু শুনছি ভাবি নাকি
পর্দানশীন মহিলা।(প্রত্যাশা)
< বিয়ে করার আগেই তোর ভাবি হয়েগেছে..?
(রোহান)
< হুম আজ হোক আর কাল হোক ঐ মহিলাকে
তো ভাবি বলে ডাকতেই হবে। (রোহান)
< ঐ যা ভাগ এইখান থাইক্যা তোর ভাবি
ডাকতে হবে না । (রোহান)
< হুম ঐ টা কাল - ই বুঝা যাবে ভাইয়া ( প্রত্যাশা )
< ঐ তোরে যাইতে কইছি না?? যা এইখান থাইক্যা ।
রোহান কি করবে ও বুঝতে পারছেনা। ছোট
বেলা থেকেই
রোহান কত স্বপ্ন দেখেছে ও অনন্যা নামের
কোন মেয়ের
সাথে প্রেম করবে কিন্তু তা আর হয়নি কখনো।
তারপর
রোহান চিন্তা করলো প্রেম করতে পারিনি তো
কি
হইছে ?? অনন্যা নামের কোন মেয়ে কে
বিয়ে তো করতে
পারবো। কিন্তু এখন দেখছি অনন্যা নামের কোন
মেয়ে
কে বিয়ে করাটাও হলো না। এখন রোহানের
বিরহের গান
শুনা ছাড়া আর কোন কিছু করার নেই । দেখতে
দেখতে
বিয়েটা হয়ে গেল। এখন বাসর ঘরে প্রবেশের
পালা.....
রোহানের বাসর ঘরে ডুকতে ইচ্ছা করছেনা । কি
আর করা
যাবে? বাসর ঘরে তো যেতেই হবে ঐ দিকে
আবার বউ
বসে আছে রোহানের অপেক্ষায় ...
অতঃপর রোহান বাসর ঘরে প্রবেশ করলো। তখন
বউ এসে
রোহান কে সালাম করলো এবং বললো চলেন
নামাজ টা
পড়ে নেই। রোহান বলল আমার পড়ার ইচ্ছা নাই
আপনি
পড়ে নেন।
<আচ্ছা আপনি আমায় আপনি করে বলতেছেন
কেনো.....?
( বউ)
< তো কি করে বলবো আপনাকে...? (রোহান)
< নিজের বউ কে কেউ আপনি করে বলে..?
(রোহান)
< ওহ! প্রথম প্রথম তো তাই এমন হচ্ছে ২য় বারে
ঠিক হয়ে
যাবে।(রোহান)
< ২য় বারে ঠিক হয়ে যাবে মানে ! (বউ)
< কিছুনা আপনি বলেন কি বলতে হবে
আপনাকে ???
(রোহান)
< নাম ধরে এবং তুমি বলে বলতে হবে। (বউ)
< ওকে কিন্তু আমি তো তোমার নাম জানিনা.?
< ওকে এটা কোন ব্যাপার না আমি অনন্যা এখন মনে
থাকবে তো????(বউ)
< এই তুমি সত্যি বলতেছো!!! তোমার নাম অনন্যা
..????
(রোহান)
< হুম মিথ্যা বলবো কেনো?? এটা শুনেই রোহান
অনন্যা কে
জড়িয়ে ধরলো,আজ রোহানের মনে হচ্ছে
আল্লাহ
তায়ালা মনে হয় রোহানের মনের কথা শুনছেন
এতদিন পর।
রোহান আরো শক্ত করে অনন্যা কে জড়িয়ে
ধরলো হঠাৎ
রোহানের ফোনটা বেজে উঠলো...........
..............
অতঃপর......
কি হলো অনন্যা কই গেলো.!!!!? আর অনন্যার
যায়গায় এই
বালিশ টা কইথাইক্যা আসলো আমি তো কিছুই বুঝতে
পারছি না!!!!
অতঃপর বুঝতে পারলাম বিষয়টা, হে আল্লাহ তুমি আমার
মনের কথা শুনতে পাইয়্যাও অনন্যার যায়গায় বালিশ ধরাই
দিলা.....???

Sunday, August 20, 2017

বিবাহিত অথবা অবিবাহিত, সবার পড়া উচিৎ। (সংগ্রহিত)




এক রাতে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পর আমার
স্ত্রি প্রতিদিনের মত আমাকে নিয়ে রাতের খাবার
খেতে বসলো। তখন আমি তার হাতটি জড়িয়ে ধরলাম
এবং বললাম, "আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।"
সে আমার চোখের দিকে শান্ত ভাবে তাকালো...
আমি বুঝতে পারছিলাম
না যে তাকে আমি কথাগুলো কিভাবে বলবো। কিন্তু
তাকে আমার জানানো উচিৎ যে, আমি তার সাথে আর
সংসার করতে চাই না। আমি খুব ধীরে,
শান্তভাবে বিষয়টি তুললাম। সে আমার কথায়
কোনরকম বিরক্ত প্রকাশ
না করে ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করল, "কেন?"
আমি তার প্রশ্ন এড়িয়ে গেলাম। এতে সে রেগে গেলো।
টেবিলের উপর থেকে সবকিছু ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার
করে বললো, "তুমি একটা কাপুরুষ।" সেই রাতে আমাদের
আর কথা হল না। সে সারা রাত নিঃশব্দে কাঁদলো।
হয়তো ও বুঝার চেষ্টা করছিল কেন
আমি এমনটা চাইলাম। কিন্তু
আমি তাকে বলতে পারিনি যে, আমি আর
একটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছি।
আমি নিজেকে খুব অপরাধী মনে করেছিলাম, আর ঐ
অপরাধবোধ নিয়েই আমি ডিভোর্স লেটার লিখলাম,
যেখানে উল্লেখ ছিল, আমাদের বাড়ি, আমাদের গাড়ি,
এবং আমার ব্যবসায়ের ৩০% এর মালিক সে হবে। তার
হাতে কাগজটি যাওয়ার
সাথে সাথে ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেললো।
যে মানুষটার সাথে আমি ১০ টা বছর সংসার করলাম,
আজকে আমি তাকেই আর চিনি না। তার এতগুল সময়,
সম্পদ, এবং শক্তি নষ্ট করার জন্য আমার খুব খারাপ
লাগছিলো, কিন্তু এখন আমি আর তাকে ফেরত
নিতে পারবো না কারণ, আমি ফারহানা কে
ভালোবাসি।
অবশেষে সে আমার সামনে চিৎকার
করে কান্না করে দিল, যা আমি আশা করছিলাম। আমার
কাছে তার কান্না একরকম মুত্তির চিহ্নের মত
লাগছিল। তখন মনে হচ্ছিল, এবার আমি আসলেও
সফল।
পরের দিন, আমি অনেক দেরী করে বাসায় ফিরি।
দরজায় ঢুকতেই দেখি, ও ডাইনিং রুমে টেবিলে কিছু
লিখছিল। আমি আর খাবার খেতে গেলাম
না এবং সরাসরি ঘুমাতে চলে গেলাম, কারণ সারাদিন
ফারহানাকে নিয়ে অনেক ঘুরেছি এবং এখন
আমি ক্লান্ত। আমি ঘুমিয়ে গেলাম। যখন আমার ঘুম
ভাঙ্গলো, তখনো ও লিখছিল। আমি গ্রাহ্য করলাম
না এবং আবার ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে সে আমাকে কিছু শর্ত দিল, যেখানে লেখা
ছিল,
"আমি তোমার থেকে কিছুই চাইনা, কিন্তু
আলাদা হয়ে যাওয়ার আগে শুধু এক মাস সময় চাই। এই
একমাসে আমরা জতটুকু সম্ভব স্বাভাবিক জীবন জাপন
করবো, কারণ আর একমাস বাদেই আমাদের ছেলেটার
পরীক্ষা। ওর যাতে কোন ক্ষতি না হয় তাই
আমি এমনটা চাইছি।"
আমি মেনে নিলাম। কিন্তু সে আমার কাছে আরও কিছু
চেয়েছিল... ও আমাকে মনে করতে বললো, বিয়ের দিন
আমি তাকে যেভাবে কোলে করে নিয়ে ঘরে ঢুকে
ছিলাম।
ও আমাকে অনুরোধ করলো, যাতে এই একমাস
আমি তাকে প্রতি সকালে কোলে করে আমাদের শোবার
ঘর থেকে বাইরের দরজা পর্যন্ত নিয়ে যাই।
আমি ভাবলাম, ও পাগল হয়ে গেছে। যাই হোক, এই শেষ
সময়ে যাতে আর ঝামেলা না হয়, তাই আমি তার অনুরোধ
মেনে নিলাম।
আমি ফারহানাকে আমার স্ত্রির দেয়া শর্তগুলোর
কথা বলেছিলাম। শুনার পর সে অট্ট
হাসিতে ফেটে পড়লো, যা খুবই অযৌক্তিক
লাগলো আমার কাছে। তখন ফারহানা আমার স্ত্রির
উপর ঘৃণা এবং রাগ নিয়ে বললো, "সে যতই
ছলনা করুক আর মায়া কান্না দেখাক, তাকে ডিভোর্স
নিতেই হবে।"
আমাদের বিবাহবিচ্ছেদের উদ্দেশ্য স্পস্টভাবে প্রকাশ
হওয়ার পর থেকে আমার স্ত্রি এবং আমার মধ্যে আর
কোন শরীরী যোগাযোগ ছিল না। যাই হোক, যেদিন
আমি প্রথম তাকে কোলে তুললাম, তখন আমরা দুজনেই
খুব বিব্রতবোধ করছিলাম। আমাদের ছেলেটা পেছন
থেকে তালি বাজাচ্ছিল আর বলছিল, "আব্বু
আম্মুকে কোলে তুলেছে, কি মজা কি মজা।" ছেলেটার
কথা শুনে কেন জেন আমার খারাপ লাগতে শুরু করলো।
শোবার ঘর থেকে ড্রইংরুম, ড্রইংরুম থেকে বাইরের
দরজা পর্যন্ত আমি ওকে কোলে করে নিয় গেলাম।
সে তার চোখ বন্ধ করলো এবং ফিস ফিস করে বললো,
"আমাদের ছেলেটাকে আমাদের ডিভোর্সের কথাটা
কখনও
জানতে দিওনা।" আমি ওকে দরজার
বাইরে নামিয়ে দিলাম। সে তার কাজে চলে গেল, আর
আমি অফিসে চলে গেলাম।
দ্বিতীয় দিন, আমরা দুজনেই খুব স্বাভাবিক আচরন
করলাম। সে আমার বুকে মাথা রাখলো। আমি তার চুলের
গন্ধ পাচ্ছিলাম। আমার মনে হল, আমি কতদিন এই
মানুষটাকে একটু ভালোভাবে দেখিনি, বুঝার
চেষ্টা করিনি। দেখলাম, ওর কত বয়স হয়ে গেছে।
চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে গেছে... চুলে কাঁচাপাকা রঙ
ধরেছে। কিছু মুহূর্তের জন্য মনে হল আমি তার
সাথে কি করেছি।
চতুর্থ দিন, যখন আমি তাকে কোলে তুললাম, তখন
বুঝতে পারলাম আবার আমাদের অন্তরঙ্গতা ফিরে
আসছে।
এটাই সেই মানুষ, যে তার জীবনের ১০ টা বছর আমার
সাথে পার করেছে। পঞ্চম এবং ষষ্ঠ দিন আমার
আবারো মনে হল যে, আমাদের সম্পর্কটা আবার
বেড়ে উঠছে। আমি এসব বিষয়ে ফারহানাকে কিছুই
বলিনি।
যতই দিন যাচ্ছিল, ততই খুব সহজে আমি আমার
স্ত্রিকে কোলে তুলতে পারতাম। সম্ভবত, প্রতিদিন
কোলে নিতে নিতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। একদিন
সকালে বাইরে যাওয়ার জন্য সে পছন্দের কাপড়
খুঁজছিল। প্রায় অনেকগুলো কাপড় সে পরে দেখল,
কিন্তু একটাও তার ভালো লাগছিলো না। সে স্থির
হয়ে বসলো এবং দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললও, "আমার
সব গুলো কাপড় ঢিলে হয়ে গেছে...।" তখন
আমি বুঝতে পারলাম সে অনেক শুকিয়ে গেছে এবং এ
জন্যই আমি তাকে খুব সহজে কোলে তুলতে পারতাম।
হঠাৎ এটা আমাকে খুব আঘাত করলো... সে তার
মনে অনেক কষ্ট চাপা দিয়ে রেখেছে। মনের অজান্তেই
আমি আমি ওর কাছে যাই এবং ওর মাথায় হাত দেই। ঐ
মুহূর্তে আমাদের ছেলেটাও চলে এল এবং বললও, "আব্বু,
আম্মুকে কোলে তুলার সময় হয়েছে।" আমার
স্ত্রি ছেলেটাকে ইশারায় কাছে আসতে বলল
এবং তাকে কিছুক্ষণের জন্য খুব শক্ত
করে জড়িয়ে ধরল। আমি অন্য দিকে তাকালাম, কারণ
আমার ভয় হচ্ছিল, এই শেষ মুহূর্তে জেন আমার
সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর
আমি তাকে কোলে নিলাম। শোবার ঘর থেকে ড্রইং রুম,
ড্রইং রুম থেকে বাইরের দরজা পর্যন্ত
তাকে নিয়ে গেলাম। সে তার হাত
দিয়ে আলতো ভাবে আমার গলা জড়িয়ে ছিল। আমিও
তাকে খুব হাল্কাভাবে কোলে নিয়ে ছিলাম... ঠিক
জেন
বিয়ের প্রথম দিনের মত।
কিন্তু তার এই এত হাল্কা ওজন আমাকে অনেক কষ্ট
দিয়েছিল... প্রায় অনেক আগে যেদিন
আমি তাকে কোলে নিয়েছিলাম, সেদিন
তাকে নিয়ে কিছু দূর হাটতেই আমার অনেক কষ্ট
হচ্ছিলো। আমাদের ছেলেটা স্কুলে চলে গেছে।
আমি আমার স্ত্রিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
আমি বুঝতে পারিনি যে, আমাদের
মধ্যে এতটা অন্তরঙ্গের অভাব ছিল। এ কথা বলেই
আমি অফিসে চলে গেলাম। অফিস থেকে ছুটি নিয়েই
বেরিয়ে গেলাম। চলে গেলাম সোজা ফারহানার
বাসায়।
সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উপরে উঠে গেলাম। আমি খুব
তাড়াহুড়ো করছিলাম, ভয় পাচ্ছিলাম যাতে আমার মন
আবার পরিবর্তন হয়ে যায়। ফারহানা দরজা খুলতেই
আমি তাকে বললাম, "ফারহানা, আমাকে মাফ করে
দিও...
আমি আমার স্ত্রির সাথে ডিভোর্স চাইনা।"
ফারহানা আমার দিকে খুব অবাক হয়ে তাকাল এবং
আমার
কপালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "আচ্ছা তুমি ঠিক
আছো তো?? তোমার কি জ্বর আসছে??" আমি ওর হাত
আমার কপাল থেকে সরালাম এবং আবারো বললাম,
"ফারহানা, আমি ওকে ডিভোর্স দিতে চাই না।
তুমি পারলে আমাকে মাফ করে দিও। আমাদের
বৈবাহিক
সম্পর্কটা হয়তো বিরক্তিকর ছিল, কারণ
আমরা আমাদের জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্ত
গুলোকে মুল্য দেইনি, কিন্তু এর মানে এই
না যে আমরা কখনো একে অপরকে ভালোবাসিনি।
কিন্তু এখন আমি বুঝি যে, যেদিন
আমি তাকে বিয়ে করেছিলাম, সেদিন
আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যে মৃত্যু পর্যন্ত
আমি তার সাথে থাকবো।" তখন ফারহানা আমাকে খুব
জোরে একটা চড় মারলো এবং আমার মুখের উপর
দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে চিৎকার করে কান্নায়
ভেঙে পড়লো। আমি বাসার নিচে নেমে এলাম
এবং চলে আসলাম। পথেই একটা ফুলের দোকান পেলাম
এবং একটা ফুলের তোড়া কিনলাম আমার স্ত্রির জন্য।
আমাকে দোকানদার জিজ্ঞেস করলো, "স্যার কার্ডের
উপর কি লিখবো?" আমি একটু মৃদু হাসলাম
এবং লিখতে বললাম, "আমি প্রতিদিন
সকালে তোমাকে কোলে নিব... আমার মৃত্যু পর্যন্ত"
ঐ দিন সন্ধ্যায় আমি বাসায় ফিরি, আমার হাতে ফুলের
তোড়া, আমার চেহারায় সুখের হাসি, আমি সোজা
আমার
শোবার ঘরে চলে যায় এবং দেখি আমার স্ত্রি আর
নেই। সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে... সারা জীবনের
জন্য
চলে গেছে... যেখান থেকে আর কখনো ফেরা সম্ভব না।
আমার স্ত্রির ক্যান্সার ছিল, অথচ
আমি ফারহানাকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে,
এদিকে কোন খেয়ালই করিনি।
সে জানতো যে সা মারা যাচ্ছে... কিন্তু
সে আমাকে বুঝতে দেয়নি, কারণ আমাদের ছেলের
পরীক্ষা ছিল এবং আমাদের ডিভোর্স
হয়েছে এটা জানলে আমাদের ছেলেটার মন-
মানষিকতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সে মারা গেলে আমাদের আর
আলাদা হয়ে বেঁচে থাকতে হবে না। সে আমার ছেলের
কাছে প্রমান করে দিয়ে গেল, আমি খুব
ভালো স্বামী ছিলাম, যে তার স্ত্রির অনেক খেয়াল
করতো।
সম্পর্কের এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো আসলেও অনেক
গুরুত্বপূর্ণ। এই বড় রাজপ্রাসাদ, গাড়ি, সম্পত্তি,
টাকা এগুলো সব কিছুই ভালো থাকার পরিবেশ
তৈরি করে কিন্তু নিজেরা কোন সুখ দিতে পারে না।
তাই কিছু সময় বের করুন আপনার স্বামী বা স্ত্রির
জন্য। তার বন্ধু হন। এবং কিছু কিছু ছোট ছোট
মুহূর্ত তৈরি করুন যা আপনাদের সম্পর্ককে আরও
কাছের করবে। কারণ, এটাই সত্য "পরিবার
পৃথিবীতে সব চাইতে দামি।" আপনি যদি এখন কোন
সম্পর্কতে নাও থাকেন, তারপরেও দ্বিতীয় বারের মত
অথবা তার চাইতেও বেশী চিন্তা করুন, কারণ
এখনো দেরী হয়ে যায় নি... এখনো অনেক সময় আছে।

আপনি যদি এই পোস্টটি না শেয়ার করেন,
তাতে কোনই সমস্যা নেই।
কিন্তু যদি শেয়ার করেন,
তাহলে হয়তো আপনি একটি সম্পর্ক আবার
জোড়া লাগাতে পারেন। জীবনে অনেক মানুষই
বুঝতে পারে না যে, তারা সফলতার কত কাছাকাছি
আছে।
collected

Saturday, August 19, 2017

আম্মু আছে বাসায় তোর ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরাই দিবে ওহহহ শাশুড়িটা এমন ভীলেন টাইপের কেন গো...

#টক_ঝাল_ভালোবাসা
তিশি...
- হুম শুনছি বলো...
- আই লাআআআআআআভভভ ইউ এত্ত গুলা...
- হ্যা জানি তো... তা এই ভর দুপুরে এমন তেল
দেয়ার কারণ কি শুনি...
- কোন কারণ নাই তো...
- কোন কারণ নাই এটা বললেও আমি বিশ্বাস করতে
পারছিনা ...
- কেন পারছো না??সত্যিইই আই লাআআআআভভভভ
ইউ এত্তগুলা......
- হু... আমি তো গাধী না ... অন্যসময় তো হাজার
বার বলতে বললেও তোর মুখ দিয়ে এই তিনটা
ওয়ার্ড বের হয়না আর এখন সেধে সেধে তাও
দুই বার বললি ... তোর মতলবটা কি শুনি?
- বিশ্বাস করো তিশি আমার কোন মতলব নাই... আমি
সত্যিইইই তোমাকে এত্তগুলা ভালোবাসি...
- তুই বলবি নাকি আমি ফোন রাখবো??
- এমন করো কেন তুমি সবসময়?...
- হু কি বলবি তাড়াতাড়ি বল...
- এভাবে ধমকালে কিন্তু বলবো না হুহ...
- ওলে বাবা ... না বললি যা ভাগ...
- সত্যি যাবো তো?...
- কই যাবি??
- তোমার কাছে...
- আম্মু আছে বাসায় তোর ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরাই
দিবে...
- ওহহহ শাশুড়িটা এমন ভীলেন টাইপের কেন
গো...
- কি বললি??- কিছুনা...


Like share followers page and subscribe my YouTube channel 

YouTube- https://www.youtube.com/channel/UCfe8n5UGJfqkCNijyYrvHLg/feed

Page- https://www.facebook.com/shimunrube/

Blogger- https://shimunrubel.blogspot.com/?m=1

Love story- https://m.facebook.com/lovestorybangli/


- আচ্ছা শোনো না...
- হ্যা শুনছি আপনি বলেন...
- খুব ক্ষুধা লাগছে।কিন্তু মেসের মিল খাইতে ইচ্ছা
করতেছে না...
- হোটেলে থেকে খেয়ে আসো...
- উহু... যদি পেট খারাপ হয়??
- সেই ভয়ে কি না খেয়ে থাকবে নাকি??ট্রাই
তোহ করো...
- নাহ রিস্ক নিতে চাইনা... আর ব্যাটারা না জানি কিভাবে
রান্না করে... তুমি একটু বুঝার চেষ্টা করো...
- কি বুঝবো?
- তুমি তো অনেক ভালো বিরিয়ানি রান্না করতে
পারো...
- তোহ!?
- আজকে একটু পর কোচিং এ ক্লাস নিতে যাবে
না ??
- হ্যা যাবো...
- হাতে তো এখনো দুইঘন্টা সময় আছে
তোমার....
- হ্যা আছে... তো??
- আর কোচিং সেন্টারটা আমাদের মেস পার হয়ে
যাইতে হয়...
- হ্যা কোচিং সেন্টারে যাওয়ার রাস্তা আমি চিনি... গত
আটমাস ধরে সেইখানে আসা-যাওয়া করছি।
- তো বলছিলাম আর কি ...
- কি বলছিলা??
- আই লাভ ইউ...
- ঘুষ দিয়ে লাভ নাই এখন আমি কারোর জন্য হাত
পুড়িয়ে রান্না করতে যেতে পারবো না ...
- ওহহহহ...
- হ্যা...
- কি করো তুমি??
- কিছুনা ফোন রাখো...
- কেন??
- দেখি ফ্রিজে মাংস আছে কিনা... নয়তো কেউ
আবার মুখ ফুলিয়ে না খেয়ে শুয়ে থাকবে.........
- তিশিইইইই.........
- হুম...
- আই লাভ ইউ .........
- আমি ঘুষ নেইনা ...
- হাহা কিন্তু আমি ঘুষ দেই...
- শয়তানি বাদ দিয়ে গোসল করে
আসো....নয়তো দেখা হলে খামচি খাবে।ছোট
নখ দিয়েও কিন্তু খামচি দেয়া যায় বুঝছো
বাবুটা???.....

#Bristi_patuiary

Friday, August 18, 2017

হাসপাতালে ডাক্তার রিয়ার ইতস্তত ভাব দেখেই আসল বিষয়টা বুঝে গেল

‘মা হতে যাচ্ছি’ রিয়ার মুখে কথাটা শুনে
মুখটা বিকৃত হয় জামিলের। রাগ করে বলল
‘এটা তো কোন কাজের কথা হলো না। ঔষধ
খাও নি।’
রিয়া অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। বলল, ‘ভুলে
গিয়েছিলাম।’
জামিল বলল, ‘এবার ঝামেলা বোঝো। কত
দৌড়াদৌড়ি করতে হবে বুঝতে পারছ?’
‘কী দৌড়াদোড়ি?’ রিয়া অবাক হয়ে
জিজ্ঞেস করল।
‘ক্লিনিকে যেতে হবে। জিনিসটা ফেলে
দিতে হবে।’
‘জিনিসটা না বাচ্চাটা?’
‘তুমি এই বিষয় নিয়ে খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছ
নাকি?’ জামিল ভুরু কুঁচকে তাকাল।
‘নাহ এমন কিছু না।’
‘ক্লিনিকে আমি দৌড়াতে পারব না। নিজের
কাজ নিজে সারবে।’ জামিল বলল।
‘ও আচ্ছা। রুম ডেটে অবশ্য তুমি নিজ উদ্যোগে
নিতে পেরেছিলে।’ রিয়া মনে করিয়ে দিল।
‘হ্যাঁ। এখন তো সব দোষ আমার।’ জামিলের
গলাটা কঠোর শোনায়। ‘আজকেই ডাক্তারের
কাছে যাবে। এই ঝামেলার কথা আর শুনতে
চাই না।’
রিয়া হাসল। বলল, ‘আমাদের অপরাধের
শাস্তি একটা নতুন জীবন পেতে পারে না।’
জামিল চোখ লাল করে বলল, ‘তাহলে কী
করতে চাও?’
রিয়া বলল, ‘ওকে বাঁচিয়ে রাখব।’
জামিল হাতে তালি দিয়ে বলল, ‘বাহ! দারুণ
বুদ্ধি। কিন্তু কোন পরিচয়ে বেড়ে উঠবে সে?’
‘তুমি বিয়ে করবে আমাকে। এরপর তোমার
আমার পরিচয়ে বেড়ে উঠবে।’
‘পাগল নাকি! আপাতত ৪/৫ বছরে বিয়ের
পরিকল্পনা নেই আমার।’ স্পষ্ট জানিয়ে দিল
জামিল।
‘আমি খুন করতে পারব না জামিল।’ কান্নাটা
সামলানোর চেষ্টা করল রিয়া।
‘একটা ঔষধ খেলে এতো ঝামেলা হতো না।’
জামিলের গলায় একটু নরম শোনায়। রিয়ার
চুলগুলো সরিয়ে মাথায় একটু হাত বুলিয়ে বলল,
‘আমাদের দু’জনের ভালোর জন্য ঝামেলাটা
ফেলে দিতে হবে রিয়া। প্লিজ বোঝার
চেষ্টা করো।’ রিয়া মাথা নাড়ায়। তার
কান্নার গতি বাড়তে থাকে।
হাসপাতালে ডাক্তার রিয়ার ইতস্তত ভাব
দেখেই আসল বিষয়টা বুঝে গেল। বলল,
‘আপনারা কেন যে এমন ভুলগুলো করেন? যা
হোক, না চাইলেও অপ্রিয় কাজটা আমাদের
নিয়মিত করতে হয়।’
রিয়া বলল, ‘আপা।’
‘জি বলুন।’ ডাক্তার বলল।
‘আমি ওকে হত্যা করতে আসি নি। আমি
জানতে এসেছি ও ভালো আছে কি না।’
ডাক্তার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
রিয়া দৃঢ় কন্ঠে বলল, ‘আমি ওকে বাঁচাব আপা।
ও আমার পরিচয়ে বাঁচবে। আর মরতে যদি হয়
দু’জনে একসাথেই মরব।’
রিয়া ঠিক জানে না তাকে কী করতে হবে।
তার মুখে থুতু জমেছে। সে শুধু জানে
জামিলের মুখে এক দলা থুতু দেওয়া খুব
প্রয়োজন। আর বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে রাখার
জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে চেষ্টা করতে হবে
তাকে।
.
#Noman

একটা মেয়ে কনুই দিয়ে আমার মুখে সজোরে গুঁতো দিল। আমি ব্যথায় চিৎকার করলাম।

সকাল থেকেই মেজাজটা খারাপ। আজ
নির্ঘাত দিনটা খারাপ যাবে। ঘুম ঘুম চোখে
সকালে ব্রাশ করতে গিয়েই প্রথম বিপত্তিটা
ঘটিয়েছি। শেভিং ক্রিমকে টুথপেস্ট ভেবে
ভুল করেছি। শেভিং ক্রিম দিয়ে কিছুক্ষণ
ব্রাশ করার পর মনে হচ্ছে, একগাদা কচি ঘাস
চিবিয়েছি। এখন নিজেকে ছাগল ছাগল মনে
হচ্ছে। কিছু না খেয়েই অফিসের দিকে রওনা
হলাম। শেভিং ক্রিম খাওয়ার পর আর অন্য
কিছু খাওয়ার ইচ্ছা নেই।
বাসে উঠে দেখলাম, সিট খালি নেই।
দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দিনটা খারাপ যাবে_
এটা প্রমাণ করার জন্যই হয়তো একটা মেয়ে
কনুই দিয়ে আমার মুখে সজোরে গুঁতো দিল।
আমি ব্যথায় চিৎকার করলাম। মেয়েটা
বিব্রতমুখে বলল, 'সরি। ব্যথা পেয়েছেন?'
মেয়েটার কোমল গলা শুনে নিজেকে সামলে
নিলাম। মনে হচ্ছে, একটা দাঁত নড়ে গেছে।
সেই অবস্থায় হাসার চেষ্টা করে বললাম,
'নাহ। একদম ব্যথা পাইনি।'
অফিসে ঢুকেই আরেক বিপত্তি। বস আজকে
আমার আগে অফিসে এসেছেন এবং আমাকে
খুঁজে গেছেন। প্রতিদিন সময়মতো অফিসে
আসি। আজ একটু দেরি করলাম, আর আজই বস
আমার আগে অফিসে এসেছেন। এ জন্যই
সবসময় নিজেকে অভাগা মনে হয়। আমি
যেদিকে চাই, নর্দমাও শুকিয়ে যায়। অফিসে
এসে ডেস্কে ব্যাগটা রেখেই বসের রুমে
ছুটলাম।
বস আজ অস্বাভাবিক গম্ভীর। আমাকে
অবজ্ঞা করে নানা কাজ করতে লাগলেন।
আমি দীর্ঘক্ষণ বসে রইলাম। হঠাৎ বস আমাকে
চমকে দিয়ে বললেন, 'তুমি ইদানীং কী নিয়ে
ব্যস্ত?'
কী উত্তর দেব বুঝতে পারলাম না। মাথা
চুলকে বললাম, 'বস নতুন প্রজেক্টটা নিয়েই
বেশি ব্যস্ত।'
'আমি অফিসের কথা বলছি না। অফিসের
বাইরে কী নিয়ে ব্যস্ত?'
বুঝতে পারলাম না, বস কী জিজ্ঞেস করছেন।
তাই চুপচাপ বসে রইলাম।
বস আবার বললেন, 'তুমি তো ফেসবুকে খুব
অ্যাক্টিভ, না?'
কেমন যেন অন্যরকম গলায় কথাগুলো বললেন
বস। আমি কি ফেসবুকে কোনো ভুল করেছি?
মাঝে মাঝে দেশ-কাল-সমাজের কথা চিন্তা
করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিই। সেই স্ট্যাটাস
দেখে কি বস রাগ করেছেন? কোনো
স্ট্যাটাস কি তাকে ত্রুক্রদ্ধ করেছে? নানা
চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। গত
রাতের স্ট্যাটাসটার কথা মনে পড়ল। 'অফিসে
কাজ করতে এত ঘুম পায় কেন?' এই
স্ট্যাটাসটাই কি বসের চোখে পড়েছে?
আমি বললাম, 'বস আর ফেসবুক ব্যবহার করব
না। কসম।'
'যা করার তা তো ফেসবুকে করেই ফেলেছ।
এখন এসব বলে কী লাভ?'
'কী করেছি স্যার?'
'কী করেছ জানো না?'
'না বস। ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি
ফেসবুকে মাঝে মাঝে স্ট্যাটাস দিই। আর
কিছু তো করি না।' মাথা চুলকে বললাম।
'চ্যাট কর না? মেয়েদের প্রেম নিবেদন কর
না? তাদের ডিস্টার্ব কর না?' বস যেন গর্জে
উঠলেন।
গলাটা কেন যেন শুকনো লাগছে। চ্যাট তো
আজকাল ভালোই করছি। প্রেমও হয়েছে
সম্প্রতি। কিন্তু কোনো মেয়েকে ডিস্টার্ব
তো করি না।
বস আবার বললেন, 'বল_ মেয়েদের ডিস্টার্ব
কর না?'
'না বস। আমি কোনো মেয়েকে কখনও
ডিস্টার্ব করি না। এত সাহস আমার নেই।'
'একটা মেয়ে প্রমাণসমেত আমার কাছে
অভিযোগ করেছে। তাই আজ থেকে তোমার
চাকরি নট।'
'বস বিশ্বাস করুন...।' গলাটা করুণ শোনায়
বস বললেন, 'তোমার সঙ্গে আর কোনো কথা
বলব না। তুমি এখনই বেরিয়ে যাও। তোমার মুখ
যেন আর না দেখি।'
হতাশমুখে অফিস থেকে বের হলাম। সম্প্রতি
নাদিয়া নামে একটা মেয়ের সঙ্গে ফেসবুকে
পরিচয় হয়েছে। পরিচয়েই সেটা সীমাবদ্ধ
নেই, প্রেমও চলছে পুরোদমে। ভেবেছিলাম,
সামনে বিয়ে নিয়ে চিন্তা করব। নাদিয়া
বলেছিল, ওর পরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয়
করিয়ে দেবে। কিন্তু আজ চাকরিটা হারিয়ে
সব কূল গেল। এসব চিন্তা করতে করতে যখন
রাস্তায় হাঁটছি, ঠিক তখন নাদিয়া ফোন
দিল। বলল, 'কংগ্রাটস।'
আমি অবাক হয়ে বললাম, 'কংগ্রাটস দিচ্ছ
কেন?'
'আজ তোমার চাকরি চলে গেছে তাই।'
নাদিয়ার গলা হাসি হাসি।
'তুমি কীভাবে জানলে_ আমার চাকরি নেই?'
'আমিই তোমার বসকে অভিযোগ করেছি, তুমি
ফেসবুকে আমাকে ডিস্টার্ব কর। তোমাকে
যেন চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়।'
'তুমি আমার নামে অভিযোগ করেছ? তুমি?!!'
রাগটা ঢেকে রাখতে পারলাম না।
নাদিয়া এতটুকু বিচলিত হলো না। বলল,
'শোনো আমার বাবা বলেছিলেন, উনি আমার
পছন্দ মেনে নেবেন। শুধু একটাই শর্ত ছিল,
ছেলেকে বেকার হতে হবে। কারণ উনি
জামাইকে নিজের প্রতিষ্ঠানে বড় কোনো
চাকরি দিতে চান।'
'হ্যাঁ আমি শুনেছি। কিন্তু আমি বেকার
অবস্থায় তোমার বাবার সামনে যেতে পারব
না।'
'এ জন্যই তো তোমাকে বেকার বানিয়ে
দিলাম। এখন আর বাবার আপত্তি থাকবে না।'
নাদিয়া জোরে হেসে উঠল।
'এটা ঠিক করলে, নাদিয়া?'
'জানো না, প্রেমে আর যুদ্ধে সব বৈধ।'
'আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি অভিযোগ
করলে আর বস সাত-পাঁচ না ভেবে আমাকে
চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিলেন। বসকে তুমি
আগে থেকে চিনতে?'
'আরে গর্দভ, তোমার বসই আমার বাবা। উনি
জানেন না তোমার সঙ্গে আমার প্রেম। আর
তুমিও তো আমার ফ্যামিলির কাউকে চেন
না। তাই বুদ্ধিটা কাজে লাগালাম। বাবাকে
বলেছি, রিয়াজ নামে তোমার অফিসের এক
কর্মী আমাকে ফেসবুকে প্রেম নিবেদন
করেছে। বাবা এসব শুনে তোমার চাকরি নট
করে দিয়েছেন। এখন তোমাকে বেকার
অবস্থায় বাবার সামনে নিয়ে যাব। বাবা
তোমাকে মেনে নিতে বাধ্য হবেন। হা হা।'
আমার মাথাটা ঘুরছে। এই মেয়েটার মাথায়
এত বুদ্ধি কেন? খুশিতে সব দাঁত বেরিয়ে
এলো। মনে হচ্ছে শেভিং ক্রিম দিয়ে ব্রাশ
করতে বা কোনো মেয়ে কনুই দিয়ে গুঁতো
দিলেও হাসিটা ধরে রাখতে পারব।
চাকরি হারানোর পর অফিসের যারা
সহানুভূতি জানিয়েছিল, তারাই আবার
শুভেচ্ছা জানাতে এগিয়ে এলো। কারণ
অফিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে যোগ
দিয়েছি। বস তার কথা রেখেছেন। বেকার
ছেলেকে নিজ প্রতিষ্ঠানে বড় পদে চাকরি
দিয়েছেন। সমস্যা একটাই, 'বস' থেকে 'বাবা'
ডাকটায় এখনও অভ্যস্ত হতে পারিনি।
'রূপান্তর'


বিয়ে করার আগে সিনথিয়া নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম।

বিয়ে করার আগে সিনথিয়া নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম।এতটাই ভালোবাসতাম যে তাকে বিয়ে করার সামর্থ্য ছাড়া অন্যসব সামর্থ্য ছিল। সে দেখতে শুনতে খারাপ ছিল না। মেডিকেলের ছাত্রী আর ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো ছিল। কিন্তু তার চেহারা একটু শ্যামলা। শ্যামলা বলা আবার ঠিক হবে না, তার গায়ের রং কালো ছিল। আমার মা-বাবা ওকে পছন্দ করেননি শুধু এই একটা কারনের জন্য। বাকি সবকিছু প্রায়ই ঠিক-ঠাক ছিল। বাবা বলতেন,
কালো মেয়েকে বিয়ে করে বউ বানিয়ে আনা পরিবারের সংস্কার-ঐতিহ্য নষ্ট করার মত। কালো প্রজাতির মানুষেরা শুধু গোলামী করার জন্য জন্ম হয়েছে, হুকুমাত করার জন্য না। 
শুধু আমার বাবা না, আমার দাদার বাবারাও সুন্দর মেয়েদের বিয়ে করে বউ ঘরে তুলতেন। আর সামনেও এই প্রথা চালু থাকবে।
মোট কথা বলতে গেলে এটা পরিবারের বংশীয় রীতি। আর এই রীতিতেই আমি আমার ভালোবাসাকে কুরবান করতে অপ্রস্তুত থাকা স্বত্ত্বেও প্রস্তুত ছিলাম।
বাবার এরকম আচরন আমার কাছে মোটেও ভালো লাগতো না। উনার সামনে যদি আফ্রিকার ব্লাক প্রেসিডেন্ট নেলসন মেন্ডেলার ইতিহাস তুলে ধরতে পারতাম তাহলে উনার ভুলটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারতেন। কিন্তু আমার ভুল ছিল আমি সেই সাহস নিয়ে জন্মাতে পারিনি।
বুকে অল্প যেটুকু সাহস ছিল সেটা নিয়ে একদিন যখন বাবাকে বলেই ফেলি আমি সিনথিয়াকে ভালোবাসি আর ওকে বিয়ে করবো। মেয়েটা দেখতে কিরকম সেটা জানার পর উনার মাথায় রক্ত চেপে বসলো। তিনি এমনভাবে আমার দিকে তাকালেন যদি উনার হাতে পিস্তল থাকতো তাহলে আমার মাথায় নিশানা করে গুলি করে মেরে ফেলতেন। পাত্তাই দিতেন না যে আমি উনার ছেলে।
সেদিন আমি ভয়ে আধমরা ছিলাম। সবকিছু জানা স্বত্ত্বেও আমি বাবাকে সেই কথা শুনিয়েছি যেটা কারোর ক্ষমতা ছিল না উনাকে শুনাবার। কিন্তু আমি তো নিরুপায় ছিলাম এই সত্যটা বলতে।
আমার এই উগ্রপন্থা কথা শুনে আমাকে বিশেষ নজরে রাখা হল। বাইরে যাওয়া থেকে শুরু করে আমার ফোন কেড়ে নেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের শাষন আমার ওপর ধাবানো হল। সিনথিয়ার সাথে কোনরকম যোগাযোগ করার উপায় ছিল না। নিজেকে মনে হচ্ছে কোন যুবতী মেয়ে যেন বাইরে যাওয়াটা তারজন্য মস্ত একটা পাপ। নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছি কেন পুরুষ মানুষ হয়ে জন্মালাম।
..
আমার ছোটমাথায় বড় কথা তো কোন জীবনেও ঢুকবে না কিন্তু এই ছোট্ট বিষয়টা আমি বুঝতে পারছি না আমি এরকম বন্ধি কেন! বয়স ছাব্বিশ ছুই-ছুই কিন্তু নিজের কোন স্বাধীনতা আজও অর্জন করতে পারলাম না। একাত্তর সালে দেশ স্বাধীন হয়েছিল ঠিক-ই কিন্তু আমি-ই মনে হয় একমাত্র ব্যক্তি যে স্বাধীন দেশে বাস করেও পরাধীন। 
..
জানালার ফাঁক দিয়ে আমার খাবার প্রদান করা হয়। আবার শেষ হলে ওইখান থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। এরকটা আমি জেলের কোন কয়েদির মুখ থেকে শুনেছিলাম। তাহলে এখন আমি কি কয়েদী! নিজের রুম-ই কি আমার জেলখানা! 
বেশকিছুক্ষন মাথা চুলকালাম। ভাবছিলাম আমি কি জন্য অপরাধী। কোন মেয়েকে ভালোবেসেছি তাই! নাকি কালো মেয়েটাকে পছন্দ করেছি সেজন্য!
..
রাতের বেলা বাবা রুমে আসলেন। বাবার এক হাতে মস্ত বড় একটা তালা আর আরেক হাতে ভাতে-মাংসে ভরা থালা। বুঝতে পারছিলাম না এ কেমন বাবার ভালোবাসা।
বাবা এসে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলেন। হয়ত এরকম অবস্থায় তিনি আমাকে দেখে কষ্ট পেলেন। আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম,
--আমি কি কোন ভুল করেছি যে এভাবে আটকা রাখা হয়েছে!
বাবা থালাটা টেবিলে রেখে হাত মুছে বললেন,
--নাহ, ভুল আমার ছিল যে তোমাকে আগলে রাখতে পারিনি। তাই আমার ভুলটা তুমি শুধরাচ্ছো।
--আমি কিছু বুঝতে পারিনি।
--বুঝার মত বয়স এখনো তোমার হয়নি। শুধু এটা জেনে রেখো তুমি আর কোনদিন ওই কালচে মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখবে না।
--কিন্তু বাবা আমি ওকে ভালোবাসি আর ওকে বিয়ে করতে চাই।
--ভালোবাসা কি! হ্যা! ওই ভালোবাসা কি! ওইসব ভালোবাসা-তালোবাসা আর যদি কোনদিন তোমার মুখ থেকে শুনেছি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। বুঝেছো!
আমি মাথাটা নিচু করে ঢোঁক গিলে হ্যা-সূচক জবাব দিলাম। বাবা একটু নরম স্বরে আবার বললেন;
--দেখো বাবাজান, বিয়ে করতে হলে কোন ভালোবাসা লাগে না, লাগে শুধু কবুল-নামা। আর এটাই মূল স্তম্ভ। ফালতু চিন্তা-ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। এতেই সবার মঙল।
আমি চোখের জলে ভাত নষ্ট করলাম। ভাতের দানা যেন আমার কাছে বিষ মনে হচ্ছিল। আর পানি তো ফুটন্ত গরম পানি যে গিললেই গলা-বুক জ্বলে যাবে তবুও তৃষ্ণা মেটাতে হবে।
..
এভাবে দীর্ঘ সাতদিন পর আমাকে জেলখানা থেকে মুক্তি দেয়া হল। সুর্যের মুখখানা দেখে অপরিচিত মনে হচ্ছে। এটা সুর্য নাকি অন্যকিছু বুঝতে পারছিলাম না। সবকিছু কেমন জানি ধোয়াশার মধ্যে আটকা ছিল। মনে করলাম আমার ওপর কোন দয়া জমেছে তাই ছাড়া পেয়েছি কিন্তু সেরকমটা না। মায়ের মুখ থেকে শুনলাম আমার ফুফাতো বোন আর তার মা দেশে ফিরেছে। তাই আমাকে যেন এরকম অবস্থায় না দেখেন তাই ছাড়া দেয়া হল। আমি মনে মনে হাসলাম। ইচ্ছে করছিল তাদেরকে স্যালুট দিয়ে একটা ধন্যবাদ জানাতে। কিন্তু ইচ্ছেটাকে নিজের মধ্যেই চেপে রাখলাম। 
..
সবাই যখন ব্যস্ত নতুন অতিথিপূজা নিয়ে তখন আমি চড়কিপাক খাচ্ছিলাম কখন ঘর থেকে বের হবো আর সিনথিয়ার সাথে দেখা করবো। কিন্তু কোনরকম ভাবে সুযোগ হাতে পাচ্ছিলাম না। এরই মধ্যে বাবার উপস্থিতি আমার জন্য বিপদ হয়ে দাড়ালো। উনি দূর থেকে আমার দিকে তাকাতে তাকাতে আসছেন যেন উনার চোখের পলকে আমি থাকি। আমি হাত দুটো পিছনে নিয়ে আরাম করে দাঁড়িয়ে বাবার আসাটাকে দেখলাম। কাছা-কাছি আসলে আমার হাত একটা ধরে আমাকে উনার রুমে নিয়ে গেলেন। উনি যথেষ্ট নম্র আর টান্ডা মাথায় বললেন;
--তোমার ফুফুমনি তোমার জন্যই দেশে এসেছেন শুধু উনার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিতে। আশা করি তুমি বিষয়টা বুঝতে পারছো।
--কিন্তু বাবা__________„„„„„
--চুপ!!!! একদম চুপ।
উনার ধমক শুনে আমার জান পানি হয়ে গেল। আমি নিতান্ত বাচ্চার মত দাঁড়িয়ে থাকলাম। বাবা উনার হ্যান্ডব্যাগ থেকে দুটো বিয়ের কার্ড বের করে আমার হাতে একটা দিয়ে পড়তে বললেন। আমি কভার থেকে কার্ড বের করে দেখলাম আমার আর সুমাইয়ার বিয়ের তত্ত্ব আর বিয়ের তারিখও দেওয়া। আমি শুধু বাবার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালাম। উনি যদি আমার চোখের ভাষা পড়তে পারতেন তাহলে বুঝতেন কি আহামরি রীতির জন্য তিনি নিজের ছেলের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজটা করছেন! 
..
বাবা হয়ত সেটা বুঝতে পারবেন না। উনি শুধু বংশের মান-সম্মান বাচাতে আমাকে কুরবানি দিচ্ছেন। উনার কাছে আমি শুধু একটা মহরা।
..
আমি কার্ড দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। এটা ভেবে নয় যে আমার বাবা আমাকে বুঝতে পারেননি, এটা ভেবে যে আমি সিনথিয়াকে ছাড়া কিভাবে অন্য কোন মেয়েকে নিয়ে সংসার সাজাবো। হাঁটু ভাজ করে মেঝেতে পা লুটালাম। বাবা এসে আমাকে ধরলেন আর চেয়ারে বসালেন। তারপর আরেকটা কার্ড আমার হাতে শপে দিলেন। ওই কার্ডটা আগের কার্ড থেকে ভিন্ন ছিল। সেটাও খুলে দেখলাম। আর যা সব লিখা ছিল সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
সিনথিয়ার বিয়ে!! 
অন্য একটা ছেলের সাথে!! আমি বাবার দিকে তাকালাম। উনি হ্যাসূচক মাথা নাড়লেন। আমার হাত থেকে কার্ড পড়ে যায়। আমি থমকে যাই। পাথরের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি যেন আমি স্ট্যাচু অব লিভার্টি।
..
আমি এতটাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে কয়েক সেকেন্ড আগে গড়-গড় করে আমার চোখ থেকে জল ঝরছিল সেগুলো বন্ধ হয়ে গেল। না, এটা নয় যে আমার চোখের পানি সব শেষ হয়ে গিয়েছে। জলগুলো বন্ধ হয়েছে কারনও চোখও সেটা মেনে নিতে পারছে না সেজন্য সেও থমকে গিয়েছে।
..
স্বাভাবিক অবস্থায় থেকে মানতেই পারছিলাম না সিনথিয়ার বিয়ে। দশ-পনেরো সেকেন্ড অন্তর অন্তর আমি চোখ বুজে রাখার পর খুলে চারপাশ দেখি শুধু এটা ভেবে যে আমি স্বপ্ন দেখছি না তো!
যতটুকু জানি আমার চেয়ে সে বেশি আমাকে ভালোবাসে। আমার ভালোবাসায় হয়ত একটু ভুল থাকতে পারে কিন্তু তার না।
নাহ! সিনথিয়ার বিয়ে এটা হতে পারে না। কোথাও কিছু একটা ভুল নিশ্চই আছে। আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
--যে মেয়ে তোমার জন্য জন্মায় নি কেন তুমি বারবার তার কথা মনে করছো! ভুলে যাও বাবাজান তাকে। আর নতুন করে জীবন সাজাও।
বাবার এরকম নি:সংকোচ আবেদন শুনে আর নিজেকে সামালতে পারিনি। বাবার কথাই মেনে ফেললাম। বাবা তো বাবাই। উনি তো সবসময়-ই আমার ভালো চান। আর আমার এই বিয়ে করা যদি বাবার হাসি ফুটার কারন হয় তাহলে হ্যা আমি করবো এ বিয়ে। নতুন কাউকে জীবনসঙ্গিনী করবো।
..
শেষ-মেষ নিজের ইচ্ছেটাকে অন্ধকারে ফেলে সুমাইয়াকে বিয়ে করলাম। সে দেখতে আমার সিনথিয়ার মত ছিল না, অনেক সুন্দরী ছিল। যদি ঘরটা অন্ধকারে ভরা থাকে তবুও তাকে সেখা যাবে। শুধু দেখা যাবে তা না, রুমটাও আলোকিত করে ফেলবে। 
..
মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাই খুশি এই বিয়েতে। একমাত্র আমি বাদে। আমি খানিকটা খুশি যে সবার মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছি। কিন্তু বাকিটা,,,,,
কেউ কি বোঝার চেষ্টা করবে আমার রক্তে-মাংসে গড়া বুকে কি যন্ত্রনা হচ্ছে! কেউ কি বুঝতে পারবে আমার চোখের জলে আমার কত স্বপ্ন গড়িয়ে মাটিতে মিশে যাচ্ছে! কেউ বুঝতে পারবে না, কেউ না।
..
ধর্মীয় কোন রীতির জন্য যদি সিনথিয়াকে ভালোবাসা আমার জন্য পাপ ছিল তাহলে হয়ত গুনাহ থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আমি ওকে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু উচ্চবংশীয় রীতির জন্য আমি সিনথিয়াকে!!!
কালো হয়ে জন্ম নেওয়াটা-ই কি ওর পাপ ছিল! ও কালো রঙের সেজন্য কি সে সারাজীবন গোলাম-ই থাকবে! মাথা উচু করে কি সে দাড়াতে পারবে না! সাদা জাতের কাউকে কি ভালোবাসতে পারবে না!
আচ্ছা, ওর চুল কালো এটা কোম সমস্যা না। ওর চোখের মনি কালো এটাও কোন সমস্যা না। আবার ওর চোখের কাজলও কালো তবুও সেটা কোন সমস্যার কাতারে পড়ে না। পড়ে শুধু ওর গায়ের রং। এই একটা কারনের জন্যই কি আস্ত মানুষের পার্সোনালিটি ভুল হয়ে যাবে!
আমি কার কাছে প্রশ্ন করছি আর কাছে উত্তর চাচ্ছি সেটার সমীকরণ সবসময় কুয়াশার আড়ালে ঢাকা থাকবে। কেউ সরিয়ে দেখতে চাইবে না এর পিছনে রহস্যটা কি।
যার জন্য এত প্রশ্ন ছুড়ছিলাম সেই যখন আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করছে তাহলে ওই উত্তরগুলো খুজা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
সিনথিয়াকে ছাড়া দেখতে দেখতে আটারো মাস পার হয়ে গেল। বিয়ের কয়েকমাস পর আমি কানাডায় চলে আসলাম। দেশে আমি যতই দিন কাটাবো ততই ওর কথা মনে পড়বে। কলেজের পাশ দিয়ে গেলে মনে পড়বে তার সাথে পুকুরে বসা প্রতিটা মুহুর্ত, বাজারে গেলে মনে পড়বে ব্রিজের পাশের দোকান থেকে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল কিনে দেওয়ার মত শত কথা, রাস্তায় হাঁটলে মনে পড়বে ওর সাথে চলা প্রতিটা পায়ের শব্দ। সব যেন আমাকে নিঃসৃত করার এক কৌশল। তাই দেশ ছেড়ে, সিনথিয়াকে ছেড়ে, পুরনো সব অতীতকে পিছনে ফেলে নতুন এক ভবিষ্যতের ছবি আঁকার জন্যে চলে এলাম কানাডায়।
সবকিছু প্রায়ই ভুলে গিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে মনে হত ওর কথাগুলো কিন্তু সেগুলো ধাবিয়ে রাখতাম এই ভেবে যে সেও তো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। নতুন কাউকে বিয়ে করেছে সংসার সাজিয়েছে হয়ত দু-এক বাচ্চাও আছে।
আবার বলতাম বাদ দাও সেসব কথা। যে যেরকম সুখে আছে সে থাকুক সেরকম, তাতে আমার কি যায় আসে। আমি আমার মতই সুখে আছি স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। ওর সুখ যদি ওর নতুন মানুষ হয় তাহলে আমার সুখ সুমাইয়া আর আমাদের আসতে যাওয়া নতুন পাখিটা।
ব্যথা যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে যাচ্ছে তখন সুমাইয়ার গর্ভে আমাদের নয় মাসের সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। আব্বু আম্মুকে ফোন করে সব জানিয়েছি। আমি আর ওর আম্মু হসপিটালের বারান্দায় বসে আছি শুধু খুশির সংবাদের অপেক্ষায়।
কিন্তু তখনই বিপদের ঘোর আসলো। ডাক্তারের সাদা কাপড়ে পড়া একটা মেয়ে মানুষ আমার দিকে আসছে। আমার চোখে অল্প জল জমা ছিল ওইগুলো মুছে মেয়েটার দিকে তাকালাম। দেখার সাথে সাথে আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। আমার পা ঠক-ঠক করে কাঁপছে আমার হার্টবিটও ক্রমশ বাড়ছে। যে মেয়েটা আমি অনেক আগেই হ্নদয় থেকে মুছে ফেলেছি সেই আজ আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
সিনথিয়া!!!
কাঁপা কাঁপা স্বরে নামটা কন্ঠ থেকে বের হল। আমার কাঁপামিশ্রিত কণ্ঠ আর আচমকা দাঁড়ানো দেখে সুমাইয়ার আম্মু চমকে গেলেন। উনি আস্তে আস্তে করে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
--কি হয়েছে! তুমি হঠাৎ দাড়িয়ে গেলে কেন!
আমি যে মুখ থেকে কোন কথা বের করবো তার সাহস পাচ্ছিলাম না। শুধু জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে লাগলাম। আমি একটানা ওর দিকে তাকিয়ে আছি আর সেও। দুজন-দুজনকে আজ কয়েকশ বছর পর দেখছি মনে হচ্ছে। আমি স্থির হয়ে দাঁড়াতে না পারলেও সে ঠিক-ই স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি কেবলমাত্র তাকে জিজ্ঞেস করতে যাবো সে এখানে কি করছে তার আগে সেই আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো;
--আপনি প্রেগন্যান্ট মহিলার কি হোন!
ওপাশ থেকে সুমাইয়ার আম্মু বললেন,
--আমি ওর মা আর ও (আমি) তার স্বামী।
সিনথিয়া একটুর জন্য হলেও থমকেছে। কারন আমি ওর চোখ দেখে বুঝতে পারছি সে এটা শুনে বিরাট ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু আমার সামনে সেটা প্রকাশ করতে দিচ্ছে না। এমনভাবে সে পরিস্থিতি সামলালো যে তার মনে যে ঝড় উঠেছিল সেটা সে নিজেও টের পায়নি।
আমি ওর চোখেরজ্যোতির ভিতর ঢুকে দেখতে পাচ্ছি তার চোখেরজল সামনের দিকে গড়াতে যাচ্ছে। আমি তখনই ওর চোখ থেকে আমার চোখ সরিয়ে নিই। আমি চাই না আমি আর ওর মায়ায় পড়ি।
সুমাইয়ার আম্মুকে সিনথিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন;
--সবকিছু ঠিক আছে তো ডাক্টার! মানে আমার মেয়ে ঠিক আছে তো!
সে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,
--ঠিক আছে কি না সেটা বলা এখন ঠিক হবে না কিন্তু অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল। বাচ্চা এক সাইডে আটকে গিয়েছে। ডেলিভারিতে একটু সমস্যা হবে সাথে রিস্কও।
ওর কথা শুনে আমি আতঁকে গেলাম। ওকে বললাম,
--যত টাকা লাগে আমি দিব আপনি শুধু আমার স্ত্রী আর বাচ্চাটাকে সুস্থ করে আমার হাতে ফিরিয়ে দিন।
সিনথিয়া আমার কথা শুনে একটু চুপ থাকলো। সে হয়ত কোন কথা খুজে পাচ্ছে না কি বলবে। তখন সুমাইয়ার আম্মু বললেন;
--আপনি ওসব নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না। শুধু আপনি আমার মেয়ে আর নাতনীকে সহি-সালামত আমার হাতে তুলে দিন।
সিনথিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
--দেখুন, টাকাটা বড় কথা না, সবকিছু টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন আর দুয়া করুন।
এটা বলে অপারেশন করার জন্যে সে আবার রুমে চলে গেল। আমি একটু ভয় পেলাম যে আমার স্ত্রী-বাচ্চা শুনে সে আবার কিছু অঘটন ঘটাবে না তো! ওকে তো আমি ভালো করেই চিনি সে মারাত্বক রাগী আর বদমেজাজি একটা মেয়ে। পুরনো কথা ভেবে, আমাকে কষ্ট দিতে সে যদি আমার স্ত্রী-বাচ্চাকে ________!!!!!
ভয়ে আমার সমস্ত হাত-পা টান্ডা হয়ে গেল। টানা দু-ঘন্টার অপারেশনের পর সিনথিয়া বের হল কোলে একটা বাচ্চাকে নিয়ে। আমি দৌড়ে গিয়ে ওর সামনে দাড়ালাম। ওর কোল থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে আমার কোলে নিলাম। সে বললো;
--কংগ্রেচুলেশন! আপনার মেয়ে হয়েছে। আর আপনার স্ত্রীও সুস্থ আছে।
কেন জানি আমি ওর কথায় ভরসা পেলাম না। তাই আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে অপারেশন রুমের সামনে গেলাম। সিনথিয়া পিছন থেকে বললো,
-আমি পেশায় ডাক্তার আর ডাক্তারের কাজ মানুষকে মারা না, মানুষকে নতুন জীবন উপহার দেওয়া।
আমি ওর কথায় একটু লজ্জিতবোধ করলাম তবুও কিছু বললাম না। সেও আর কিছু না বলে চলে গেল। আমি বাচ্চাটাকে সুমাইয়ার কাছে ওর মায়ের হাতে তুলে দিয়ে সিনথিয়াকে খুজতে বের হলাম। অবশেষে তাকে পেলাম। পিছন থেকে তাকে ডাক দিলাম। সে শুনে দাড়ালো। আমি ওকে বললাম;
--দুঃখিত! তোমাকে ভুল বুঝেছি।
--তুমি কি মনে করেছো আমি তোমার ওপর প্রতিশোধ নিবো বলে _______........
আমি ওর কথায় বাধা দিলাম।
--নাহ ওসব কিছুনা। আমি শুধু একটু ভয় পেয়েছিলাম। 
--হুম। তা এখানে কি করছো! যাও বউ-বাচ্চার পাশে যাও।
--তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছি।
--ওহ! তোমার পরিবারকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি সেজন্যে!
--হ্যা।
--এটা আমার জন্য ফরজ ছিল তাই করেছি। ধন্যবাদ জানাতে হবে না।
--ওকে। 
--বাচ্চাটা তোমার আর তোমার বউয়ের মত সুন্দর-ই হয়েছে।
এই কথাটা সে একটু তাচ্ছিল্য স্বরে বললো। আমিও একটু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শুনেছি।
-হুম জানি। 
--ভালো। আচ্ছা আমি এখন যাই। আমার কাজ আছে।
--শুনো, একটা কথা ছিল,
--বলো,
--কেমন আছো তুমি?
--কেমন রেখেছো তুমি?
--আমাকে ভুলো নি?
--তুমি কি ভুলেছো?
--হুম, অনেকটা।
--ভুলবেই তো, আমি তো আর এত আহামরি সুন্দরী নাহ।
--আমি কি কখনো সাদা-কালো নিয়ে বড়াই করেছি?
--তাহলে মাঝপথে আমার হাত ছেড়ে দিলে কেন?
--আমি ছাড়িনি, তুমি ছেড়েছো। 
--আমি ছেড়েছি মানে!
--তুমি-ই তো আমার আগে বিয়ের পিড়িতে বসেছো আর আমাকে দাওয়াত দিয়েছো।
--কি বলছো কি তুমি! আমি কখন তোমার আগে বিয়ের পিড়িতে বসলাম!
--আচ্ছা! তোমার মনে নেই! ওই কার্ড যে তুমি দিলে! তোমার বিয়ের কার্ড! 
--দাঁড়াও দাড়াও! আমার কথাটা শুনো, 
--কি শুনবো! ভুল তোমার আর দোষ আমার! 
--শান, আমি কোন বিয়ে করিইনি।
এ কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার মাথায় বজ্রপাত ভেঙে পড়লো। আমি নিঃস্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সে বললো;
--তুমি আমার বিয়ের কোন কার্ড পাও নি বরং আমি তোমার কার্ড পেয়েছি। তোমার বাবা নিয়ে এসেছেন। 
--তোমার বিয়ের কার্ডও তো আমার বাবা নিয়ে এসেছিলেন।
--বিশ্বাস করো শান, আমি বিয়ে করিনি। তুমি-ই আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা।
--তাহলে বাবা আমাকে মিথ্যে কথা বললেন কেন!
--উনার পুত্রবধু হিসেবে আমি ঠিক ছিলাম না। কিন্তু তোমার বউ হিসেবে আমি ঠিক ছিলাম। আর সেটা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই,,,,
আমি কল্পনাও করতে পারছিনা বাবা এরকম আমার সাথে কিভাবে করলেন! এরকম ধোকা তো কেউ তার শত্রুর সাথেও করবে না আর আমি তো উনার নিজের ছেলেও হয়েও____…………। আমি ওকে বললাম,,
--সিনথি শুনো,,,
--আর বলতে হবে না। আমি সব বুঝতে পেরেছি।
--বিশ্বাস করো আমি এসবের কিছুই জানিনা।
--বাদ দাও, যা হবার হয়ে গিয়েছে।
--কিন্তু,,
--কোন কিন্তু না। তুমি ভুলে যেওনা তুমি কারোর স্বামী, তুমি কারোর বাবা। অতীতটাকে নিয়ে আর ভেবো না। 
--আর তুমি!
--আমার তো এই ক্লিনিক ওই ক্লিনিকে দৌড়া-দৌড়ি করতে কর‍তেই চলে যাবে। এখন আর নিজের জীবন নিয়ে না, অন্যের জীবন নিয়েই ভাবি।
--তুমি এরকম বাকি জীবন চালিয়ে যেতে পারবে!
--হ্যা পারবো। তুমি যদি খুশি হয়ে থাকতে পারো তাহলে আমি কেন পারবোনা!
--আমি তোমার সবকিছু নষ্ট করে দিলাম, সবকিছু।
--তুমি না, বা তোমার বাবাও না, পরিস্থিতি আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে।
--আমি জানিনা এর পরে আমি কি বলবো বা কিছু বলার আছে কি না। শুধু বলবো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর আজীবন রাতের তারা ভেবে ভালোবেসে যাবো।
--হুম। ভালো হবে যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও।
--নাহ, ভুলবো না। আজ তুমি আমার স্ত্রীকে বাচিয়েছো, আমার মেয়েকে বাচিয়েছো। এটার মুল্য আমি তোমাকে দিতে না পারলেও,,,,,,,,,,,
--না পারলেও?
--আমার মেয়ের নাম তোমার নামানুসারে রাখবো। হ্যা, সিনথিয়া-ই রাখবো আমার মেয়ের নাম।
--কিইই! না ওসব করো না।
--এটাই আমি করবো। আর আমি মনে করি বাবার ভুল এভাবেই উনি বুঝতে পারবেন।
--উনি তোমার বাবা, উনাকে কষ্ট দিও না।
--নাহ, আমি উনাকে কিছু বলবো না। উনি সবকিছু আপনা-আপনি-ই বুঝবেন।
কথা বলার ফাঁকে হঠাৎ সুমাইয়ার আম্মু পিছন থেকে ডাক দিলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে পিছনে তাকালাম। উনি সিনথিয়াকে দেখতে পেলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। উনি সবকিছু বুঝে ফেললেন না তো! আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
--তুমি এখানে কি কর? সুমাইয়া তোমাকে খুজছে।
--আমি আসলে ডাক্টারকে ধন্যবাদ জানাতে আসছিলাম। 
--ওহ!
তিনি সিনথিয়ার হাত ধরে বললেন,
--তুমি খুব লক্ষি একটা মেয়ে। তোমার জন্যই আজ আমার মেয়ে-নাতনী বেচে আছে। কিভাবে তোমার শুকরিয়া আদায় করবো বুঝতে পারছিনা।
--না না এসব কিছু করতে হবে না। এটা তো আমার কাজ। আমার কিছু লাগবে না আপনি শুধু আমার জন্য দুয়া করেন।
--তা তো করবোই।
--ধন্যবাদ। আমি এখন যাই, আমার আরেকটা অপারেশন আছে।
--হ্যা হ্যা নিশ্চই।
অতঃপর সিনথিয়া চলে যাচ্ছে। আমি দেখছি। আমি জানি সে পিছন মোড়ে তাকাবে না। কিন্তু আমি এও জানি যে সে জানে আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি। তবুও সে তাকাবে না। সে হয়ত চায়না আমি আর ওর চোখটাকে দেখি, ওর চুলটাকে দেখি বা ওর হাসিটাকে দেখি। তবুও আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি।
দেখতে দেখতে হঠাৎ সে হারিয়ে গেল। নেই কোন কুয়াশা নেই কোন জাল তবুও সে হারিয়ে গিয়েছে। আমি ইচ্ছে করলে ওর ঘ্রান শুঁকতে শুঁকতে তাকে ফিরে পেতে পারি কিন্তু পারবোনা। আমি এখন শুধু শান না, একজন স্বামীও, একজন বাবাও। আর এইসব পরিচয় নিয়ে পিছনে ফিরে তাকানোটা শোভা পাবে না, একদম না। এরচেয়ে বরং কঠিন বাস্তব আর সত্যটাকে মেনে নিয়ে ভবিষ্যত আলোকিত করা সহজতর হবে। এভাবেই না হয় কেটে যাবে দিন নামের দিন আর রাত নামের রাত।
...
...
...
_______গল্প:- সাদা-কালোতে নেই আর আমি তুমি__________

Wednesday, August 16, 2017

ঢাকা থেকে কলকাতা যাচ্ছিলাম আমি।

স্কিন ডিজিজের উপর একটা
সেমিনারে যোগ দিতে ঢাকা
থেকে কলকাতা যাচ্ছিলাম আমি।
এরকম ট্যুর পেলে সবাই বউ নিয়ে যায়,
আমিও যেতাম, কিন্তু শেষ মুহূর্তের
ঝগড়াটা মাটি করে দিল সব।
ঝগড়াটা বেঁধেছিল ওর মামাতো
বোনের বিয়ে নিয়ে। ও বলেছে
যাবে, আমি বলেছি সময় নেই। ব্যস,
এখান থেকেই বেঁধে গেল কুরুক্ষেত্র।
আমি খারাপ, আমি স্বার্থপর, আমি
অসামাজিক - আরও কত যে জানা
অজানা তকমা কপালে জুটল তার ঠিক
নেই।
ব্যস, রেগে গেলাম আমিও। আমার বউ
হয়ে আমাকে অপমান! এত বড় সাহস! যাও,
নিলাম না কাউকে, একাই যাব
কলকাতা, কার কি?
আসলে ঐ ঝগড়ার কারণেই মনটা খারাপ
ছিল। ঝগড়াটা আমার সমস্ত
চিন্তাভাবনাকে এমন জট পাকিয়ে
ফেলেছিল যে, প্লেনে পাশের
সহযাত্রীর সাথে আলাপের সুযোগই হয়
নি আমার।
আমাকে অনেকক্ষণ ধরে একমনে মুখ কুঁচকে
চিন্তা করতে দেখে ভদ্রলোক বললেন,
“ভাই, আপনাকে এত Tensed লাগছে
কেন?”
প্রথমবার কথাটা ভালোভাবে শুনতে
পাই নি। তিনি আবার বললেন, “ভাই,
কি এত চিন্তা করছেন?”
কল্পনায় তখন বউ আমার পা জোড়া প্রায়
ধরেই ফেলেছে, কান্নাকাটি ক্ষমা
চাওয়াচাওয়ি প্রায় শুরুই করে
দিয়েছে, এমন সময় ঐ কথায় চটকা
ভেঙ্গে গেল আমার। শব্দের উৎসের
দিকে তাকিয়ে দেখি, স্যুট টাই পরা
বেশ স্মার্ট এক বাঙালি ভদ্রলোক ঈষৎ
হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে
আছেন।
আমি বললাম, “কিছু বললেন?”
তিনি উত্তর দিলেন, “তখন থেকেই
দেখলাম আপনি খুব Tensed। তাই কৌতূহল
হল আরকি। কি ব্যাপার ভাই? কি
হয়েছে?”
আমি ভদ্রলোকের কথা বলার স্টাইলে
চমৎকৃত হলাম। অসাধারণ শুদ্ধ উচ্চারণে
বাংলা বলেন তিনি। তার পোশাক
আশাকও চমৎকার। ধবধবে সাদা শার্ট,
কালো প্যান্ট, চকচকে কালো স্যুট,
আঁচড়ানো চুল। একটা চুলও অবিন্যস্ত নয়
তার। শার্টে সামান্য ভাঁজও দেখলাম
না আমি। তাছাড়া হাতের রোলেক্স
ঘড়িটাও বেশ দামি। বয়স? হবে
চল্লিশের কাছাকাছি।
আমার এই পর্যবেক্ষণ লক্ষ্য করে তিনি
বললেন, “কি দেখছেন?”
আমি বললাম, “আপনার স্ত্রী-ভাগ্য
নিয়ে মনে মনে আফসোস করছি ভাই।
ছেলেরা একা এতটা ফিটফাট হতেই
পারে না, বিশেষ করে সে যদি
বাঙালি হয়”।
আমার কথা শুনে তিনি হা হা করে
হাসতে লাগলেন। তারপর বললেন, “না
ভাই, আপনি যা ভাবছেন তা নয়। আমি
অবিবাহিত”।
অবাক হলাম। সত্যি অবাক হলাম আমি।
এরকম স্মার্ট টগবগে একজন যুবক, যে কিনা
আবার হাতে রোলেক্স ঘড়ি পরে
প্লেনে করে বিদেশ যাবার সামর্থ্য
রাখে, সে অবিবাহিত হবে কেন? তবে
কি...
ভাবনাটাকে শেষ করতে না দিয়ে
তিনি বললেন, “জানি আপনি কি
ভাবছেন। ভাবছেন, এত ফিটফাট, স্মার্ট
একটা মানুষের বিয়ে হয় নি কেন, তাই
তো?”
নিজের ভাবনাটা এভাবে ধরা পড়ে
যাবে ভাবি নি। লজ্জা পেলাম খুব।
আমার মুখভঙ্গি দেখে উনি বললেন,
“স্পষ্ট বুঝতে পারছি, আপনার মনে
অসংখ্য প্রশ্ন জমা হয়েছে। আমাকে
একটা রহস্যময় মানুষ বলে মনে হচ্ছে, তাই
না?”
আমি বললাম, “হুম। আপনার গেটআপ আর
ম্যারিটাল স্ট্যাটাস ম্যাচ করছে না।
দুটো ভিন্ন কথা বলছে”।
তিনি বললেন, “আচ্ছা, আপনি তো
বিবাহিত, তাই না?”
আমি মাথা নাড়ালাম। “হুম”।
“আপনাদের মধ্যে কি রিসেন্টলি ঝগড়া
হয়েছে?”
চমকে উঠলাম। “হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?”
“না, অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম আপনি
একমনে কীসব বিড়বিড় করছেন আর
আঙ্গুলের বিয়ের আংটিটা ঘুরাচ্ছেন।
আর তাছাড়া আপনার আপনার শার্টের
কলারের এক পাশ তেরছাভাবে ভাঁজ
হয়ে আছে, স্যুটটা ভালোভাবে ঝাড়া
হয় নি বোঝা যাচ্ছে, আর হাতঘড়িটার
ব্যাটারি শেষ হয়ে ওটা অচল হয়ে
আছে। এসব দেখে দুইয়ে দুইয়ে চার
মিলিয়ে নিতে সমস্যা হল না যে
আপনি খুব রিসেন্টলি বউয়ের সাথে
ঝগড়া করে এসেছেন”।
আমি হেসে ফেললাম। “চমৎকার, ভাই।
অসাধারণ আপনার পর্যবেক্ষণ শক্তি”।
“ধন্যবাদ। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি কিছু
মনে করবেন না। আপনার বউকে আপনি
কতটা ভালবাসেন?”
“অনেক ভালবাসি”।
“আর উনি? উনি আপনাকে কতটা
ভালবাসেন?”
“অনেক ভালবাসে”।
“তাহলে আপনারা ঝগড়া করেন কেন?”
“আসলে ভাই”, একটু ভেবে বলি আমি,
“দুইটা মানুষের মনের মিল তো সবসময় হয়
না, তাই না? যখন হয় না তখনই গ্যাঞ্জাম
বাঁধে, বুঝলেন?”
“বুঝলাম। কিন্তু গ্যাঞ্জাম তো আমার
আপনার মধ্যেও বাঁধতে পারে। তাহলে
হোয়াটস সো স্পেশাল এবাউট
ম্যারেজ...আই মিন, লাভ?”
“এখানেই তো লাভের আসল রহস্য
নিহিত, ভাই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ট্রু
লাভ থাকলে গ্যাঞ্জামের পরে দুপক্ষই
দোষ স্বীকার করে। তখন রিলেশন আরও
গাঢ় হয়। আর ট্রু লাভ না থাকলে সম্পর্ক
আরও খারাপ হয়, এমনকি ভেঙ্গেও
যেতে পারে”।
ভদ্রলোক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
বললেন, “কতকিছু মিস করে ফেললাম
জীবনের!”
আমি বললাম, “কেন ভাই? জীবনে
আপনি প্রেমে পড়েন নি? কারো
সাথে রিলেশন হয় নি কখনও?”
তিনি বললেন, “প্রেমে ভাই
পড়েছিলাম, জাস্ট ফর ওয়ান্স”।
“তারপর? রিলেশন টিকল না?”
“আসলে, আমাদের মধ্যে কখনই রিলেশন
হয় নি। আই ফেল ইন লাভ উইথ হার, আই
ওয়াজ ম্যাড ফর হার। কিন্তু, পুরোটাই
ছিল একতরফা। ও আমাকে ভালবাসে
নি”।
আমি নড়েচড়ে বসলাম। “কাহিনীটা
ইন্টেরেস্টিং মনে হচ্ছে। আরেকটু বলা
যায় কি?’
তিনি বললেন, “শুনবেন? অন্যের
কচকচানি আজকাল কেউ শুনতে চায়
না”।
আমি বললাম, “আমি শুনব। বলুন আপনার
লাভ স্টোরি”।
ভদ্রলোক শুরু করলেন, “আমি যখন
মেডিকেলে কলেজে থার্ড ইয়ারে
পড়তাম তখন এক সহপাঠিনীর প্রেমে
পড়ে যাই। প্রেম মানে ভয়াবহ প্রেম,
উথাল পাথাল প্রেম।
একদিন ওকে না দেখলে ভালো লাগে
না, ওর ছবি না দেখলে রাতে ঘুম আসে
না, ওকে অন্য ছেলের আশেপাশে
দেখলে ছেলেটাকে স্রেফ খুন করতে
ইচ্ছা করে...মানে পাগলামি ভর করলে
মানুষের যা হয়, আমার হয়েছিল তাই-ই।
ও আমার দিনের শান্তি তো বটেই,
রাতের ঘুমও হারাম করে দিয়েছিল।
ওকে যে আমার ভালো লাগে সেটা
আমি প্রথমে বন্ধুদের দিয়ে বলাই। পরে
নিজেই বলি। কিন্তু ও আমার প্রস্তাবে
রাজি হয় না। আবার রাজি না হবার
কোন কারণও বলে না মেয়েটা।
আমি পাগলের মত হয়ে যাই। ভালো
স্টুডেন্ট ছিলাম আগে, কিন্তু তখন
থেকে আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিই।
সিগারেট ধরি। আগে পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজ পড়তাম, কিন্তু তখন থেকে সব
শিকেয় ওঠে। আগে ছেলেদের সাথে
ভালো মিশতাম, কিন্তু তখন থেকে
কথা না বলার কারণে একের পর এক
ভালো বন্ধু হারাতে থাকি আমি।
আমি হাত কেটে ওকে রক্ত দিয়ে
চিঠি লিখে পাঠাই। ঘুমের ওষুধের
খালি বোতল পাঠাই। কিন্তু ও কোন
উত্তর দেয় না। ভিতরে ভিতরে আমার
পুরনো আমিটা মারা যেতে থাকে।
পরীক্ষা চলে আসে। আমি শুয়ে থাকি,
বসে থাকি। পোলাপান পরীক্ষা
দিতে যায়, আমি পাশ ফিরে শুই।
পোলাপান পরীক্ষা দিয়ে আসে, আমি
ব্রাশে পেস্ট মাখাই। পোলাপান
নেক্সট পরীক্ষার পড়া শুরু করে, আমি
ক্যান্টিনবয়কে ফোন করে আরেক
প্যাকেট সিগারেট রুমে দিয়ে যেতে
বলি।
ভাগ্য সহায়ই বলতে হবে, অবশেষে তার
দয়া হয়। আমার সাথে দেখা করে সে।
কতগুলো শর্ত জুড়ে দেয় আমার উপর।
এগুলো পূরণ করলে নাকি ও আমাকে
ভালবাসবে।
আমি শর্তগুলো শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে
থাকি। ক্ষণিকের জন্য আমার মনে হয়,
শর্তে যদি থাকে আমাকে এখন সাগরে
ঝাঁপ দিতে হবে তো আমি এখনই ঝাঁপ
দেব। শর্তে যদি থাকে কুমিরের সাথে
খালি হাতে যুদ্ধ করতে হবে তো এখনই
লেগে যাব মরণপণ যুদ্ধে।
কিন্তু শর্তগুলো শুনে আমি হতবাক হয়ে
যাই। ও বলে, “তোমাকে সব সাপ্লি
পরীক্ষা পাশ করতে হবে। নেক্সট যত
আইটেম আছে সব রেগুলার ক্লিয়ার
করতে হবে। প্রত্যেক সাবজেক্টে
টার্মে ভালো মার্কস ক্যারি করতে
হবে, প্লেস করলে তো আরও ভালো।
প্রফে খুব ভালো করতে হবে, ওয়ার্ডে
নিয়মিত ক্লাস করতে হবে, ওয়ার্ডের সব
দায়িত্ব নিয়মিত পালন করতে হবে।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় অবশ্যই নিয়ম করে
পড়তে বসতে হবে।
এখন থেকে সিগারেট নিষেধ, তাস
নিষেধ, রাত জেগে আড্ডাবাজি
নিষেধ। প্রতিদিন ভোরে উঠে নামাজ
পড়তে হবে, দৌড়াতে হবে, গোসল করে
ক্লাসে আসতে হবে। নিজের বিছানা
ও পোশাক আশাক সবসময় ফিটফাট
রাখতে হবে। চুল আঁচড়াতে হবে,
কাটতে হবে নিয়মিত।
বাবা-মার সাথে প্রতিদিন কমপক্ষে
দুবার ফোনে কথা বলতে হবে। বাবা-
মা কল দিলে যত বড় কাজই থাকুক না
কেন ধরতে হবে, মিসকল দিলে দেখার
সাথে সাথে ব্যাক করতে হবে। সব
আত্মীয় স্বজনকে সপ্তাহে অন্তত একবার
ফোন দিয়ে খবর নিতে হবে। এই
কাজগুলো পুরো এক বছর ধরে যদি করতে
পার, তবেই আমি তোমাকে ভালবাসব”।
বুঝতেই পারছেন ভাই, আমি এই শর্তগুলো
শুনে পুরো থতমত খেয়ে যাই। আমি
স্বপ্নেও ভাবি নি ও এই জাতীয় কোন
শর্ত দেবে। ও চায় আমি যেন একদিনেই
মিস্টার পারফেক্ট হয়ে যাই। কিন্তু যে
ছেলে একবার ছন্নছাড়া জীবনের স্বাদ
পেয়েছে, তার পক্ষে এক দিনেই মি.
পারফেক্ট হয়ে যাওয়া একটু কঠিন বইকি।
কিন্তু ঐ যে কথায় বলে, ভালবাসার
জন্য মানুষ সব করতে পারে? বিশ্বাস
করবেন কি না জানি না, আমি পরদিন
থেকেই একদম ভালো হয়ে গেলাম।
নিয়মিত ক্লাসে যাই, আইটেম দিই,
টার্ম দিই। আম্মাকে আগে তিনদিনে
একবার ফোন দিতাম, এখন দিনে
তিনবার ফোন দিই। তাসের প্যাকেট
ডাস্টবিনে ফেলে দিই, সিগারেট
কাটি কুটি কুটি করে। সবাই আমাকে
দেখে অবাক হয়ে যায়।
টার্মে আমি দুই সাবজেক্টে ফার্স্ট হই।
বাকিগুলোতেও খারাপ করি না। স্পষ্ট
বুঝতে পারি, আমার প্রতি সবার
দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে দ্রুতই।
এখন আর বন্ধুরা দেখলেই অশ্লীল কোন
কথা বলে আড্ডাবাজি শুরু করে দেয়
না। মেয়েরা দেখলেই মুখ বাঁকিয়ে
উলটো ঘুরে চলে যায় না। ব্যাচ
টিচাররাও অচিরেই আমাকে মার্ক
করা শুরু করেন, আমার আইটেম খারাপ
হলেই মনে করেন মহাপ্রলয় ঘটেছে।
প্রফ আসে। একাধিক সাবজেক্টে
অনার্স পেয়ে প্লেস করে বসি আমি।
বাবা-মার মুখে ফোটে অপার্থিব
হাসি। হাসি ফোটে বন্ধুদের মুখেও। শুধু
আমিই মুখ গোমড়া করে বসে থাকি।
অবশেষে শেষ হয় এক বছরের টাইমলাইন।
এক বুক আশা আকাঙ্ক্ষা সঙ্গী করে ওর
মুখোমুখি হই আমি।
ও বলে, “তুমি আসলেই একজন অসাধারণ
মানুষ। কিন্তু...একটা কথা জানা উচিৎ
তোমার”।
বুকের মধ্যে ছ্যাত করে ওঠে আমার।
“কি?”
ও বলে, “বছরখানেক আগে আমার
এনগেজমেন্ট হয়েছিল। এক মাস আগে
সেই মানুষটার সাথে আমার বিয়ে
হয়েছে। তোমাকে আগেই জানানো
উচিৎ ছিল, কিন্তু জানাই নি। ইন
ফ্যাক্ট, আমি আর আমার রুমমেট ছাড়া
কলেজের আর কেউ ব্যাপারটা জানে
না। আই অ্যাম সরি। তুমি আমাকে ক্ষমা
কোর”।
আমার স্বপ্নের পৃথিবী ছারখার হয়ে
যায়। ভাবনাচিন্তাগুলো কেমন যেন জট
পাকিয়ে যায়। হঠাৎ করে আমার মনে
হয়, আমার পায়ের নিচে যেন মাটি
নেই, আমার যেন কোন অবলম্বন নেই,
আমি যেন পড়ে যাচ্ছি নিঃসীম
শূন্যে, বিলীন হয়ে যাচ্ছি অতল
অস্তিত্বহীনতায়।
আমি ভাঙ্গা গলায় বলি, “তুমি
আমাকে আগে বল নি কেন?”
ও বলে, “সব মানুষ একরকম না। সবার
ভালবাসার বহিঃপ্রকাশও একরকম না।
আরও বড় হও, আমার কথাটার অর্থ বুঝতে
পারবে। আই অ্যাম সরি, চলি”।
ও আমাকে হতবাক করে সেদিন চলে
যায়। ওর সাথে আমি আর জীবনেও কথা
বলি নি। মেডিকেল থেকে বের হবার
পর আর ওর সাথে দেখা হয় নি আমার।
কবে যেন শুনেছিলাম ওর বর স্কিনের
অনেক বড় ডাক্তার, ওরা নাকি অনেক
সুখে আছে।
ভাই, সেদিনের পর থেকে আমার আবার
নষ্ট হয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল। বই ছেড়ে
আকণ্ঠ ডুবে থাকা উচিৎ ছিল মদ আর
গাঁজায়। রুমে বসানো উচিৎ ছিল জুয়ার
আড্ডা। একগাদা ঘুমের ওষুধ গেলার কথা
ছিল, হয়তো নিজের গলায় নিজেই
একটা পোঁচ বসানোর কথা ছিল আমার।
কিন্তু ভাই জানেন, আমি একটা আশ্চর্য
জিনিস লক্ষ্য করতে থাকি তখন থেকে।
আমি দেখি, সবাই আমাকে সমীহ করে।
ক্লাসের যে ছেলেটা আগে আমাকে
দেখলেই সিগারেট চেয়ে বসত, সে এখন
আমাকে দেখলেই রাস্তা ছেড়ে দেয়।
আগে যে মেয়েটা আমি ঢুকলেই লিফট
থেকে বেরিয়ে যেত, সে এখন
শ্রদ্ধাভরে আমার দিকে তাকায়।
আমার বিপদ আগে কাছের কিছু বন্ধুর
মাথাব্যথার কারণ হত, কিন্তু এখন আমার
সুখ দুঃখের ভাগীদার হতে চায় সবাই।
আমার হাসি সবার মন ভালো করে দেয়,
আমার দুঃখ সবার মুখ থেকে হাসি মুছে
দেয়। আমি এক ব্যাগ রক্ত চাইলে দশ
বারোটা হাত একসাথে আকাশের
দিকে উঠে যায়। আমি প্র্যাকটিকাল
খাতা চাইলে দেবার জন্য তখনই প্রস্তুত
হয়ে যায় সবাই।
বিশ্বাস করেন ভাই, মানুষের এই যে
শ্রদ্ধা, সমীহ আর ভালবাসা, এটার
জন্যেই আমি আবার আমার আগের পুরনো
অন্ধকারে ফিরে যাই নি। আমার
কাছে মনে হয়েছে, এক বছর কঠোর
সাধনা করে, সে যে কারণেই হোক,
আমি নিজেকে যে স্তরে নিয়ে
গেছি, এক মুহূর্তের ঝড়ে কিছুতেই
তাকে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়তে
দেয়া যায় না। কিছুতেই না। আর
তাছাড়া, ও হয়তো এটাই চেয়েছিল।
এটাই হয়তো ওর ভালবাসা, ও হয়তো
আমাকে সফল দেখতে চেয়েছিল,
পারফেক্ট দেখতে চেয়েছিল।
জানেন ভাই, ঠিক সেদিন যতটা
ফিটফাট, যতটা পাংচুয়াল ছিলাম,
এখনও ঠিক ততটাই আছি আমি। জীবনে
এর পুরষ্কার আমি অনেক পেয়েছি।
গাড়ি, বাড়ি, স্ট্যাটাস, সম্মান - কি
নেই আমার জীবনে? নিজের একটা
সংসারও থাকতে পারত আমার, অনেক
মেয়ে এবং মেয়ের বাপই আমার সাথে
সম্বন্ধ করবার জন্য পাগল ছিল, কিন্তু
হৃদয়ের সিংহাসনে একবার যাকে
বসিয়েছি, তার জায়গায় কি আর
কাউকে স্থান দেয়া যায়, বলেন ভাই?
ঐ যে ও বলেছিল না, “সবার
ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ একরকম না”?
আমার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ
হিসেবে অবিবাহিতই রয়ে গেছি
আমি। ওর জায়গায় আর কাউকে কল্পনা
করতেই মাথা কিরকম ঝিম ঝিম করত
আমার, কখনই মাথায় ঐ চিন্তাটা
আসতে দিতাম না আমি। এখনও দিই না।
বিশ্বাস করেন ভাই, এখনও আমি ওকে
আগের মতই ভালবাসি। আজীবন
ভালবাসব। ও আমাকে ভালবেসে
জীবনে সফলতার একটা পথ আমাকে
উপহার দিয়ে গেছে, তার প্রতিদান
না দিলে তো অপরাধ হবে, তাই না
ভাই?”
এতক্ষণ হা করে কাহিনী শুনছিলাম
ভদ্রলোকের। উনার কথা শেষ হতেই প্রশ্ন
করলাম, “আপনি ডাক্তার আগে বলেন
নি কেন? কোন মেডিকেল? কোন
ব্যাচ?”
উত্তর এল, “জি ঢাকা মেডিকেল। K-67
ব্যাচ। ২০০৯ সালে ঢুকেছিলাম”।
“আপনার নাম?”
“রাশেদ। ডাঃ রাশেদ, মনোরোগ
বিশেষজ্ঞ। আপনি?”
“আমিও ডাক্তার। ডাঃ মিরাজ। নাইস টু
মিট ইউ, ম্যান। আমি আপনার চার পাঁচ
বছর সিনিয়রই হব”।
গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। ডাঃ রাশেদ
এসেছেন এক আত্মীয়ের সাথে দেখা
করতে। এয়ারপোর্টের বাইরে রাস্তায়
একটা ট্যাক্সি থামালাম আমরা।
রাশেদকে উঠতে দিলাম প্রথম
ট্যাক্সিটায়। উনি চলে যাবার আগে
বললাম, “আপনার ভালবাসার নামটা
জানতে পারি?”
রাশেদ মুচকি হেসে বললেন, “পারেন।
ওর নাম শম্পা। সাদিয়া আফসানা
শম্পা। দুচোখের মধ্যে একটা তিল আছে,
আজও মনে আছে আমার”।
আমার বুকে কে যেন একটা বড় ধাক্কা
মারল। তবু মুখে ভদ্রতার হাসিটা ধরে
রেখে ভদ্রলোককে বিদায় দিলাম
আমি। ভদ্রলোক চলে গেলেন।
সাথে সাথে পকেট থেকে
মোবাইলটা বের করে অন করলাম আমি।
একটু পরেই কমপক্ষে দশটা মেসেজ এল
মোবাইলে। সবই বউয়ের নাম্বার থেকে।
কিন্তু আমার এখন ওগুলো দেখার সময়
নেই।
বউয়ের এক ক্লাসমেট ডাঃ মনীষার
নাম্বার ছিল আমার কাছে। ফোন
দিলাম। সে ধরে বলল, “কি খবর দাদা,
হঠাৎ মনে পড়ল?”
আমি বললাম, “আচ্ছা মনীষা তোমরা
যেন মেডিকেলের কোন ব্যাচ?”
সে বলল, “সে কি, আপনি ভুলে গেছেন?
২০০৯-১০ এর ব্যাচ, K-67”।
“আচ্ছা ঠিক আছে। ভালো থেকো,
হ্যাঁ? রাখি”। ফোন রেখে দিলাম
আমি।
একটু পরে বউকে ফোন দিলাম আমি।
দুবার বাজার পর ধরল ও। কাঁদো কাঁদো
অথচ দৃঢ় গলায় বলল, “কোন সমস্যা হয় নি
তো?”
আমি বললাম, “না”।
“ঠিকমত পৌঁছিয়েছ?”
“হ্যাঁ”।
“ট্যাক্সি ঠিক করেছ? ওরা কিন্তু ভাড়া
বেশি চায়”।
“এখনই করব”।
“বাইরের কিছু খাও নি তো? ওদের
পানি কিন্তু অত ভালো না, জার্মস
আছে”।
“না খাই নি”।
“অপরিচিত কারো সাথে খাতির করার
দরকার নেই, ঠিক আছে?”
“ঠিক আছে”।
একটু অপেক্ষা করে ও বলল, “মেসেজ
পেয়েছ?”
“হ্যাঁ পেয়েছি”।
“আমি সরি”।
“না আমি সরি”।
“না তোমার কোন ভুল নেই। আমি সরি”।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা শম্পা...”
“কি?”
“সব মানুষ তো একরকম না, তাই না?”
“না। কেন?”
“সবার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশও তো
একরকম না, তাই না?”
হঠাৎ একদম চুপ হয়ে গেল সে। তারপর বলল,
“এ কথা কেন বলছ?”
“আচ্ছা তুমি আমায় কখনও বল নি কেন...”
নাটকীয়ভাবে থেমে যাই আমি।
ওপাশ থেকে ভেসে আসে দ্বিধান্বিত
কণ্ঠস্বর, “কি বলি নি?”
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে আমি বলি,
“আমায় এত ভালবাস কেন?
.
#যান্ত্রিক_প্রহেলিকা