ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Tuesday, September 26, 2017

একজন খারাপ বাবার চিঠি.........


বাবু,
তুই হয়তো জানিস না অফিসের হাজার কাজের ফাঁকে একটুখানি অবসর পেলেই আমি তোকে চিঠি লিখতে বসি। কিন্তু কেনো যেনো একটি চিঠিও তোকে দেওয়া হয় না। সব জমা পড়ে থাকে আমার ডায়েরিতে। আমি চাই না তুই আমার ভেতরের আবেগ, অনুভূতিগুলো দেখ। তুই সবসময় আমাকে খুব নিষ্ঠুর ভাবিস, তা আমি জানি। মনে মনে অনেক গালি দিস তোর বাবাকে। কিন্তু তুই হয়তো এটা জানিস না যে তোর এই বাবাটা তোর শত গালি সত্ত্বেও তোকে ঠিক ততটাই ভালোবাসে ঠিক যতটা ভালোবেসেছিলো তোর জন্মের সময়।


তুই জানিস, তোকে যখন আমি প্রথম কোলে নিয়েছিলাম তখন তোর চেয়ে বেশি আমিই কেঁদেছিলাম। ডক্টররা আমাকে দেখে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, বেলাল সাহেব আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে আপনারই জন্ম হল। আর কত কাঁদবেন? বেবিটাকেও একটু কাঁদতে দিন। তবুও আমি কেঁদে চলেছি ছোট্ট বাচ্চার মত আর কিছুক্ষণ পরপরই তোর ছোট্ট কপালে চুমু খাচ্ছি। তোকে আমি সবসময় আমার কোলে করে নিয়ে বেড়াতাম, মনে আছে? আর তুই কতবার যে আমার শার্টের বুকপকেট জলভর্তি করেছিস, তা তো গুনেও শেষ করা যাবে না।
শুধু কি তাই? তুই যে কত চঞ্চল ছিলি তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। খালি কোল থেকে নামতে চাইতি। আমি বারণ করতাম।আর তুই হাত পা ছুঁড়ে আমার গালে চড় মারতি। একবার তো আমার চোখে এমন গুতো দিয়েছিলি যে পরে চোখ ব্যান্ডেজ করতে হয়েছিলো।
তুই মনে হয় ভাবতি, তোর বাবাটা খুব খারাপ। কিন্তু তুই কখনো এটা ভাবতি না যে তোকে কোল থেকে নামালে তুই পড়ে যাবি, ব্যথা পাবি। কত শত ভয়ে তোর বাবার মনটা চুপসে যেতো! তাই তো তোর বাবাটা সারাজীবন তোর কাছে খারাপই থেকে গেলো রে!
তোর প্রথম স্কুলে যাওয়ার কথা মনে আছে, বাবু? তুই আমার কোলে উঠে কত প্রশ্ন করেছিলি— ‘বাবা, বাবা, স্যাররা আমাকে মারবে না তো, আমি পড়া পারবো তো?’ আর আমি একটু পর পর তোর গালে চুমু খাচ্ছিলাম আর বলছিলাম আমার বাবুটা সব পারবে।
তোর বয়স তখন তখন সাত বছর। তুই অনেক জেদ ধরলি ফুটবলের জন্য। আমি তো দিবোইনা। তুইও তোর জেদে অটল। শেষমেশ বাধ্য হয়ে একটা ফুটবল কিনেই দিলাম। সবসময় তোর সাথে সাথে থাকতাম। পাছে আবার ফুটবল নিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যথা পাস। এমনিতেই যে শুকনা ছিলি তুই। ছিলি কি এখনো তো শুকনাই আছিস। একদিন ফুটবল খেলতে খেলতে তুই মাথা ঘুরে পড়ে গেলি। আর আমার সে কি দৌঁড়াদৌঁড়ি! পরে আমি তো রাগ করে তোর ফুটবলটাই চাকু দিয়ে কেটে ফেলেছিলাম। আর আবারও তোর চোখে হয়ে গেলাম পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ বাবা। কিন্তু এই খারাপের মধ্যে একটা ভালো লাগা আছে, জানিস? আছে তোর প্রতি আমার অসীম ভালোবাসা। তাই তো আমি তোর কাছে সারাজীবন খারাপ বাবা হয়েই থাকতে চাই।
আস্তে আস্তে তুই বড় হতে থাকলি আর আমার ভয় আরো বেড়ে যেতে লাগলো। চোখের আড়াল হলেই হাজারো শঙ্কায় বুকটা কেঁপে ওঠে তোর কোন বিপদ হল না তো। আর আমার এই ভয়ের কারণে তুই বঞ্চিত হলি অনেক কিছু থেকে। আশেপাশের নানা ঘটনা দেখে অনেক শঙ্কিত হয়ে যেতাম, এই না এগুলো আমার বাবুকে স্পর্শ করে। তোকে সবসময় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে আমার মনটা খালি আনচান করত। আর তোকে এই বিপদ থেকে দূরে রাখতে গিয়ে আমার মুখের কথা যথেষ্ট ছিল না, একদিন তোকে শাসন করা শুরু করলাম। আমি আরো খারাপ হয়ে গেলাম তোর কাছে। তুই যত বড় হচ্ছিস, আমি ততই খারাপ হচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস কর বাবু, এই খারাপ হওয়ায় আমার কোন দুঃখ নেই, নেই কোন আফসোস। তবে বুকটা কান্নায় ফেটে যেতে থাকে, যখন তুই আমার সাথে
অভিমান করে ভালো করে কথা বলিস না। কত রাত যে আমি তোর পাশে বসে কাটিতেছি, তুই হয়তো জানিসই না।
তুই তোর মাকে বলতি, ‘মা, মা, বাবা আমাকে মেরে কি খুব মজা পায়?’ আমি আড়ালে কথাগুলো শুনতাম আর চোখের পানি ফেলতাম। তুই কখনো আমার চোখে পানি দেখিস নি। ভাবতি তোর বাবার কোন মন নেই। কিন্তু তুই তো জানিসই না যে তোর বাবার মনটা এতো নরম যে সবসময়ই তোর বিপদের শঙ্কায় থাকে।
বাবু, তুই বড় হচ্ছিস। কিন্তু আজও আমার কাছে সেই ছোট্ট বাবুটিই আছিস। এখনও তোকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তোর হাতের আলতো চড় খেতে। ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে, ‘আমার বাবুটাকে আমি অনেক ভালোবাসি। পৃথিবীর সব ভালোবাসা এনে একখানে জড়ো করলেও আমার ভালোবাসার সমতুল্য হতে পারবে না। অনেক ভালোবাসি বাবু তোকে! অনেক ভালোবাসি!’
ইতি,
তোর খারাপ বাবা

Saturday, September 23, 2017

আমার রুমে গিয়ে মেয়েদের মত বিলাপ করে কাঁদতেছি।

আব্বু আম্মুও চমকে গেছে আঞ্জুমানের কথায়। আঞ্জুমান আমার একমাত্র ছোট বোন। তার বিয়ের কথা বার্তা পাকা হয়ে যাচ্ছে।
আব্বু আম্মু আঞ্জুমানকে ডেকে বলতেছে....
"মা'রে আমরাতো তোর বিয়ে ঠিক করতেছি, তোর কোন আপত্তি আছে?"
---ভাইয়া সবকিছু দেখছে?
---হ্যাঁ, তোর ভাই সবই দেখছে। ছেলের পরিবার, বাড়িঘড় সবই।
---ভাইয়া আমাকে নদীতে ফেলে দিলে আমি সেখানেই হাসতে হাসতে চলে যাব।
.
এই কথা শুনে আব্বু আম্মু চুপ হয়ে গেল। আমিও দুই চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারিনি। তারাতারি করে 
 আম্মু গেছে...
--- বাবা তোর কি হইছে?
--- কিছুনা।
--- এটাতো তোর গর্ব করার কথা, তোর বোন তোকে কতটা মেনে চলে কতটা নির্ভর করে একটাবার ভেবে দেখ।
--- সেজন্যইতো কাঁদি, পরের ঘরে গেলে এই মায়াটা থাকবেতো?
--- পাগল ছেলে।
.
আঞ্জুমান আসছে রুমে।
--- দেখিতো আম্মু, যাও তুমি এখান থেকে। ওর কান্না বের করতেছি। এই শোন ভাইয়া, আমি যেমন তোর কথায় নদীতে যাব, তেমনি আমি বললেও আমার পছন্দমত নদীরপাড়ের পেত্নীকেই তোকে বিয়ে করতে হবে।
--- ইশ, যা ভাগ। জানিস আঞ্জু কেন কাঁদি?
--- কেন?
--- তোর জামাইর টাক মাথা, এজন্য।
--- কি? তোর সাথে কথা নাই। তোর জন্য বিশ টাকা রাখছিলাম, আর পাবিনা।
--- না বোন আমার দে, তোর জামাই অনেক সুন্দর।
.
.
আঞ্জু আমার মাত্র দেড় বছরের ছোট, একই সাথে বেড়ে ওঠা। আর কোন ভাইবোন না থাকায় খুঁনসুটিগুলো তার সাথেই।
সবচেয়ে বেশী করতাম, আঞ্জু সুন্দর করে চুলের বেণী করত আর আমি চুলের বেণী ধরে টান দিয়ে দৌড় দিতাম। অথচ বোনটা আমার ওর পছন্দের সবকিছু আমাকে দিয়ে দিত।
মাঝেমধ্যেই বলত, শ্রাবু ভাই আয় তোরে মাইয়া সাজাই।
ওর কাপড় পড়িয়ে আমাকে লিপস্টিক আর হাতের নখে নেলপালিশ দিয়ে দিত। মাঝেমধ্যে ভূতের মত সাজিয়ে আম্মুকে ডেকে এনে দেখাত। আম্মুও অনেক হাসত আমাদের কান্ডকারখানা দেখে।
এখনতো আমি লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারাদিন টৈ টৈ করে ঘুরে বেড়াই। আব্বু আমাকে যত দিত আঞ্জুকেও তত দিত। আমার টাকাতো শেষই, আঞ্জু টাকা খরচ না করে আমাকে চুপি চুপি দিত।
আম্মু কিছু বললে বলত," ভাই সারাদিন বাইরে ঘুরাঘুরি করে ওর টাকার দরকার বেশী, আমার টাকা আমি দেই তোমাদের কি?
সেই বোনটা যখন আজ বলল ভাই যেখানে বিয়ে দেয় সেখানেই, তখন বুকটা কেঁদে ওঠল। বোনটা কত বড় হয়ে গেছে, পরের ঘরে চলে যাবে আমাদের ছেড়ে।
.
ঢাকা দোহারে বিয়ে দিলেও আঞ্জুর স্বামি নরসিংদী ফ্লাট নিয়ে থাকে। দশ টাকা রিক্সাভাড়া হলেই যাওয়া যায়, আমি যেতামনা। খুব লজ্জা করত, মনে হত অন্যের বাড়ি যাচ্ছি। তাই আব্বু আম্মুকে বলে সপ্তাহে দুবার আমাদের বাড়ি নিয়ে আসতাম।
.
২২ শে ফেব্রুয়ারী রাতে হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আঞ্জুর জন্মদিন ২৪ ফেব্রুয়ারী। পকেটে মাত্র নয় টাকা আছে। আব্বু আম্মুর কাছেও বলা যাবেনা। আব্বু আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে যদি আঞ্জুর জন্মদিনের উপহার কিনতে হয় তাহলে আমি কি দিলাম???
কাউকে না জানিয়ে ২৩ শে ফেব্রুয়ারী সকালে রাজমিস্ত্রীর হেল্পারের কাজ করতে চলে গেলাম। ২০১০ সাল, ২০০ টাকা হাজিরা। হঠাৎ পরিশ্রমের কাজ করাতে শরীর খুব দুর্বল। সন্ধা রাতে ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে ওঠেই কেক আর গিফট কিনে আনলাম।
আঞ্জুকে ফোন দিয়ে বলেছি, এখন বাড়িতে আয়। আঞ্জু তার স্বামিকে না বলেই চলে এসেছে।
কেক কেটে খাওয়ানোর সময় আম্মু আঞ্জু আর আমি আরেক দফা কেঁদে নিলাম।
আঞ্জুর স্বামি ফোন করাতে বেশীক্ষন থাকতে পারেনি।
.
.
একদিন ফোন করে আঞ্জু বলতেছে, ভাইয়া তোমাদের জামাই আমারে মারছে।
মাথায় রক্ত ওঠে গেল। মনে হচ্ছিল তখন সামনে পেলে তার স্বামিকে খুন করতাম। কত বড় সাহস, আমার বোনের গায়ে হাত তুলেছে। রিক্সা নিয়ে ছুটে গেলাম।
আবার আরেক রিক্সায় কান্না লুকাতে লুকাতে চলে এলাম।
আঞ্জুর স্বামি আমাকে বলে দিল এটা তাদের স্বামি স্ত্রীর ব্যাপার।
কাঁদতেছি আর ভাবতেছি, একটা অধিকার কত সহজে পরিবর্তন হয়ে যায়।
পরে অবশ্য আঞ্জুর স্বামি আমার হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছে, কিন্তু আমার কষ্ট রয়েই গেল, বিয়ে হলেই কি বোনকে পর করা যায়?
.
.
আলহামদুলিল্লাহ, আঞ্জুর এখন সুখের সংসার। তার এক মেয়ে এক ছেলে। নামগুলো আমিই রেখে দিছি, রিয়া আর রিয়াদ।
ভাগনীর আড়াই বছর বয়সে আমি দেশের বাইরে বাহরাইনে চলে আসি। ভাগিনা হওয়ার পর ভিডিও কলে দেখেছি।
দুজনই মামা মামা বলে তারাতারি দেশে যেতে বলে। আঞ্জু মাঝে মধ্যে কেঁদে দিয়ে বলে, ভাইরে তোকে অনেকদিন দেখিনা। আমার জমানো টাকাগুলো তোকে দিব, তুই আসলে সব টাকা তোর।
.
আজ ফোন করে বলেছিলাম, আঞ্জু তোর কি লাগবে বোন? আমি পাঠাব এখান থেকে।
আঞ্জু বলল, ভাই আমার কিছু লাগবেনা। তোর দিতে ইচ্ছে হলে তোর ভাগনী ভাগিনাকে দিস।
আবারও কাঁদলাম আজ।
বোনরে, তোর ছেলে মেয়েকেতো দিবই। কিন্তু তোকে যে আজো কিছুই দিতে পারলামনা। সারাজীবন তুই শুধু দিয়েই গেলি।
.
আমার মত বোন যাদের আছে, বিয়ের আগেই যা দেয়ার দিও। বোনটি পরের ঘরে গেলে কি খায় কি পড়ে কিছুই দেখা যায়না। বিয়ের আগে না বুঝলেও বোনটির বিয়ের পর বুঝবে বোন কতটা মায়া ভালবাসায় জড়ানো থাকে।
মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে থাকুক পৃথিবীর সকল ভাই বোনের ভালবাসা.......
.
.
লেখনীর শেষ প্রান্তে,,,,,,,,
,,,,,, ওমর ফারুক শ্রাবণ

Friday, September 22, 2017

এমন একটা পাগল বন্ধুর পাগলামিতে আমরা ক্রমশই ওর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলাম।

“জীবনে সবকিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখতে গেলে কেবল যে কষ্টই বাড়ে, তা নয়... অনেক সময় তা জীবননাশেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়”
.
... এই কথাটা যেমন দিবালোকের মতো সত্য, ঠিক তেমনি এই কথাটাও...
“কালবৈশাখী ঝড় কে ঘণ্টাখানেক সময় দেওয়া হলে, খুব সহজেই সে হাজার বছর ধরে বেড়ে উঠা একটি চঞ্চল গ্রামকে শান্ত করে দিতে পারে”
আমার খুব চঞ্চল একটি বন্ধুর নাম ছিল নিবিড়।
.
বন্ধুদের আসরে সে সবাইকে নাচিয়ে ছাড়ত। ওকে সিগারেটে আগুন ধরিয়ে আনতে বলা হলে, সে সিগারেটের ফিলটার পাশটায় আগুন ধরিয়ে এনে বলত, “এই নে, অনেক কষ্ট করে ধরিয়েছি। এখন প্রানখুলে টান”। তখন এমন একটা ভাব নিয়ে দাঁড়াত যেন রাজা হয়ে কোন প্রজার মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে... ব্যাস, তখনি শুরু হয়ে যেত ম্যাট্রিক্স মুভির মতো ঐতিহাসিক যুদ্ধ।
.
সে প্রায়ই একটা কাজ করত। আমরা বন্ধুরা যখন ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ধরে ল্যাব শেষে ক্লান্তবদনে হলের দিকে রওয়ানা দিতাম, তখনি হঠাৎ আমাদের মধ্যে কেউ একজন গর্জে উঠত। পিছনে ফিরে দেখতাম, নিবিড় চুপি চুপি এসে সজোরে ঐ বেচারার পাছায় লাথি বসিয়ে দিয়ে বলছে... “অই শালারা! আমারে ফালাইয়া তোরা কই যাস?” কিন্তু তখনি নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সত্যতা রক্ষার্থে, ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ শুরু হয়ে যেত ম্যাট্রিক্স.!
.
পার্ট-২...
আরেকবার হল কি? সেই রকম সর্দিকাশি সমান তালে আমার নাক ও গলার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করল। তো একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারছি না, নিবিড় এসে বলল, “ কিরে? ঘুম থেকে উঠবি না? কারে নিয়া এতো স্বপ্ন দেখস? বাদ দে ঐসব। আজকে ফার্স্ট ক্লাস তো তোর হৃদয় উতলা করা ম্যাডামের। জলদি রেডি হয়ে নে”।
আমার অবস্থা খুব খারাপ, নাক ও গলারন্ধ্র নিরেট হয়ে গেছে... নিজের কথা নিজেই শুনতে পারছিলাম না। যাই হোক, খুব কষ্টে ওকে আমার অবস্থা বুঝালাম। ও কিছু না বলে ১ জগ বরফতূল্য ঠাণ্ডা পানি এনে সরাসরি আমার মাথায় ঢেলে দিয়ে অনর্গল বলতে লাগল, “আরে পড়স নাই? সমধর্মী চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কাটাকাটি। তুই এখন সুস্থ, তাড়াতাড়ি ক্লাস করতে আয়”- বলেই ও ক্লাসের দিকে ছুট। আমি ম্যাট্রিক্স."
.
পার্ট ৩
রচনার কাজ হাতে নিলেও পর্যাপ্ত অর্থের(শক্তির) অভাবে মুভিটি মুক্তি পায় নি।
এমন একটা পাগল বন্ধুর পাগলামিতে আমরা ক্রমশই ওর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলাম। কিন্তু আমরা জানতাম না যে, নদীর কাজই হল ধীরে ধীরে তীর ভেঙে নিয়ে যেতে চাওয়া... এতেই তার সৌন্দর্য নিহিত। আর যে নদী সেই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সে আর জীবিত থাকে না, হয়ে যায় মৃত।
হঠাৎ করেই ও কেমন যেন বদলে যেতে থাকল। রুমে একা একা ঝিম ধরে বসে থাকে। ক্লাস করে সোজা রুমে এসেই ঘুম। সারা রাত হলের ছাদে গিয়ে বসে থাকে। কেমন যেন এক গভীর চিন্তামগ্নতা। কিছু জানতে চাইলেও কিছু বলে না। ঠিক যেন এক সর্বনাশী কালবৈশাখী আমার চঞ্চল বন্ধুকে গ্রাস করে ফেলছে।
.
একদিন বিকেলে ওর মোবাইলে কল দিয়েই যাচ্ছি কিন্তু ও ধরছে না। ছাদে গিয়ে দেখি, চুপচাপ রেলিং এ বসে কি যেন ভাবছে। আমি কিছু না বলে ওর পাশে গিয়ে বসি। ও আমার দিকে তাকিয়ে খুব কষ্টে সৌজন্য রক্ষার্থে একটা হাসি দিল। আসলে হাসি নয়- বাহ্যিকভাবে অধরদুটো বাঁকানোর চেষ্টা।
কিছুক্ষণ পর আমি নীরবতা ভেঙে দিয়ে বললাম, “ আমাকে কি কিছুই বলা যায় না?”
ও খানিকক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “ কম্পন বলতে কি বুঝায়, জানিস?”
ও দূরে তাকিয়ে থেকে কি যেন ভাবে নিল। তারপর বলল, “একটা মেয়ে আর আমার হৃদয় কম্পন”- বলেই ও চলে গেল। আমি ওর মতো দূরে তাকিয়ে কিছু বুঝার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।
রাত ১০টা। পরদিন ক্লাস টেস্ট ছিল। আমি পড়ছিলাম। হঠাৎ করে ও রুমে ঢুকল। চুপচাপ গিয়ে ওর পি,সি, অন করল।
.
আমার কাছে এসে বলল, “তোর পেনড্রাইভটা দে তো, একটা ফাইল ট্রান্সফার করব”। আমি কিছু না বলে তাই করলাম। দেখলাম, ও পেনড্রাইভ পি,সি, তে লাগাল, কিছুক্ষণ পর ওটা খুলে ওর ড্রয়ারে তালা দিয়ে রেখে রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল... আমি পিছন থেকে ওকে ডাকলাম, “ নিবিড়! কই যাস এতো রাতে? কালকে ক্লাস টেস্ট, পড়তে বস”। ও আমার কথা কানেই নিল না।
“তোর পেনড্রাইভটার খুব প্রয়োজন অনুভব করলে তালা ভেঙে নিয়ে নিস্”- বলেই ও বেরিয়ে গেল। আমি হা করে ওর চলার পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
পরদিন ওকে আর ভার্সিটিতে দেখলাম না, ভাবলাম বাসায় চলে গেল কিনা? ওর বাসায় ফোন করব কিনা? ফোন করেই বা কি বলব? এইসব ভাবতে ভাবতে ৩ দিন কেটে গেল। বড্ড একা হয়ে গেছি আমি। এখন কেউ আমাদের আর জ্বালায় না, কেউ খাবার কেড়ে নেয় না, কেউ ইচ্ছা করে মারামারি করতেও আসে না। শুধুমাত্র ঐ একটা চঞ্চল নিবিড় শান্ত হয়ে যাওয়ায় আমরাও যেন মরা নদীর ন্যায় হয়ে গেছি।
.
এক সপ্তাহ হয়ে গেল, ওর কোন খোঁজ না পেয়ে ওর বাবাকে খবরটা জানাই। ওর ফ্যামিলিও ওর ব্যাপারে কিছু জানে না। তারা অনেক খোঁজাখুঁজি করেন কিন্তু কোন হদীস পেলেন না।
এক মধ্যরাতে ওকে নিয়ে একটা বাজে স্বপ্ন দেখছিলাম, হঠাৎ তখন ঘুম ভেঙে গেল। ওর বিছানাটার দিকে তাকালাম- শূন্যতা বিরাজমান। বুকটা হু হু করে কেঁপে উঠল। ওর টেবিলের ড্রয়ারের দিকে চোখ যেতেই আমার পেনড্রাইভটার কথা মনে পড়ে গেল। তৎক্ষণাৎ তালা ভেঙে পি,সি, তে পেনড্রাইভটা লাগালাম। দেখলাম, একটা মাইক্রোসফট ডকুমেন্ট ফাইল। ফাইলটাতে যা লিখা ছিল...!"
“বন্ধু! মেয়েটার নাম রিনি। আমি ওর কথা পৃথিবীর কাউকে জানাতে চাই না। শুধু তোকে বললাম। ও কেমন সুন্দরী ছিল তা নিয়ে আমি হাজার হাজার পাতা খরচ করতে পারব। ওর প্রসঙ্গে আমি শুধু তোকে একটা কথাই বলব... কিছু চোখ হয় মায়াবিনী, কিছু ঠোঁট হয় আরক্তিম, কিছু চুল হয় স্বর্গীয় লতা আর কিছু হৃদয়?...
দোস্ত! আমি জানি না, স্বর্গসুখ কি জিনিস? কিন্তু এতোটুকুন জানি যে, তার হৃদয়স্পর্শ পৃথিবীর সকল সুখের ঊর্ধ্বে।
.
দোস্ত! আমি ওকে ভালবাসতাম কিনা জানি না, কিন্তু এতটুকু জানি যে, ওকে আমার করে নেওয়ার চেয়ে আমি চাইতাম ও যেন কখনও আমার কাছ থেকে হারিয়ে না যায়।
ওর খুব সখ ছিল ও আমার কোলে মাথা রেখে চোখ বুজে থাকবে, আর আমি গিটারে টুং টাং করে ওকে গান শোনাবো। ও প্রায়ই বলত, “ ইস্! আমাকে যদি কেউ বাইকের পিছনে নিয়ে আমার সাথে কিছুটা সময় কাটাত!”...
.
বন্ধু! আজও মরার আগে খুব ভালো একজন গিটারিস্ট আর বাইক রেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখি।
জানিস দোস্ত! একটা উক্তি প্রায়ই আমার মাথাটায় ঘুরপাক খেত...
“ If you succeed in cheating someone, don’t think that that person is a fool but you should realize that that person trusted you much more than you deserved”
দোস্ত! প্লিজ... ওকে কিছু বলার দরকার নাই। আমি এখনও হিসাব মিলাতে পারি নি যে কে, কার সাথে চিটিং করেছে। আমি তার সাথে নাকি সে আমার সাথে? আমার খাটের নিচে তাকালেই তুই বুঝতে পারবি।
ভালো থাকিস দোস্ত”।।
খাটের নিচে তাকিয়ে দেখি শতখানেক A4 কাগজ ছড়ানো-ছিটানো। সবগুলোতেই লিখা, “WHO IS THE RIGHT ONE? YOU OR ME?”
আমি খুব ভালভাবেই জানি আমার আহত বন্ধুটি ঐ মেয়েটিকে ক্ষমা করে দিয়েছে। কিন্তু কথা হল... ও নিখোঁজ আজ প্রায় ২ বছর। এর মধ্যে ওর মা কম করে হলেও ২০ বার আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন। প্রত্যেকবারই দেখতাম তিনি হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন... আমাকে দেখেই অশ্রুসিক্ত নয়নে ওড়নার বর্ধিত অংশ দিয়ে মুখটা চেপে রেখে বলতেন... “আমার নিবিড়?”
পৃথিবীর সব কিছু সহ্য করা যায় কিন্তু ছেলের জন্য মায়ের সেই নিষ্পাপ ভালবাসায় সিক্ত আঁখিদুটি, আমি কেন? বোধ করি কেউই সহ্য করতে পারবে না।এখন কিছুটা হলেও বুঝি, কালবৈশাখী কতটা হিংস্র হলে নিবিড় নামের একটি চঞ্চল ছেলেকে এভাবে লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে, তাকে মায়ের আদর ভুলিয়ে দিতে পারে, খুব কাছের বন্ধুদের সাথে মারামারি করার তীব্র মজাটুকু মন থেকে মুছে দিতে পারে। আমি আজও জানি না সে কোথায়, কিভাবে আছে, কিংবা... ? হুহ... যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস বন্ধু। আজও হয়তো আমার বন্ধু নিবিড় রিনিকে লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে নিবিড়ভাবে ভালোবাসে, নিবিড়ভাবে ভালোবাসে তার মাকে, তার বাবাকে, হয়তোবা আমাকেও।
.
আমার কলম আর এগুতে চাচ্ছে না। ও আমাকে প্রায়ই একটা কথা বলত... “দোস্ত! দেখিস, আমার মা-বাবার আগে আমি মারা যাব, এমনকি আমি তোর আগে মারা যাব। কারণ আমি মরলে তোরা আমার কষ্ট সহ্য করতে পারবি, কিন্তু তোদের হারানোর কষ্ট আমি কখনই সহ্য করতে পারব না”...
.
নিবিড় হয়তো সত্য কথাটাই বলেছে। তাই যেই সত্য কথাটি দিয়ে গল্পটা শুরু করেছিলাম, সেই কথাটি দিয়েই শেষ করতে চাই...
“জীবনে সবকিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখতে গেলে কেবল যে কষ্টই বাড়ে, তা নয়... অনেক সময় তা জীবননাশেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়”!
.
→Nistobdo Ovimani Hridoy (অভিমানী মেঘ বালক)

আমরা পুরো ফ্যামিলি তোমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

প্রায় বিশ বছর আগের কথা...
"জুয়েল, আজ তোমাকে চিঠিটা না লিখে পারলামনা। কারণ চিঠিটা পড়ার পর তুমি যখন ভাল কিংবা খারাপ রিয়েক্ট নিয়ে আমাকে খুঁজতে আসবে, তখন আমি অনেক দূরে চলে গেছি। আমাকে চাইলেই তুমি রাগী ভঙ্গিমায় গালমন্দ করতে পারবেনা। আমার বাবা হঠাৎ করে আরেকটি ভাল স্কুলে চাকরি হওয়াতে 
 এতদিন যা মুখফুটে তোমাকে বলতে পারিনি, তা আজ বলে দিবো। মনের জমানো কথাগুলো তোমাকে বলবো বলবো করে বলাই হয়নি। আমি যেদিন তোমাকে আমার বাবার কাছে প্রাইভেট পড়তে দেখি, সেদিন আমি ভিষণ খুশি হয়েছিলাম। কারণ তোমাকে অনেক কাছ থেকে দেখতে পাবো। তাই বাবাকে বলে তুমি যে ব্যাচে পড়তে আমি সেই ব্যাচে পড়া শুরু করি। আমি বাবাকে বলেছিলাম "বাবা, জুয়েল তো ভাল স্টুডেন্ট ওর সাথে পড়লে আমারও সুবিধা হবে।" এই কথা বলাতে বাবা রাজি হয়েছিলো। তুমি ক্লাসের ফার্ষ্টবয়, তুমি ভাল স্টুডেন্ট, তোমার ব্যবহারের কথা কি বলব..! ওটা সবাই জানে। তোমার হাতের লেখা দেখলেই তো যেকোনো মেয়ে তোমার প্রেমে পড়ে যাবে..! এত গুন তোমার মধ্যে, বলে শেষ করা যাবেনা। সত্যি কথা বলতে কি আমি তোমাকে ভালবাসি সেই ক্লাস এইট থেকে। কথাটি বলার সাহস হয়নি কোনোদিন। ভাবলাম যখন চলেই যাবো মনের কথাটি তোমাকে জানিয়েই যাই। এতদিন পর মনের কথাটি বলার সাহস হলো তাও আবার চিঠির মাধ্যমে। জানিনা চিঠিটা পড়ে তোমার মনের অনুভূতি কি..!? আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানকার ঠিকানাটাও আমার জানা নেই যে, তোমাকে দিয়ে যাবো। তবে তোমার ঠিকানা যেহেতু আমি জানি, একদিন না একদিন তোমার খোঁজ আমি নিবো। চিঠিটা পড়ে তোমার মনে কি অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে সেটা জানার খুব ইচ্ছে হচ্ছে আমার। তবে না জানাই ভালো, কি বলো..!? যদি নেগেটিভ কিছু ভাবো সেটাই ভয়..! সামনে তোমার এইচএসসি পরীক্ষা, ভালমতো পড়ালেখা করিও, এসএসসির মতো এইচএসসিতেও তুমি ভাল রেজাল্ট করবে এই দোয়া করি। ভাল থেকো...
-ইতি নাতাশা"
.
চিঠিটা কিছুক্ষণ আগে মিজান আমার হাতে এনে দিল। মিজান আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। চিঠিটা পড়তে পড়তে কখন যে আমার দুচোখ পানিতে ভরে গেছে আমি টেরই পাইনি.! এই নাতাশাকে আমিওযে ভালবাসি..! কিন্তু আমিও কোনোদিন মুখফুটে বলতে পারিনি ভয়ে। স্যারের মেয়ে বলে বলতে কখনো সাহস হতোনা। ও যথেষ্ট ভাল ছাত্রী। ক্লাস এইট থেকে এসএসসি পর্যন্ত কেবল ওর সাথেই আমার পড়ালেখার প্রতিযোগীতা হতো। ক্লাসে এক দুই রোলনং আমার আর ওর কাছ থেকে কেউ নিতে পারতোনা। কিন্তু কোনোদিন বুঝতে পারিনি নাতাশা আমার মতই মনে মনে আমাকে ভালবাসে..!
.
মাঝে মাঝে কথা হতো নাতাশার সাথে। ওর বাবা আমাদের স্কুলের ইংরেজী শিক্ষক ছিলো। ইংরেজিটা তিনি ভাল পড়াতেন, তাই স্যারের কাছে এসএসসি পর্যন্ত ইংরেজী প্রাইভেট পড়েছি। আজ নাতাশার চিঠিটা পড়ে ভীষণ আফসোস হচ্ছে! কেন আমি এতদিন মনের কথাটি মনের মধ্যে জিইয়ে রেখেছি!
.
মিজান আমাকে শান্তনা দিয়ে বললো... "দোস্ত, মন খারাপ করিসনা, তোর আর নাতাশার মিলন যদি আল্লাহ তায়ালা লিখে রাখেন, দেখিস একদিন ওর সাথে তোর দেখা হবেই।" আমি বললাম.. "তাই যেন হয় দোস্ত। দোয়া করিস..!"
.
ওদের ঠিকানাটা জানার অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু কেউ সঠিকভাবে বলতে পারলোনা। তারপর এক বছর কেটে গেল। আমি এইচএসসিতেও ভাল রেজাল্ট করলাম। আমি সেই ছোটবেলা থেকেই একটি  স্বপ্ন দেখতাম। আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অনার্স করবো.! যেহেতু আমার এসএসসি এবং এইচএসসির রেজাল্ট অনেক ভাল, তাই এডমিশন দিতে ঢাকা চলে গেলাম।
.
যেদিন ভার্সিটিতে ভর্তি ফর্ম সংগ্রহ করতে গেলাম, সেদিন একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল..! অনেক লম্বা লাইন দেখে আমি লাইনে না দাড়িয়ে ভাবলাম একটু পরেই দাড়াই। তাই আমি কোলাহল ছেড়ে একটু দুরে গিয়ে ক্যাম্পাসের একটি গাছের নিচে সবুজ ঘাসের উপর বসলাম। বসে বসে ভাবছিলাম আমি এত এত ভাল স্টুডেন্টদের মধ্যে থেকে চাঞ্চ পাবো তো..! আমার এতদিনের স্বপ্ন কি সত্যি হবে..! 
.
হঠাৎই অনুভব করলাম আমার পাশে কেউ এসে বসলো..! আমি ঘাড়টা ঘুরিয়ে তাকাতেই আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম..! আমার পাশে বসে আছে নাতাশা..! আমি নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলামনা..! দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে.! ওর দুচোখ অশ্রুতে টলমল করছে..! আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম, কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলানা..!
.
আমি বললাম.. "তুমি এখানে..!?"
ও অশ্রুভেজা কন্ঠে বললো... "এখানেই তো থাকার কথা ছিলো...!"
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম... "মানে কি...!?"
তারপর ও বলতে লাগলো... "তোমার কি মনে আছে এসএসসি রেজাল্টের পর তুমি আমাকে একবার বলেছিলে তোমার ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশে অনার্স পড়ার খুব ইচ্ছে..!? আমি কথাটি ভুলিনি। আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি ভর্তি ফর্ম সংগ্রহ করতে ঢাকা আসবেই। তাই প্রথম দিনই তোমার আর আমার জন্য একসঙ্গে দুটো ফর্মই সংগ্রহ করে রেখেছি। আর তারপর থেকে প্রতিদিনই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই ক্যাম্পাসে আমি তোমাকে খুঁজছি..! আজ সাতদিনের মাথায় তোমাকে পেয়েও গেলাম..!"
.
ওর কথা শুনতে শুনতে আমার দুচোখ বেয়ে টপপট করে অশ্রু পড়তে লাগলো..! আমি অশ্রু শিক্ত চোখে তাকিয়ে আছি নাতাশার দিকে...! আর মনে মনে ভাবছি মেয়েটি সত্যিই আমাকে কত ভালবাসে..! 
চোখের পানি মুছতে মুছতে আমি ওকে বললাম...
"তোমাকে যে আমিও ভালবাসতাম। তোমার মতো আমিও বলতে সাহস পাইনি। তোমার চিঠিটি পেয়ে সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম আর আফসোস করেছিলাম, কেন এতদিন বলিনি মনের কথাটা। তোমার চিঠিটা কতবার যে পড়েছি আর কেঁদেছি তার হিসেব নেই..! স্কুলে গিয়ে তোমাদের ঠিকানা খোঁজ করেছি। কিন্তু সেখান থেকেও সঠিক ঠিকানা দিতে পারলোনা। তোমার চিঠিটা এখনো আমার বুক পকেটে আছে। এই দেখো...!"
.
আমি চিঠিটা পকেট থেকে বের করলাম। ও আমার হাতটি ধরে কাঁদছে আর বলছে... "আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন, সবচেয়ে খুশির দিন!"
আমি শক্ত করে ওর হাত ধরলাম। আর অন্য হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম। 
.
আমরা দুজনেই আল্লাহর রহমতে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশে চাঞ্চ পেয়েছিলাম। আল্লাহ  সত্যিই আমাদের মিলন লিখে রেখেছিলেন। আর সেজন্যই সেই থেকে এখনো দুজন একসঙ্গেই আছি। আজ আমরা দুই সন্তানের বাবা-মা 😍
•••
"তুমি ছিলে নীরবে"
.
✍Ramzan Khondaker (স্লিপলেস বার্ড)

প্রায় দুই ঘন্টা ধরে বসে আছি,কিন্তু মেয়ের কোনো দেখাই নেই

১.
বাবা-মায়ের অনেক জোরাজুরির পর শেষ পর্যন্ত এই পড়ন্ত বিকেলে মেয়ে দেখতে এলাম।অবশ্য এর আগে আরো ছয়জনকে দেখেছি,এটা সাত নম্বর!আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট শিওর,অন্য মেয়েগুলোকে দেখে যেমন আমার পছন্দ হয়নি,এই মেয়েকেও পছন্দ হবে না।
কিন্তু অন্য মেয়েগুলোকে দেখতে গিয়ে যেই ঘটনা কখনোই ঘটে নি,আজকে তাই ঘটছে!
।এই দুই ঘণ্টায় মেয়ের বাবা-মা,ছোট বোন,আত্মীয় সবার পরিচয় মুখস্থ হয়ে গেছে।কিন্তু এখনো মেয়েটাকেই দেখা হয়নি! মেয়ে কি আদৌ আসবে কিনা,তাও বুঝতে পারছি না!মেয়েকে কি সাজিয়ে একেবারে ভুত বানিয়ে আনছে নাকি,তা আল্লাহই জানেন!
আমি আর আমার আত্মীয়রা চলে যাব নাকি ভাবছি,এই সময় হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখলাম,যাকে দেখতে এসেছি তার বোনের সাথে হেঁটে আমাদের দিকে আসছে।তার মানে এটাই কি কনে?কিন্তু মেয়েটা দেখছি একদমই সাজেনি!চোখে কাজল পর্যন্ত নেই!
আমার চাচী মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
--তোমার নাম কি মা?
--রায়না।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।হঠাৎ মেয়েটার কথা বলা শুনে তার দিকে তাকাতে বাধ্য হলাম!এত মিষ্টি গলা আমি কারোর শুনিনি।মেয়েটার গলার স্বরই শুধু মিষ্টি না,এতক্ষণে খেয়াল করলাম,তার চেহারাটাও অপূর্ব সুন্দর!কোনো কৃত্রিমতা নেই চেহারার মাঝে।যেন সাধারণত্বের মাঝেও সে অসাধারণ!শুধু একটাই সমস্যা,মেয়েটা অনেক বেশি চুপচাপ!প্রয়োজনের বেশি একটা কথাও বলে না।

একটু পর আমাকে আর মেয়েটাকে আলাদা রুমে দেওয়া হল কথা বলার জন্য।আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।মেয়েটাও নিজে থেকে একটা কথাও বলছিল না!কিছুক্ষণ চেষ্টা করে আমি বললাম,
--আপনার নাম কি?
--একটু আগেই তো বলেছিলাম!
--ও হ্যা,রায়না।
মেয়েটার এভাবে উত্তর দেওয়া শুনে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম,সে নিশ্চয়ই এনির মতই অনেক ভাব দেখায়।আমি জানতাম সব মেয়েরাই এক!আর এই মেয়েটাও তার বাইরে না।
এনি আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড।আমাদের সম্পর্ক টিকে ছিল প্রায় এক বছর!এর মাঝেই সে আমাকে মোটামুটি নিঃস্ব করে দিয়েছিল।ভাগ্গিস ওইটা আমার শখের কারণে করা টিউশনির টাকা ছিল!এক বছর পর শুনলাম,ঐ মেয়ে নাকি আরো অনেক ছেলের সাথে এমন করে তাদেরকে নিঃস্ব করে ছেড়ে দিয়েছিল।এই কারণেই ওর সাথে আমার ব্রেকাপ হয়।আর এরপর থেকে আমি কোনো মেয়েকেই আর বিশ্বাস করতে পারি না!কিন্তু বাবা-মায়ের চাপে পড়েই আমাকে মেয়ে দেখতে যেতে হয়!
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
--আমাকে বিয়ে করতে আপনার কোনো আপত্তি নেই তো?
--আমার কোনো মতামতেই এখন আর কারো কিছু আসে যায় না!
রায়না নামের এই মেয়েটার এমন কাটাকাটা কথার পর তো আর আমাদের কথাবার্তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না!তাই আমি সেখান থেকে চলে এলাম।
রাতে ফেরার পর মা যখন আমার মতামত জানতে চাইলেন,আমি সাথে সাথেই না করে দিলাম!

২.
--হ্যালো,আপনি কি ঈশান?
--হুম,আপনি কে?
--আমি রায়নার বোন,রিহানা।সেদিন যে মেয়ে দেখতে এলেন..
--ওহ,মনে পড়েছে।
--আপনার সাথে কিছু কথা ছিল,আপনার কি সময় হবে দেখা করার?
--উম..হুম,হবে।বিকেল চারটায় কফিশপে..
--ওকে।
বিকেল চারটায় কফিশপে গিয়ে দেখি রিহানা অপেক্ষা করছে।আমি গিয়েই মুখে একটা হাসি নিয়ে বললাম,
--কি?কি খবর তোমার?
--ভাল।আপনাকে কিছু কথা বলতে এসেছি!আমি অনেক ছোট বলে হয়ত আপনি আমার কথার গুরুত্ব নাও দিতে পারেন,কিন্তু কথাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমি এসেছি তা বলতে..
আমি মুখে গাম্ভীর্যের ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে বললাম,
--বল,কি বলবে?
--আপনি আমার আপুকে সেদিন যেভাবে দেখেছেন,আমার আপু কিন্তু আসলে তেমন না!আমার আপুর জীবনে কি কি ঘটেছে,না জানলে কেউ বুঝতেই পারবে না,কেন আপু এমন হয়েছে।আপনি হয়ত ওকে বিয়ে করার জন্য মত দিতে পারেন,কিন্তু এই কথাগুলো না শুনে বিয়েতে মত দিলে আপনারও ক্ষতি হবে,সাথে আপুরও!যদিও আমি বিয়েটা ভাঙতে আসিনি..
এতক্ষণে আমার মাঝে কৌতুহল হতে শুরু করল।আমি জিজ্ঞেস করলাম,
--কি হয়েছে তোমার আপুর জীবনে?
--আপু আগে অনেক হাসিখুশি ছিল।সবার সাথে মিশত,ভাল ব্যবহার করত।একটা ছেলেকে ও অনেক ভালবাসত।আমরা পরিবারের সবাই জানতাম এই কথা!তিন বছরের রিলেশনশিপের পর হঠাৎ শুনলাম,ছেলেটা কোনো কারণ ছাড়াই আপুর সাথে ব্রেকাপ করেছে!পরে অবশ্য জানলাম,আপুকে সে বলেছিল বিয়ের আগেই তার সাথে এক রাত থাকতে,আপু রাজি হয়নি।তাই সে এভাবে ব্রেকাপ করেছে।সে নাকি আরো অনেক মেয়ের সাথেই এমন করেছে!
--ও।
--ওর স্বাভাবিক হতে অনেকদিন লেগেছিল।তারপর হঠাৎ করেই একটা ছেলের সাথে ওর ফ্রেন্ডশিপ হয়।খুব স্বাভাবিক বন্ধুত্বই ছিল তাদের মধ্যে।ফেসবুকে পরিচয়।একদিন আপু ফেসবুকে ঢুকে দেখে,আপুর আইডি হ্যাক করে তার ছবি এডিট করে অনেক খারাপ খারাপ ছবি দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে।চেনা-পরিচিত যারা ছিল,সবার কাছেই আপুকে চরমভাবে অপমানের স্বীকার হতে হয়!এরপর থেকেই আপু আর বাইরে যায় না।কোনো ছেলের সাথে কথা বলেনা,ফেসবুকেও বসে না।
--হুম,আসলেই তোমার আপুর সাথে অন্যায় হয়েছে!
--এইটুকুতেই শেষ না।
--আরো আছে?
--হ্যা।গত বছর একটা ছেলে এসে আপুকে দেখে যায়।পরিবারের সবার আপুকে খুব পছন্দ হয়।আপুও বিয়েতে মত দেয়।ভেবেছিল,সব ছেলেই তো আর এক না!কত আনন্দের ছিল বিয়ের আগের দিনগুলো!আপুর সাথে ছেলেটার প্রায়ই কথা হত।শুনে মনে হত দুজনেই খুব খুশি!
--তোমার আপুর আগে বিয়েও হয়েছিল?
--না।ছেলেটা আগে আপুকে কিছু না বললেও বিয়ের দিন বলল,সে এই বিয়েতে রাজি না!অন্য মেয়েকে তার পছন্দ,কিন্তু বাবার চাপে পড়ে সে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল।ব্যস,ভেঙে গেল বিয়েটা!
আমি শুনে এতই অবাক হলাম যে,কিছু বলতেই ভুলে গেলাম!এত ট্র‍্যাজিডিও একটা মেয়ের জীবনে ঘটতে পারে!রিহানা বলে চলল,
--এরপর থেকে আপু কোনো ছেলেকে দেখতে পারে না!কথাও বলতে চায়না।শুধু বাবা-মায়ের চাপাচাপিতেই এবার পাত্র দেখতে রাজি হয়েছে।এখন বিয়ে করবেন কি করবেন না এটা আপনার ইচ্ছা!
বলে চলে গেল রিহানা।সে জানতেও পারল না যে আসলে আমি আগে ঠিক করেছিলাম বিয়েটা করব না।কিন্তু এখন ভাবছি,বিয়ে করাই উচিত!

৩.
আজকে আমাদের বিয়ের প্রথম রাত।তাকিয়ে আছি ঘুমন্ত রায়নার দিকে!আমাদের মাঝখানে একটা কোলবালিশ রেখে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে,নিজেই হয়ত টের পায়নি!
যদিও আমি এনির কাছ থেকে ধোকা খাওয়ার পরে ভেবেছিলাম,কোনোদিন আর কোনো মেয়েকে বিয়ে করা দূরে থাক,বিশ্বাসও করব না।কিন্তু আমি এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করেছি,যার জীবন আমার চেয়েও কঠিন হয়ে গিয়েছে!আমি মাত্র একটা মেয়ের কাছ থেকে ধোকা খেয়ে দুনিয়ার সব মেয়েকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম,কিন্তু ও তো তিনটা ছেলের কাছ থেকে তিনভাবে ধোকা খেয়েছে।যখনই কাউকে বিশ্বাস করেছে,তখনই সে তার বিশ্বাস ভেঙেছে!রায়নার এই অবিশ্বাসের জীবন থেকে তো আমাকেই ওকে উদ্ধার করতে হবে!নাহয় ওর এই জীবন হয়ত সব ছেলেকেই অবিশ্বাস করতে করতে কেটে যাবে!

রায়না কাজে খুব চটপটে!সারাদিন মাকে হেল্প করে,রান্নাবান্না করে।মা-বাবাকে গল্প শোনায়,হাসিখুশি থাকে।কিন্তু আমি যখন রাতে অফিস থেকে ফিরি,তখনো ও মায়ের আশেপাশেই ঘুরঘুর করে।এমন ভান করে যেন আমি যে এসেছি,সে দেখেইনি!এতে অবশ্য আমি কোনো কষ্ট পাই না।কারণ আমি তো ওর অতীত জানি।আমাকে দেখে রায়না ভয় পাবে,এটাই হয়ত স্বাভাবিক।ওকে ঠিক হতে আমার সময় দিতে হবে।মা অবশ্য ওকে বোঝানোর চেষ্টা করে,কিন্তু ও কিছু বুঝতে পারেনা,বা বুঝতে চায় না!
ছুটির দিনগুলোতেও একই অবস্থা!সারাক্ষণ সে মায়ের আশেপাশে ঘুরে।ভুলেও আমার কাছে আসে না!
একদিন বস অফিস থেকে আসার সময় বললেন,আমার এরপরের দিন রেস্ট।অফিসে আসা লাগবে না।রেস্ট নিয়ে যাতে আমি আরো ভালভাবে কাজ করতে পারি,সেই জন্যই এই ব্যবস্থা।আমি অফিস থেকে এসে অবশ্য কাউকে বলিনি যে পরের দিন আমার অফিস ছুটি।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার আগেই রায়না সব কাজ করে গোসল করতে যায়।আমি অফিসে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওর কোনো হদিস পাওয়া যায় না।কিন্তু আজকে একেবারেই ভিন্ন।রায়না গোসল করে এসে কল্পনাও করেনি আমাকে দেখবে!আমাকে দেখে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।তারপর তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে যেতে চাইল।আমি পেছন থেকে হাত ধরে টেনে ওকে বিছানায় বসালাম।ওর হাত দেখি ভয়ানক ঠাণ্ডা!আর থরথর করে কাঁপছে!আমার হাত থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল।কিন্তু আমি ওকে শক্ত করে ধরে রেখে বললাম,
--আমাকে তুমি ভয় পাচ্ছ কেন?আমি তো তোমারই হাসবেন্ড।জানি,তুমি সব ছেলেকেই অবিশ্বাস করো।কিন্তু আমাকে একবার বিশ্বাস করেই দেখো,আমি কখনোই তোমার বিশ্বাস ভাঙব না,প্রমিস।
রায়না চোখে অবিশ্বাস নিয়ে বলল,
--সব ছেলেরা বিশ্বাস ভাঙার আগে এই কথাই বলে,কিন্তু ঠিকই পরে সব তছনছ করে দিয়ে যায়!তাই আমার পক্ষে আর কাউকেই বিশ্বাস করা সম্ভব না!হাত ছাড়ুন,আমাকে যেতে দিন।
আমি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ওর হাত ছেড়ে দিলাম,ও রান্নাঘরে চলে গেল।

একটু পরেই রায়নার চিৎকার শুনে ভয়ে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি,মা রায়নার হাতে ঠাণ্ডা পানি ঢালছে।রায়না ব্যাথায় ছটফট করছে!কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম,কি হয়েছে।মা বলল,রায়না রান্না করতে গিয়ে গরম তেল ছিটে ওর হাতে এসে পড়েছে।অনেকখানি পুড়ে গেছে ডান হাত।
আগে তো এমন কখনো হয়নি,আজ কেন হল?আমাকে ভয় পেয়েই কি ওর কাজেও ওলটপালট হয়ে গেছে?
আমি রায়নাকে তাড়াতাড়ি ডাক্তার কাছে নিয়ে গেলাম।ডাক্তার হাতে ওষুধ লাগিয়ে দিল,আর ডান হাত বেশি ব্যবহার করতে না করল।
রাতের বেলা রায়না না খেয়েই ঘুমিয়ে যাচ্ছিল।ওর ক্ষুধা লেগেছিল ঠিকই।কিন্তু ও আমার হাতে খাবে না,নিজের হাত ব্যবহার বন্ধ,কাউকে বলতেও পারছিল না খাইয়ে দিতে।ও যত যাই করুক,আমি যখন একটা ধমক দিয়ে ওকে খাইয়ে দিতে শুরু করলাম,তখন আর না করল না।লক্ষ্মী মেয়ের মত আমার হাতে খেতে শুরু করল।আর আমি ওর মিষ্টি মুখটা আর অপূর্ব চোখ দুটোকে অনেকদিন পর খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেলাম!

৪.
ছুটির দিনগুলোতে এখন আর রায়না আমার থেকে দূরে থাকতে পারেনা।আমি বুঝতে পেরেছি,নিজে থেকে ওর কাছাকাছি থাকার চেষ্টা না করলে ও আমার থেকে আরো দূরে চলে যাবে।তাই যতক্ষণ বাসায় থাকি,ততক্ষণ ওকে ডাকতে থাকি আর আমার এটা ওটা কাজ দিতে থাকি।এতেই ওর কিছুটা হলেও কাছাকাছি থাকতে পারি।
আজকেও অফিস থেকে ছুটি দিয়েছে।কিন্তু আজকের কথা অবশ্য পুরাই ভিন্ন!আজকে বিকেলের ট্রেনে বাবা-মা দুজনেই অনেকদিন পর গ্রামে বেড়াতে গিয়েছেন।একসপ্তাহ ঐখানে থাকবেন।
এই এক সপ্তাহের স্বাধীনতায় আমি যে কি খুশি হয়েছি!প্রত্যেকদিন শুধু রায়না আর আমি থাকব বাড়িতে।অফিসের দিন আর ছুটির দিনগুলোতে কি কি করব,তাই ঠিক করতে শুরু করলাম!অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরির প্ল্যান করলাম,যদিও হয়ত রায়নাকে যেতে রাজি করাতে কষ্টই হবে,কিন্তু রাজি করানো যাবে।আর মনে মনে প্রস্তুত হয়ে রইলাম,ঠিক সপ্তমদিন আমি রায়নাকে প্রপোজ করব!
প্রথমদিন অফিস থেকে সন্ধ্যায় ফিরে তাকে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে বললাম।আজকে আমরা বাইরে খেতে যাব!এনির সাথে প্রেম করে আর কোনো লাভ হোক বা না হোক,মেয়েরা কি টাইপের জিনিস পছন্দ করে,এটা ঠিকই জেনে গিয়েছিলাম।তাই বাবা-মা গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই আমি মেয়েদের সব পছন্দের সব কাজগুলো রায়নার সাথে করব বলে ঠিক করলাম।

তাই আজকে রায়নাকে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে গেলাম।যদিও রায়না যেতে রাজি হচ্ছিল না।ওকে সেজেগুজে শাড়ি পড়ে আসতেও রাজি করিয়েছি।এই আলো-আঁধারের খেলায় রায়নাকে যে কি অপূর্ব সুন্দর আর স্নিগ্ধ লাগছে,আমি বলে বোঝাতে পারব না।আমি নতুন করে আবার ওর প্রেমে পড়তে শুরু করলাম!কিন্তু ওর মধ্যে আমার প্রতি একটুও ভালবাসা আর বিশ্বাস জন্মাতে পেরেছি কিনা,বুঝতে পারলাম না।কিছুক্ষণ চুপচাপ খেতে খেতে একটু পর জিজ্ঞেস করলাম,
--তোমার এতদিন পর বাইরে ঘুরতে এসে কেমন লাগছে?
--অনেক ভাল লাগছে!কিন্তু আপনি আবার ভেবে বসবেন না যে,আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি।আপনার প্রতি আমার কোনোরকমই দুর্বলতা নেই,মনে রাখবেন।
আবার সেই কাটাকাটা উত্তর!কিন্তু আমি সেই কথার তোয়াক্কা না করে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললাম,
--সমস্যা নেই।আমার চেষ্টা আমি করে যাব যতদিন পারি!
মনে মনে বললাম,
--অমূল্য কিছু পেতে হলে তো কষ্ট করতেই হবে!

 আজকে রাতেও রায়না আমাদের মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে ঘুমাল।সে আসলে আমাদের মাঝে যেন কোলবালিশ দিল না,অবিশ্বাসের দেয়াল দিয়ে আলাদা করে দিল আমাকে!কবে যে সেই দেয়াল ভাঙবে?

দ্বিতীয়দিন আমি অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়িই ছুটি পেলাম।রায়নাকে নিয়ে সেদিন গেলাম পার্কে।এনিকে দেখতাম পার্কে ঘুরতে খুব পছন্দ করত।ইচ্ছা,রায়নাকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে একসাথে ফুচকা খাব।পার্কে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই দেখলাম,অনেকগুলো পিচ্চি আমাদের ঘিরে ধরেছে।এদেরকে আমার ভালই লাগে,কিন্তু এনি এদেরকে সহ্য করতে পারত না!
আমি অবাক হয়ে দেখলাম,আসার সময় আমি যে দুশো টাকা দিয়েছিলাম রায়নাকে প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের জন্য,ও সেগুলো দিয়ে বাচ্চাগুলোকে আইসক্রিম কিনে খাওয়াল।আর বাচ্চাদের সাথে এমনভাবে মজা করতে লাগল যে দেখে মনে হল,বাচ্চাগুলো তার নিজেরই!ওকে আমি সেদিন প্রথমবারের মত হাসতে দেখলাম!এত মিষ্টি কারো হাসি হতে পারে,তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি!

আমি অবাক হয়ে ওর পাগলামিগুলো দেখতে লাগলাম আর ভাবতে থাকলাম,এত সুন্দর মনের একটা মেয়েকে ছেলেগুলো কেন এভাবে কষ্ট দিল যে ওর মনে ছেলেদের নিয়ে একেবারে বিতৃষ্ণা জন্মে গেল!ঐ ঘটনাগুলো না ঘটলে আমরা কি সুন্দরভাবে একসাথে দিনগুলো কাটাতে পারতাম!

আমি  যখন তাকে ফুচকা খেতে নিয়ে গেলাম,ও যে কি খুশি হল!আশ্চর্য হয়ে গেলাম আমি।কালকেও তো রায়নাকে নিয়ে দামী রেস্টুরেন্টে বসে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করেছি,কিন্তু কাল তো ওর মাঝে এত খুশি দেখিনি!বুঝলাম,ওর এক্সপেকটেশন অন্য মেয়েদের মত অনেক বেশি না,একটুতেই ও খুব খুশি হয়।আজকে বাচ্চাগুলোকে দেখে যেমন হয়েছে!

তৃতীয়দিন আমি ঠিক করলাম,আমরা শপিং এ যাব।কিন্তু রায়নাকে এতে তেমন আগ্রহী দেখলাম না!বুঝতে পারলাম,অন্য মেয়েদের মত ওর শপিং এ যেতে অতটা ভাল লাগে না!আমি যতই রায়নাকে আবিষ্কার করছি,ততই অবাক হচ্ছি,মেয়েটা অন্যদের চেয়ে একেবারেই আলাদা!
কিন্তু শপিং এ গিয়ে দেখা গেল,খুব শখ করে রায়না এক একটা ড্রেস কিনছে,কিন্তু একটাও নিজের জন্য না!মায়ের জন্য শাড়ি,বাবার জন্য পাঞ্জাবি,তাদের প্রয়োজনের আরো টুকিটাকি জিনিস কিনল।এর ফাঁকে আমি গিয়ে ওর জন্য সুন্দর মেরুন রঙয়ের একটা শাড়ি কিনলাম,যেহেতু ও নিজের জন্য কিছুই কিনে নি।
বাসায় ফিরে যখন শপিং এর ব্যাগগুলো খুলে খুলে দেখছিলাম,তখন খুব অবাক হয়ে দেখলাম,আমার নাম লেখা একটি প্যাকেট!খুলে দেখি,ভেতরে নীল-সাদা স্ট্রাইকের একটি সুন্দর শার্ট।বুঝতে পারলাম,আমি যখন ওর জন্য শাড়ি কিনছিলাম,তখন রায়নাও আমার জন্য শার্ট কিনেছে,আমাকে সে যতই অপছন্দ করুক!কি যে আনন্দ লাগছে!আসলে প্রিয় মানুষের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আনন্দই আলাদা!

৫.
আজ চতুর্থদিন।শুক্রবার বলে আজ অফিসও বন্ধ।ছুটি ছিল বলে একটু দেরিতেই উঠলাম।আর উঠার সাথে সাথেই আমার নাকে খিচুরির সুঘ্রাণ এল!আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখি রায়না মিষ্টি গলায় গান গাইছে,আর রান্না করছে আমার প্রিয় খিচুরি আর গরুর মাংস।আমি অবাক হয়ে গেলাম।কারণ আজ ছুটির দিন বলে প্ল্যান করেছিলাম রায়নাকে বলব,ভাল কিছু রান্না করতে যেন বাসায় বসে দুজন একসাথে মজা করে খেতে পারি।কিন্তু রায়না তো আমার প্ল্যান শোনার আগেই সব করে ফেলেছে!
আজকে প্রথম দুজন একসাথে বাসায় বসে খাচ্ছি।রায়না একটু পর পরই এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে।কিযে ভাল লাগছে!আর ওর হাতের রান্না তো আজকে একেবারে অমৃতের মত মনে হচ্ছে!অনেকদিন পর এত তৃপ্তি নিয়ে খেলাম!
রাতে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।ঘুমঘুম চোখে উঠে অবাক হয়ে দেখি,রায়না হাটুতে মাথা গুজে বাচ্চাদের মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে!জিজ্ঞেস করলাম,
--কি হয়েছে তোমার?
রায়না কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
--ঈশান,বাবা হঠাৎ করে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে!
--এখন কোথায় আছেন?
--হাসপাতালে।কিন্তু এত রাতে কাকে বাবার কাছে আমাকে নিয়ে যেতে বলব বুঝতে পারছি না!
আমি ওর দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা হালকা করার জন্য মুখে একটু হাসি টেনে বললাম,
--পাগলি মেয়ে!এর জন্য এত কাঁদে?আমি আছি না?আমি তোমাকে তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাব।
বলে আমি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললাম,যেহেতু এত রাতে কোনো যানবাহন পাওয়া যাবে না!
আমরা যখন রওনা দিয়েছি,তখনো গাড়িতে বসে রায়না কাঁদছিল।ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য কি করব,বুঝতে পারছিলাম না।
হঠাৎ খেয়াল করে দেখি,গাড়ির ড্রাইভার স্টিয়ারিং এ হাত রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে!আমি সাবধান করে দেওয়ার আগেই সে গাড়িটাকে রাস্তার পাশের একটা উঁচু আইল্যান্ডে উঠিয়ে দিয়েছে।আমি রায়নার মাথার দিকটা দুই হাতে ধরে রাখতে রাখতেই দেখলাম,গাড়িটা কাত হয়ে গেল রায়না যেদিকে বসেছে,সেদিকে!হঠাৎ করে মনে হল,আমার নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই।কিন্তু আমি একটু সাহায্য করলেই তো রায়না বের হতে পারবে!তাই আমি অনেক কষ্ট করে যেদিকে বসে ছিলাম,সেদিক দিয়ে রায়নাকে গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করলাম।কিন্তু যখন আমি নামতে যাব,তখন টের পেলাম,আমার ডান হাতে কোনো শক্তি নেই!বুঝলাম,হাতটা ভেঙে গেছে হয়ত!যখন রায়নাকে ধরে রেখেছিলাম,তখনই ভেঙেছে।

আমি নামতে পারছি না দেখে রায়না আমাকে টেনে নামানোর চেষ্টা করতে লাগল,কিন্তু ওর একার পক্ষে তো এটা সম্ভব না।আর ড্রাইভারের যখন হুশ এল,তখন আমাদের দুজনকে এই বিপদের মাঝে ফেলেই সে পালিয়ে গেল!
আমি যখন নামতে চেষ্টা করছি,তখন হঠাৎ দেখি উলটা দিক থেকে একটা ট্রাক ছুটে আসছে!আমি বুঝতে পারলাম,এটাই হয়ত আমার জীবনের শেষ সময়!মরে যাচ্ছি,এতে এতটুকু চিন্তা হচ্ছে না,কিন্তু বারবার মনে হচ্ছে,রায়নাকে আমার আর মনের কথাগুলো বলা হল না!

পরিশেষ:

চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায়ই  অনুভব করলাম,কেউ খুব সযত্নে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।কারো হাতের পরশে আরামে আমার ঘুম চলে আসছে!আমি ভাবতে লাগলাম,এটা নিশ্চয়ই মৃত্যুর পরের জীবন!
কিন্তু যখন চোখ খুললাম,তখন দেখি আমি হাসপাতালে।রায়না আমার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আর আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে!আমি চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে প্রথম যে কথাটা বললাম,সেটা হল,
--আমি তোমাকে খুব ভালবাসি,রায়না!

রায়না কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।ভাবছে,এক্সিডেন্টে আবার আমার মাথার গোলমাল হয়ে গেল নাতো?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললাম,
--আমি ভেবেছিলাম,এটা বলতে আমার আরো দুইদিন লাগবে,কিন্তু এক্সিডেন্টের পর আমার সাহস কত বেড়ে গেছে দেখেছ?আমি এখনই এই কথা তোমাকে বলে দিতে পেরেছি!
রায়না মুখ ভেংচে বলল,
--সাহস না ছাই!তুমি আসলেই একটা পাগল।কেন তুমি আমাকে ওভাবে কাল ধরে রেখেছিলে?সেজন্যই তো তোমার হাতটা এভাবে ভাঙল!যদিও ডাক্তার বলেছে মারাত্মক কিছু না।তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।তারপরেও তো..আর ট্রাকটাও সেসময়..
--কি হয়েছিল বল তো?আমি তো ভেবেছিলাম মরেই গেছি!কিন্তু ট্রাকটা সেসময় থামল কিভাবে?
--আমি ট্রাকটা দূরে থাকতেই ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছিলাম!
--কি বলছ তুমি?তোমার যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে আমার বেঁচে থাকা আর না থাকা তো একই হত!
--আর তোমার কিছু হলে?আমি এতদিন পরে একজনকে বিশ্বাস করলাম,তাকে আমি আবার হারিয়ে যেতে দেই কিভাবে?
যাক,শেষ পর্যন্ত আমার মিশন সাকসেসফুল হল!রায়নার অবিশ্বাসের অগোচরে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাসকে আমি ঠিকই বের করে আনতে পেরেছি!
সেই আনন্দে হেসে ফেলে রায়নার দিকে তাকিয়ে বললাম,
--বাদ দাও তো।বাবা কেমন আছেন?
--বাবার প্রেশার বেড়ে গিয়েছিল।এখন সব কন্ট্রোলে আছে।
শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।তারপর হঠাৎ মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে ভুরু নাচিয়ে বললাম,
--আমার প্রপোজের উত্তর কিন্তু আমি পাইনি!
দেখি,রায়না লজ্জায় লাল হয়ে গেছে!আমাকে হালকা ধমক দিয়ে বলল,
--উফ্ যাও তো,কিছু বলতে পারব না এখন!
তারপরেই আমার বিষণ্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
--আমাদের সাতদিন তো এখনো শেষ হয়নি।তুমি আগে সুস্থ হয়ে সাতদিনের কাজ কম্পলিট কর,তারপর আমার মত জানাব!
রায়না অবশ্য সাতদিনের কাজ কম্পলিট হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে নি।তার আগেই আমাকে ভালবাসার কথা বলে ফেলেছিল!এত দেরিতে বলা নাকি ওর সহ্য হচ্ছিল না,তাই!

#অবিশ্বাসের অগোচরে
লেখক:অমানিশা তমিস্রা

Thursday, September 21, 2017

বাড়ি কিনলে সঙ্গে বৌ ফ্রি!

এটা কিনলে ওটা ফ্রি এমন ফ্রির অফার দেখা যায় অহরহ। কিন্তু ‘বাড়ি কিনলে বউ ফ্রি’ এমন কোন অফার চমকে দেওয়ার মতো একটি ব্যাপার। এটা বোধহয় আশাপ্রদও নয়। অথচ বাস্তবিক এমনই একটি বিজ্ঞাপন  দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইন্দোনেশিয়ার এক নারী এভাবেই বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।

উইনা লিয়া নামে ওই নারীর বাড়িটি বিক্রি করা হবে। রয়েছে লোভনীয় ছাড়ও। সেখানেই লেখা আছে, বাড়িটিতে মিলবে বাগান, গ্যারেজ ও একজন স্ত্রী। বিজ্ঞাপনের পর ৪০ বছরের ওই নারীকে নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনি স্পষ্টই জানিয়েছেন, এই বিজ্ঞাপনে তার কোনও আপত্তি নেই। এমনিতেও তিনি একজন স্বামী খুঁজছেন।

৬ একর জমির উপর তৈরি একটি বাড়ি। ২ টি বেডরুম, ২ টি বাথরুম রয়েছে। গ্রানাইট মেঝে। একটি গ্যারেজ, একটি প্রশস্ত বাগান রয়েছে। আছে মাছের পুকুরও । উইনা লিয়া জানিয়েছেন, তিনি যতবার প্রেমে পড়ছেন তা ব্যর্থ হয়েছে। তাই এবার এরকম প্ল্যান বানিয়েছেন তিনি।
তথ্যসূত্র : দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট

Tuesday, September 19, 2017

আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম, তখন ফাহিম নামের একটি ছেলে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে যায়।

যেহেতু আমি সাধারণ একটি পরিবারের মেয়ে। তাই আমি সাধারণ ভাবেই চলাফেরা করতাম। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম, তখন ফাহিম নামের একটি ছেলে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে যায়।
.
ফাহিম তখন এইসএসসিতে পড়ে। আসলে ঐ বয়সে সব ছেলে মেয়েরাই রঙিন চোখ দিয়ে রঙিন দুনিয়া দেখে। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলামনা। আমি মনে মনে চাইতাম, আমাকে কেউ ভালবাসুক। কেউ আমাকে বলুক লাবন্য আমি তোমাকে ভালবাসি।
.
আমার মনের চাওয়াটা পুরোন করেছিল ঐ ফাহিম নামের ছেলেটি। আমাকে সেদিন ও প্রথম বললো.. 
- সাথী তুমি কি কাউকে ভালবাসো..?"
- না, এই প্রশ্ন কেন করছেন..?
- যাক এই না শব্দটাই শুনতে চেয়েছিলাম।
- কেন.., হ্যাঁ বললে কি হতো..?
- কষ্ট নিয়ে ফিরে যেতাম!
- তাতে আপনি কষ্ট পাবেন কেন..?
- আরেকদিন বলবো।
.
ফাহিমদের বাড়ি আমাদের পাশের গ্রামে। ওর বাবা গ্রামের নামকরা চেয়ারম্যান। বেশ কয়েকদিন লক্ষ্য করেছি ও আমাকে ফলো করছে। আজ ওর কথাতে বুঝতে পারলাম, ও মনে মনে কি চাইছে! ছেলেটিকে আমার বেশ পছন্দ। আমি ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই ওর প্রেমে পড়ে যাই।
.
একদিন ফাহিম আমাকে বলেই ফেললো সে আমাকে ভালবাসে। আর আমিও তাতে রাজি হয়ে যাই। আসলে ওর প্রতি আমার দুর্বল হওয়ার অনেকগুলো কারণ ছিলো। ও বড়লোক ঘরের সন্তান হলেও ওর মধ্যে কোনো অহংকার ছিলোনা। ও সবসময় সাধারন ভাবেই চলতো। এবং সাধারণ মানুষদের সাথেই চলতো। সত্যি কথা বলতে ওর যতগুলো বন্ধু ছিলো, সবাই ছিলো অসহায় ও গরীব। আর ও সবসময় এই গরীব অসহায়দের নিয়েই চলতো।
.
আমাকে মাঝেমধ্যে অনেক কিছুই গিফট করতো। যেটা আমার কাছে মোটেও ভাল লাগতোনা। একদিন আমি ফাহিমকে বললাম... "তুমি যেদিন নিজে ইনকাম করে আমাকে কিছু কিনে দিবে, সেদিন আমি সব থেকে খুশি হবো। সেটা হোক সামান্য মূল্যের..!"
.
ও যে আমার এই কথাটি সিরিয়াসলি নিবে আমি ভাবতে পারিনি..! একদিন ও আমার হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো.. "এটা আমার টিউশনির টাকা দিয়ে তোমার জন্য কিনেছি। তুমি সেদিন আমাকে নিজে ইনকামের কথা বললে, আমি তারপর থেকে একটা টিউশনি শুরু করি। আর সেই টিউশনির প্রথম টাকা দিয়ে তোমার জন্য এইটা আর মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনেছি।"
.
সেদিন আনন্দে আমার চোখদুটো অশ্রুতে ভরে গিয়েছিল। আমি সেদিন বুঝেছিলাম ফাহিম আমাকে কতটা ভালবাসে..! আমি ওর দেয়া প্যাকেটা যখন বাড়ি গিয়ে খুললাম, খুলেই আমি অবাক হলাম.! প্যাকেটের মধ্যে একটা নীল শাড়ি এবং সাথে ওর লেখা একটি চিঠি দেখে। আমি চিঠিটা পড়তে লাগলাম...
"লাবন্য, নীল শাড়িতে তোমাকে কোনোদিন দেখিনি। কেন যেন দেখতে খুব  ইচ্ছে করছে আমার..! শাড়িটা পরে আগামীকাল বিকেলে আমার সাথে দেখা করবে প্লিজ..! আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো তোমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা নদীর পাড়ের সেই কাঁশবনে। কি আসবে তো..!?"
.
আমি গিয়েছিলাম ফাহিমের উপহার দেওয়া নীল শাড়িটা পরে। আমাকে দেখেই ফাহিমের চোখ দুটো কপালে উঠে গিয়েছিল..! বলেছিলো....
- সত্যিই অসাধারণ! যেন সাদা কাঁশবনে একটা ডানাকাটা নীলপরী নেমে এসেছে..!
.
সেদিন আমিও একটি গিফট কিনেছিলাম ওর জন্য। একটি নীল রঙের পাঞ্জাবি। প্যাকেটটি ওর হাতে দিয়ে বললাম...
- এটা এখনই গায়ে দাও।
- কি এটা..?
- একটি পাঞ্জাবি, আর একটি ঘড়ি। 
- তুমি এসব কিনতে গেছো কেন..? তুমি টাকা কই পেলে..?
- শুধু তুমিই আমাকে দিবে..? কেন, আমিকি কিছু দিতে পারিনা..? এটা আমার নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে কেনা। তুমি তো জানো আমি হাতের কাজ জানি। গত একমাস হাতের কাজ করেছি তোমাকে উপহার দিবো বলে।
.
আমি লক্ষ্য করলাম ফাহিমের দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ও বললো...
- আমি তোমাকে ভালবেসে ভুল করিনি। জানিনা আল্লাহ্ আমাদের দুজনের মিলন লিখে রেখেছেন কিনা!? তবে আল্লাহর কাছে চাইবো, তিনি যেন তোমাকেই আমার জীবন সঙ্গিনী করে দেন। 
- তুমি কি নামাজ পড়ো যে আল্লাহ্ তোমার কথা রাখবেন..?
- এখন থেকে পড়বো।
- সত্যি...!?
- হুম..
- আমিও পড়বো..
সেদিনের বিকেলটা ছিলো আমার জীবনের সেরা স্মৃতি। যা কোনোদিনই ভুলতে পারবোনা।
.
সেদিন থেকে আমি আর ফাহিম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করে দিলাম। তারপর থেকে আমরা দেখা সাক্ষাৎও খুব কম করতাম। আমি নামাজ শুরু করে বুঝতে পারি যে, আমার জন্য পর্দা করা ফরজ। আমি পর্দা করাও শুরু করে দিলাম। ফাহিম আমাকে কয়েকটা বোরকা কিনে দিয়েছিলো। আর সেগুলো ছিলো আমার সবচেয়ে প্রিয় উপহার। 
.
আল্লাহ সত্যি সত্যিই আমাদের দুজনের মিলন লিখে রেখেছিলেন। আমার এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, সহিহ শুদ্ধভাবে পর্দা করা ফাহিমের পরিবারের সবার মন কেড়েছিলো। আর এতেই আমাদের দুজনের মিলন হওয়াটা খুব সহজ করে দেন উপরওয়ালা। দুই বছর পর আমাদের বিয়ে হয়। 
.
আমার আর ফাহিমের আজ বিয়ের একবছর হলো। সেই উপলক্ষে আমার শ্বশুর আব্বা গরীব অসহায়দের মাঝে কাপড় বিতরণ এবং খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। আমার শ্বশুর সবার কাছে আমাদের জন্য দোয়া চাইছেন। সেই কাজে ফাহিমও খুব ব্যস্ত। আমাকে সবাই এত ভালবাসে, আমার কাছে কেবলই মনে হয় তা পাবার যোগ্য আমি নই.! জীবনে আমি আর কিছু চাইনা। শুধু এই ভালবাসা টুকুই চাই.!
.
সত্যিই সুখের কপাল আমার। এত সুখ আল্লাহ আমার কপালে লিখে রেখেছিলেন ভাবিনি, আলহামদুলিল্লাহ্। ভাবতেই আমার দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু পড়ছে। এটাকেই বুঝি সুখের কান্না বলে..!? এভাবেই আমি কাঁদতে চাই আজীবন...
•••
গল্প: "সুখের কান্না"
.
✍Ramzan Khondaker (স্লিপলেস বার্ড)