ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

Friday, August 18, 2017

একটা মেয়ে কনুই দিয়ে আমার মুখে সজোরে গুঁতো দিল। আমি ব্যথায় চিৎকার করলাম।

সকাল থেকেই মেজাজটা খারাপ। আজ
নির্ঘাত দিনটা খারাপ যাবে। ঘুম ঘুম চোখে
সকালে ব্রাশ করতে গিয়েই প্রথম বিপত্তিটা
ঘটিয়েছি। শেভিং ক্রিমকে টুথপেস্ট ভেবে
ভুল করেছি। শেভিং ক্রিম দিয়ে কিছুক্ষণ
ব্রাশ করার পর মনে হচ্ছে, একগাদা কচি ঘাস
চিবিয়েছি। এখন নিজেকে ছাগল ছাগল মনে
হচ্ছে। কিছু না খেয়েই অফিসের দিকে রওনা
হলাম। শেভিং ক্রিম খাওয়ার পর আর অন্য
কিছু খাওয়ার ইচ্ছা নেই।
বাসে উঠে দেখলাম, সিট খালি নেই।
দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দিনটা খারাপ যাবে_
এটা প্রমাণ করার জন্যই হয়তো একটা মেয়ে
কনুই দিয়ে আমার মুখে সজোরে গুঁতো দিল।
আমি ব্যথায় চিৎকার করলাম। মেয়েটা
বিব্রতমুখে বলল, 'সরি। ব্যথা পেয়েছেন?'
মেয়েটার কোমল গলা শুনে নিজেকে সামলে
নিলাম। মনে হচ্ছে, একটা দাঁত নড়ে গেছে।
সেই অবস্থায় হাসার চেষ্টা করে বললাম,
'নাহ। একদম ব্যথা পাইনি।'
অফিসে ঢুকেই আরেক বিপত্তি। বস আজকে
আমার আগে অফিসে এসেছেন এবং আমাকে
খুঁজে গেছেন। প্রতিদিন সময়মতো অফিসে
আসি। আজ একটু দেরি করলাম, আর আজই বস
আমার আগে অফিসে এসেছেন। এ জন্যই
সবসময় নিজেকে অভাগা মনে হয়। আমি
যেদিকে চাই, নর্দমাও শুকিয়ে যায়। অফিসে
এসে ডেস্কে ব্যাগটা রেখেই বসের রুমে
ছুটলাম।
বস আজ অস্বাভাবিক গম্ভীর। আমাকে
অবজ্ঞা করে নানা কাজ করতে লাগলেন।
আমি দীর্ঘক্ষণ বসে রইলাম। হঠাৎ বস আমাকে
চমকে দিয়ে বললেন, 'তুমি ইদানীং কী নিয়ে
ব্যস্ত?'
কী উত্তর দেব বুঝতে পারলাম না। মাথা
চুলকে বললাম, 'বস নতুন প্রজেক্টটা নিয়েই
বেশি ব্যস্ত।'
'আমি অফিসের কথা বলছি না। অফিসের
বাইরে কী নিয়ে ব্যস্ত?'
বুঝতে পারলাম না, বস কী জিজ্ঞেস করছেন।
তাই চুপচাপ বসে রইলাম।
বস আবার বললেন, 'তুমি তো ফেসবুকে খুব
অ্যাক্টিভ, না?'
কেমন যেন অন্যরকম গলায় কথাগুলো বললেন
বস। আমি কি ফেসবুকে কোনো ভুল করেছি?
মাঝে মাঝে দেশ-কাল-সমাজের কথা চিন্তা
করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিই। সেই স্ট্যাটাস
দেখে কি বস রাগ করেছেন? কোনো
স্ট্যাটাস কি তাকে ত্রুক্রদ্ধ করেছে? নানা
চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। গত
রাতের স্ট্যাটাসটার কথা মনে পড়ল। 'অফিসে
কাজ করতে এত ঘুম পায় কেন?' এই
স্ট্যাটাসটাই কি বসের চোখে পড়েছে?
আমি বললাম, 'বস আর ফেসবুক ব্যবহার করব
না। কসম।'
'যা করার তা তো ফেসবুকে করেই ফেলেছ।
এখন এসব বলে কী লাভ?'
'কী করেছি স্যার?'
'কী করেছ জানো না?'
'না বস। ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি
ফেসবুকে মাঝে মাঝে স্ট্যাটাস দিই। আর
কিছু তো করি না।' মাথা চুলকে বললাম।
'চ্যাট কর না? মেয়েদের প্রেম নিবেদন কর
না? তাদের ডিস্টার্ব কর না?' বস যেন গর্জে
উঠলেন।
গলাটা কেন যেন শুকনো লাগছে। চ্যাট তো
আজকাল ভালোই করছি। প্রেমও হয়েছে
সম্প্রতি। কিন্তু কোনো মেয়েকে ডিস্টার্ব
তো করি না।
বস আবার বললেন, 'বল_ মেয়েদের ডিস্টার্ব
কর না?'
'না বস। আমি কোনো মেয়েকে কখনও
ডিস্টার্ব করি না। এত সাহস আমার নেই।'
'একটা মেয়ে প্রমাণসমেত আমার কাছে
অভিযোগ করেছে। তাই আজ থেকে তোমার
চাকরি নট।'
'বস বিশ্বাস করুন...।' গলাটা করুণ শোনায়
বস বললেন, 'তোমার সঙ্গে আর কোনো কথা
বলব না। তুমি এখনই বেরিয়ে যাও। তোমার মুখ
যেন আর না দেখি।'
হতাশমুখে অফিস থেকে বের হলাম। সম্প্রতি
নাদিয়া নামে একটা মেয়ের সঙ্গে ফেসবুকে
পরিচয় হয়েছে। পরিচয়েই সেটা সীমাবদ্ধ
নেই, প্রেমও চলছে পুরোদমে। ভেবেছিলাম,
সামনে বিয়ে নিয়ে চিন্তা করব। নাদিয়া
বলেছিল, ওর পরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয়
করিয়ে দেবে। কিন্তু আজ চাকরিটা হারিয়ে
সব কূল গেল। এসব চিন্তা করতে করতে যখন
রাস্তায় হাঁটছি, ঠিক তখন নাদিয়া ফোন
দিল। বলল, 'কংগ্রাটস।'
আমি অবাক হয়ে বললাম, 'কংগ্রাটস দিচ্ছ
কেন?'
'আজ তোমার চাকরি চলে গেছে তাই।'
নাদিয়ার গলা হাসি হাসি।
'তুমি কীভাবে জানলে_ আমার চাকরি নেই?'
'আমিই তোমার বসকে অভিযোগ করেছি, তুমি
ফেসবুকে আমাকে ডিস্টার্ব কর। তোমাকে
যেন চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়।'
'তুমি আমার নামে অভিযোগ করেছ? তুমি?!!'
রাগটা ঢেকে রাখতে পারলাম না।
নাদিয়া এতটুকু বিচলিত হলো না। বলল,
'শোনো আমার বাবা বলেছিলেন, উনি আমার
পছন্দ মেনে নেবেন। শুধু একটাই শর্ত ছিল,
ছেলেকে বেকার হতে হবে। কারণ উনি
জামাইকে নিজের প্রতিষ্ঠানে বড় কোনো
চাকরি দিতে চান।'
'হ্যাঁ আমি শুনেছি। কিন্তু আমি বেকার
অবস্থায় তোমার বাবার সামনে যেতে পারব
না।'
'এ জন্যই তো তোমাকে বেকার বানিয়ে
দিলাম। এখন আর বাবার আপত্তি থাকবে না।'
নাদিয়া জোরে হেসে উঠল।
'এটা ঠিক করলে, নাদিয়া?'
'জানো না, প্রেমে আর যুদ্ধে সব বৈধ।'
'আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি অভিযোগ
করলে আর বস সাত-পাঁচ না ভেবে আমাকে
চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিলেন। বসকে তুমি
আগে থেকে চিনতে?'
'আরে গর্দভ, তোমার বসই আমার বাবা। উনি
জানেন না তোমার সঙ্গে আমার প্রেম। আর
তুমিও তো আমার ফ্যামিলির কাউকে চেন
না। তাই বুদ্ধিটা কাজে লাগালাম। বাবাকে
বলেছি, রিয়াজ নামে তোমার অফিসের এক
কর্মী আমাকে ফেসবুকে প্রেম নিবেদন
করেছে। বাবা এসব শুনে তোমার চাকরি নট
করে দিয়েছেন। এখন তোমাকে বেকার
অবস্থায় বাবার সামনে নিয়ে যাব। বাবা
তোমাকে মেনে নিতে বাধ্য হবেন। হা হা।'
আমার মাথাটা ঘুরছে। এই মেয়েটার মাথায়
এত বুদ্ধি কেন? খুশিতে সব দাঁত বেরিয়ে
এলো। মনে হচ্ছে শেভিং ক্রিম দিয়ে ব্রাশ
করতে বা কোনো মেয়ে কনুই দিয়ে গুঁতো
দিলেও হাসিটা ধরে রাখতে পারব।
চাকরি হারানোর পর অফিসের যারা
সহানুভূতি জানিয়েছিল, তারাই আবার
শুভেচ্ছা জানাতে এগিয়ে এলো। কারণ
অফিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে যোগ
দিয়েছি। বস তার কথা রেখেছেন। বেকার
ছেলেকে নিজ প্রতিষ্ঠানে বড় পদে চাকরি
দিয়েছেন। সমস্যা একটাই, 'বস' থেকে 'বাবা'
ডাকটায় এখনও অভ্যস্ত হতে পারিনি।
'রূপান্তর'


0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment