ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Monday, August 28, 2017

ফারিয়া আমার সামনে দাড়িয়ে।আমি অবাক হলাম!

.⛤⛤⛤"আমি স্বার্থপর⛤⛤⛤

সেদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটতেছিলাম হঠাৎ দেখি 
 ফারিয়া একা নয়,সাথে একটা ফুটফুটে মেয়েও দাড়িয়ে আছে। ও'র ডান হাতের আঙ্গুলগুলো ধরে।ফারিয়াকে প্রথমে কিছু জিজ্ঞাসা না করে বাচ্ছা মেয়েটাকেই জিজ্ঞাসা করলাম-আম্মু তোমার নাম কি? মেয়েটা জবাব দিল-অরনী।আমি বললাম-হুম খুব সুন্দর নাম মা'মনি।মেয়েটা একটু হাসল।হাসিটাও অনেক সুন্দর।তারপর ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে ফারিয়াকে জিজ্ঞাস করলাম।
-কেমন আছ?
-এইতো ভালোই।তোমার কি খবর?
-এইতো চলছে কোনরকম।তোমার মেয়ে কিন্তু দেখতে ভারী মিষ্টি।নামটা আরো বেশি।নামটা কে রেখেছে?
-আমি।তোমার নামের সাথে মিল রেখেই নামটা রেখেছি।
-এ তো তোমার পাগলামি।যাইহোক দেশে কবে আসছো?
-এই তো গতকাল।
-কতদিন আছো?
-এইতো একসপ্তাহের জন্য আসা।এক সপ্তাহ পরেই চলে যাবো।
-ও।তৌসিফ কোথায়?
-ও বাসায় আছে।বিশ্রাম নিচ্ছে।
-তাহলে একা বের হলে কেন? তুমিও বিশ্রাম নিতে।
-একা বের হলাম কোথায়? মেয়েকে নিয়েই তো বের হয়েছি।
-হুম।কোথাও যাবা?
-হুম একটু মার্কেটের দিকে যাব।অরনীর জন্য টুকটাক কিছু কেনা লাগবে।
-আচ্ছা তাহলে যাও।
-তোমার তাড়া আছে?
-তেমন না।তবে একটা টিউশনি ছিল।ওখানে পড়াতে যেতে হবে।কাল আবার স্টুডেন্টের পরীক্ষা।
-তুমি এখনোও চাকরি নাও নাই?
-না।
-তাহলে এখনো?.....
-হুম।
-চাকরির জন্য চেষ্টা কর নাই?
-করেছি।তিন-চার জায়গায় চাকরিও নিয়েছি তবে দু'তিন মাসের বেশি আর চাকরি করা হয়নি।
-কেন?
-অফিসের বস,অন্যান্য কর্মচারীদের আমার ভালো লাগত না।নিন্ম শ্রেণির মানুষদের উপর যারা অমানবিক অত্যাচার চালায়,যারা ক্ষণে ক্ষণে অন্যায় কাজ করে তাদের সাথে আমি কাজ করতে ইচ্ছুক নই।তাই চাকরিগুলো আর করা হত না। এখন তো আর চাকরির জন্য চেষ্টাও করিনা।
-তাহলে চলো কিভাবে?
-এইতো বাবার দোকানে একটু সময় দেই। দু'একটা টিউশনি করানো হয়।এভাবেই চলে যাচ্ছে।
-তুমি আর পরিবর্তন হলেনা।
-কি আর করার বল? প্রকৃতি কিছু মানুষকে এমন করেই রেখেছে।
-প্রকৃতির দোষ দিবেনা।দোষ তো তোমার নিজের।একগুঁয়েমির জন্য নিজের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছ।ভবিষৎ নিয়ে কোন চিন্তাই তোমার নাই!
-আবার শুরু করলে? আর রাস্তায় দাড়িয়েই কি সব কথা বলবে?
-না।
-তৌসিফকে সাথে করে বাসায় আইসো।
-আচ্ছা যাব।আংকেল আন্টি কেমন আছে?
-এইতো ভালোই।
-বিয়ে করেছো?
-না।
-কেন?
-আচ্ছা আমি তাহলে এখন যাই।পরে কথা বলি? তুমি তাহলে মার্কেটের দিকে যাও।ভালো থেকো।মা'মনি তুমিও ভালো থেকো।
ফারিয়ার সাথে দীর্ঘ ৭ বছর পর আবার দেখা হবে তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল।ফারিয়ার আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর আমি আর তাকে কখনো খুঁজিনি।শুনেছিলাম বিয়ের পর জামাই সহ অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছিল।খুঁজেও বা কি লাভ হত? আমি তো বয়স আর বেকারত্বের কাছে বন্দী ছিলাম;নিরুপায় ছিলাম।মেয়েটা আমায় খুব ভালোবাসত।সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে আমায় কত কিছু বলত।আমাদের বিয়ের পর সংসার কেমন হবে? কিভাবে সাজাবে? এই নিয়ে কত পরিকল্পনা।ও'র কিছু দুষ্টামি বাচ্চাদের মত মনে হত।আমি ও'র কান্ড দেখে শুধু হাসতাম;মাঝে মাঝে বিরক্তও হতাম।প্রায় সময় আমায় বলত,আমাদের সন্তান ন'জন হবে এবং ও একটা ক্রিকেট টিম গঠন করবে।টিমের নাম থাকবে একক সংসার টিম।সে টিমের কেপ্টেন আমি আর ফারিয়া ভাইস কেপ্টেন।ভালোই লাগত।ফারিয়া যেদিন ও'র বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা আমায় জানিয়ে ছিল তখন আমার মনে হয়েছিল এই পুরো আকাশটা আমার মাথায় ভেঙ্গে পড়েছে।আমার নৌকা অন্যকেউ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।ফারিয়াও অনেক কেঁদেছিল।অনেক্ষন আমায় বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল।আমি নিরুপায়;নিশ্চুপ হয়ে শুধু কষ্টগুলো সয়ে যাচ্ছিলাম।ফারিয়া বলেছিল পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি কিন্তু আমার নিরুপায়ের দৃশ্য দেখে ও বলে উঠল আমি নাকি খুব স্বার্থপর।তারপর ও চলে গেল।আমি বসে রইলাম।আর কোনদিন ফারিয়াকে খুঁজিনি।সত্যিই আমার কিছু করার ছিল না।মনে মনে ফারিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম।সুখে থাকুক আল্লাহর কাছে সেই প্রার্থনাই করেছিলাম।
দু'দিন পর আমি বাহিরের থেকে এসে দেখি ফারিয়া মা'য়ের সাথে বসে কথা বলছে।বাবাও পাশে বসে আছে।আমি ভিতরে প্রবেশ করেই ফারিয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম।
-কখন এলে?
-এইতো এক থেেক দেড় ঘন্টা হবে।
-ও।অরনী কোথায়? তৌসিফ ভাই?
-অরনী আন্টির রুমে ঘুমাচ্ছে।তোসিফ একটু কাজে এক জায়গায় গিয়েছপ।বলল কাজ শেষ করপ রাতে আসবে।
-আচ্ছা।তাহলে তুমি মা'য়ের সাথে কথা বল।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।তারপর অরনীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে ও'র সাথে কথা বলব।বাবার দিকে তাকিয়ে বাবাকে বললাম-কি ব্যাপার বাবা,তুমি দোকান খুলোনি? বাবা জবাব দিল-খুলেছি তো।ফারিয়া মা'কে দেখে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে এলাম।
বাবা এমনি করত।যখনি ফারিয়া আমাদের বাসায় আসত তখনি উনি দোকান বন্ধ করে চলে আসত।ফারিয়ার সাথে আড্ডা দিত।আমি ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে ডুকতেই ফারিয়া ডাক দিল।
-আমিও তোমার রুমে যাব।
-কেন?
-কেন আবার? তোমার রুমে কি যেতে মানা?
-না।
-তাহলে? আন্টি বলল আমি যাওয়ার পর তুমি নাকি কাউকেই তোমার রুমে ডুকতে দাওনি? লক করে বাহিরে যাও।রুমে থাকলে দরজা লক করে থাক? তাছাড়া আমি বাসায় এসেও দেখি রুম লক করা।
- ও তেমন কিছুনা।দেখ তো অরনী উঠেছে কিনা?
-রুম খুলো আগে।তোমার রুমটা একটু দেখি।কতদিন হল তোমার রুমে যাওয়া হয়নি।তোমার বিছানায় শোয়া হয়নি।তোমার টেবিলে বসা হয়নি।বেলকোনিতে বসে গল্প করা হয়নি।
-পাগলামি করনা।তুমি অরনীকে জাগাও?
-কেন অরনীকেই শুধু তোমার রুমে ডুকতে দিবা নাকি? আমি ডুকতে পারব না?
নিষেধ আছে?
-তা তো বলিনি।
মা দূর থেকে ফারিয়াকে বলে উঠল,পাগলকে রাগাইসনা।ফারিয়া বলে উঠল,ওর রাগকে কে ভয় পায়? অরনীও ঘুম থেকে উঠে পরল।ফারিয়া জোর করেই আমার হাত থেকে রুমের চাবিটা নিয়ে দরজার লক খুলে ফেলল।মা এবং বাবা দূরেই দাড়িয়ে আছে।দরজা খুলে রুমে ডুকেই ফারিয়া কাঁদতে শুরু করল।ড্রিম লাইটের আলোতে সারা রুমের দেয়াল জুড়ে ওর ছবি আর ছবি আর ও'কে নিয়ে লিখা ছোট ছোট কবিতাগুলো।আমি রুমের দরজার সামনেই দাড়িয়ে ছিলাম। তারপর ও'র কান্নার আওয়াজ শুনে দরজার কাছ থেকে সরে এলাম।অরনীও ঘুম থেকে উঠে গেছে।আমায় দেখেই আবদার করে বসল গল্প শুনাতে।অরনীকে আমি গল্প শুনাচ্ছি।ফারিয়া কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বের হয়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে আরো বেশি করে কাঁদতে শুরু করল।আমি আবেগীপ্রবন হয়ে পরলাম।আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করে ও'কে বলে উঠলাম,ফারিয়া ছাড়! এইসব কি হচ্ছে? অরনী,মা-বাবা সামনে আছে।ছাড়! মা-বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি উনারা কাঁদছেন।আর অরনী হাসতেছে।শুধু আমার চোখেই জল নেই।ফারিয়ার কাঁদো কন্ঠে বলে উঠল।
-তুমি আমায় এখনো ভালোবাসো?
-এখন আর এইসব বলে কি লাভ?
-না তুমি বল, আমায় এখনো ভালবাসো?
-হুম অনেক ভালবাসি।
-তুমি বিয়ে কর নি কেন?
-একজনকে ভালবেসে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করব কিভাবে, বল?
-তাহলে সেদিন আমায় আটকালে না কেন?
কেন পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার জন্য রাজি ছিলেনা?
-আমি নিরুপায় ছিলাম।জানো ফারিয়া তুমি আমায় যেদিন ছেড়ে চলে গিয়েছিলে সেদিন মনে হয়েছিল আমি মনে হয় আমার তৃতীয় রত্নটা হারিয়ে ফেলেছি।তুমি আমায় বলেছিলে না আমি খুব স্বার্থপর? হুম ফারিয়া আমি স্বার্থপর; খুব স্বার্থপর।কারন যে নিজের সাথে স্বার্থপরতা করতে পারে তার চেয়ে বড় স্বার্থপর আর কে হতে পারে?
ফারিয়া নিশ্চুপ হয়ে গেল কিন্তু ও'র চোজের জল থেমে নেই।অরনী বসা থেকে হঠাৎ বলে উঠল-জানো আঙ্কেল আমি না তোমায় অনেক আগে থেকেই চিনি।বিদেশে আম্মু প্রায় সময় তোমার ছবি দেখিয়ে আমাকে আর আব্বুকে তোমাদের প্রেমের কথাগুলো বলত।আমিই তোমাকে দেখার জন্য আব্বুর কাছে বায়না করি আর আব্বু ছুটি পেয়েই আমাদেরকে দেশে নিয়ে এসেছে।আব্বুও তোমাকে দেখতে চেয়েছিল।অরনীর কথাগুলো শুনে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে আমার কঠিন মনও কাঁদতে শুরু করে দিল।মেয়েটা এত ভালবাসে আমায়? একটুপর তৌসিফ সাহেব বাসায় আসল।তারপর সবাই একসাথে বসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম।তারপর ফারিয়া,অরনী,তৌসিফ সবাই চলে গেল।আর হয়ত দেখা হবেনা।ফারিয়া যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল যেন বিয়ে করে নেই।আমি আমার রুমে চলে গেলাম।দরজাটা লক করে দেয়ালে ও'র ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে আবেগ জড়িতে বলে উঠলাম,জানো ফারিয়া আমি স্বার্থপর।সত্যিই আমি খুব স্বার্থপর।তোমায় ভালবেসেও আজও আমি স্বার্থপর।

"#Bristi_patuiary
-

Sunday, August 27, 2017

আমি বেশ্যা নই। গল্প:


============
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেবা একমনে তাকিয়ে আছে গলার কাছে বাদামি দাগটির দিকে, যেন একটা মোটা শুঁয়ো  পোকা। দাগটির দিকে তাকিয়ে ওর গতরাতের সব আদরের কথা মনে পড়ছে, প্রতিটা মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে আর সেই সাথে দৃঢ় হচ্ছে প্রতিজ্ঞা, খুনটা তাকে করতেই হবে।
এক ঝটকায় গায়ের হাল্কা গোলাপি ম্যাক্সিটা দু কাঁধ গলিয়ে নামিয়ে দিল রেবা। শ্যামলা ত্বকের নীচ থেকে যেন চাপা কোমল আলো বের হচ্ছে। ওর চোখ ধীরে ধীরে গলা থেকে নেমে যাচ্ছে, আরও দাগ আছে এদিক ওদিক, সব মিলিয়ে পাঁচটি। কিশোরীর মতো উন্নত বুক দুটো যেন চির বিদ্রোহী মৌন সৈনিক। মসৃণ পেট, গভীর নাভি, বেতের মতো কোমর, ভারী নিতম্ব আর কলা গাছের মতো চকচকে উরু সবই ওর শত্রু পক্ষ। এই শরীর নিয়ে একসময় চাপা অহংকার ছিল। আর ছিল গোপন সুখ, বড্ড বেশি ভালোবাসতো তারেক। তখন জানতো না, এই শরীরই  একদিন কী ভয়ানক শত্রুতা করবে ওর সাথে। 
পরিষ্কার মনে আছে সেই দিনটির কথা। তারেকের ডায়ালাইসিস শুরু হবে দুদিন পরেই। দুটো কিডনিই  কাজ  করছে না এই খবরে ওদের ছোট্ট সুখী পরিবারটায় যেন ধ্বস নেমেছে। গত দুমাস ধরেই তারেক ছুটিতে আছে। চাকরিটা মনে হচ্ছে না আর রাখা যাবে, প্রাইভেট কোম্পানি বলে কথা। বড় মেয়ে রুমকির বয়স এগার, ও অনেক কিছুই বুঝতে পারছে আর সারা দিন মুখ কালো করে ঘুরছে। বাবার আহ্লাদী মেয়ে, ওকে সামলানো এক কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চার বছরের রনি  তেমন কিছু বুঝতে পারছে না, না বুঝে সবাইকে বিরক্ত করছে  আর অকারণে ধমক  খাচ্ছে। রেবা পরিষ্কার বুঝতে পারছে সামনে ঘোর  আঁধার, ওর এই অফিস সহকারীর চাকরিটাই একমাত্র সম্বল। সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে, ওর বস জামান সাহেব তারেককে দেখতে এলেন অফিস ফেরত, একাই এসেছিলেন। তারেকের ঘরে বসে দু চারটা ভদ্রতার কথা বলে আয়েশ করে  এসে ড্রয়িং রুমে বসলেন। 'আজ তোমার হাতের চা না খেয়ে উঠছি না।' রেবার দিকে তাকিয়ে বেশ  ঘনিষ্ঠ ভাবে বলেছিলেন। বোকা রেবা বুঝতে পারেনি সেদিন। আর বুঝবেই বা কীভাবে। ষাটের কাছাকাছি জামান সাহেবের সুখী, বিবাহিত জীবন। ছেলে, মেয়েরা যার যার সংসার নিয়ে বাইরে থাকে। সাহস করে বলে ফেলেছিল 'স্যার সে তো রোজই খান অফিসে, এ আর নতুন কী?' 
'অফিস আর বাসা কী এক হোল? অফিসে কী আমি তোমার এই তাজা, খাঁটি রূপ দেখতে পাই বল?' বলেই হাহা করে হেসেছিলেন ওর বুকের  দিকে তাকিয়ে। ওনার দৃষ্টি অনুসরণ করে রেবা দেখতে পেলো তাড়াহুড়োয় জামার সামনের দুটো বোতাম লাগাতে ভুলে গেছে, বাসায় কেউ থাকে না বলে ওড়নাও পরে না ও সচরাচর। যা গরম পড়েছে, পাতলা ফিনফিনে এক সাদা জামার নীচে কালো অন্তর্বাস পুরো দেখা যাচ্ছে। থতমত খেয়ে কিচেনে পালিয়ে বেঁচেছে তখন। চা আনার সময় ওড়নাটা গায়ে দিতে ভুলে নি। 
'আগেই তো বেশ লাগছিল' আরেক দফা হাসি। 
যাওয়ার সময় জামান সাহেব জোর করে ওর হাতে হাজার বিশেক টাকা গুঁজে  দিয়েছিল, রেবা নিতে চায় নি একদম। 'এতো বছর আমার সাথে কাজ করো, এখনো  আমাকে চিনলে না, পরই ভাবো?' স্যার কিছুটা আবেগপ্রবণ মানুষ, রেবা সেটা জানে, কে জানে হয়তো ওর দুঃসময়ে ওর মন ভালো করতে চাইছে। 
'এতো সঙ্কোচের কী আছে? কোনভাবে পুষিয়ে দিও।' ওর হাত দুটো চেপে ধরে রহস্যময় ভাবে বলেছিলেন জামান সাহেব। আজ বুঝতে পারে, সেদিন তার হাত দুটো একটু বেশিক্ষণই ধরেছিল রেবার হাত।  
তারেকের জন্য দুহশ্চিন্তায় বেশি কিছু ভাবতে পারে নি সেসময়। ওর শ্বশুর শাশুড়ি  নেই। বাবা, মাও ঢাকায় থাকে না। বাচ্চাদের দেখাশোনা কে করবে আর রুগীর সাথেই বা কে থাকবে? জামান সাহেবকে একদিন কথায় কথায় ওর দুহশ্চিন্তার কথা বলে ফেলেছিল। বসের রুম, দরজা ভেজানো ছিল। অনুমতি ছাড়া কারো প্রবেশ নিষেধ। রেবার অশ্রু টলমল চোখে চোখ রেখে, এক হাতে থুঁতনি ধরে বলেছিলেন 'কিচ্ছু চিন্তা করো  না, সব ব্যাবস্থা করে দেব আমি।' একই সাথে অসস্থি লেগেছিল আর অবাক হয়েছিল রেবা। ও ভাবতেও পারে নি, পরের দিন বিকেলে জামান সাহেব সত্যি সত্যি এক  নার্স নিয়ে এসে হাজির হবেন। বিদায় নেওয়ার সময় হতবিহবল রেবা বলেছিল 'স্যার, আপনি তো সবই জানেন, নার্সের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। আমি এখন কী করবো?' জবাবে রেবাকে  বিস্মিত করে দিয়ে ভেজানো দরজার আড়ালে ওকে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে বলেছিলেন 'তুমি শুধু হাসি, খুশি থাকো সেক্সি, তাহলেই হবে, আর আমার দিকে মাঝে মাঝে একটু নজর দিও, বাকিটা অফিস সামলাবে।' তীব্র ঘৃণায় মাথা নিচু করেছিল রেবা। না সেদিন কোন প্রতিবাদ সে করে নি, প্রতিবাদ করলেই চাকরিটা যাবে। জামান সাহেব এই প্রাইভেট কোম্পানির সর্বময় কর্তা। চাকরি গেলে এই অসুস্থ স্বামী আর বাচ্চা দুটো নিয়ে কোথায় যাবে সে? 
তার  পর প্রতিদিন আবদার বেড়েছে জামান সাহেবের। এখন প্রায় প্রতিদিনই আসে। তারেক কতোটা বুঝতে পারে, সেটা জানে না রেবা। তবে যেদিন  দুপুরে অসময়ে অফিস থেকে রেবাকে নিয়ে চলে এসেছিলেন, রেবার নিজেকে একটা খাঁচায় বন্দি অসহায় প্রাণী মনে হচ্ছিল। তারেক ওর ঘরে ঘুমুচ্ছে। রনি  ওর পাশেই ঘুম আর রুমকি স্কুলে।  'আমার খুব টায়ার্ড লাগছে, রুমকির ঘরে যাচ্ছি, তুমি একটু ফ্রেশ হয়ে এসো।'  অবাধ্য হওয়ার  সাহস ছিল না রেবার। ইচ্ছে করছিল শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করতে, পারে নি। বরং তারেক আর রনি ঘুমাচ্ছে নিশ্চিত করে অভিসারিণীর মতো পা টিপে টিপে এসেছিল মেয়ের ঘরে। ভারী পর্দা টেনে দিয়েছিল যেন প্রতিবেশীরা কিছু না দেখে। বন্ধ ঘরের আলো আধারিতে সেদিন অনেক আদর করেছিল জামান সাহেব। নিজের অসুখী দাম্পত্যের কথা, বদ মেজাজি স্ত্রীর অত্যাচারে তার রোম্যান্টিক মনটার অপমৃত্যুর কথা, নিজের একাকীত্বের কথা  বলেছিল, আরও বলেছিল রেবা কত  সুন্দর, কোমল, কত আকর্ষণীয়, রেবাকে তার কত ভালো লাগে ইত্যাদি। বয়স ষাটের কাছাকাছি হলেও জামান সাহেব যথেষ্ট সুপুরুষ। তার উষ্ণ আলিঙ্গনে রেবার দীর্ঘ উপোষী যুবতী শরীরটা মোমের মতো গলে  যাওয়ার পরিবর্তে বরফের মতো শীতল আর শক্ত হয়ে ছিল।  জীবনের সবচেয়ে বেশি কেঁদেছিল সে সেদিন।  জামান সাহেব  চলে যাওয়ার পর এক ঘণ্টা ধরে ডলে  ডলে  গোসল করে যখন চামড়া লাল করে ফেলেছিল, তারেক ওর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে ছিল। সে রাতেই ওর স্ট্রোকটা হয়। তার পর থেকে কথা  বন্ধ। 
তারেকের চিকিৎসার আর কোন অসুবিধা হচ্ছে না, জলের মতো টাকা খরচ করছে জামান সাহেব। তারেকের জন্য চব্বিশ ঘণ্টার নার্স আছে, সে রনিকেও দেখা  শোনা করে। সোমা খালাকে পেয়ে রনিও বেজায় খুশি। শুধু রুমকিটা বড্ড চুপচাপ হয়ে গেছে আজকাল। মায়ের চোখের দিকে পারত পক্ষে তাকায় না সে। জামান সাহেব তার অনেক দয়ার  সাথে একটি ভদ্রতা করেছেন, রাতে যখন রুমকি বাসায় থাকে তখন তিনি রেবাকে পুরোটা চান না,  আড়ালে আবডালে চুমো টুমো খেয়ে, ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে চলে যান। অফিসেও তার প্রেমের জোয়ার  আসে আজকাল প্রতিদিনই। চা দিতে গেলে, কোমর জড়িয়ে একটু আদর নিত্যদিনকার অভ্যাস হয়ে গেছে। রেবার শরীরটা বুঝি যন্ত্র হয়ে গেছে একটা, মনটা পাথর। জামান সাহেব যখন আদর করে বলে ' মাই গড, ছত্রিশেও তুমি দিব্যি বাইশের ফিগার ধরে রেখেছ।' ওর তখন বমি পায়। 
কাল রাতে শরীর খারাপের অজুহাতে ওদের বাড়িতে থেকে গিয়েছিল জামান সাহেব। ড্রয়িং রুমে যখন তার বিছানা করে দিচ্ছিল তখন আলতো করে গাল ছুঁয়ে বলেছিল 'রাতে মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে চলে এস কিন্তু'। তখনো কিচ্ছু বলতে পারে নি রেবা। রুমকি ঘুমানোর পর চোরের মতো পা টিপে টিপে এসেছিল। পুরোটা সময় ঘেন্নায় গা রি রি করছিল আর বুকের ভিতরে প্রচণ্ড ভয় পাথরের মতো চেপে ছিল। প্রবল আতঙ্কে খেয়াল করে নি কখন যেন রুমকি জেগে উঠে পানি খেতে বসার ঘরের পাশের ডাইনিং রুমে চলে এসেছে। প্রচণ্ড বিস্ময় নিয়ে সে দেখছে ড্রয়িং রুমের ডিভানে দুটো আধা নগ্ন ছায়া, ছায়া দুটোর একটা  যে তার মা এ ব্যাপারে তার সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড ভয়ে  চিৎকার করে উঠলো রুমকি 'মা, ও মা।' 
আতঙ্কে জমে গেছে রেবা, মনে মনে খালি ঘুরপাক খাচ্ছে কয়েকটি  কথা 'আমি বেশ্যা নই, আমি তোমাদের মা, তারেকের স্ত্রী।' আর তখন থেকেই খুনের চিন্তাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। খুনটা তাকে করতেই হবে। যেমন করেই হোক।

আংকেল কি সত্যি তোমার বিয়ে ঠিক করেছেন??...!!

--নিহা,, ক্লাস তো শেষ... বাসায় যাবেনা...?? (আরশ)
-- (নিহা চুপ করে অসহায়ের মতো আরশের দিকে তাকিয়ে আছে)...!!
--আজব তো, এরকম বোবার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো?? বাসায় যাবেনা...??
--আরশ, আমি আর বাসায় ফিরে যেতে চাইনা,, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে... আজকেই মনে হয় আমার শেষ ক্লাস... আমি আর বাসায় ফিরে যাবোনা...!!
--হিহিহি,, মজা করতে করতে এখন নিজের বিয়ে নিয়েও মজা করা শুরু করছো...? মাত্রই তো আমরা অনার্স ২য় ইয়ারে উঠলাম,, এখন আবার কিসের বিয়ে?? ফান বন্ধ করো প্লিজ...!!
কথাটা বলে নিহার চোখের দিকে তাকায় আরশ,, নিহার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে... এই পানিটুকু আর যাইহোক, কখনো মজা হতে পারেনা...!!
--আংকেল কি সত্যি তোমার বিয়ে ঠিক করেছেন??...!!
আরশের প্রশ্নের উত্তর মুখ দিয়ে দিতে পারেনা নিহা,, কাঁদতে কাদঁতে মাথা নেড়ে হ্যা সূচক উত্তর দেয় সে...! নিহা আরশের হাত ধরে বলে-
--আরশ,, বাবা এবার সত্যি সত্যি আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে... ছেলে  অনেক ভালো জব করে,, বিয়ের পর আমাকে স্টাডিও করতে দিবে... এরকম পাত্র বাবা কখনোই হাতছাড়া করবেন না,,, কিন্তু আমি যে তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কখনো কল্পনাও করতে পারিনা... আমি তোমাকে না পেলে সত্যি মরে যাবো... কিছু একটা করো প্লিজ,, আমাকে এখন তোমার বাসায় নিয়ে যাও...!!
নিহার কথা শুনে নিহার চোখের দিকে তাকায় আরশ,, এরকম কান্না করতে মেয়েটাকে সে কখনোই দেখেনি... আরশ নিহার চোখের দিকে তাকিয়ে শক্ত করে নিহার হাতটা ধরে বলে-
--আমি আছিতো,, বিশ্বাস রাখো আমার উপর... আমি নিশ্চই কিছু একটা করবো... আমাকে আজকের দিনটা সময় দাও প্লিজ... তুমি এখন বাসায় যাও, আমি দেখি কি করা যায়...!!
আরশের কথা শুনে ডান হাত দিয়ে চোখটা মুছতে মুছতে বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করে নিহা... তার মনে আরশের উপর অনেকটা বিশ্বাস,, আরশ নিশ্চই কিছু একটা করবে... নিশ্চই করবে...!!
.
নিহার বিয়ে হয়ে যাবে শুনার পর আরশের মাথা একদম কাজ করছেনা... মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, "কি করে নিহার বিয়ে বন্ধ করা যায়"... কি করে...?? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আম্মুর রুমের দিকে হাটাঁ শুরু করে আরশ...!!!
--আম্মু,, তোমার সাথে আমার একটা জুরুরি কথা আছে...!!
ছেলের মুখে জুরুরি শব্দটা শুনে আরশের মুখের দিকে তাকালেন মিসেস মেহরাব,, আরশের চেহারাটা প্রচন্ড সিরিয়াস টাইপের মনে হচ্ছে...
 এরকম চেহারা আরশের খুব একটা দেখা যায়না...!!
--কিছু হইছে বাবা?? কোনো সিরিয়াস কিছু...??
--হুম আম্মু,, আমি কথাটা কিভাবে তোমাকে বলবো বুঝতে পারছিনা,, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি তুমি আমার প্রবলেমটা বুঝবে...!!
--আরশ,, আম্মুকে সব খুলে বলতো,, হইছে টা কি??...!!
--আম্মু, আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি...!!
ছেলের মুখে কথাটা শুনে মুচকি হাসি দিলেন মিসেস মেহরাব... আরশের গালে আলতো করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললেন-
--উফফফ,, ধুর বোকা ছেলে, এই কথাটা বলার জন্য তুই এরকম মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলি...?? আমি আরো ভাবলাম কি না'কি... ভালোবাসিস এটা তো ভালো কথা,, মেয়েটাকে একদিন নিয়ে এসে আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিস...!!
--আম্মু,, আমি মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাই...!!
--হুম বিয়ে করবি তো,, আমি আর তোর পাপা সবসময় তোর পছন্দ সবার আগে রাখি,, এবার ও রাখবো... মেয়েটাকে নিয়ে আয় একদিন, আমরা কথা বলি ওর সাথে... তারপর তোর পড়া শেষ হয়ে গেলে আমরা ওর বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবো...!!
--না আম্মু,,, অনেক দেরি হয়ে যাবে... আমি ২-৩দিনের মধ্যেই বিয়েটা করতে চাই আম্মু...!!
আরশের মুখে ২-৩দিন শুনে মিসেস মেহরাবের হাসিভরা মুখটা মুহৃর্তের মধ্যেই কালো হয়ে গেলো... মাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়া ছেলের মুখে এরকম কথা শুনতে হবে এটা তিনি কখনোই কল্পনা করেন নি...!!
--তোর মাথা ঠিক আছে আরশ?? তুই এখন মাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে... এখন তোর ক্যারিয়ার গড়ার সময়,, বিয়ে করার নয়...!!
--আম্মু, এখন বিয়ে না করলে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে চিরদিনের জন্য হারাতে হবে... তুমি পাপাকে একটু বুঝাও আম্মু,, প্লিজ...!!
--জাস্ট চুপ করো আরশ,, ছোট থেকে তুমি যা চাইছো তাই দিয়ে আসছি,, কিন্তু তোমার এই আবেগ আর পাগলামিটাকে আমরা কখনোই মেনে নিবনা... তুমি কি করে ভাবলে এই কথাটা আমি তোমার পাপাকে গিয়ে বলবো??...!!
--আম্মু প্লিজ,, এরকম করিওনা,, একটু শুনো আমার কথা...!!
--আমি বলছিনা চুপ থাকতে,,, কি করে তোমার মাথায় এসব চিন্তা আসে?? তোমার পাপা শুনলে কতোটা কষ্ট পাবে একবার ও ভাবছো?? ওনার স্বপ্ন তুমি,, ওনার এতো কষ্ট করে টাকা ইনকাম কারন তুমি,, ওনার রাতে ঘুম না আসার চিন্তা তুমি,, শুধুই তুমি... সেই পাপা যদি শুনেন তার ২০বছরের ছেলে পড়াশুনায় মন না দিয়ে বিয়ে করতে চাইছে, তখন তার অবস্থা কি হবে একবার ও ভাবছো?? নিজের রুমে গিয়ে কথাগুলো চিন্তা করে দেখো... এখন যাও এখান থেকে...!!
আম্মুর কথা শুনে অসহায়ের মতো রুমে চলে যায় আরশ...!! ঠিক এই মুহৃর্তে আরশের কি করা উচিত আরশ সেটা জানেনা...  সে শুধু জানে, তার পাপাকে সে কষ্ট দিতে পারবেনা,, কখনোই না...!!
.
পরেরদিন সকালে ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আরশের জন্য অপেক্ষা করছে নিহা... আরশকে রিক্সা থেকে নামতে দেখেই দৌড়ে আরশের কাছে যায় সে..!!
--আরশ,, আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম...!!
--আমাকে ভুলে যাও নিহা...!!
আরশের মুখ থেকে এরকম কথা শুনার জন্য একদম রেডি ছিলোনা নিহা,,, কথাটা শুনেই বিশাল রকমের ধাক্কা খেলো সে...!!
--কি বললে আরশ??..
--আমাকে ভুলে যাও তুমি,,, যদি এখন আমি তোমাকে বিয়ে করি, তাহলে আমার পাপা-আম্মু অনেক কষ্ট পাবে,, তোমার আব্বু-আম্মুও অনেক কষ্ট পাবে... ওনাদের কষ্ট দিয়ে আমরা কখনোই সুখি হতে পারবনা নিহা,, তার চাইতে ভালো এটাই হবে যে, তুমি তোমার আব্বুর পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলো... (কথাগুলো নিচের দিকে তাকিয়ে বললো আরশ, নিহার মুখের দিকে তাকিয়ে তার পক্ষে কথাগুলো বলা সম্ভব ছিলোনা)...!!
--আরশের মুখে কথাগুলো শুনে ২পা পিছন দিকে হেটেঁ গেলো নিহা,, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে করতে আরশকে বললো-
--ঠিক আছে, তুমি যেটা চাও সেটাই হবে...!!
এই মুহৃর্তে কান্না করতে করতে আরশের কাছ থেকে একটু একটু করে দূরে চলে যাচ্ছে নিহা... আরশ একবার ও ফিরে তাকাচ্ছে'না নিহার দিকে,,, কোনো একটা অজানা ভয় কাজ করছে তার ভিতর... নিহার চোখের পানি দেখে যদি তার ভিতর মায়াটা বেড়ে যায়?? যদি নিহাকে আটকাতে মন চায়?? তাই নিহার দিকে তাকাবেনা সে,, হয়তো এটাই আরশ আর নিহার শেষ দেখা... হয়তো এটাই শেষ কথা...!!
.
"""২বছর পর"""
.
নিহা নামের মেয়েটার আজকে বিয়ের ২বছর পূর্ণ হলো,,, একটা ৬মাসের ছেলেও আছে তার... বিয়ের প্রথম বছর আরশকে খুব মনে পড়তো নিহার,, কিন্তু একটা সন্তান হওয়ার পর আরশকে এখন আর প্রতিদিন মনে পড়েনা,, মাঝে মাঝে তার মনেহয় ২বছর আগে আরশ নামে তার লাইফে কেউ একজন ছিলো... কেউ একজন...!!
.
আরশ নামের ছেলেটার কিছুদিন আগেই অনার্স কমপ্লিট হলো,, এই ২বছরে পড়াশুনায় খুব একটা মন দিতে না পারলেও রেজাল্ট খুব একটা খারাপ হয়নি,, এই ২বছরে এমন একটা রাত নেই, যে রাতটা সে নিহাকে মিস করেনি... নিহার জন্য কতোবার যে তার চোখের পানিতে বালিশটা ভিজেছে, তার হিসাব কেউই জানেনা...!! তারপরেও সে প্রতিদিন সকালটা একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে শুরু করে, হাসিটা স্রেফ তার পাপার জন্য,, তার আম্মুর জন্য...!!
.
'""আরো ৩ বছর পর"""
.
নিহা নামের মেয়েটা এখন ২সন্তানের মা,, গতবছর সে আরো একটা ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়... এইতো ৫বছর আগেও আরশ নামে তার লাইফে কেউ একজন ছিলো, নিহার সেটা এখন আর মনে পড়েনা... নিহার মাথায় এখন ১টাই চিন্তা, তার ২টা ছেলের ফিউচার সুন্দর করতে হবে... ওদের মানুষের মতো মানুষ বানাতে হবে...!!
.
আরশ নামের ছেলেটা এখন পড়াশুনা শেষ করে ভালো একটা জব করে,, পাপা আর আম্মুর মুখে হাসি দেখেই শুরু হয় তার প্রতিটাদিন,, কিন্তু আজও কোনো একটা রাতে ঘুমাতে যাবার সময় তার একা লাগে,, খুব একা লাগে... নিহা নামের কেউ একজন এখন অন্য কারো পাশের বালিশে ঘুমিয়ে আছে, কথাটা ভাবতেই তার বুকটা ধুক করে উঠে... হয়তো নিহার পাশের বালিশটায় আজকে তার থাকার কথা ছিলো...! তাই একটা দীর্ঘশ্বাস আজও থেকে গেছে আরশের মনের ভিতর...!!!
.
--বাবা আরশ,, এখন তো তোমার লাইফটা ভালোই গুছিয়ে নিয়েছো... এবার আমরা একটা বউমা নিয়ে আসি..?? (মিঃ মেহরাব)...!!
পাপার প্রশ্ন শুনে আরশ মুচকি হেসে বলে-
--ভুল বললে পাপা, লাইফটা আমি গুছিয়ে নেইনি,, তুমিই গুছিয়ে দিয়েছো... আর বউমা?? সেটা তোমাদের যা ভালো মনে হয় তাই করো...!!
--ঠিক আছে,, তোমার তাহলে কেমন মেয়ে পছন্দ আমাদের বলো??...!!
"কেমন মেয়ে পছন্দ" প্রশ্নটা শুনেই আরশ আনমনা হয়ে যায়,, চোখের সামনে ভেসে উঠে নিহার মুখের ছবি,,, ওর দুষ্টুমি,, ওর কেয়ারিং সবকিছু আরশের চোখের সামনে ভাসতে থাকে... মুহৃর্তের মধ্যেই ৫বছর আগে চলে যায় আরশ...!!
--এই আরশ,, কোথায় হারিয়ে গেলে??...
পাপার ডাক শুনে কল্পনা কাটে আরশের... পাপাকে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে-
--বললাম তো পাপা, তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো... আমার তেমন কোনো পছন্দ নেই...!!
--আমি জানতাম তুমি এটাই বলবে... এইজন্য আমি আগে থেকে সব ঠিক করে রেখেছি... ছবিটা দেখোতো  পছন্দ হয় কি'না?? (পকেট থেকে একটা ফটো আরশের দিকে বাড়িয়ে দিলেন মিঃ মেহরাব)
আরশ ফটোটা হাতে নিয়ে না দেখেই বলে-
--দেখতে হবেনা পাপা,, আমি জানি তোমার পছন্দ কখনোই খারাপ হতে পারেনা... তুমি আমার জন্য যেটাই করবে, ভালোর জন্যই করবে...!!
--আমার ছেলের মুখ থেকে এটাই এক্সেপ্ট করছিলাম,, মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর,, অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে,, বিয়ের পর আমাদের এখানে থেকেই অনার্স কমপ্লিট করবে...!!
অনার্স সেকেন্ড ইয়ার কথাটা শুনে বুকটা ধুক করে উঠলো আরশের... হয়তো আরো একটা নিহা তার লাইফে আসতে চলেছে... হয়তো আরশের মতো অন্য কোনো আরশের চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে নির্ঘুম রাত কাটানোর সময় এসে গেছে... হয়তো...!!
.
পৃথিবীর হাজারো কোণায় এভাবেই চলছে হাজারো আরশ-নিহার গল্প... গল্পগুলো চলছে, চলবে... এভাবে চলতেই থাকবে...!!!  😊 😞 ✌

Thursday, August 24, 2017

প্রতারণা চিরকুটের ভালোবাসব



ইন্টার প্রথম বর্ষ শেষ করে আমি এখন দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছি। কলেজে কিছুদিন যাওয়ার পর একটা মেয়ে আমার চোখে পড়ে। মেয়েটা অনেক সুন্দর ছিলো। কিন্তু মেয়েটি আমার চোখে পড়ে তার পোশাকের কারণে। তখন শীতকাল ছিলো, মেয়েটি প্রথম যেদিন দেখি সেদিন মেয়েটি গোলাপি আর সাদা রঙের শীতের পোশাক পড়ে আসে। যার কারণে মেয়েটা অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো। প্রথম দেখাতেই মেয়েটাকে আমাকে ভালো লেগে যায়। আস্তে আস্তে মেয়েটাকে ভালোবাসতেও শুরু করি। কিন্তু তখনও আমি জানতাম না, মেয়েটা কে? মেয়েটার নাম কি? কোথায় থাকে? বলতে গেলে মেয়েটাকে চিনা ছাড়া আর কিছুই জানি না।
.
কিছুদিন যাওয়ার পর আমি আনিলার মাধ্যমে মেয়ের সম্পর্কে জানতে পারলাম। মেয়েটার নাম মিতু, আমার থেকে এক বছরের জুনিয়র। ও হ্যাঁ, আনিলা হচ্ছে আমার বান্ধবী। ওর কাছে আমি আমার সবকিছু শেয়ার করতাম। যাকে বলে বেষ্টফ্রেন্ড বা অন্তরঙ্গ বন্ধু। তারপর কিছুদিন যেতে না যেতে আমি মিতুর সাথে পরিচয় করে নিলাম। এরপর কলেজে আসলে মাঝে মাঝে মিতুর সাথে কথা হতো। কিন্তু এভাবে কতদিন থাকা যায় আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি মিতুকে আমার ভালোবাসার কথা জানাবো। পরেরদিন কলেজে গিয়ে মিতুকে দেখতে পেলাম। তারপর বললাম...
.
“মিতু”
“কি,”
“এদিকে আসো।”
“হুম, বলেন।”
“আসলে কিভাবে বলতে হয় আমার জানা নেই, শুধু বলতে চাই তোমাকে আমার ভালো লাগে। মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“আমি আপনাকে ঘৃণা করি।”
.
মিতু কোনো কথা চিন্তা না করেই আমার সরাসরি বলে দিলো আমাকে ঘৃণা করে। এরপর আমি মিতুর সামনে থেকে চলে আসলাম। পরের দিন যখন কলেজে যাই মিতু আমার কাছে এসে আমাকে ছোট্ট একটা চিরকুট দিলো।
যেটাতে লেখা ছিলো, “সরি!” 
সরি লেখা দেখে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “সরি কেন?” 
ও উত্তর দিলো, “আমি আপনাকে ঘৃণা করি না তাই।” 
এরপর কিছুদিন আর মিতুর সাথে কোনো কথাবার্তা হয়নি। কিন্তু আমার কিছু ভালো লাগতো না। তাই কিছুদিন পর আমি মিতুকে আবারও প্রপোজ করলাম। মিতু কোনো উত্তর দিলো না। আমি ওকে একসপ্তাহ সময় দিলাম। একসপ্তাহ পার হয়ে গেল, কিন্তু মিতু তখনও কোনো উত্তর জানালো না।
.
আমি বেশ কিছুদিন আর কলেজে যাইনি। একদিন আমার একটা ফ্রেন্ড আমাদের বাসায় এসে একটা চিরকটু দিলো। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “এটা কে দিলো?” ও বললো, “মিতু তোকে দিতে বলেছে।” তারপর বন্ধুটা চলে গেল। আমি চিরকুটটা খুলে দেখলাম, চিরকুটে লেখা ছিলো...
.
“তৌহিদ,
আমি জানি যে, আপনি কেন কলেজে আসেন না! আপনার বান্ধবী সব বলেছে। আমি আপনাকে পছন্দ করি কিন্তু আপনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না। কারণ বাড়ি থেকে জানলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। তাই বলছি, আপনি আমাকে ছেড়ে দেন।
ইতি মিতু”
.
এরপর আমি কলেজে যাই আর সেদিন কলেজ থেকে ফেরার পর আমার বাবা আমাকে একটা থাপ্পড় দিলো। প্রথমে বুঝতে পারিনি বাবা কেন আমাকে থাপ্পড় দিলো? পরে বাবা বলে, মিতুর বাবা নাকি আমার নামে বাবার কাছে নালিশ দিয়েছেন। আমি বুঝতে পারলাম সব মিতুর কাজ। আমি ভেতর থেকে অনেক ভেঙ্গে পড়লাম। এরপর আমি আস্তে আস্তে মিতুকে ঘৃণা করতে শুরু করলাম। ওকে দূর থেকে দেখলে আমি আর ওর দিকে ফিরেও তাকাতাম না। তারপর একদিন আমার একটা বান্ধবী এসে আমাকে একটা চিরকুটট দিলো। যাতে লেখা ছিলো...
.
“তৌহিদ,
আমি জানি যে, আপনি ভাবতেছেন আমান বাবাকে আমি বলেছি। আসলে সবি আমার এক বান্ধবী বলেছে। ও আপনাকে পছন্দ করে। কিন্তু আপনি আমাকে ভালোবাসেন সেই হিংসায় ও এসব করেছে। কালকে আপনি কলেজের পিছনের দিকে আমার সাথে দেখা করে।
ইতি মিতু”
.
পরেরদিন ওর কথা মতো কলেজের পিছন দিকে আমি ওর সাথে দেখা করতে গেলাম...
“বলো, কেন ডেকেছো?”
“আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আর হ্যাঁ, এটা কাউকে বলো না প্লিজ। বাসায় জানতে পারলে অনেক সমস্যা হবে।”
“ঠিক আছে, বলবো না।”
“আমার নাম্বারটা নাও। 016*** এটা আমার নাম্বার কল দিও। এখন যাই কেউ দেখলে আবার ঝামেলা বাঁধবে।”
.
মিতুর কাছ থেকে জবাবটা পেয়ে আমি খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু আমাদের প্রেমটা শুধু মোবাইলের কথা আর মেসেজের কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কারণটা হচ্ছে যদি ওর বাবাকে কেউ বলে দেয়, বিশেষ করে ওর ঐ বান্ধবীটা যে আমাকে ভালোবাসে। তারপরও ওর আড়ালে আমাদের কথা হতো সামনাসামনি। আমাদের দিনগুলো বেশ ভালোই যাচ্ছিলো। দু’জনের শেয়ারিং, কেয়ারিং দিনে দিনে আমাদের ভালোবাসাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো কোনো সময় মনে হতো আমি ওকে ছাড়া একটা মুহূর্তও থাকতে পারবো না। একদিন ওর সাথে কথা বলার সময় বললাম...
.
“তুমি আমার জীবন থেকে কখনো হারিয়ে যাবে না তো?”
“ধুর পাগল, হারিয়ে যাবো কেন? হারিয়ে যেতে ভালোবেসেছি নাকি হুম।”
“জানো মাঝে মাঝে ভাবি যদি কখনো তোমাকে হারিয়ে ফেলি আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো? মনে হয় যেন তুমি ছাড়া আমার পৃথিবীতে আর কেউ নেই শুধু তুমিই আছো।”
“তাই পাগল একটা, কখনো হারিয়ে যাবো না। তোমার বুকে স্থান করে নিয়েছি না। তোমার বুকেই থাকবো।”
“তাই, কিন্তু আমার বুকে তো এতো বড় জায়গা নেই তোমাকে রাখবো কিভাবে?”
“এই তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছো বলো তো?”
“কই কিছু না তো।”
“কিছুু তো বুঝাতে চাচ্ছো, আমি মোটা এমন কিছু তো? নিশ্চয়..”
“আরে না, এমনিতে দুষ্টামি করতেছিলাম। তুমি তো আমার থেকেও চিকন।”
“জ্বি না! আমি এতটাও চিকন না।”
“তাহলে কেমন শুনি?”
“তোমার বুকে থাকার মতোই আমি।”
“তাই,”
“কেন কোনো সন্দেহ আছে?”
“না কোনো সন্দেহ নাই, আরও একটু চিকন হলে ভালো হতো আর কি?”
“কেন?”
“না, তেমন কিছু না। আরেকজনকে জায়গা দিতাম আর কি? ঐ যে তোমার বান্ধবীটাকে।”
“কি বললে তুমি?”
“কোথায় কিছু বলিনি তো।”
“একদম মেরে ফেলবো যদি আমার স্থানে অন্য কেউ আসে। তোমার বুকে শুধু আমি থাকবো আর কেউ না।”
“মেরো ফেললে যদি মরে যাই।”
“চুপ মরবে কেন?”
“তুমি মেরে ফেলবে বললে যে, এজন্য!”
“ধুর বোকা আমি কি মরার জন্য মারবো নাকি?”
“আমি বোকা?”
“হুম, বোকা! কিছুই বুঝো না।”
“তাহলে তুমি চালাক বানিয়ে দাও না।”
“না চালাক হতে হবে না। চালাক হলে দুষ্টু হয়ে যাবে।”
“দুষ্টু নাহয় একটু হলাম তাতে কি? তোমার দুষ্টুি তো হবো তাই না।”
“না না বাবা দরকার নেই।”
“তুমি তো দেখছি নানা, বাবা দু’জনকেই ডাকতেছো, ভূত দেখলে নাকি?”
“উফ্, তুমি না।”
“আমি কি?”
“তুমি ফাজিল একটা”
“তাই,”
“হুম, এই বাবা আসছে এখন পড়তে বসতে হবে। পরে কথা হবে বাই, বাই বাই বাবু, টেককেয়ার।”
“শুনো না..”
.
বলার আগেই কলটা কেটে দিলো। দেখতে দেখতে আমাদের সম্পর্কের একটা বছর হয়ে গেলো। আমারও এইচ এস সি পরিক্ষা শুরু হয়ে গেলো। পরিক্ষা শেষ হলো। মিতুও ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠলো। রেজাল্ট প্রকাশের পর আমি একটা ভার্সিটি চান্স পেলাম। ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার পর মিতু ইদানীং আমাকে খুব অবহেলা করছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে না বায়না দেখায়। আস্তে আস্তে অবহেলার পরিমাণটা বেড়েই চলেছে মিতুর সাথে তেমন কথা হয় না। কারণ ওকে মেসেজ দিলে রিপ্লে করে না। কল দিলে কলও রিসিভ করে না। এখন একবারেই কমে গেছে। এখন আর অন্যকোনো বায়না দেখায় না শুধু একটাই বায়না দেখায় সেটা হচ্ছে সামনে পরিক্ষা রেজাল্ট ভালো করতে হবে তাই পড়ার অনেক চাপ পড়তে হয়।
.
মিতুর সাথে এখন আমার একদম যোগাযোগ বন্ধ কোনো কথাই হয় না। এক বন্ধুর সাথে দেখা হলে সে আমাকে বলে...
.
“কিরে তোর কি খবর?”
“এইতো ভালো, তোর কি অবস্থা?”
“ভালোই, মিতু তোকে ছ্যাঁকা ট্যাকা দিলো নাকি?”
“না তো, ও ছ্যাঁকা দিবে কেন?”
“তাহলে একটা ছেলের সাথে ঘুরে যে ছেলেটা কে?”
“কোন ছেলের সাথে ঘুরে?”
“চিনি না।”
“ওকে পরে কথা হবে।”
.
পরে খবর নিয়ে দেখলাম, মিতু শুভ নামের একটা ছেলের সাথে প্রেম করে। তারপর আমি মিতুর সাথে দেখা করলাম।
.
“শুভ ছেলেটা কে? তুমি নাকি ওর সাথে প্রেম করো?”
“হুম, যা শুনেছো, সব ঠিকই শুনেছো। আমি শুভকে ভালোবাসি। আমি তোমার সাথে এই সম্পর্ক রাখতে পারবো না।”
.
মিতুর কথা শুনে কি করবো বুঝতেছিলাম না। ওর কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম। অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম। এর প্রতিশোধ আমি নিবো। কিন্তু আমি যে ওকে ভালোবাসি আমার বিবেক আমাকে বাধা দিলো। আমি পারিনি ওর কোনো ক্ষতি করতে। আমাকে ছাড়া যদি ও সুখে থাকে তাহলে থাকুক না। আমি নাহয় ভালোবেসে কষ্টটুকুই পেলাম। ও সুখে থাকলেই আমি খুশি।
.
Moral: এমন মেয়েগুলোর না শুধু মেয়ে না এমন অনেক ছেলে ও মেয়েগুলোর প্রতারণার কারণে এমন অনেকের সুন্দর স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে যায়। আর কেউ কেউ ভালোবাসার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যেটা শুধু সাময়িক প্রশান্তি মাত্র বই আর কিছু নয়।

Tuesday, August 22, 2017

অনন্যা নামটা রোহানের কাছে অনেক প্রিয়।

রোহানের আজ মন খারাপ!
কোন কথা বার্তা নেই হঠাৎ করেই রোহানের বাবা
ওর
বিয়ে ঠিক করে ফেলছেন। রোহানের সেই
ছোট বেলা
থেকে কত স্বপ্ন অনন্যা নামের কোন মেয়ে
সাথে প্রেম
করে বিয়ে করবে। অনন্যা নামটা রোহানের
কাছে অনেক
প্রিয়।কিন্তু কি আর করা যাবে অনন্যা নামের কোন
মেয়ে হয়তো রোহানের কপালে নেই । আর
রোহানের
বাবা উনি খুব রাগি মানুষ যা বলেন তাই করেন। উনার কথা
অমান্য করার মত সাহস রোহানদের পরিবারের
কারোরি
নেই। রোহানের কিছুদিন হল লেখাপড়া শেষ
হয়েছে ।
এখনো কোন জব টব পায়নি। আপাতত রোহান
একটা
কোচিং এ পড়ায় এটা দিয়েই কোন রকম ভাবে চলে
যায়
ওর। রোহানের বাবা রোহান কে শহর থেকে
গ্রামে
আনছেন মিথ্যা কথা বলে। রোহানের বাবাও ভাল
করে
জানেন সত্যিটা বললে রোহান কখনোই আসতো
না।
অতঃপর....
রোহান ওর রুমে একা বসে আছে ইতিমধ্যেই
রোহানের
ছোটবোন প্রত্যাশার আগমন গঠলো রোহানের
রুমে...
< আচ্ছা প্রত্যাশা তুই কি ঐ মহিলার নাম টা জানিস ?
( রোহান)
< কোন মহিলার কথা বলতেছো ভাইয়া?( প্রত্যাশা)
< ঐ যে মহিলা টা । (রোহান)
< আরে ভাইয়া কোন মহিলার কথা বলতেছো আমি
তো
কিছুই বুঝতেছি না? ( প্রত্যাশা )
< আরে ঐ যে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছে
আব্বা।
< ও তাই বলো, তো ভাইয়া ঐ
মহিলার নাম দিয়ে তুমি কি করবা...?( প্রত্যাশা)
< আরে কোথাকার কোন মেয়েকে বিয়ে
করবো আমি তা
জানতে হবে না আমার?( রোহান)
< হইছে তোমার না জানলেও চলবে, যা জানার
আব্বাই
জানে। আমি শুধু শুনছি ভাবি নাকি
পর্দানশীন মহিলা।(প্রত্যাশা)
< বিয়ে করার আগেই তোর ভাবি হয়েগেছে..?
(রোহান)
< হুম আজ হোক আর কাল হোক ঐ মহিলাকে
তো ভাবি বলে ডাকতেই হবে। (রোহান)
< ঐ যা ভাগ এইখান থাইক্যা তোর ভাবি
ডাকতে হবে না । (রোহান)
< হুম ঐ টা কাল - ই বুঝা যাবে ভাইয়া ( প্রত্যাশা )
< ঐ তোরে যাইতে কইছি না?? যা এইখান থাইক্যা ।
রোহান কি করবে ও বুঝতে পারছেনা। ছোট
বেলা থেকেই
রোহান কত স্বপ্ন দেখেছে ও অনন্যা নামের
কোন মেয়ের
সাথে প্রেম করবে কিন্তু তা আর হয়নি কখনো।
তারপর
রোহান চিন্তা করলো প্রেম করতে পারিনি তো
কি
হইছে ?? অনন্যা নামের কোন মেয়ে কে
বিয়ে তো করতে
পারবো। কিন্তু এখন দেখছি অনন্যা নামের কোন
মেয়ে
কে বিয়ে করাটাও হলো না। এখন রোহানের
বিরহের গান
শুনা ছাড়া আর কোন কিছু করার নেই । দেখতে
দেখতে
বিয়েটা হয়ে গেল। এখন বাসর ঘরে প্রবেশের
পালা.....
রোহানের বাসর ঘরে ডুকতে ইচ্ছা করছেনা । কি
আর করা
যাবে? বাসর ঘরে তো যেতেই হবে ঐ দিকে
আবার বউ
বসে আছে রোহানের অপেক্ষায় ...
অতঃপর রোহান বাসর ঘরে প্রবেশ করলো। তখন
বউ এসে
রোহান কে সালাম করলো এবং বললো চলেন
নামাজ টা
পড়ে নেই। রোহান বলল আমার পড়ার ইচ্ছা নাই
আপনি
পড়ে নেন।
<আচ্ছা আপনি আমায় আপনি করে বলতেছেন
কেনো.....?
( বউ)
< তো কি করে বলবো আপনাকে...? (রোহান)
< নিজের বউ কে কেউ আপনি করে বলে..?
(রোহান)
< ওহ! প্রথম প্রথম তো তাই এমন হচ্ছে ২য় বারে
ঠিক হয়ে
যাবে।(রোহান)
< ২য় বারে ঠিক হয়ে যাবে মানে ! (বউ)
< কিছুনা আপনি বলেন কি বলতে হবে
আপনাকে ???
(রোহান)
< নাম ধরে এবং তুমি বলে বলতে হবে। (বউ)
< ওকে কিন্তু আমি তো তোমার নাম জানিনা.?
< ওকে এটা কোন ব্যাপার না আমি অনন্যা এখন মনে
থাকবে তো????(বউ)
< এই তুমি সত্যি বলতেছো!!! তোমার নাম অনন্যা
..????
(রোহান)
< হুম মিথ্যা বলবো কেনো?? এটা শুনেই রোহান
অনন্যা কে
জড়িয়ে ধরলো,আজ রোহানের মনে হচ্ছে
আল্লাহ
তায়ালা মনে হয় রোহানের মনের কথা শুনছেন
এতদিন পর।
রোহান আরো শক্ত করে অনন্যা কে জড়িয়ে
ধরলো হঠাৎ
রোহানের ফোনটা বেজে উঠলো...........
..............
অতঃপর......
কি হলো অনন্যা কই গেলো.!!!!? আর অনন্যার
যায়গায় এই
বালিশ টা কইথাইক্যা আসলো আমি তো কিছুই বুঝতে
পারছি না!!!!
অতঃপর বুঝতে পারলাম বিষয়টা, হে আল্লাহ তুমি আমার
মনের কথা শুনতে পাইয়্যাও অনন্যার যায়গায় বালিশ ধরাই
দিলা.....???

Sunday, August 20, 2017

বিবাহিত অথবা অবিবাহিত, সবার পড়া উচিৎ। (সংগ্রহিত)




এক রাতে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পর আমার
স্ত্রি প্রতিদিনের মত আমাকে নিয়ে রাতের খাবার
খেতে বসলো। তখন আমি তার হাতটি জড়িয়ে ধরলাম
এবং বললাম, "আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।"
সে আমার চোখের দিকে শান্ত ভাবে তাকালো...
আমি বুঝতে পারছিলাম
না যে তাকে আমি কথাগুলো কিভাবে বলবো। কিন্তু
তাকে আমার জানানো উচিৎ যে, আমি তার সাথে আর
সংসার করতে চাই না। আমি খুব ধীরে,
শান্তভাবে বিষয়টি তুললাম। সে আমার কথায়
কোনরকম বিরক্ত প্রকাশ
না করে ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করল, "কেন?"
আমি তার প্রশ্ন এড়িয়ে গেলাম। এতে সে রেগে গেলো।
টেবিলের উপর থেকে সবকিছু ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার
করে বললো, "তুমি একটা কাপুরুষ।" সেই রাতে আমাদের
আর কথা হল না। সে সারা রাত নিঃশব্দে কাঁদলো।
হয়তো ও বুঝার চেষ্টা করছিল কেন
আমি এমনটা চাইলাম। কিন্তু
আমি তাকে বলতে পারিনি যে, আমি আর
একটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছি।
আমি নিজেকে খুব অপরাধী মনে করেছিলাম, আর ঐ
অপরাধবোধ নিয়েই আমি ডিভোর্স লেটার লিখলাম,
যেখানে উল্লেখ ছিল, আমাদের বাড়ি, আমাদের গাড়ি,
এবং আমার ব্যবসায়ের ৩০% এর মালিক সে হবে। তার
হাতে কাগজটি যাওয়ার
সাথে সাথে ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেললো।
যে মানুষটার সাথে আমি ১০ টা বছর সংসার করলাম,
আজকে আমি তাকেই আর চিনি না। তার এতগুল সময়,
সম্পদ, এবং শক্তি নষ্ট করার জন্য আমার খুব খারাপ
লাগছিলো, কিন্তু এখন আমি আর তাকে ফেরত
নিতে পারবো না কারণ, আমি ফারহানা কে
ভালোবাসি।
অবশেষে সে আমার সামনে চিৎকার
করে কান্না করে দিল, যা আমি আশা করছিলাম। আমার
কাছে তার কান্না একরকম মুত্তির চিহ্নের মত
লাগছিল। তখন মনে হচ্ছিল, এবার আমি আসলেও
সফল।
পরের দিন, আমি অনেক দেরী করে বাসায় ফিরি।
দরজায় ঢুকতেই দেখি, ও ডাইনিং রুমে টেবিলে কিছু
লিখছিল। আমি আর খাবার খেতে গেলাম
না এবং সরাসরি ঘুমাতে চলে গেলাম, কারণ সারাদিন
ফারহানাকে নিয়ে অনেক ঘুরেছি এবং এখন
আমি ক্লান্ত। আমি ঘুমিয়ে গেলাম। যখন আমার ঘুম
ভাঙ্গলো, তখনো ও লিখছিল। আমি গ্রাহ্য করলাম
না এবং আবার ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে সে আমাকে কিছু শর্ত দিল, যেখানে লেখা
ছিল,
"আমি তোমার থেকে কিছুই চাইনা, কিন্তু
আলাদা হয়ে যাওয়ার আগে শুধু এক মাস সময় চাই। এই
একমাসে আমরা জতটুকু সম্ভব স্বাভাবিক জীবন জাপন
করবো, কারণ আর একমাস বাদেই আমাদের ছেলেটার
পরীক্ষা। ওর যাতে কোন ক্ষতি না হয় তাই
আমি এমনটা চাইছি।"
আমি মেনে নিলাম। কিন্তু সে আমার কাছে আরও কিছু
চেয়েছিল... ও আমাকে মনে করতে বললো, বিয়ের দিন
আমি তাকে যেভাবে কোলে করে নিয়ে ঘরে ঢুকে
ছিলাম।
ও আমাকে অনুরোধ করলো, যাতে এই একমাস
আমি তাকে প্রতি সকালে কোলে করে আমাদের শোবার
ঘর থেকে বাইরের দরজা পর্যন্ত নিয়ে যাই।
আমি ভাবলাম, ও পাগল হয়ে গেছে। যাই হোক, এই শেষ
সময়ে যাতে আর ঝামেলা না হয়, তাই আমি তার অনুরোধ
মেনে নিলাম।
আমি ফারহানাকে আমার স্ত্রির দেয়া শর্তগুলোর
কথা বলেছিলাম। শুনার পর সে অট্ট
হাসিতে ফেটে পড়লো, যা খুবই অযৌক্তিক
লাগলো আমার কাছে। তখন ফারহানা আমার স্ত্রির
উপর ঘৃণা এবং রাগ নিয়ে বললো, "সে যতই
ছলনা করুক আর মায়া কান্না দেখাক, তাকে ডিভোর্স
নিতেই হবে।"
আমাদের বিবাহবিচ্ছেদের উদ্দেশ্য স্পস্টভাবে প্রকাশ
হওয়ার পর থেকে আমার স্ত্রি এবং আমার মধ্যে আর
কোন শরীরী যোগাযোগ ছিল না। যাই হোক, যেদিন
আমি প্রথম তাকে কোলে তুললাম, তখন আমরা দুজনেই
খুব বিব্রতবোধ করছিলাম। আমাদের ছেলেটা পেছন
থেকে তালি বাজাচ্ছিল আর বলছিল, "আব্বু
আম্মুকে কোলে তুলেছে, কি মজা কি মজা।" ছেলেটার
কথা শুনে কেন জেন আমার খারাপ লাগতে শুরু করলো।
শোবার ঘর থেকে ড্রইংরুম, ড্রইংরুম থেকে বাইরের
দরজা পর্যন্ত আমি ওকে কোলে করে নিয় গেলাম।
সে তার চোখ বন্ধ করলো এবং ফিস ফিস করে বললো,
"আমাদের ছেলেটাকে আমাদের ডিভোর্সের কথাটা
কখনও
জানতে দিওনা।" আমি ওকে দরজার
বাইরে নামিয়ে দিলাম। সে তার কাজে চলে গেল, আর
আমি অফিসে চলে গেলাম।
দ্বিতীয় দিন, আমরা দুজনেই খুব স্বাভাবিক আচরন
করলাম। সে আমার বুকে মাথা রাখলো। আমি তার চুলের
গন্ধ পাচ্ছিলাম। আমার মনে হল, আমি কতদিন এই
মানুষটাকে একটু ভালোভাবে দেখিনি, বুঝার
চেষ্টা করিনি। দেখলাম, ওর কত বয়স হয়ে গেছে।
চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে গেছে... চুলে কাঁচাপাকা রঙ
ধরেছে। কিছু মুহূর্তের জন্য মনে হল আমি তার
সাথে কি করেছি।
চতুর্থ দিন, যখন আমি তাকে কোলে তুললাম, তখন
বুঝতে পারলাম আবার আমাদের অন্তরঙ্গতা ফিরে
আসছে।
এটাই সেই মানুষ, যে তার জীবনের ১০ টা বছর আমার
সাথে পার করেছে। পঞ্চম এবং ষষ্ঠ দিন আমার
আবারো মনে হল যে, আমাদের সম্পর্কটা আবার
বেড়ে উঠছে। আমি এসব বিষয়ে ফারহানাকে কিছুই
বলিনি।
যতই দিন যাচ্ছিল, ততই খুব সহজে আমি আমার
স্ত্রিকে কোলে তুলতে পারতাম। সম্ভবত, প্রতিদিন
কোলে নিতে নিতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। একদিন
সকালে বাইরে যাওয়ার জন্য সে পছন্দের কাপড়
খুঁজছিল। প্রায় অনেকগুলো কাপড় সে পরে দেখল,
কিন্তু একটাও তার ভালো লাগছিলো না। সে স্থির
হয়ে বসলো এবং দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললও, "আমার
সব গুলো কাপড় ঢিলে হয়ে গেছে...।" তখন
আমি বুঝতে পারলাম সে অনেক শুকিয়ে গেছে এবং এ
জন্যই আমি তাকে খুব সহজে কোলে তুলতে পারতাম।
হঠাৎ এটা আমাকে খুব আঘাত করলো... সে তার
মনে অনেক কষ্ট চাপা দিয়ে রেখেছে। মনের অজান্তেই
আমি আমি ওর কাছে যাই এবং ওর মাথায় হাত দেই। ঐ
মুহূর্তে আমাদের ছেলেটাও চলে এল এবং বললও, "আব্বু,
আম্মুকে কোলে তুলার সময় হয়েছে।" আমার
স্ত্রি ছেলেটাকে ইশারায় কাছে আসতে বলল
এবং তাকে কিছুক্ষণের জন্য খুব শক্ত
করে জড়িয়ে ধরল। আমি অন্য দিকে তাকালাম, কারণ
আমার ভয় হচ্ছিল, এই শেষ মুহূর্তে জেন আমার
সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর
আমি তাকে কোলে নিলাম। শোবার ঘর থেকে ড্রইং রুম,
ড্রইং রুম থেকে বাইরের দরজা পর্যন্ত
তাকে নিয়ে গেলাম। সে তার হাত
দিয়ে আলতো ভাবে আমার গলা জড়িয়ে ছিল। আমিও
তাকে খুব হাল্কাভাবে কোলে নিয়ে ছিলাম... ঠিক
জেন
বিয়ের প্রথম দিনের মত।
কিন্তু তার এই এত হাল্কা ওজন আমাকে অনেক কষ্ট
দিয়েছিল... প্রায় অনেক আগে যেদিন
আমি তাকে কোলে নিয়েছিলাম, সেদিন
তাকে নিয়ে কিছু দূর হাটতেই আমার অনেক কষ্ট
হচ্ছিলো। আমাদের ছেলেটা স্কুলে চলে গেছে।
আমি আমার স্ত্রিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
আমি বুঝতে পারিনি যে, আমাদের
মধ্যে এতটা অন্তরঙ্গের অভাব ছিল। এ কথা বলেই
আমি অফিসে চলে গেলাম। অফিস থেকে ছুটি নিয়েই
বেরিয়ে গেলাম। চলে গেলাম সোজা ফারহানার
বাসায়।
সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উপরে উঠে গেলাম। আমি খুব
তাড়াহুড়ো করছিলাম, ভয় পাচ্ছিলাম যাতে আমার মন
আবার পরিবর্তন হয়ে যায়। ফারহানা দরজা খুলতেই
আমি তাকে বললাম, "ফারহানা, আমাকে মাফ করে
দিও...
আমি আমার স্ত্রির সাথে ডিভোর্স চাইনা।"
ফারহানা আমার দিকে খুব অবাক হয়ে তাকাল এবং
আমার
কপালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "আচ্ছা তুমি ঠিক
আছো তো?? তোমার কি জ্বর আসছে??" আমি ওর হাত
আমার কপাল থেকে সরালাম এবং আবারো বললাম,
"ফারহানা, আমি ওকে ডিভোর্স দিতে চাই না।
তুমি পারলে আমাকে মাফ করে দিও। আমাদের
বৈবাহিক
সম্পর্কটা হয়তো বিরক্তিকর ছিল, কারণ
আমরা আমাদের জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্ত
গুলোকে মুল্য দেইনি, কিন্তু এর মানে এই
না যে আমরা কখনো একে অপরকে ভালোবাসিনি।
কিন্তু এখন আমি বুঝি যে, যেদিন
আমি তাকে বিয়ে করেছিলাম, সেদিন
আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যে মৃত্যু পর্যন্ত
আমি তার সাথে থাকবো।" তখন ফারহানা আমাকে খুব
জোরে একটা চড় মারলো এবং আমার মুখের উপর
দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে চিৎকার করে কান্নায়
ভেঙে পড়লো। আমি বাসার নিচে নেমে এলাম
এবং চলে আসলাম। পথেই একটা ফুলের দোকান পেলাম
এবং একটা ফুলের তোড়া কিনলাম আমার স্ত্রির জন্য।
আমাকে দোকানদার জিজ্ঞেস করলো, "স্যার কার্ডের
উপর কি লিখবো?" আমি একটু মৃদু হাসলাম
এবং লিখতে বললাম, "আমি প্রতিদিন
সকালে তোমাকে কোলে নিব... আমার মৃত্যু পর্যন্ত"
ঐ দিন সন্ধ্যায় আমি বাসায় ফিরি, আমার হাতে ফুলের
তোড়া, আমার চেহারায় সুখের হাসি, আমি সোজা
আমার
শোবার ঘরে চলে যায় এবং দেখি আমার স্ত্রি আর
নেই। সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে... সারা জীবনের
জন্য
চলে গেছে... যেখান থেকে আর কখনো ফেরা সম্ভব না।
আমার স্ত্রির ক্যান্সার ছিল, অথচ
আমি ফারহানাকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে,
এদিকে কোন খেয়ালই করিনি।
সে জানতো যে সা মারা যাচ্ছে... কিন্তু
সে আমাকে বুঝতে দেয়নি, কারণ আমাদের ছেলের
পরীক্ষা ছিল এবং আমাদের ডিভোর্স
হয়েছে এটা জানলে আমাদের ছেলেটার মন-
মানষিকতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সে মারা গেলে আমাদের আর
আলাদা হয়ে বেঁচে থাকতে হবে না। সে আমার ছেলের
কাছে প্রমান করে দিয়ে গেল, আমি খুব
ভালো স্বামী ছিলাম, যে তার স্ত্রির অনেক খেয়াল
করতো।
সম্পর্কের এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো আসলেও অনেক
গুরুত্বপূর্ণ। এই বড় রাজপ্রাসাদ, গাড়ি, সম্পত্তি,
টাকা এগুলো সব কিছুই ভালো থাকার পরিবেশ
তৈরি করে কিন্তু নিজেরা কোন সুখ দিতে পারে না।
তাই কিছু সময় বের করুন আপনার স্বামী বা স্ত্রির
জন্য। তার বন্ধু হন। এবং কিছু কিছু ছোট ছোট
মুহূর্ত তৈরি করুন যা আপনাদের সম্পর্ককে আরও
কাছের করবে। কারণ, এটাই সত্য "পরিবার
পৃথিবীতে সব চাইতে দামি।" আপনি যদি এখন কোন
সম্পর্কতে নাও থাকেন, তারপরেও দ্বিতীয় বারের মত
অথবা তার চাইতেও বেশী চিন্তা করুন, কারণ
এখনো দেরী হয়ে যায় নি... এখনো অনেক সময় আছে।

আপনি যদি এই পোস্টটি না শেয়ার করেন,
তাতে কোনই সমস্যা নেই।
কিন্তু যদি শেয়ার করেন,
তাহলে হয়তো আপনি একটি সম্পর্ক আবার
জোড়া লাগাতে পারেন। জীবনে অনেক মানুষই
বুঝতে পারে না যে, তারা সফলতার কত কাছাকাছি
আছে।
collected

Saturday, August 19, 2017

আম্মু আছে বাসায় তোর ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরাই দিবে ওহহহ শাশুড়িটা এমন ভীলেন টাইপের কেন গো...

#টক_ঝাল_ভালোবাসা
তিশি...
- হুম শুনছি বলো...
- আই লাআআআআআআভভভ ইউ এত্ত গুলা...
- হ্যা জানি তো... তা এই ভর দুপুরে এমন তেল
দেয়ার কারণ কি শুনি...
- কোন কারণ নাই তো...
- কোন কারণ নাই এটা বললেও আমি বিশ্বাস করতে
পারছিনা ...
- কেন পারছো না??সত্যিইই আই লাআআআআভভভভ
ইউ এত্তগুলা......
- হু... আমি তো গাধী না ... অন্যসময় তো হাজার
বার বলতে বললেও তোর মুখ দিয়ে এই তিনটা
ওয়ার্ড বের হয়না আর এখন সেধে সেধে তাও
দুই বার বললি ... তোর মতলবটা কি শুনি?
- বিশ্বাস করো তিশি আমার কোন মতলব নাই... আমি
সত্যিইইই তোমাকে এত্তগুলা ভালোবাসি...
- তুই বলবি নাকি আমি ফোন রাখবো??
- এমন করো কেন তুমি সবসময়?...
- হু কি বলবি তাড়াতাড়ি বল...
- এভাবে ধমকালে কিন্তু বলবো না হুহ...
- ওলে বাবা ... না বললি যা ভাগ...
- সত্যি যাবো তো?...
- কই যাবি??
- তোমার কাছে...
- আম্মু আছে বাসায় তোর ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরাই
দিবে...
- ওহহহ শাশুড়িটা এমন ভীলেন টাইপের কেন
গো...
- কি বললি??- কিছুনা...


Like share followers page and subscribe my YouTube channel 

YouTube- https://www.youtube.com/channel/UCfe8n5UGJfqkCNijyYrvHLg/feed

Page- https://www.facebook.com/shimunrube/

Blogger- https://shimunrubel.blogspot.com/?m=1

Love story- https://m.facebook.com/lovestorybangli/


- আচ্ছা শোনো না...
- হ্যা শুনছি আপনি বলেন...
- খুব ক্ষুধা লাগছে।কিন্তু মেসের মিল খাইতে ইচ্ছা
করতেছে না...
- হোটেলে থেকে খেয়ে আসো...
- উহু... যদি পেট খারাপ হয়??
- সেই ভয়ে কি না খেয়ে থাকবে নাকি??ট্রাই
তোহ করো...
- নাহ রিস্ক নিতে চাইনা... আর ব্যাটারা না জানি কিভাবে
রান্না করে... তুমি একটু বুঝার চেষ্টা করো...
- কি বুঝবো?
- তুমি তো অনেক ভালো বিরিয়ানি রান্না করতে
পারো...
- তোহ!?
- আজকে একটু পর কোচিং এ ক্লাস নিতে যাবে
না ??
- হ্যা যাবো...
- হাতে তো এখনো দুইঘন্টা সময় আছে
তোমার....
- হ্যা আছে... তো??
- আর কোচিং সেন্টারটা আমাদের মেস পার হয়ে
যাইতে হয়...
- হ্যা কোচিং সেন্টারে যাওয়ার রাস্তা আমি চিনি... গত
আটমাস ধরে সেইখানে আসা-যাওয়া করছি।
- তো বলছিলাম আর কি ...
- কি বলছিলা??
- আই লাভ ইউ...
- ঘুষ দিয়ে লাভ নাই এখন আমি কারোর জন্য হাত
পুড়িয়ে রান্না করতে যেতে পারবো না ...
- ওহহহহ...
- হ্যা...
- কি করো তুমি??
- কিছুনা ফোন রাখো...
- কেন??
- দেখি ফ্রিজে মাংস আছে কিনা... নয়তো কেউ
আবার মুখ ফুলিয়ে না খেয়ে শুয়ে থাকবে.........
- তিশিইইইই.........
- হুম...
- আই লাভ ইউ .........
- আমি ঘুষ নেইনা ...
- হাহা কিন্তু আমি ঘুষ দেই...
- শয়তানি বাদ দিয়ে গোসল করে
আসো....নয়তো দেখা হলে খামচি খাবে।ছোট
নখ দিয়েও কিন্তু খামচি দেয়া যায় বুঝছো
বাবুটা???.....

#Bristi_patuiary

Friday, August 18, 2017

হাসপাতালে ডাক্তার রিয়ার ইতস্তত ভাব দেখেই আসল বিষয়টা বুঝে গেল

‘মা হতে যাচ্ছি’ রিয়ার মুখে কথাটা শুনে
মুখটা বিকৃত হয় জামিলের। রাগ করে বলল
‘এটা তো কোন কাজের কথা হলো না। ঔষধ
খাও নি।’
রিয়া অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। বলল, ‘ভুলে
গিয়েছিলাম।’
জামিল বলল, ‘এবার ঝামেলা বোঝো। কত
দৌড়াদৌড়ি করতে হবে বুঝতে পারছ?’
‘কী দৌড়াদোড়ি?’ রিয়া অবাক হয়ে
জিজ্ঞেস করল।
‘ক্লিনিকে যেতে হবে। জিনিসটা ফেলে
দিতে হবে।’
‘জিনিসটা না বাচ্চাটা?’
‘তুমি এই বিষয় নিয়ে খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছ
নাকি?’ জামিল ভুরু কুঁচকে তাকাল।
‘নাহ এমন কিছু না।’
‘ক্লিনিকে আমি দৌড়াতে পারব না। নিজের
কাজ নিজে সারবে।’ জামিল বলল।
‘ও আচ্ছা। রুম ডেটে অবশ্য তুমি নিজ উদ্যোগে
নিতে পেরেছিলে।’ রিয়া মনে করিয়ে দিল।
‘হ্যাঁ। এখন তো সব দোষ আমার।’ জামিলের
গলাটা কঠোর শোনায়। ‘আজকেই ডাক্তারের
কাছে যাবে। এই ঝামেলার কথা আর শুনতে
চাই না।’
রিয়া হাসল। বলল, ‘আমাদের অপরাধের
শাস্তি একটা নতুন জীবন পেতে পারে না।’
জামিল চোখ লাল করে বলল, ‘তাহলে কী
করতে চাও?’
রিয়া বলল, ‘ওকে বাঁচিয়ে রাখব।’
জামিল হাতে তালি দিয়ে বলল, ‘বাহ! দারুণ
বুদ্ধি। কিন্তু কোন পরিচয়ে বেড়ে উঠবে সে?’
‘তুমি বিয়ে করবে আমাকে। এরপর তোমার
আমার পরিচয়ে বেড়ে উঠবে।’
‘পাগল নাকি! আপাতত ৪/৫ বছরে বিয়ের
পরিকল্পনা নেই আমার।’ স্পষ্ট জানিয়ে দিল
জামিল।
‘আমি খুন করতে পারব না জামিল।’ কান্নাটা
সামলানোর চেষ্টা করল রিয়া।
‘একটা ঔষধ খেলে এতো ঝামেলা হতো না।’
জামিলের গলায় একটু নরম শোনায়। রিয়ার
চুলগুলো সরিয়ে মাথায় একটু হাত বুলিয়ে বলল,
‘আমাদের দু’জনের ভালোর জন্য ঝামেলাটা
ফেলে দিতে হবে রিয়া। প্লিজ বোঝার
চেষ্টা করো।’ রিয়া মাথা নাড়ায়। তার
কান্নার গতি বাড়তে থাকে।
হাসপাতালে ডাক্তার রিয়ার ইতস্তত ভাব
দেখেই আসল বিষয়টা বুঝে গেল। বলল,
‘আপনারা কেন যে এমন ভুলগুলো করেন? যা
হোক, না চাইলেও অপ্রিয় কাজটা আমাদের
নিয়মিত করতে হয়।’
রিয়া বলল, ‘আপা।’
‘জি বলুন।’ ডাক্তার বলল।
‘আমি ওকে হত্যা করতে আসি নি। আমি
জানতে এসেছি ও ভালো আছে কি না।’
ডাক্তার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
রিয়া দৃঢ় কন্ঠে বলল, ‘আমি ওকে বাঁচাব আপা।
ও আমার পরিচয়ে বাঁচবে। আর মরতে যদি হয়
দু’জনে একসাথেই মরব।’
রিয়া ঠিক জানে না তাকে কী করতে হবে।
তার মুখে থুতু জমেছে। সে শুধু জানে
জামিলের মুখে এক দলা থুতু দেওয়া খুব
প্রয়োজন। আর বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে রাখার
জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে চেষ্টা করতে হবে
তাকে।
.
#Noman

একটা মেয়ে কনুই দিয়ে আমার মুখে সজোরে গুঁতো দিল। আমি ব্যথায় চিৎকার করলাম।

সকাল থেকেই মেজাজটা খারাপ। আজ
নির্ঘাত দিনটা খারাপ যাবে। ঘুম ঘুম চোখে
সকালে ব্রাশ করতে গিয়েই প্রথম বিপত্তিটা
ঘটিয়েছি। শেভিং ক্রিমকে টুথপেস্ট ভেবে
ভুল করেছি। শেভিং ক্রিম দিয়ে কিছুক্ষণ
ব্রাশ করার পর মনে হচ্ছে, একগাদা কচি ঘাস
চিবিয়েছি। এখন নিজেকে ছাগল ছাগল মনে
হচ্ছে। কিছু না খেয়েই অফিসের দিকে রওনা
হলাম। শেভিং ক্রিম খাওয়ার পর আর অন্য
কিছু খাওয়ার ইচ্ছা নেই।
বাসে উঠে দেখলাম, সিট খালি নেই।
দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দিনটা খারাপ যাবে_
এটা প্রমাণ করার জন্যই হয়তো একটা মেয়ে
কনুই দিয়ে আমার মুখে সজোরে গুঁতো দিল।
আমি ব্যথায় চিৎকার করলাম। মেয়েটা
বিব্রতমুখে বলল, 'সরি। ব্যথা পেয়েছেন?'
মেয়েটার কোমল গলা শুনে নিজেকে সামলে
নিলাম। মনে হচ্ছে, একটা দাঁত নড়ে গেছে।
সেই অবস্থায় হাসার চেষ্টা করে বললাম,
'নাহ। একদম ব্যথা পাইনি।'
অফিসে ঢুকেই আরেক বিপত্তি। বস আজকে
আমার আগে অফিসে এসেছেন এবং আমাকে
খুঁজে গেছেন। প্রতিদিন সময়মতো অফিসে
আসি। আজ একটু দেরি করলাম, আর আজই বস
আমার আগে অফিসে এসেছেন। এ জন্যই
সবসময় নিজেকে অভাগা মনে হয়। আমি
যেদিকে চাই, নর্দমাও শুকিয়ে যায়। অফিসে
এসে ডেস্কে ব্যাগটা রেখেই বসের রুমে
ছুটলাম।
বস আজ অস্বাভাবিক গম্ভীর। আমাকে
অবজ্ঞা করে নানা কাজ করতে লাগলেন।
আমি দীর্ঘক্ষণ বসে রইলাম। হঠাৎ বস আমাকে
চমকে দিয়ে বললেন, 'তুমি ইদানীং কী নিয়ে
ব্যস্ত?'
কী উত্তর দেব বুঝতে পারলাম না। মাথা
চুলকে বললাম, 'বস নতুন প্রজেক্টটা নিয়েই
বেশি ব্যস্ত।'
'আমি অফিসের কথা বলছি না। অফিসের
বাইরে কী নিয়ে ব্যস্ত?'
বুঝতে পারলাম না, বস কী জিজ্ঞেস করছেন।
তাই চুপচাপ বসে রইলাম।
বস আবার বললেন, 'তুমি তো ফেসবুকে খুব
অ্যাক্টিভ, না?'
কেমন যেন অন্যরকম গলায় কথাগুলো বললেন
বস। আমি কি ফেসবুকে কোনো ভুল করেছি?
মাঝে মাঝে দেশ-কাল-সমাজের কথা চিন্তা
করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিই। সেই স্ট্যাটাস
দেখে কি বস রাগ করেছেন? কোনো
স্ট্যাটাস কি তাকে ত্রুক্রদ্ধ করেছে? নানা
চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। গত
রাতের স্ট্যাটাসটার কথা মনে পড়ল। 'অফিসে
কাজ করতে এত ঘুম পায় কেন?' এই
স্ট্যাটাসটাই কি বসের চোখে পড়েছে?
আমি বললাম, 'বস আর ফেসবুক ব্যবহার করব
না। কসম।'
'যা করার তা তো ফেসবুকে করেই ফেলেছ।
এখন এসব বলে কী লাভ?'
'কী করেছি স্যার?'
'কী করেছ জানো না?'
'না বস। ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি
ফেসবুকে মাঝে মাঝে স্ট্যাটাস দিই। আর
কিছু তো করি না।' মাথা চুলকে বললাম।
'চ্যাট কর না? মেয়েদের প্রেম নিবেদন কর
না? তাদের ডিস্টার্ব কর না?' বস যেন গর্জে
উঠলেন।
গলাটা কেন যেন শুকনো লাগছে। চ্যাট তো
আজকাল ভালোই করছি। প্রেমও হয়েছে
সম্প্রতি। কিন্তু কোনো মেয়েকে ডিস্টার্ব
তো করি না।
বস আবার বললেন, 'বল_ মেয়েদের ডিস্টার্ব
কর না?'
'না বস। আমি কোনো মেয়েকে কখনও
ডিস্টার্ব করি না। এত সাহস আমার নেই।'
'একটা মেয়ে প্রমাণসমেত আমার কাছে
অভিযোগ করেছে। তাই আজ থেকে তোমার
চাকরি নট।'
'বস বিশ্বাস করুন...।' গলাটা করুণ শোনায়
বস বললেন, 'তোমার সঙ্গে আর কোনো কথা
বলব না। তুমি এখনই বেরিয়ে যাও। তোমার মুখ
যেন আর না দেখি।'
হতাশমুখে অফিস থেকে বের হলাম। সম্প্রতি
নাদিয়া নামে একটা মেয়ের সঙ্গে ফেসবুকে
পরিচয় হয়েছে। পরিচয়েই সেটা সীমাবদ্ধ
নেই, প্রেমও চলছে পুরোদমে। ভেবেছিলাম,
সামনে বিয়ে নিয়ে চিন্তা করব। নাদিয়া
বলেছিল, ওর পরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয়
করিয়ে দেবে। কিন্তু আজ চাকরিটা হারিয়ে
সব কূল গেল। এসব চিন্তা করতে করতে যখন
রাস্তায় হাঁটছি, ঠিক তখন নাদিয়া ফোন
দিল। বলল, 'কংগ্রাটস।'
আমি অবাক হয়ে বললাম, 'কংগ্রাটস দিচ্ছ
কেন?'
'আজ তোমার চাকরি চলে গেছে তাই।'
নাদিয়ার গলা হাসি হাসি।
'তুমি কীভাবে জানলে_ আমার চাকরি নেই?'
'আমিই তোমার বসকে অভিযোগ করেছি, তুমি
ফেসবুকে আমাকে ডিস্টার্ব কর। তোমাকে
যেন চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়।'
'তুমি আমার নামে অভিযোগ করেছ? তুমি?!!'
রাগটা ঢেকে রাখতে পারলাম না।
নাদিয়া এতটুকু বিচলিত হলো না। বলল,
'শোনো আমার বাবা বলেছিলেন, উনি আমার
পছন্দ মেনে নেবেন। শুধু একটাই শর্ত ছিল,
ছেলেকে বেকার হতে হবে। কারণ উনি
জামাইকে নিজের প্রতিষ্ঠানে বড় কোনো
চাকরি দিতে চান।'
'হ্যাঁ আমি শুনেছি। কিন্তু আমি বেকার
অবস্থায় তোমার বাবার সামনে যেতে পারব
না।'
'এ জন্যই তো তোমাকে বেকার বানিয়ে
দিলাম। এখন আর বাবার আপত্তি থাকবে না।'
নাদিয়া জোরে হেসে উঠল।
'এটা ঠিক করলে, নাদিয়া?'
'জানো না, প্রেমে আর যুদ্ধে সব বৈধ।'
'আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি অভিযোগ
করলে আর বস সাত-পাঁচ না ভেবে আমাকে
চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিলেন। বসকে তুমি
আগে থেকে চিনতে?'
'আরে গর্দভ, তোমার বসই আমার বাবা। উনি
জানেন না তোমার সঙ্গে আমার প্রেম। আর
তুমিও তো আমার ফ্যামিলির কাউকে চেন
না। তাই বুদ্ধিটা কাজে লাগালাম। বাবাকে
বলেছি, রিয়াজ নামে তোমার অফিসের এক
কর্মী আমাকে ফেসবুকে প্রেম নিবেদন
করেছে। বাবা এসব শুনে তোমার চাকরি নট
করে দিয়েছেন। এখন তোমাকে বেকার
অবস্থায় বাবার সামনে নিয়ে যাব। বাবা
তোমাকে মেনে নিতে বাধ্য হবেন। হা হা।'
আমার মাথাটা ঘুরছে। এই মেয়েটার মাথায়
এত বুদ্ধি কেন? খুশিতে সব দাঁত বেরিয়ে
এলো। মনে হচ্ছে শেভিং ক্রিম দিয়ে ব্রাশ
করতে বা কোনো মেয়ে কনুই দিয়ে গুঁতো
দিলেও হাসিটা ধরে রাখতে পারব।
চাকরি হারানোর পর অফিসের যারা
সহানুভূতি জানিয়েছিল, তারাই আবার
শুভেচ্ছা জানাতে এগিয়ে এলো। কারণ
অফিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে যোগ
দিয়েছি। বস তার কথা রেখেছেন। বেকার
ছেলেকে নিজ প্রতিষ্ঠানে বড় পদে চাকরি
দিয়েছেন। সমস্যা একটাই, 'বস' থেকে 'বাবা'
ডাকটায় এখনও অভ্যস্ত হতে পারিনি।
'রূপান্তর'


বিয়ে করার আগে সিনথিয়া নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম।

বিয়ে করার আগে সিনথিয়া নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম।এতটাই ভালোবাসতাম যে তাকে বিয়ে করার সামর্থ্য ছাড়া অন্যসব সামর্থ্য ছিল। সে দেখতে শুনতে খারাপ ছিল না। মেডিকেলের ছাত্রী আর ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো ছিল। কিন্তু তার চেহারা একটু শ্যামলা। শ্যামলা বলা আবার ঠিক হবে না, তার গায়ের রং কালো ছিল। আমার মা-বাবা ওকে পছন্দ করেননি শুধু এই একটা কারনের জন্য। বাকি সবকিছু প্রায়ই ঠিক-ঠাক ছিল। বাবা বলতেন,
কালো মেয়েকে বিয়ে করে বউ বানিয়ে আনা পরিবারের সংস্কার-ঐতিহ্য নষ্ট করার মত। কালো প্রজাতির মানুষেরা শুধু গোলামী করার জন্য জন্ম হয়েছে, হুকুমাত করার জন্য না। 
শুধু আমার বাবা না, আমার দাদার বাবারাও সুন্দর মেয়েদের বিয়ে করে বউ ঘরে তুলতেন। আর সামনেও এই প্রথা চালু থাকবে।
মোট কথা বলতে গেলে এটা পরিবারের বংশীয় রীতি। আর এই রীতিতেই আমি আমার ভালোবাসাকে কুরবান করতে অপ্রস্তুত থাকা স্বত্ত্বেও প্রস্তুত ছিলাম।
বাবার এরকম আচরন আমার কাছে মোটেও ভালো লাগতো না। উনার সামনে যদি আফ্রিকার ব্লাক প্রেসিডেন্ট নেলসন মেন্ডেলার ইতিহাস তুলে ধরতে পারতাম তাহলে উনার ভুলটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারতেন। কিন্তু আমার ভুল ছিল আমি সেই সাহস নিয়ে জন্মাতে পারিনি।
বুকে অল্প যেটুকু সাহস ছিল সেটা নিয়ে একদিন যখন বাবাকে বলেই ফেলি আমি সিনথিয়াকে ভালোবাসি আর ওকে বিয়ে করবো। মেয়েটা দেখতে কিরকম সেটা জানার পর উনার মাথায় রক্ত চেপে বসলো। তিনি এমনভাবে আমার দিকে তাকালেন যদি উনার হাতে পিস্তল থাকতো তাহলে আমার মাথায় নিশানা করে গুলি করে মেরে ফেলতেন। পাত্তাই দিতেন না যে আমি উনার ছেলে।
সেদিন আমি ভয়ে আধমরা ছিলাম। সবকিছু জানা স্বত্ত্বেও আমি বাবাকে সেই কথা শুনিয়েছি যেটা কারোর ক্ষমতা ছিল না উনাকে শুনাবার। কিন্তু আমি তো নিরুপায় ছিলাম এই সত্যটা বলতে।
আমার এই উগ্রপন্থা কথা শুনে আমাকে বিশেষ নজরে রাখা হল। বাইরে যাওয়া থেকে শুরু করে আমার ফোন কেড়ে নেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের শাষন আমার ওপর ধাবানো হল। সিনথিয়ার সাথে কোনরকম যোগাযোগ করার উপায় ছিল না। নিজেকে মনে হচ্ছে কোন যুবতী মেয়ে যেন বাইরে যাওয়াটা তারজন্য মস্ত একটা পাপ। নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছি কেন পুরুষ মানুষ হয়ে জন্মালাম।
..
আমার ছোটমাথায় বড় কথা তো কোন জীবনেও ঢুকবে না কিন্তু এই ছোট্ট বিষয়টা আমি বুঝতে পারছি না আমি এরকম বন্ধি কেন! বয়স ছাব্বিশ ছুই-ছুই কিন্তু নিজের কোন স্বাধীনতা আজও অর্জন করতে পারলাম না। একাত্তর সালে দেশ স্বাধীন হয়েছিল ঠিক-ই কিন্তু আমি-ই মনে হয় একমাত্র ব্যক্তি যে স্বাধীন দেশে বাস করেও পরাধীন। 
..
জানালার ফাঁক দিয়ে আমার খাবার প্রদান করা হয়। আবার শেষ হলে ওইখান থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। এরকটা আমি জেলের কোন কয়েদির মুখ থেকে শুনেছিলাম। তাহলে এখন আমি কি কয়েদী! নিজের রুম-ই কি আমার জেলখানা! 
বেশকিছুক্ষন মাথা চুলকালাম। ভাবছিলাম আমি কি জন্য অপরাধী। কোন মেয়েকে ভালোবেসেছি তাই! নাকি কালো মেয়েটাকে পছন্দ করেছি সেজন্য!
..
রাতের বেলা বাবা রুমে আসলেন। বাবার এক হাতে মস্ত বড় একটা তালা আর আরেক হাতে ভাতে-মাংসে ভরা থালা। বুঝতে পারছিলাম না এ কেমন বাবার ভালোবাসা।
বাবা এসে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলেন। হয়ত এরকম অবস্থায় তিনি আমাকে দেখে কষ্ট পেলেন। আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম,
--আমি কি কোন ভুল করেছি যে এভাবে আটকা রাখা হয়েছে!
বাবা থালাটা টেবিলে রেখে হাত মুছে বললেন,
--নাহ, ভুল আমার ছিল যে তোমাকে আগলে রাখতে পারিনি। তাই আমার ভুলটা তুমি শুধরাচ্ছো।
--আমি কিছু বুঝতে পারিনি।
--বুঝার মত বয়স এখনো তোমার হয়নি। শুধু এটা জেনে রেখো তুমি আর কোনদিন ওই কালচে মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখবে না।
--কিন্তু বাবা আমি ওকে ভালোবাসি আর ওকে বিয়ে করতে চাই।
--ভালোবাসা কি! হ্যা! ওই ভালোবাসা কি! ওইসব ভালোবাসা-তালোবাসা আর যদি কোনদিন তোমার মুখ থেকে শুনেছি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। বুঝেছো!
আমি মাথাটা নিচু করে ঢোঁক গিলে হ্যা-সূচক জবাব দিলাম। বাবা একটু নরম স্বরে আবার বললেন;
--দেখো বাবাজান, বিয়ে করতে হলে কোন ভালোবাসা লাগে না, লাগে শুধু কবুল-নামা। আর এটাই মূল স্তম্ভ। ফালতু চিন্তা-ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। এতেই সবার মঙল।
আমি চোখের জলে ভাত নষ্ট করলাম। ভাতের দানা যেন আমার কাছে বিষ মনে হচ্ছিল। আর পানি তো ফুটন্ত গরম পানি যে গিললেই গলা-বুক জ্বলে যাবে তবুও তৃষ্ণা মেটাতে হবে।
..
এভাবে দীর্ঘ সাতদিন পর আমাকে জেলখানা থেকে মুক্তি দেয়া হল। সুর্যের মুখখানা দেখে অপরিচিত মনে হচ্ছে। এটা সুর্য নাকি অন্যকিছু বুঝতে পারছিলাম না। সবকিছু কেমন জানি ধোয়াশার মধ্যে আটকা ছিল। মনে করলাম আমার ওপর কোন দয়া জমেছে তাই ছাড়া পেয়েছি কিন্তু সেরকমটা না। মায়ের মুখ থেকে শুনলাম আমার ফুফাতো বোন আর তার মা দেশে ফিরেছে। তাই আমাকে যেন এরকম অবস্থায় না দেখেন তাই ছাড়া দেয়া হল। আমি মনে মনে হাসলাম। ইচ্ছে করছিল তাদেরকে স্যালুট দিয়ে একটা ধন্যবাদ জানাতে। কিন্তু ইচ্ছেটাকে নিজের মধ্যেই চেপে রাখলাম। 
..
সবাই যখন ব্যস্ত নতুন অতিথিপূজা নিয়ে তখন আমি চড়কিপাক খাচ্ছিলাম কখন ঘর থেকে বের হবো আর সিনথিয়ার সাথে দেখা করবো। কিন্তু কোনরকম ভাবে সুযোগ হাতে পাচ্ছিলাম না। এরই মধ্যে বাবার উপস্থিতি আমার জন্য বিপদ হয়ে দাড়ালো। উনি দূর থেকে আমার দিকে তাকাতে তাকাতে আসছেন যেন উনার চোখের পলকে আমি থাকি। আমি হাত দুটো পিছনে নিয়ে আরাম করে দাঁড়িয়ে বাবার আসাটাকে দেখলাম। কাছা-কাছি আসলে আমার হাত একটা ধরে আমাকে উনার রুমে নিয়ে গেলেন। উনি যথেষ্ট নম্র আর টান্ডা মাথায় বললেন;
--তোমার ফুফুমনি তোমার জন্যই দেশে এসেছেন শুধু উনার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিতে। আশা করি তুমি বিষয়টা বুঝতে পারছো।
--কিন্তু বাবা__________„„„„„
--চুপ!!!! একদম চুপ।
উনার ধমক শুনে আমার জান পানি হয়ে গেল। আমি নিতান্ত বাচ্চার মত দাঁড়িয়ে থাকলাম। বাবা উনার হ্যান্ডব্যাগ থেকে দুটো বিয়ের কার্ড বের করে আমার হাতে একটা দিয়ে পড়তে বললেন। আমি কভার থেকে কার্ড বের করে দেখলাম আমার আর সুমাইয়ার বিয়ের তত্ত্ব আর বিয়ের তারিখও দেওয়া। আমি শুধু বাবার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালাম। উনি যদি আমার চোখের ভাষা পড়তে পারতেন তাহলে বুঝতেন কি আহামরি রীতির জন্য তিনি নিজের ছেলের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজটা করছেন! 
..
বাবা হয়ত সেটা বুঝতে পারবেন না। উনি শুধু বংশের মান-সম্মান বাচাতে আমাকে কুরবানি দিচ্ছেন। উনার কাছে আমি শুধু একটা মহরা।
..
আমি কার্ড দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। এটা ভেবে নয় যে আমার বাবা আমাকে বুঝতে পারেননি, এটা ভেবে যে আমি সিনথিয়াকে ছাড়া কিভাবে অন্য কোন মেয়েকে নিয়ে সংসার সাজাবো। হাঁটু ভাজ করে মেঝেতে পা লুটালাম। বাবা এসে আমাকে ধরলেন আর চেয়ারে বসালেন। তারপর আরেকটা কার্ড আমার হাতে শপে দিলেন। ওই কার্ডটা আগের কার্ড থেকে ভিন্ন ছিল। সেটাও খুলে দেখলাম। আর যা সব লিখা ছিল সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
সিনথিয়ার বিয়ে!! 
অন্য একটা ছেলের সাথে!! আমি বাবার দিকে তাকালাম। উনি হ্যাসূচক মাথা নাড়লেন। আমার হাত থেকে কার্ড পড়ে যায়। আমি থমকে যাই। পাথরের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি যেন আমি স্ট্যাচু অব লিভার্টি।
..
আমি এতটাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে কয়েক সেকেন্ড আগে গড়-গড় করে আমার চোখ থেকে জল ঝরছিল সেগুলো বন্ধ হয়ে গেল। না, এটা নয় যে আমার চোখের পানি সব শেষ হয়ে গিয়েছে। জলগুলো বন্ধ হয়েছে কারনও চোখও সেটা মেনে নিতে পারছে না সেজন্য সেও থমকে গিয়েছে।
..
স্বাভাবিক অবস্থায় থেকে মানতেই পারছিলাম না সিনথিয়ার বিয়ে। দশ-পনেরো সেকেন্ড অন্তর অন্তর আমি চোখ বুজে রাখার পর খুলে চারপাশ দেখি শুধু এটা ভেবে যে আমি স্বপ্ন দেখছি না তো!
যতটুকু জানি আমার চেয়ে সে বেশি আমাকে ভালোবাসে। আমার ভালোবাসায় হয়ত একটু ভুল থাকতে পারে কিন্তু তার না।
নাহ! সিনথিয়ার বিয়ে এটা হতে পারে না। কোথাও কিছু একটা ভুল নিশ্চই আছে। আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
--যে মেয়ে তোমার জন্য জন্মায় নি কেন তুমি বারবার তার কথা মনে করছো! ভুলে যাও বাবাজান তাকে। আর নতুন করে জীবন সাজাও।
বাবার এরকম নি:সংকোচ আবেদন শুনে আর নিজেকে সামালতে পারিনি। বাবার কথাই মেনে ফেললাম। বাবা তো বাবাই। উনি তো সবসময়-ই আমার ভালো চান। আর আমার এই বিয়ে করা যদি বাবার হাসি ফুটার কারন হয় তাহলে হ্যা আমি করবো এ বিয়ে। নতুন কাউকে জীবনসঙ্গিনী করবো।
..
শেষ-মেষ নিজের ইচ্ছেটাকে অন্ধকারে ফেলে সুমাইয়াকে বিয়ে করলাম। সে দেখতে আমার সিনথিয়ার মত ছিল না, অনেক সুন্দরী ছিল। যদি ঘরটা অন্ধকারে ভরা থাকে তবুও তাকে সেখা যাবে। শুধু দেখা যাবে তা না, রুমটাও আলোকিত করে ফেলবে। 
..
মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাই খুশি এই বিয়েতে। একমাত্র আমি বাদে। আমি খানিকটা খুশি যে সবার মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছি। কিন্তু বাকিটা,,,,,
কেউ কি বোঝার চেষ্টা করবে আমার রক্তে-মাংসে গড়া বুকে কি যন্ত্রনা হচ্ছে! কেউ কি বুঝতে পারবে আমার চোখের জলে আমার কত স্বপ্ন গড়িয়ে মাটিতে মিশে যাচ্ছে! কেউ বুঝতে পারবে না, কেউ না।
..
ধর্মীয় কোন রীতির জন্য যদি সিনথিয়াকে ভালোবাসা আমার জন্য পাপ ছিল তাহলে হয়ত গুনাহ থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আমি ওকে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু উচ্চবংশীয় রীতির জন্য আমি সিনথিয়াকে!!!
কালো হয়ে জন্ম নেওয়াটা-ই কি ওর পাপ ছিল! ও কালো রঙের সেজন্য কি সে সারাজীবন গোলাম-ই থাকবে! মাথা উচু করে কি সে দাড়াতে পারবে না! সাদা জাতের কাউকে কি ভালোবাসতে পারবে না!
আচ্ছা, ওর চুল কালো এটা কোম সমস্যা না। ওর চোখের মনি কালো এটাও কোন সমস্যা না। আবার ওর চোখের কাজলও কালো তবুও সেটা কোন সমস্যার কাতারে পড়ে না। পড়ে শুধু ওর গায়ের রং। এই একটা কারনের জন্যই কি আস্ত মানুষের পার্সোনালিটি ভুল হয়ে যাবে!
আমি কার কাছে প্রশ্ন করছি আর কাছে উত্তর চাচ্ছি সেটার সমীকরণ সবসময় কুয়াশার আড়ালে ঢাকা থাকবে। কেউ সরিয়ে দেখতে চাইবে না এর পিছনে রহস্যটা কি।
যার জন্য এত প্রশ্ন ছুড়ছিলাম সেই যখন আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করছে তাহলে ওই উত্তরগুলো খুজা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
সিনথিয়াকে ছাড়া দেখতে দেখতে আটারো মাস পার হয়ে গেল। বিয়ের কয়েকমাস পর আমি কানাডায় চলে আসলাম। দেশে আমি যতই দিন কাটাবো ততই ওর কথা মনে পড়বে। কলেজের পাশ দিয়ে গেলে মনে পড়বে তার সাথে পুকুরে বসা প্রতিটা মুহুর্ত, বাজারে গেলে মনে পড়বে ব্রিজের পাশের দোকান থেকে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল কিনে দেওয়ার মত শত কথা, রাস্তায় হাঁটলে মনে পড়বে ওর সাথে চলা প্রতিটা পায়ের শব্দ। সব যেন আমাকে নিঃসৃত করার এক কৌশল। তাই দেশ ছেড়ে, সিনথিয়াকে ছেড়ে, পুরনো সব অতীতকে পিছনে ফেলে নতুন এক ভবিষ্যতের ছবি আঁকার জন্যে চলে এলাম কানাডায়।
সবকিছু প্রায়ই ভুলে গিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে মনে হত ওর কথাগুলো কিন্তু সেগুলো ধাবিয়ে রাখতাম এই ভেবে যে সেও তো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। নতুন কাউকে বিয়ে করেছে সংসার সাজিয়েছে হয়ত দু-এক বাচ্চাও আছে।
আবার বলতাম বাদ দাও সেসব কথা। যে যেরকম সুখে আছে সে থাকুক সেরকম, তাতে আমার কি যায় আসে। আমি আমার মতই সুখে আছি স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। ওর সুখ যদি ওর নতুন মানুষ হয় তাহলে আমার সুখ সুমাইয়া আর আমাদের আসতে যাওয়া নতুন পাখিটা।
ব্যথা যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে যাচ্ছে তখন সুমাইয়ার গর্ভে আমাদের নয় মাসের সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। আব্বু আম্মুকে ফোন করে সব জানিয়েছি। আমি আর ওর আম্মু হসপিটালের বারান্দায় বসে আছি শুধু খুশির সংবাদের অপেক্ষায়।
কিন্তু তখনই বিপদের ঘোর আসলো। ডাক্তারের সাদা কাপড়ে পড়া একটা মেয়ে মানুষ আমার দিকে আসছে। আমার চোখে অল্প জল জমা ছিল ওইগুলো মুছে মেয়েটার দিকে তাকালাম। দেখার সাথে সাথে আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। আমার পা ঠক-ঠক করে কাঁপছে আমার হার্টবিটও ক্রমশ বাড়ছে। যে মেয়েটা আমি অনেক আগেই হ্নদয় থেকে মুছে ফেলেছি সেই আজ আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
সিনথিয়া!!!
কাঁপা কাঁপা স্বরে নামটা কন্ঠ থেকে বের হল। আমার কাঁপামিশ্রিত কণ্ঠ আর আচমকা দাঁড়ানো দেখে সুমাইয়ার আম্মু চমকে গেলেন। উনি আস্তে আস্তে করে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
--কি হয়েছে! তুমি হঠাৎ দাড়িয়ে গেলে কেন!
আমি যে মুখ থেকে কোন কথা বের করবো তার সাহস পাচ্ছিলাম না। শুধু জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে লাগলাম। আমি একটানা ওর দিকে তাকিয়ে আছি আর সেও। দুজন-দুজনকে আজ কয়েকশ বছর পর দেখছি মনে হচ্ছে। আমি স্থির হয়ে দাঁড়াতে না পারলেও সে ঠিক-ই স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি কেবলমাত্র তাকে জিজ্ঞেস করতে যাবো সে এখানে কি করছে তার আগে সেই আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো;
--আপনি প্রেগন্যান্ট মহিলার কি হোন!
ওপাশ থেকে সুমাইয়ার আম্মু বললেন,
--আমি ওর মা আর ও (আমি) তার স্বামী।
সিনথিয়া একটুর জন্য হলেও থমকেছে। কারন আমি ওর চোখ দেখে বুঝতে পারছি সে এটা শুনে বিরাট ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু আমার সামনে সেটা প্রকাশ করতে দিচ্ছে না। এমনভাবে সে পরিস্থিতি সামলালো যে তার মনে যে ঝড় উঠেছিল সেটা সে নিজেও টের পায়নি।
আমি ওর চোখেরজ্যোতির ভিতর ঢুকে দেখতে পাচ্ছি তার চোখেরজল সামনের দিকে গড়াতে যাচ্ছে। আমি তখনই ওর চোখ থেকে আমার চোখ সরিয়ে নিই। আমি চাই না আমি আর ওর মায়ায় পড়ি।
সুমাইয়ার আম্মুকে সিনথিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন;
--সবকিছু ঠিক আছে তো ডাক্টার! মানে আমার মেয়ে ঠিক আছে তো!
সে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,
--ঠিক আছে কি না সেটা বলা এখন ঠিক হবে না কিন্তু অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল। বাচ্চা এক সাইডে আটকে গিয়েছে। ডেলিভারিতে একটু সমস্যা হবে সাথে রিস্কও।
ওর কথা শুনে আমি আতঁকে গেলাম। ওকে বললাম,
--যত টাকা লাগে আমি দিব আপনি শুধু আমার স্ত্রী আর বাচ্চাটাকে সুস্থ করে আমার হাতে ফিরিয়ে দিন।
সিনথিয়া আমার কথা শুনে একটু চুপ থাকলো। সে হয়ত কোন কথা খুজে পাচ্ছে না কি বলবে। তখন সুমাইয়ার আম্মু বললেন;
--আপনি ওসব নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না। শুধু আপনি আমার মেয়ে আর নাতনীকে সহি-সালামত আমার হাতে তুলে দিন।
সিনথিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
--দেখুন, টাকাটা বড় কথা না, সবকিছু টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন আর দুয়া করুন।
এটা বলে অপারেশন করার জন্যে সে আবার রুমে চলে গেল। আমি একটু ভয় পেলাম যে আমার স্ত্রী-বাচ্চা শুনে সে আবার কিছু অঘটন ঘটাবে না তো! ওকে তো আমি ভালো করেই চিনি সে মারাত্বক রাগী আর বদমেজাজি একটা মেয়ে। পুরনো কথা ভেবে, আমাকে কষ্ট দিতে সে যদি আমার স্ত্রী-বাচ্চাকে ________!!!!!
ভয়ে আমার সমস্ত হাত-পা টান্ডা হয়ে গেল। টানা দু-ঘন্টার অপারেশনের পর সিনথিয়া বের হল কোলে একটা বাচ্চাকে নিয়ে। আমি দৌড়ে গিয়ে ওর সামনে দাড়ালাম। ওর কোল থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে আমার কোলে নিলাম। সে বললো;
--কংগ্রেচুলেশন! আপনার মেয়ে হয়েছে। আর আপনার স্ত্রীও সুস্থ আছে।
কেন জানি আমি ওর কথায় ভরসা পেলাম না। তাই আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে অপারেশন রুমের সামনে গেলাম। সিনথিয়া পিছন থেকে বললো,
-আমি পেশায় ডাক্তার আর ডাক্তারের কাজ মানুষকে মারা না, মানুষকে নতুন জীবন উপহার দেওয়া।
আমি ওর কথায় একটু লজ্জিতবোধ করলাম তবুও কিছু বললাম না। সেও আর কিছু না বলে চলে গেল। আমি বাচ্চাটাকে সুমাইয়ার কাছে ওর মায়ের হাতে তুলে দিয়ে সিনথিয়াকে খুজতে বের হলাম। অবশেষে তাকে পেলাম। পিছন থেকে তাকে ডাক দিলাম। সে শুনে দাড়ালো। আমি ওকে বললাম;
--দুঃখিত! তোমাকে ভুল বুঝেছি।
--তুমি কি মনে করেছো আমি তোমার ওপর প্রতিশোধ নিবো বলে _______........
আমি ওর কথায় বাধা দিলাম।
--নাহ ওসব কিছুনা। আমি শুধু একটু ভয় পেয়েছিলাম। 
--হুম। তা এখানে কি করছো! যাও বউ-বাচ্চার পাশে যাও।
--তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছি।
--ওহ! তোমার পরিবারকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি সেজন্যে!
--হ্যা।
--এটা আমার জন্য ফরজ ছিল তাই করেছি। ধন্যবাদ জানাতে হবে না।
--ওকে। 
--বাচ্চাটা তোমার আর তোমার বউয়ের মত সুন্দর-ই হয়েছে।
এই কথাটা সে একটু তাচ্ছিল্য স্বরে বললো। আমিও একটু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শুনেছি।
-হুম জানি। 
--ভালো। আচ্ছা আমি এখন যাই। আমার কাজ আছে।
--শুনো, একটা কথা ছিল,
--বলো,
--কেমন আছো তুমি?
--কেমন রেখেছো তুমি?
--আমাকে ভুলো নি?
--তুমি কি ভুলেছো?
--হুম, অনেকটা।
--ভুলবেই তো, আমি তো আর এত আহামরি সুন্দরী নাহ।
--আমি কি কখনো সাদা-কালো নিয়ে বড়াই করেছি?
--তাহলে মাঝপথে আমার হাত ছেড়ে দিলে কেন?
--আমি ছাড়িনি, তুমি ছেড়েছো। 
--আমি ছেড়েছি মানে!
--তুমি-ই তো আমার আগে বিয়ের পিড়িতে বসেছো আর আমাকে দাওয়াত দিয়েছো।
--কি বলছো কি তুমি! আমি কখন তোমার আগে বিয়ের পিড়িতে বসলাম!
--আচ্ছা! তোমার মনে নেই! ওই কার্ড যে তুমি দিলে! তোমার বিয়ের কার্ড! 
--দাঁড়াও দাড়াও! আমার কথাটা শুনো, 
--কি শুনবো! ভুল তোমার আর দোষ আমার! 
--শান, আমি কোন বিয়ে করিইনি।
এ কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার মাথায় বজ্রপাত ভেঙে পড়লো। আমি নিঃস্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সে বললো;
--তুমি আমার বিয়ের কোন কার্ড পাও নি বরং আমি তোমার কার্ড পেয়েছি। তোমার বাবা নিয়ে এসেছেন। 
--তোমার বিয়ের কার্ডও তো আমার বাবা নিয়ে এসেছিলেন।
--বিশ্বাস করো শান, আমি বিয়ে করিনি। তুমি-ই আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা।
--তাহলে বাবা আমাকে মিথ্যে কথা বললেন কেন!
--উনার পুত্রবধু হিসেবে আমি ঠিক ছিলাম না। কিন্তু তোমার বউ হিসেবে আমি ঠিক ছিলাম। আর সেটা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই,,,,
আমি কল্পনাও করতে পারছিনা বাবা এরকম আমার সাথে কিভাবে করলেন! এরকম ধোকা তো কেউ তার শত্রুর সাথেও করবে না আর আমি তো উনার নিজের ছেলেও হয়েও____…………। আমি ওকে বললাম,,
--সিনথি শুনো,,,
--আর বলতে হবে না। আমি সব বুঝতে পেরেছি।
--বিশ্বাস করো আমি এসবের কিছুই জানিনা।
--বাদ দাও, যা হবার হয়ে গিয়েছে।
--কিন্তু,,
--কোন কিন্তু না। তুমি ভুলে যেওনা তুমি কারোর স্বামী, তুমি কারোর বাবা। অতীতটাকে নিয়ে আর ভেবো না। 
--আর তুমি!
--আমার তো এই ক্লিনিক ওই ক্লিনিকে দৌড়া-দৌড়ি করতে কর‍তেই চলে যাবে। এখন আর নিজের জীবন নিয়ে না, অন্যের জীবন নিয়েই ভাবি।
--তুমি এরকম বাকি জীবন চালিয়ে যেতে পারবে!
--হ্যা পারবো। তুমি যদি খুশি হয়ে থাকতে পারো তাহলে আমি কেন পারবোনা!
--আমি তোমার সবকিছু নষ্ট করে দিলাম, সবকিছু।
--তুমি না, বা তোমার বাবাও না, পরিস্থিতি আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে।
--আমি জানিনা এর পরে আমি কি বলবো বা কিছু বলার আছে কি না। শুধু বলবো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর আজীবন রাতের তারা ভেবে ভালোবেসে যাবো।
--হুম। ভালো হবে যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও।
--নাহ, ভুলবো না। আজ তুমি আমার স্ত্রীকে বাচিয়েছো, আমার মেয়েকে বাচিয়েছো। এটার মুল্য আমি তোমাকে দিতে না পারলেও,,,,,,,,,,,
--না পারলেও?
--আমার মেয়ের নাম তোমার নামানুসারে রাখবো। হ্যা, সিনথিয়া-ই রাখবো আমার মেয়ের নাম।
--কিইই! না ওসব করো না।
--এটাই আমি করবো। আর আমি মনে করি বাবার ভুল এভাবেই উনি বুঝতে পারবেন।
--উনি তোমার বাবা, উনাকে কষ্ট দিও না।
--নাহ, আমি উনাকে কিছু বলবো না। উনি সবকিছু আপনা-আপনি-ই বুঝবেন।
কথা বলার ফাঁকে হঠাৎ সুমাইয়ার আম্মু পিছন থেকে ডাক দিলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে পিছনে তাকালাম। উনি সিনথিয়াকে দেখতে পেলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। উনি সবকিছু বুঝে ফেললেন না তো! আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
--তুমি এখানে কি কর? সুমাইয়া তোমাকে খুজছে।
--আমি আসলে ডাক্টারকে ধন্যবাদ জানাতে আসছিলাম। 
--ওহ!
তিনি সিনথিয়ার হাত ধরে বললেন,
--তুমি খুব লক্ষি একটা মেয়ে। তোমার জন্যই আজ আমার মেয়ে-নাতনী বেচে আছে। কিভাবে তোমার শুকরিয়া আদায় করবো বুঝতে পারছিনা।
--না না এসব কিছু করতে হবে না। এটা তো আমার কাজ। আমার কিছু লাগবে না আপনি শুধু আমার জন্য দুয়া করেন।
--তা তো করবোই।
--ধন্যবাদ। আমি এখন যাই, আমার আরেকটা অপারেশন আছে।
--হ্যা হ্যা নিশ্চই।
অতঃপর সিনথিয়া চলে যাচ্ছে। আমি দেখছি। আমি জানি সে পিছন মোড়ে তাকাবে না। কিন্তু আমি এও জানি যে সে জানে আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি। তবুও সে তাকাবে না। সে হয়ত চায়না আমি আর ওর চোখটাকে দেখি, ওর চুলটাকে দেখি বা ওর হাসিটাকে দেখি। তবুও আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি।
দেখতে দেখতে হঠাৎ সে হারিয়ে গেল। নেই কোন কুয়াশা নেই কোন জাল তবুও সে হারিয়ে গিয়েছে। আমি ইচ্ছে করলে ওর ঘ্রান শুঁকতে শুঁকতে তাকে ফিরে পেতে পারি কিন্তু পারবোনা। আমি এখন শুধু শান না, একজন স্বামীও, একজন বাবাও। আর এইসব পরিচয় নিয়ে পিছনে ফিরে তাকানোটা শোভা পাবে না, একদম না। এরচেয়ে বরং কঠিন বাস্তব আর সত্যটাকে মেনে নিয়ে ভবিষ্যত আলোকিত করা সহজতর হবে। এভাবেই না হয় কেটে যাবে দিন নামের দিন আর রাত নামের রাত।
...
...
...
_______গল্প:- সাদা-কালোতে নেই আর আমি তুমি__________

Wednesday, August 16, 2017

ঢাকা থেকে কলকাতা যাচ্ছিলাম আমি।

স্কিন ডিজিজের উপর একটা
সেমিনারে যোগ দিতে ঢাকা
থেকে কলকাতা যাচ্ছিলাম আমি।
এরকম ট্যুর পেলে সবাই বউ নিয়ে যায়,
আমিও যেতাম, কিন্তু শেষ মুহূর্তের
ঝগড়াটা মাটি করে দিল সব।
ঝগড়াটা বেঁধেছিল ওর মামাতো
বোনের বিয়ে নিয়ে। ও বলেছে
যাবে, আমি বলেছি সময় নেই। ব্যস,
এখান থেকেই বেঁধে গেল কুরুক্ষেত্র।
আমি খারাপ, আমি স্বার্থপর, আমি
অসামাজিক - আরও কত যে জানা
অজানা তকমা কপালে জুটল তার ঠিক
নেই।
ব্যস, রেগে গেলাম আমিও। আমার বউ
হয়ে আমাকে অপমান! এত বড় সাহস! যাও,
নিলাম না কাউকে, একাই যাব
কলকাতা, কার কি?
আসলে ঐ ঝগড়ার কারণেই মনটা খারাপ
ছিল। ঝগড়াটা আমার সমস্ত
চিন্তাভাবনাকে এমন জট পাকিয়ে
ফেলেছিল যে, প্লেনে পাশের
সহযাত্রীর সাথে আলাপের সুযোগই হয়
নি আমার।
আমাকে অনেকক্ষণ ধরে একমনে মুখ কুঁচকে
চিন্তা করতে দেখে ভদ্রলোক বললেন,
“ভাই, আপনাকে এত Tensed লাগছে
কেন?”
প্রথমবার কথাটা ভালোভাবে শুনতে
পাই নি। তিনি আবার বললেন, “ভাই,
কি এত চিন্তা করছেন?”
কল্পনায় তখন বউ আমার পা জোড়া প্রায়
ধরেই ফেলেছে, কান্নাকাটি ক্ষমা
চাওয়াচাওয়ি প্রায় শুরুই করে
দিয়েছে, এমন সময় ঐ কথায় চটকা
ভেঙ্গে গেল আমার। শব্দের উৎসের
দিকে তাকিয়ে দেখি, স্যুট টাই পরা
বেশ স্মার্ট এক বাঙালি ভদ্রলোক ঈষৎ
হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে
আছেন।
আমি বললাম, “কিছু বললেন?”
তিনি উত্তর দিলেন, “তখন থেকেই
দেখলাম আপনি খুব Tensed। তাই কৌতূহল
হল আরকি। কি ব্যাপার ভাই? কি
হয়েছে?”
আমি ভদ্রলোকের কথা বলার স্টাইলে
চমৎকৃত হলাম। অসাধারণ শুদ্ধ উচ্চারণে
বাংলা বলেন তিনি। তার পোশাক
আশাকও চমৎকার। ধবধবে সাদা শার্ট,
কালো প্যান্ট, চকচকে কালো স্যুট,
আঁচড়ানো চুল। একটা চুলও অবিন্যস্ত নয়
তার। শার্টে সামান্য ভাঁজও দেখলাম
না আমি। তাছাড়া হাতের রোলেক্স
ঘড়িটাও বেশ দামি। বয়স? হবে
চল্লিশের কাছাকাছি।
আমার এই পর্যবেক্ষণ লক্ষ্য করে তিনি
বললেন, “কি দেখছেন?”
আমি বললাম, “আপনার স্ত্রী-ভাগ্য
নিয়ে মনে মনে আফসোস করছি ভাই।
ছেলেরা একা এতটা ফিটফাট হতেই
পারে না, বিশেষ করে সে যদি
বাঙালি হয়”।
আমার কথা শুনে তিনি হা হা করে
হাসতে লাগলেন। তারপর বললেন, “না
ভাই, আপনি যা ভাবছেন তা নয়। আমি
অবিবাহিত”।
অবাক হলাম। সত্যি অবাক হলাম আমি।
এরকম স্মার্ট টগবগে একজন যুবক, যে কিনা
আবার হাতে রোলেক্স ঘড়ি পরে
প্লেনে করে বিদেশ যাবার সামর্থ্য
রাখে, সে অবিবাহিত হবে কেন? তবে
কি...
ভাবনাটাকে শেষ করতে না দিয়ে
তিনি বললেন, “জানি আপনি কি
ভাবছেন। ভাবছেন, এত ফিটফাট, স্মার্ট
একটা মানুষের বিয়ে হয় নি কেন, তাই
তো?”
নিজের ভাবনাটা এভাবে ধরা পড়ে
যাবে ভাবি নি। লজ্জা পেলাম খুব।
আমার মুখভঙ্গি দেখে উনি বললেন,
“স্পষ্ট বুঝতে পারছি, আপনার মনে
অসংখ্য প্রশ্ন জমা হয়েছে। আমাকে
একটা রহস্যময় মানুষ বলে মনে হচ্ছে, তাই
না?”
আমি বললাম, “হুম। আপনার গেটআপ আর
ম্যারিটাল স্ট্যাটাস ম্যাচ করছে না।
দুটো ভিন্ন কথা বলছে”।
তিনি বললেন, “আচ্ছা, আপনি তো
বিবাহিত, তাই না?”
আমি মাথা নাড়ালাম। “হুম”।
“আপনাদের মধ্যে কি রিসেন্টলি ঝগড়া
হয়েছে?”
চমকে উঠলাম। “হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?”
“না, অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম আপনি
একমনে কীসব বিড়বিড় করছেন আর
আঙ্গুলের বিয়ের আংটিটা ঘুরাচ্ছেন।
আর তাছাড়া আপনার আপনার শার্টের
কলারের এক পাশ তেরছাভাবে ভাঁজ
হয়ে আছে, স্যুটটা ভালোভাবে ঝাড়া
হয় নি বোঝা যাচ্ছে, আর হাতঘড়িটার
ব্যাটারি শেষ হয়ে ওটা অচল হয়ে
আছে। এসব দেখে দুইয়ে দুইয়ে চার
মিলিয়ে নিতে সমস্যা হল না যে
আপনি খুব রিসেন্টলি বউয়ের সাথে
ঝগড়া করে এসেছেন”।
আমি হেসে ফেললাম। “চমৎকার, ভাই।
অসাধারণ আপনার পর্যবেক্ষণ শক্তি”।
“ধন্যবাদ। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি কিছু
মনে করবেন না। আপনার বউকে আপনি
কতটা ভালবাসেন?”
“অনেক ভালবাসি”।
“আর উনি? উনি আপনাকে কতটা
ভালবাসেন?”
“অনেক ভালবাসে”।
“তাহলে আপনারা ঝগড়া করেন কেন?”
“আসলে ভাই”, একটু ভেবে বলি আমি,
“দুইটা মানুষের মনের মিল তো সবসময় হয়
না, তাই না? যখন হয় না তখনই গ্যাঞ্জাম
বাঁধে, বুঝলেন?”
“বুঝলাম। কিন্তু গ্যাঞ্জাম তো আমার
আপনার মধ্যেও বাঁধতে পারে। তাহলে
হোয়াটস সো স্পেশাল এবাউট
ম্যারেজ...আই মিন, লাভ?”
“এখানেই তো লাভের আসল রহস্য
নিহিত, ভাই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ট্রু
লাভ থাকলে গ্যাঞ্জামের পরে দুপক্ষই
দোষ স্বীকার করে। তখন রিলেশন আরও
গাঢ় হয়। আর ট্রু লাভ না থাকলে সম্পর্ক
আরও খারাপ হয়, এমনকি ভেঙ্গেও
যেতে পারে”।
ভদ্রলোক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
বললেন, “কতকিছু মিস করে ফেললাম
জীবনের!”
আমি বললাম, “কেন ভাই? জীবনে
আপনি প্রেমে পড়েন নি? কারো
সাথে রিলেশন হয় নি কখনও?”
তিনি বললেন, “প্রেমে ভাই
পড়েছিলাম, জাস্ট ফর ওয়ান্স”।
“তারপর? রিলেশন টিকল না?”
“আসলে, আমাদের মধ্যে কখনই রিলেশন
হয় নি। আই ফেল ইন লাভ উইথ হার, আই
ওয়াজ ম্যাড ফর হার। কিন্তু, পুরোটাই
ছিল একতরফা। ও আমাকে ভালবাসে
নি”।
আমি নড়েচড়ে বসলাম। “কাহিনীটা
ইন্টেরেস্টিং মনে হচ্ছে। আরেকটু বলা
যায় কি?’
তিনি বললেন, “শুনবেন? অন্যের
কচকচানি আজকাল কেউ শুনতে চায়
না”।
আমি বললাম, “আমি শুনব। বলুন আপনার
লাভ স্টোরি”।
ভদ্রলোক শুরু করলেন, “আমি যখন
মেডিকেলে কলেজে থার্ড ইয়ারে
পড়তাম তখন এক সহপাঠিনীর প্রেমে
পড়ে যাই। প্রেম মানে ভয়াবহ প্রেম,
উথাল পাথাল প্রেম।
একদিন ওকে না দেখলে ভালো লাগে
না, ওর ছবি না দেখলে রাতে ঘুম আসে
না, ওকে অন্য ছেলের আশেপাশে
দেখলে ছেলেটাকে স্রেফ খুন করতে
ইচ্ছা করে...মানে পাগলামি ভর করলে
মানুষের যা হয়, আমার হয়েছিল তাই-ই।
ও আমার দিনের শান্তি তো বটেই,
রাতের ঘুমও হারাম করে দিয়েছিল।
ওকে যে আমার ভালো লাগে সেটা
আমি প্রথমে বন্ধুদের দিয়ে বলাই। পরে
নিজেই বলি। কিন্তু ও আমার প্রস্তাবে
রাজি হয় না। আবার রাজি না হবার
কোন কারণও বলে না মেয়েটা।
আমি পাগলের মত হয়ে যাই। ভালো
স্টুডেন্ট ছিলাম আগে, কিন্তু তখন
থেকে আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিই।
সিগারেট ধরি। আগে পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজ পড়তাম, কিন্তু তখন থেকে সব
শিকেয় ওঠে। আগে ছেলেদের সাথে
ভালো মিশতাম, কিন্তু তখন থেকে
কথা না বলার কারণে একের পর এক
ভালো বন্ধু হারাতে থাকি আমি।
আমি হাত কেটে ওকে রক্ত দিয়ে
চিঠি লিখে পাঠাই। ঘুমের ওষুধের
খালি বোতল পাঠাই। কিন্তু ও কোন
উত্তর দেয় না। ভিতরে ভিতরে আমার
পুরনো আমিটা মারা যেতে থাকে।
পরীক্ষা চলে আসে। আমি শুয়ে থাকি,
বসে থাকি। পোলাপান পরীক্ষা
দিতে যায়, আমি পাশ ফিরে শুই।
পোলাপান পরীক্ষা দিয়ে আসে, আমি
ব্রাশে পেস্ট মাখাই। পোলাপান
নেক্সট পরীক্ষার পড়া শুরু করে, আমি
ক্যান্টিনবয়কে ফোন করে আরেক
প্যাকেট সিগারেট রুমে দিয়ে যেতে
বলি।
ভাগ্য সহায়ই বলতে হবে, অবশেষে তার
দয়া হয়। আমার সাথে দেখা করে সে।
কতগুলো শর্ত জুড়ে দেয় আমার উপর।
এগুলো পূরণ করলে নাকি ও আমাকে
ভালবাসবে।
আমি শর্তগুলো শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে
থাকি। ক্ষণিকের জন্য আমার মনে হয়,
শর্তে যদি থাকে আমাকে এখন সাগরে
ঝাঁপ দিতে হবে তো আমি এখনই ঝাঁপ
দেব। শর্তে যদি থাকে কুমিরের সাথে
খালি হাতে যুদ্ধ করতে হবে তো এখনই
লেগে যাব মরণপণ যুদ্ধে।
কিন্তু শর্তগুলো শুনে আমি হতবাক হয়ে
যাই। ও বলে, “তোমাকে সব সাপ্লি
পরীক্ষা পাশ করতে হবে। নেক্সট যত
আইটেম আছে সব রেগুলার ক্লিয়ার
করতে হবে। প্রত্যেক সাবজেক্টে
টার্মে ভালো মার্কস ক্যারি করতে
হবে, প্লেস করলে তো আরও ভালো।
প্রফে খুব ভালো করতে হবে, ওয়ার্ডে
নিয়মিত ক্লাস করতে হবে, ওয়ার্ডের সব
দায়িত্ব নিয়মিত পালন করতে হবে।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় অবশ্যই নিয়ম করে
পড়তে বসতে হবে।
এখন থেকে সিগারেট নিষেধ, তাস
নিষেধ, রাত জেগে আড্ডাবাজি
নিষেধ। প্রতিদিন ভোরে উঠে নামাজ
পড়তে হবে, দৌড়াতে হবে, গোসল করে
ক্লাসে আসতে হবে। নিজের বিছানা
ও পোশাক আশাক সবসময় ফিটফাট
রাখতে হবে। চুল আঁচড়াতে হবে,
কাটতে হবে নিয়মিত।
বাবা-মার সাথে প্রতিদিন কমপক্ষে
দুবার ফোনে কথা বলতে হবে। বাবা-
মা কল দিলে যত বড় কাজই থাকুক না
কেন ধরতে হবে, মিসকল দিলে দেখার
সাথে সাথে ব্যাক করতে হবে। সব
আত্মীয় স্বজনকে সপ্তাহে অন্তত একবার
ফোন দিয়ে খবর নিতে হবে। এই
কাজগুলো পুরো এক বছর ধরে যদি করতে
পার, তবেই আমি তোমাকে ভালবাসব”।
বুঝতেই পারছেন ভাই, আমি এই শর্তগুলো
শুনে পুরো থতমত খেয়ে যাই। আমি
স্বপ্নেও ভাবি নি ও এই জাতীয় কোন
শর্ত দেবে। ও চায় আমি যেন একদিনেই
মিস্টার পারফেক্ট হয়ে যাই। কিন্তু যে
ছেলে একবার ছন্নছাড়া জীবনের স্বাদ
পেয়েছে, তার পক্ষে এক দিনেই মি.
পারফেক্ট হয়ে যাওয়া একটু কঠিন বইকি।
কিন্তু ঐ যে কথায় বলে, ভালবাসার
জন্য মানুষ সব করতে পারে? বিশ্বাস
করবেন কি না জানি না, আমি পরদিন
থেকেই একদম ভালো হয়ে গেলাম।
নিয়মিত ক্লাসে যাই, আইটেম দিই,
টার্ম দিই। আম্মাকে আগে তিনদিনে
একবার ফোন দিতাম, এখন দিনে
তিনবার ফোন দিই। তাসের প্যাকেট
ডাস্টবিনে ফেলে দিই, সিগারেট
কাটি কুটি কুটি করে। সবাই আমাকে
দেখে অবাক হয়ে যায়।
টার্মে আমি দুই সাবজেক্টে ফার্স্ট হই।
বাকিগুলোতেও খারাপ করি না। স্পষ্ট
বুঝতে পারি, আমার প্রতি সবার
দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে দ্রুতই।
এখন আর বন্ধুরা দেখলেই অশ্লীল কোন
কথা বলে আড্ডাবাজি শুরু করে দেয়
না। মেয়েরা দেখলেই মুখ বাঁকিয়ে
উলটো ঘুরে চলে যায় না। ব্যাচ
টিচাররাও অচিরেই আমাকে মার্ক
করা শুরু করেন, আমার আইটেম খারাপ
হলেই মনে করেন মহাপ্রলয় ঘটেছে।
প্রফ আসে। একাধিক সাবজেক্টে
অনার্স পেয়ে প্লেস করে বসি আমি।
বাবা-মার মুখে ফোটে অপার্থিব
হাসি। হাসি ফোটে বন্ধুদের মুখেও। শুধু
আমিই মুখ গোমড়া করে বসে থাকি।
অবশেষে শেষ হয় এক বছরের টাইমলাইন।
এক বুক আশা আকাঙ্ক্ষা সঙ্গী করে ওর
মুখোমুখি হই আমি।
ও বলে, “তুমি আসলেই একজন অসাধারণ
মানুষ। কিন্তু...একটা কথা জানা উচিৎ
তোমার”।
বুকের মধ্যে ছ্যাত করে ওঠে আমার।
“কি?”
ও বলে, “বছরখানেক আগে আমার
এনগেজমেন্ট হয়েছিল। এক মাস আগে
সেই মানুষটার সাথে আমার বিয়ে
হয়েছে। তোমাকে আগেই জানানো
উচিৎ ছিল, কিন্তু জানাই নি। ইন
ফ্যাক্ট, আমি আর আমার রুমমেট ছাড়া
কলেজের আর কেউ ব্যাপারটা জানে
না। আই অ্যাম সরি। তুমি আমাকে ক্ষমা
কোর”।
আমার স্বপ্নের পৃথিবী ছারখার হয়ে
যায়। ভাবনাচিন্তাগুলো কেমন যেন জট
পাকিয়ে যায়। হঠাৎ করে আমার মনে
হয়, আমার পায়ের নিচে যেন মাটি
নেই, আমার যেন কোন অবলম্বন নেই,
আমি যেন পড়ে যাচ্ছি নিঃসীম
শূন্যে, বিলীন হয়ে যাচ্ছি অতল
অস্তিত্বহীনতায়।
আমি ভাঙ্গা গলায় বলি, “তুমি
আমাকে আগে বল নি কেন?”
ও বলে, “সব মানুষ একরকম না। সবার
ভালবাসার বহিঃপ্রকাশও একরকম না।
আরও বড় হও, আমার কথাটার অর্থ বুঝতে
পারবে। আই অ্যাম সরি, চলি”।
ও আমাকে হতবাক করে সেদিন চলে
যায়। ওর সাথে আমি আর জীবনেও কথা
বলি নি। মেডিকেল থেকে বের হবার
পর আর ওর সাথে দেখা হয় নি আমার।
কবে যেন শুনেছিলাম ওর বর স্কিনের
অনেক বড় ডাক্তার, ওরা নাকি অনেক
সুখে আছে।
ভাই, সেদিনের পর থেকে আমার আবার
নষ্ট হয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল। বই ছেড়ে
আকণ্ঠ ডুবে থাকা উচিৎ ছিল মদ আর
গাঁজায়। রুমে বসানো উচিৎ ছিল জুয়ার
আড্ডা। একগাদা ঘুমের ওষুধ গেলার কথা
ছিল, হয়তো নিজের গলায় নিজেই
একটা পোঁচ বসানোর কথা ছিল আমার।
কিন্তু ভাই জানেন, আমি একটা আশ্চর্য
জিনিস লক্ষ্য করতে থাকি তখন থেকে।
আমি দেখি, সবাই আমাকে সমীহ করে।
ক্লাসের যে ছেলেটা আগে আমাকে
দেখলেই সিগারেট চেয়ে বসত, সে এখন
আমাকে দেখলেই রাস্তা ছেড়ে দেয়।
আগে যে মেয়েটা আমি ঢুকলেই লিফট
থেকে বেরিয়ে যেত, সে এখন
শ্রদ্ধাভরে আমার দিকে তাকায়।
আমার বিপদ আগে কাছের কিছু বন্ধুর
মাথাব্যথার কারণ হত, কিন্তু এখন আমার
সুখ দুঃখের ভাগীদার হতে চায় সবাই।
আমার হাসি সবার মন ভালো করে দেয়,
আমার দুঃখ সবার মুখ থেকে হাসি মুছে
দেয়। আমি এক ব্যাগ রক্ত চাইলে দশ
বারোটা হাত একসাথে আকাশের
দিকে উঠে যায়। আমি প্র্যাকটিকাল
খাতা চাইলে দেবার জন্য তখনই প্রস্তুত
হয়ে যায় সবাই।
বিশ্বাস করেন ভাই, মানুষের এই যে
শ্রদ্ধা, সমীহ আর ভালবাসা, এটার
জন্যেই আমি আবার আমার আগের পুরনো
অন্ধকারে ফিরে যাই নি। আমার
কাছে মনে হয়েছে, এক বছর কঠোর
সাধনা করে, সে যে কারণেই হোক,
আমি নিজেকে যে স্তরে নিয়ে
গেছি, এক মুহূর্তের ঝড়ে কিছুতেই
তাকে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়তে
দেয়া যায় না। কিছুতেই না। আর
তাছাড়া, ও হয়তো এটাই চেয়েছিল।
এটাই হয়তো ওর ভালবাসা, ও হয়তো
আমাকে সফল দেখতে চেয়েছিল,
পারফেক্ট দেখতে চেয়েছিল।
জানেন ভাই, ঠিক সেদিন যতটা
ফিটফাট, যতটা পাংচুয়াল ছিলাম,
এখনও ঠিক ততটাই আছি আমি। জীবনে
এর পুরষ্কার আমি অনেক পেয়েছি।
গাড়ি, বাড়ি, স্ট্যাটাস, সম্মান - কি
নেই আমার জীবনে? নিজের একটা
সংসারও থাকতে পারত আমার, অনেক
মেয়ে এবং মেয়ের বাপই আমার সাথে
সম্বন্ধ করবার জন্য পাগল ছিল, কিন্তু
হৃদয়ের সিংহাসনে একবার যাকে
বসিয়েছি, তার জায়গায় কি আর
কাউকে স্থান দেয়া যায়, বলেন ভাই?
ঐ যে ও বলেছিল না, “সবার
ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ একরকম না”?
আমার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ
হিসেবে অবিবাহিতই রয়ে গেছি
আমি। ওর জায়গায় আর কাউকে কল্পনা
করতেই মাথা কিরকম ঝিম ঝিম করত
আমার, কখনই মাথায় ঐ চিন্তাটা
আসতে দিতাম না আমি। এখনও দিই না।
বিশ্বাস করেন ভাই, এখনও আমি ওকে
আগের মতই ভালবাসি। আজীবন
ভালবাসব। ও আমাকে ভালবেসে
জীবনে সফলতার একটা পথ আমাকে
উপহার দিয়ে গেছে, তার প্রতিদান
না দিলে তো অপরাধ হবে, তাই না
ভাই?”
এতক্ষণ হা করে কাহিনী শুনছিলাম
ভদ্রলোকের। উনার কথা শেষ হতেই প্রশ্ন
করলাম, “আপনি ডাক্তার আগে বলেন
নি কেন? কোন মেডিকেল? কোন
ব্যাচ?”
উত্তর এল, “জি ঢাকা মেডিকেল। K-67
ব্যাচ। ২০০৯ সালে ঢুকেছিলাম”।
“আপনার নাম?”
“রাশেদ। ডাঃ রাশেদ, মনোরোগ
বিশেষজ্ঞ। আপনি?”
“আমিও ডাক্তার। ডাঃ মিরাজ। নাইস টু
মিট ইউ, ম্যান। আমি আপনার চার পাঁচ
বছর সিনিয়রই হব”।
গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। ডাঃ রাশেদ
এসেছেন এক আত্মীয়ের সাথে দেখা
করতে। এয়ারপোর্টের বাইরে রাস্তায়
একটা ট্যাক্সি থামালাম আমরা।
রাশেদকে উঠতে দিলাম প্রথম
ট্যাক্সিটায়। উনি চলে যাবার আগে
বললাম, “আপনার ভালবাসার নামটা
জানতে পারি?”
রাশেদ মুচকি হেসে বললেন, “পারেন।
ওর নাম শম্পা। সাদিয়া আফসানা
শম্পা। দুচোখের মধ্যে একটা তিল আছে,
আজও মনে আছে আমার”।
আমার বুকে কে যেন একটা বড় ধাক্কা
মারল। তবু মুখে ভদ্রতার হাসিটা ধরে
রেখে ভদ্রলোককে বিদায় দিলাম
আমি। ভদ্রলোক চলে গেলেন।
সাথে সাথে পকেট থেকে
মোবাইলটা বের করে অন করলাম আমি।
একটু পরেই কমপক্ষে দশটা মেসেজ এল
মোবাইলে। সবই বউয়ের নাম্বার থেকে।
কিন্তু আমার এখন ওগুলো দেখার সময়
নেই।
বউয়ের এক ক্লাসমেট ডাঃ মনীষার
নাম্বার ছিল আমার কাছে। ফোন
দিলাম। সে ধরে বলল, “কি খবর দাদা,
হঠাৎ মনে পড়ল?”
আমি বললাম, “আচ্ছা মনীষা তোমরা
যেন মেডিকেলের কোন ব্যাচ?”
সে বলল, “সে কি, আপনি ভুলে গেছেন?
২০০৯-১০ এর ব্যাচ, K-67”।
“আচ্ছা ঠিক আছে। ভালো থেকো,
হ্যাঁ? রাখি”। ফোন রেখে দিলাম
আমি।
একটু পরে বউকে ফোন দিলাম আমি।
দুবার বাজার পর ধরল ও। কাঁদো কাঁদো
অথচ দৃঢ় গলায় বলল, “কোন সমস্যা হয় নি
তো?”
আমি বললাম, “না”।
“ঠিকমত পৌঁছিয়েছ?”
“হ্যাঁ”।
“ট্যাক্সি ঠিক করেছ? ওরা কিন্তু ভাড়া
বেশি চায়”।
“এখনই করব”।
“বাইরের কিছু খাও নি তো? ওদের
পানি কিন্তু অত ভালো না, জার্মস
আছে”।
“না খাই নি”।
“অপরিচিত কারো সাথে খাতির করার
দরকার নেই, ঠিক আছে?”
“ঠিক আছে”।
একটু অপেক্ষা করে ও বলল, “মেসেজ
পেয়েছ?”
“হ্যাঁ পেয়েছি”।
“আমি সরি”।
“না আমি সরি”।
“না তোমার কোন ভুল নেই। আমি সরি”।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা শম্পা...”
“কি?”
“সব মানুষ তো একরকম না, তাই না?”
“না। কেন?”
“সবার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশও তো
একরকম না, তাই না?”
হঠাৎ একদম চুপ হয়ে গেল সে। তারপর বলল,
“এ কথা কেন বলছ?”
“আচ্ছা তুমি আমায় কখনও বল নি কেন...”
নাটকীয়ভাবে থেমে যাই আমি।
ওপাশ থেকে ভেসে আসে দ্বিধান্বিত
কণ্ঠস্বর, “কি বলি নি?”
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে আমি বলি,
“আমায় এত ভালবাস কেন?
.
#যান্ত্রিক_প্রহেলিকা