ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Friday, August 18, 2017

হাসপাতালে ডাক্তার রিয়ার ইতস্তত ভাব দেখেই আসল বিষয়টা বুঝে গেল

‘মা হতে যাচ্ছি’ রিয়ার মুখে কথাটা শুনে
মুখটা বিকৃত হয় জামিলের। রাগ করে বলল
‘এটা তো কোন কাজের কথা হলো না। ঔষধ
খাও নি।’
রিয়া অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। বলল, ‘ভুলে
গিয়েছিলাম।’
জামিল বলল, ‘এবার ঝামেলা বোঝো। কত
দৌড়াদৌড়ি করতে হবে বুঝতে পারছ?’
‘কী দৌড়াদোড়ি?’ রিয়া অবাক হয়ে
জিজ্ঞেস করল।
‘ক্লিনিকে যেতে হবে। জিনিসটা ফেলে
দিতে হবে।’
‘জিনিসটা না বাচ্চাটা?’
‘তুমি এই বিষয় নিয়ে খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছ
নাকি?’ জামিল ভুরু কুঁচকে তাকাল।
‘নাহ এমন কিছু না।’
‘ক্লিনিকে আমি দৌড়াতে পারব না। নিজের
কাজ নিজে সারবে।’ জামিল বলল।
‘ও আচ্ছা। রুম ডেটে অবশ্য তুমি নিজ উদ্যোগে
নিতে পেরেছিলে।’ রিয়া মনে করিয়ে দিল।
‘হ্যাঁ। এখন তো সব দোষ আমার।’ জামিলের
গলাটা কঠোর শোনায়। ‘আজকেই ডাক্তারের
কাছে যাবে। এই ঝামেলার কথা আর শুনতে
চাই না।’
রিয়া হাসল। বলল, ‘আমাদের অপরাধের
শাস্তি একটা নতুন জীবন পেতে পারে না।’
জামিল চোখ লাল করে বলল, ‘তাহলে কী
করতে চাও?’
রিয়া বলল, ‘ওকে বাঁচিয়ে রাখব।’
জামিল হাতে তালি দিয়ে বলল, ‘বাহ! দারুণ
বুদ্ধি। কিন্তু কোন পরিচয়ে বেড়ে উঠবে সে?’
‘তুমি বিয়ে করবে আমাকে। এরপর তোমার
আমার পরিচয়ে বেড়ে উঠবে।’
‘পাগল নাকি! আপাতত ৪/৫ বছরে বিয়ের
পরিকল্পনা নেই আমার।’ স্পষ্ট জানিয়ে দিল
জামিল।
‘আমি খুন করতে পারব না জামিল।’ কান্নাটা
সামলানোর চেষ্টা করল রিয়া।
‘একটা ঔষধ খেলে এতো ঝামেলা হতো না।’
জামিলের গলায় একটু নরম শোনায়। রিয়ার
চুলগুলো সরিয়ে মাথায় একটু হাত বুলিয়ে বলল,
‘আমাদের দু’জনের ভালোর জন্য ঝামেলাটা
ফেলে দিতে হবে রিয়া। প্লিজ বোঝার
চেষ্টা করো।’ রিয়া মাথা নাড়ায়। তার
কান্নার গতি বাড়তে থাকে।
হাসপাতালে ডাক্তার রিয়ার ইতস্তত ভাব
দেখেই আসল বিষয়টা বুঝে গেল। বলল,
‘আপনারা কেন যে এমন ভুলগুলো করেন? যা
হোক, না চাইলেও অপ্রিয় কাজটা আমাদের
নিয়মিত করতে হয়।’
রিয়া বলল, ‘আপা।’
‘জি বলুন।’ ডাক্তার বলল।
‘আমি ওকে হত্যা করতে আসি নি। আমি
জানতে এসেছি ও ভালো আছে কি না।’
ডাক্তার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
রিয়া দৃঢ় কন্ঠে বলল, ‘আমি ওকে বাঁচাব আপা।
ও আমার পরিচয়ে বাঁচবে। আর মরতে যদি হয়
দু’জনে একসাথেই মরব।’
রিয়া ঠিক জানে না তাকে কী করতে হবে।
তার মুখে থুতু জমেছে। সে শুধু জানে
জামিলের মুখে এক দলা থুতু দেওয়া খুব
প্রয়োজন। আর বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে রাখার
জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে চেষ্টা করতে হবে
তাকে।
.
#Noman

একটা মেয়ে কনুই দিয়ে আমার মুখে সজোরে গুঁতো দিল। আমি ব্যথায় চিৎকার করলাম।

সকাল থেকেই মেজাজটা খারাপ। আজ
নির্ঘাত দিনটা খারাপ যাবে। ঘুম ঘুম চোখে
সকালে ব্রাশ করতে গিয়েই প্রথম বিপত্তিটা
ঘটিয়েছি। শেভিং ক্রিমকে টুথপেস্ট ভেবে
ভুল করেছি। শেভিং ক্রিম দিয়ে কিছুক্ষণ
ব্রাশ করার পর মনে হচ্ছে, একগাদা কচি ঘাস
চিবিয়েছি। এখন নিজেকে ছাগল ছাগল মনে
হচ্ছে। কিছু না খেয়েই অফিসের দিকে রওনা
হলাম। শেভিং ক্রিম খাওয়ার পর আর অন্য
কিছু খাওয়ার ইচ্ছা নেই।
বাসে উঠে দেখলাম, সিট খালি নেই।
দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দিনটা খারাপ যাবে_
এটা প্রমাণ করার জন্যই হয়তো একটা মেয়ে
কনুই দিয়ে আমার মুখে সজোরে গুঁতো দিল।
আমি ব্যথায় চিৎকার করলাম। মেয়েটা
বিব্রতমুখে বলল, 'সরি। ব্যথা পেয়েছেন?'
মেয়েটার কোমল গলা শুনে নিজেকে সামলে
নিলাম। মনে হচ্ছে, একটা দাঁত নড়ে গেছে।
সেই অবস্থায় হাসার চেষ্টা করে বললাম,
'নাহ। একদম ব্যথা পাইনি।'
অফিসে ঢুকেই আরেক বিপত্তি। বস আজকে
আমার আগে অফিসে এসেছেন এবং আমাকে
খুঁজে গেছেন। প্রতিদিন সময়মতো অফিসে
আসি। আজ একটু দেরি করলাম, আর আজই বস
আমার আগে অফিসে এসেছেন। এ জন্যই
সবসময় নিজেকে অভাগা মনে হয়। আমি
যেদিকে চাই, নর্দমাও শুকিয়ে যায়। অফিসে
এসে ডেস্কে ব্যাগটা রেখেই বসের রুমে
ছুটলাম।
বস আজ অস্বাভাবিক গম্ভীর। আমাকে
অবজ্ঞা করে নানা কাজ করতে লাগলেন।
আমি দীর্ঘক্ষণ বসে রইলাম। হঠাৎ বস আমাকে
চমকে দিয়ে বললেন, 'তুমি ইদানীং কী নিয়ে
ব্যস্ত?'
কী উত্তর দেব বুঝতে পারলাম না। মাথা
চুলকে বললাম, 'বস নতুন প্রজেক্টটা নিয়েই
বেশি ব্যস্ত।'
'আমি অফিসের কথা বলছি না। অফিসের
বাইরে কী নিয়ে ব্যস্ত?'
বুঝতে পারলাম না, বস কী জিজ্ঞেস করছেন।
তাই চুপচাপ বসে রইলাম।
বস আবার বললেন, 'তুমি তো ফেসবুকে খুব
অ্যাক্টিভ, না?'
কেমন যেন অন্যরকম গলায় কথাগুলো বললেন
বস। আমি কি ফেসবুকে কোনো ভুল করেছি?
মাঝে মাঝে দেশ-কাল-সমাজের কথা চিন্তা
করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিই। সেই স্ট্যাটাস
দেখে কি বস রাগ করেছেন? কোনো
স্ট্যাটাস কি তাকে ত্রুক্রদ্ধ করেছে? নানা
চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। গত
রাতের স্ট্যাটাসটার কথা মনে পড়ল। 'অফিসে
কাজ করতে এত ঘুম পায় কেন?' এই
স্ট্যাটাসটাই কি বসের চোখে পড়েছে?
আমি বললাম, 'বস আর ফেসবুক ব্যবহার করব
না। কসম।'
'যা করার তা তো ফেসবুকে করেই ফেলেছ।
এখন এসব বলে কী লাভ?'
'কী করেছি স্যার?'
'কী করেছ জানো না?'
'না বস। ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি
ফেসবুকে মাঝে মাঝে স্ট্যাটাস দিই। আর
কিছু তো করি না।' মাথা চুলকে বললাম।
'চ্যাট কর না? মেয়েদের প্রেম নিবেদন কর
না? তাদের ডিস্টার্ব কর না?' বস যেন গর্জে
উঠলেন।
গলাটা কেন যেন শুকনো লাগছে। চ্যাট তো
আজকাল ভালোই করছি। প্রেমও হয়েছে
সম্প্রতি। কিন্তু কোনো মেয়েকে ডিস্টার্ব
তো করি না।
বস আবার বললেন, 'বল_ মেয়েদের ডিস্টার্ব
কর না?'
'না বস। আমি কোনো মেয়েকে কখনও
ডিস্টার্ব করি না। এত সাহস আমার নেই।'
'একটা মেয়ে প্রমাণসমেত আমার কাছে
অভিযোগ করেছে। তাই আজ থেকে তোমার
চাকরি নট।'
'বস বিশ্বাস করুন...।' গলাটা করুণ শোনায়
বস বললেন, 'তোমার সঙ্গে আর কোনো কথা
বলব না। তুমি এখনই বেরিয়ে যাও। তোমার মুখ
যেন আর না দেখি।'
হতাশমুখে অফিস থেকে বের হলাম। সম্প্রতি
নাদিয়া নামে একটা মেয়ের সঙ্গে ফেসবুকে
পরিচয় হয়েছে। পরিচয়েই সেটা সীমাবদ্ধ
নেই, প্রেমও চলছে পুরোদমে। ভেবেছিলাম,
সামনে বিয়ে নিয়ে চিন্তা করব। নাদিয়া
বলেছিল, ওর পরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয়
করিয়ে দেবে। কিন্তু আজ চাকরিটা হারিয়ে
সব কূল গেল। এসব চিন্তা করতে করতে যখন
রাস্তায় হাঁটছি, ঠিক তখন নাদিয়া ফোন
দিল। বলল, 'কংগ্রাটস।'
আমি অবাক হয়ে বললাম, 'কংগ্রাটস দিচ্ছ
কেন?'
'আজ তোমার চাকরি চলে গেছে তাই।'
নাদিয়ার গলা হাসি হাসি।
'তুমি কীভাবে জানলে_ আমার চাকরি নেই?'
'আমিই তোমার বসকে অভিযোগ করেছি, তুমি
ফেসবুকে আমাকে ডিস্টার্ব কর। তোমাকে
যেন চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়।'
'তুমি আমার নামে অভিযোগ করেছ? তুমি?!!'
রাগটা ঢেকে রাখতে পারলাম না।
নাদিয়া এতটুকু বিচলিত হলো না। বলল,
'শোনো আমার বাবা বলেছিলেন, উনি আমার
পছন্দ মেনে নেবেন। শুধু একটাই শর্ত ছিল,
ছেলেকে বেকার হতে হবে। কারণ উনি
জামাইকে নিজের প্রতিষ্ঠানে বড় কোনো
চাকরি দিতে চান।'
'হ্যাঁ আমি শুনেছি। কিন্তু আমি বেকার
অবস্থায় তোমার বাবার সামনে যেতে পারব
না।'
'এ জন্যই তো তোমাকে বেকার বানিয়ে
দিলাম। এখন আর বাবার আপত্তি থাকবে না।'
নাদিয়া জোরে হেসে উঠল।
'এটা ঠিক করলে, নাদিয়া?'
'জানো না, প্রেমে আর যুদ্ধে সব বৈধ।'
'আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি অভিযোগ
করলে আর বস সাত-পাঁচ না ভেবে আমাকে
চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিলেন। বসকে তুমি
আগে থেকে চিনতে?'
'আরে গর্দভ, তোমার বসই আমার বাবা। উনি
জানেন না তোমার সঙ্গে আমার প্রেম। আর
তুমিও তো আমার ফ্যামিলির কাউকে চেন
না। তাই বুদ্ধিটা কাজে লাগালাম। বাবাকে
বলেছি, রিয়াজ নামে তোমার অফিসের এক
কর্মী আমাকে ফেসবুকে প্রেম নিবেদন
করেছে। বাবা এসব শুনে তোমার চাকরি নট
করে দিয়েছেন। এখন তোমাকে বেকার
অবস্থায় বাবার সামনে নিয়ে যাব। বাবা
তোমাকে মেনে নিতে বাধ্য হবেন। হা হা।'
আমার মাথাটা ঘুরছে। এই মেয়েটার মাথায়
এত বুদ্ধি কেন? খুশিতে সব দাঁত বেরিয়ে
এলো। মনে হচ্ছে শেভিং ক্রিম দিয়ে ব্রাশ
করতে বা কোনো মেয়ে কনুই দিয়ে গুঁতো
দিলেও হাসিটা ধরে রাখতে পারব।
চাকরি হারানোর পর অফিসের যারা
সহানুভূতি জানিয়েছিল, তারাই আবার
শুভেচ্ছা জানাতে এগিয়ে এলো। কারণ
অফিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে যোগ
দিয়েছি। বস তার কথা রেখেছেন। বেকার
ছেলেকে নিজ প্রতিষ্ঠানে বড় পদে চাকরি
দিয়েছেন। সমস্যা একটাই, 'বস' থেকে 'বাবা'
ডাকটায় এখনও অভ্যস্ত হতে পারিনি।
'রূপান্তর'


বিয়ে করার আগে সিনথিয়া নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম।

বিয়ে করার আগে সিনথিয়া নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম।এতটাই ভালোবাসতাম যে তাকে বিয়ে করার সামর্থ্য ছাড়া অন্যসব সামর্থ্য ছিল। সে দেখতে শুনতে খারাপ ছিল না। মেডিকেলের ছাত্রী আর ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো ছিল। কিন্তু তার চেহারা একটু শ্যামলা। শ্যামলা বলা আবার ঠিক হবে না, তার গায়ের রং কালো ছিল। আমার মা-বাবা ওকে পছন্দ করেননি শুধু এই একটা কারনের জন্য। বাকি সবকিছু প্রায়ই ঠিক-ঠাক ছিল। বাবা বলতেন,
কালো মেয়েকে বিয়ে করে বউ বানিয়ে আনা পরিবারের সংস্কার-ঐতিহ্য নষ্ট করার মত। কালো প্রজাতির মানুষেরা শুধু গোলামী করার জন্য জন্ম হয়েছে, হুকুমাত করার জন্য না। 
শুধু আমার বাবা না, আমার দাদার বাবারাও সুন্দর মেয়েদের বিয়ে করে বউ ঘরে তুলতেন। আর সামনেও এই প্রথা চালু থাকবে।
মোট কথা বলতে গেলে এটা পরিবারের বংশীয় রীতি। আর এই রীতিতেই আমি আমার ভালোবাসাকে কুরবান করতে অপ্রস্তুত থাকা স্বত্ত্বেও প্রস্তুত ছিলাম।
বাবার এরকম আচরন আমার কাছে মোটেও ভালো লাগতো না। উনার সামনে যদি আফ্রিকার ব্লাক প্রেসিডেন্ট নেলসন মেন্ডেলার ইতিহাস তুলে ধরতে পারতাম তাহলে উনার ভুলটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারতেন। কিন্তু আমার ভুল ছিল আমি সেই সাহস নিয়ে জন্মাতে পারিনি।
বুকে অল্প যেটুকু সাহস ছিল সেটা নিয়ে একদিন যখন বাবাকে বলেই ফেলি আমি সিনথিয়াকে ভালোবাসি আর ওকে বিয়ে করবো। মেয়েটা দেখতে কিরকম সেটা জানার পর উনার মাথায় রক্ত চেপে বসলো। তিনি এমনভাবে আমার দিকে তাকালেন যদি উনার হাতে পিস্তল থাকতো তাহলে আমার মাথায় নিশানা করে গুলি করে মেরে ফেলতেন। পাত্তাই দিতেন না যে আমি উনার ছেলে।
সেদিন আমি ভয়ে আধমরা ছিলাম। সবকিছু জানা স্বত্ত্বেও আমি বাবাকে সেই কথা শুনিয়েছি যেটা কারোর ক্ষমতা ছিল না উনাকে শুনাবার। কিন্তু আমি তো নিরুপায় ছিলাম এই সত্যটা বলতে।
আমার এই উগ্রপন্থা কথা শুনে আমাকে বিশেষ নজরে রাখা হল। বাইরে যাওয়া থেকে শুরু করে আমার ফোন কেড়ে নেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের শাষন আমার ওপর ধাবানো হল। সিনথিয়ার সাথে কোনরকম যোগাযোগ করার উপায় ছিল না। নিজেকে মনে হচ্ছে কোন যুবতী মেয়ে যেন বাইরে যাওয়াটা তারজন্য মস্ত একটা পাপ। নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছি কেন পুরুষ মানুষ হয়ে জন্মালাম।
..
আমার ছোটমাথায় বড় কথা তো কোন জীবনেও ঢুকবে না কিন্তু এই ছোট্ট বিষয়টা আমি বুঝতে পারছি না আমি এরকম বন্ধি কেন! বয়স ছাব্বিশ ছুই-ছুই কিন্তু নিজের কোন স্বাধীনতা আজও অর্জন করতে পারলাম না। একাত্তর সালে দেশ স্বাধীন হয়েছিল ঠিক-ই কিন্তু আমি-ই মনে হয় একমাত্র ব্যক্তি যে স্বাধীন দেশে বাস করেও পরাধীন। 
..
জানালার ফাঁক দিয়ে আমার খাবার প্রদান করা হয়। আবার শেষ হলে ওইখান থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। এরকটা আমি জেলের কোন কয়েদির মুখ থেকে শুনেছিলাম। তাহলে এখন আমি কি কয়েদী! নিজের রুম-ই কি আমার জেলখানা! 
বেশকিছুক্ষন মাথা চুলকালাম। ভাবছিলাম আমি কি জন্য অপরাধী। কোন মেয়েকে ভালোবেসেছি তাই! নাকি কালো মেয়েটাকে পছন্দ করেছি সেজন্য!
..
রাতের বেলা বাবা রুমে আসলেন। বাবার এক হাতে মস্ত বড় একটা তালা আর আরেক হাতে ভাতে-মাংসে ভরা থালা। বুঝতে পারছিলাম না এ কেমন বাবার ভালোবাসা।
বাবা এসে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলেন। হয়ত এরকম অবস্থায় তিনি আমাকে দেখে কষ্ট পেলেন। আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম,
--আমি কি কোন ভুল করেছি যে এভাবে আটকা রাখা হয়েছে!
বাবা থালাটা টেবিলে রেখে হাত মুছে বললেন,
--নাহ, ভুল আমার ছিল যে তোমাকে আগলে রাখতে পারিনি। তাই আমার ভুলটা তুমি শুধরাচ্ছো।
--আমি কিছু বুঝতে পারিনি।
--বুঝার মত বয়স এখনো তোমার হয়নি। শুধু এটা জেনে রেখো তুমি আর কোনদিন ওই কালচে মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখবে না।
--কিন্তু বাবা আমি ওকে ভালোবাসি আর ওকে বিয়ে করতে চাই।
--ভালোবাসা কি! হ্যা! ওই ভালোবাসা কি! ওইসব ভালোবাসা-তালোবাসা আর যদি কোনদিন তোমার মুখ থেকে শুনেছি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। বুঝেছো!
আমি মাথাটা নিচু করে ঢোঁক গিলে হ্যা-সূচক জবাব দিলাম। বাবা একটু নরম স্বরে আবার বললেন;
--দেখো বাবাজান, বিয়ে করতে হলে কোন ভালোবাসা লাগে না, লাগে শুধু কবুল-নামা। আর এটাই মূল স্তম্ভ। ফালতু চিন্তা-ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। এতেই সবার মঙল।
আমি চোখের জলে ভাত নষ্ট করলাম। ভাতের দানা যেন আমার কাছে বিষ মনে হচ্ছিল। আর পানি তো ফুটন্ত গরম পানি যে গিললেই গলা-বুক জ্বলে যাবে তবুও তৃষ্ণা মেটাতে হবে।
..
এভাবে দীর্ঘ সাতদিন পর আমাকে জেলখানা থেকে মুক্তি দেয়া হল। সুর্যের মুখখানা দেখে অপরিচিত মনে হচ্ছে। এটা সুর্য নাকি অন্যকিছু বুঝতে পারছিলাম না। সবকিছু কেমন জানি ধোয়াশার মধ্যে আটকা ছিল। মনে করলাম আমার ওপর কোন দয়া জমেছে তাই ছাড়া পেয়েছি কিন্তু সেরকমটা না। মায়ের মুখ থেকে শুনলাম আমার ফুফাতো বোন আর তার মা দেশে ফিরেছে। তাই আমাকে যেন এরকম অবস্থায় না দেখেন তাই ছাড়া দেয়া হল। আমি মনে মনে হাসলাম। ইচ্ছে করছিল তাদেরকে স্যালুট দিয়ে একটা ধন্যবাদ জানাতে। কিন্তু ইচ্ছেটাকে নিজের মধ্যেই চেপে রাখলাম। 
..
সবাই যখন ব্যস্ত নতুন অতিথিপূজা নিয়ে তখন আমি চড়কিপাক খাচ্ছিলাম কখন ঘর থেকে বের হবো আর সিনথিয়ার সাথে দেখা করবো। কিন্তু কোনরকম ভাবে সুযোগ হাতে পাচ্ছিলাম না। এরই মধ্যে বাবার উপস্থিতি আমার জন্য বিপদ হয়ে দাড়ালো। উনি দূর থেকে আমার দিকে তাকাতে তাকাতে আসছেন যেন উনার চোখের পলকে আমি থাকি। আমি হাত দুটো পিছনে নিয়ে আরাম করে দাঁড়িয়ে বাবার আসাটাকে দেখলাম। কাছা-কাছি আসলে আমার হাত একটা ধরে আমাকে উনার রুমে নিয়ে গেলেন। উনি যথেষ্ট নম্র আর টান্ডা মাথায় বললেন;
--তোমার ফুফুমনি তোমার জন্যই দেশে এসেছেন শুধু উনার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিতে। আশা করি তুমি বিষয়টা বুঝতে পারছো।
--কিন্তু বাবা__________„„„„„
--চুপ!!!! একদম চুপ।
উনার ধমক শুনে আমার জান পানি হয়ে গেল। আমি নিতান্ত বাচ্চার মত দাঁড়িয়ে থাকলাম। বাবা উনার হ্যান্ডব্যাগ থেকে দুটো বিয়ের কার্ড বের করে আমার হাতে একটা দিয়ে পড়তে বললেন। আমি কভার থেকে কার্ড বের করে দেখলাম আমার আর সুমাইয়ার বিয়ের তত্ত্ব আর বিয়ের তারিখও দেওয়া। আমি শুধু বাবার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালাম। উনি যদি আমার চোখের ভাষা পড়তে পারতেন তাহলে বুঝতেন কি আহামরি রীতির জন্য তিনি নিজের ছেলের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজটা করছেন! 
..
বাবা হয়ত সেটা বুঝতে পারবেন না। উনি শুধু বংশের মান-সম্মান বাচাতে আমাকে কুরবানি দিচ্ছেন। উনার কাছে আমি শুধু একটা মহরা।
..
আমি কার্ড দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। এটা ভেবে নয় যে আমার বাবা আমাকে বুঝতে পারেননি, এটা ভেবে যে আমি সিনথিয়াকে ছাড়া কিভাবে অন্য কোন মেয়েকে নিয়ে সংসার সাজাবো। হাঁটু ভাজ করে মেঝেতে পা লুটালাম। বাবা এসে আমাকে ধরলেন আর চেয়ারে বসালেন। তারপর আরেকটা কার্ড আমার হাতে শপে দিলেন। ওই কার্ডটা আগের কার্ড থেকে ভিন্ন ছিল। সেটাও খুলে দেখলাম। আর যা সব লিখা ছিল সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
সিনথিয়ার বিয়ে!! 
অন্য একটা ছেলের সাথে!! আমি বাবার দিকে তাকালাম। উনি হ্যাসূচক মাথা নাড়লেন। আমার হাত থেকে কার্ড পড়ে যায়। আমি থমকে যাই। পাথরের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি যেন আমি স্ট্যাচু অব লিভার্টি।
..
আমি এতটাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে কয়েক সেকেন্ড আগে গড়-গড় করে আমার চোখ থেকে জল ঝরছিল সেগুলো বন্ধ হয়ে গেল। না, এটা নয় যে আমার চোখের পানি সব শেষ হয়ে গিয়েছে। জলগুলো বন্ধ হয়েছে কারনও চোখও সেটা মেনে নিতে পারছে না সেজন্য সেও থমকে গিয়েছে।
..
স্বাভাবিক অবস্থায় থেকে মানতেই পারছিলাম না সিনথিয়ার বিয়ে। দশ-পনেরো সেকেন্ড অন্তর অন্তর আমি চোখ বুজে রাখার পর খুলে চারপাশ দেখি শুধু এটা ভেবে যে আমি স্বপ্ন দেখছি না তো!
যতটুকু জানি আমার চেয়ে সে বেশি আমাকে ভালোবাসে। আমার ভালোবাসায় হয়ত একটু ভুল থাকতে পারে কিন্তু তার না।
নাহ! সিনথিয়ার বিয়ে এটা হতে পারে না। কোথাও কিছু একটা ভুল নিশ্চই আছে। আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
--যে মেয়ে তোমার জন্য জন্মায় নি কেন তুমি বারবার তার কথা মনে করছো! ভুলে যাও বাবাজান তাকে। আর নতুন করে জীবন সাজাও।
বাবার এরকম নি:সংকোচ আবেদন শুনে আর নিজেকে সামালতে পারিনি। বাবার কথাই মেনে ফেললাম। বাবা তো বাবাই। উনি তো সবসময়-ই আমার ভালো চান। আর আমার এই বিয়ে করা যদি বাবার হাসি ফুটার কারন হয় তাহলে হ্যা আমি করবো এ বিয়ে। নতুন কাউকে জীবনসঙ্গিনী করবো।
..
শেষ-মেষ নিজের ইচ্ছেটাকে অন্ধকারে ফেলে সুমাইয়াকে বিয়ে করলাম। সে দেখতে আমার সিনথিয়ার মত ছিল না, অনেক সুন্দরী ছিল। যদি ঘরটা অন্ধকারে ভরা থাকে তবুও তাকে সেখা যাবে। শুধু দেখা যাবে তা না, রুমটাও আলোকিত করে ফেলবে। 
..
মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাই খুশি এই বিয়েতে। একমাত্র আমি বাদে। আমি খানিকটা খুশি যে সবার মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছি। কিন্তু বাকিটা,,,,,
কেউ কি বোঝার চেষ্টা করবে আমার রক্তে-মাংসে গড়া বুকে কি যন্ত্রনা হচ্ছে! কেউ কি বুঝতে পারবে আমার চোখের জলে আমার কত স্বপ্ন গড়িয়ে মাটিতে মিশে যাচ্ছে! কেউ বুঝতে পারবে না, কেউ না।
..
ধর্মীয় কোন রীতির জন্য যদি সিনথিয়াকে ভালোবাসা আমার জন্য পাপ ছিল তাহলে হয়ত গুনাহ থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আমি ওকে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু উচ্চবংশীয় রীতির জন্য আমি সিনথিয়াকে!!!
কালো হয়ে জন্ম নেওয়াটা-ই কি ওর পাপ ছিল! ও কালো রঙের সেজন্য কি সে সারাজীবন গোলাম-ই থাকবে! মাথা উচু করে কি সে দাড়াতে পারবে না! সাদা জাতের কাউকে কি ভালোবাসতে পারবে না!
আচ্ছা, ওর চুল কালো এটা কোম সমস্যা না। ওর চোখের মনি কালো এটাও কোন সমস্যা না। আবার ওর চোখের কাজলও কালো তবুও সেটা কোন সমস্যার কাতারে পড়ে না। পড়ে শুধু ওর গায়ের রং। এই একটা কারনের জন্যই কি আস্ত মানুষের পার্সোনালিটি ভুল হয়ে যাবে!
আমি কার কাছে প্রশ্ন করছি আর কাছে উত্তর চাচ্ছি সেটার সমীকরণ সবসময় কুয়াশার আড়ালে ঢাকা থাকবে। কেউ সরিয়ে দেখতে চাইবে না এর পিছনে রহস্যটা কি।
যার জন্য এত প্রশ্ন ছুড়ছিলাম সেই যখন আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করছে তাহলে ওই উত্তরগুলো খুজা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
সিনথিয়াকে ছাড়া দেখতে দেখতে আটারো মাস পার হয়ে গেল। বিয়ের কয়েকমাস পর আমি কানাডায় চলে আসলাম। দেশে আমি যতই দিন কাটাবো ততই ওর কথা মনে পড়বে। কলেজের পাশ দিয়ে গেলে মনে পড়বে তার সাথে পুকুরে বসা প্রতিটা মুহুর্ত, বাজারে গেলে মনে পড়বে ব্রিজের পাশের দোকান থেকে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল কিনে দেওয়ার মত শত কথা, রাস্তায় হাঁটলে মনে পড়বে ওর সাথে চলা প্রতিটা পায়ের শব্দ। সব যেন আমাকে নিঃসৃত করার এক কৌশল। তাই দেশ ছেড়ে, সিনথিয়াকে ছেড়ে, পুরনো সব অতীতকে পিছনে ফেলে নতুন এক ভবিষ্যতের ছবি আঁকার জন্যে চলে এলাম কানাডায়।
সবকিছু প্রায়ই ভুলে গিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে মনে হত ওর কথাগুলো কিন্তু সেগুলো ধাবিয়ে রাখতাম এই ভেবে যে সেও তো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। নতুন কাউকে বিয়ে করেছে সংসার সাজিয়েছে হয়ত দু-এক বাচ্চাও আছে।
আবার বলতাম বাদ দাও সেসব কথা। যে যেরকম সুখে আছে সে থাকুক সেরকম, তাতে আমার কি যায় আসে। আমি আমার মতই সুখে আছি স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। ওর সুখ যদি ওর নতুন মানুষ হয় তাহলে আমার সুখ সুমাইয়া আর আমাদের আসতে যাওয়া নতুন পাখিটা।
ব্যথা যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে যাচ্ছে তখন সুমাইয়ার গর্ভে আমাদের নয় মাসের সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। আব্বু আম্মুকে ফোন করে সব জানিয়েছি। আমি আর ওর আম্মু হসপিটালের বারান্দায় বসে আছি শুধু খুশির সংবাদের অপেক্ষায়।
কিন্তু তখনই বিপদের ঘোর আসলো। ডাক্তারের সাদা কাপড়ে পড়া একটা মেয়ে মানুষ আমার দিকে আসছে। আমার চোখে অল্প জল জমা ছিল ওইগুলো মুছে মেয়েটার দিকে তাকালাম। দেখার সাথে সাথে আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। আমার পা ঠক-ঠক করে কাঁপছে আমার হার্টবিটও ক্রমশ বাড়ছে। যে মেয়েটা আমি অনেক আগেই হ্নদয় থেকে মুছে ফেলেছি সেই আজ আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
সিনথিয়া!!!
কাঁপা কাঁপা স্বরে নামটা কন্ঠ থেকে বের হল। আমার কাঁপামিশ্রিত কণ্ঠ আর আচমকা দাঁড়ানো দেখে সুমাইয়ার আম্মু চমকে গেলেন। উনি আস্তে আস্তে করে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
--কি হয়েছে! তুমি হঠাৎ দাড়িয়ে গেলে কেন!
আমি যে মুখ থেকে কোন কথা বের করবো তার সাহস পাচ্ছিলাম না। শুধু জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে লাগলাম। আমি একটানা ওর দিকে তাকিয়ে আছি আর সেও। দুজন-দুজনকে আজ কয়েকশ বছর পর দেখছি মনে হচ্ছে। আমি স্থির হয়ে দাঁড়াতে না পারলেও সে ঠিক-ই স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি কেবলমাত্র তাকে জিজ্ঞেস করতে যাবো সে এখানে কি করছে তার আগে সেই আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো;
--আপনি প্রেগন্যান্ট মহিলার কি হোন!
ওপাশ থেকে সুমাইয়ার আম্মু বললেন,
--আমি ওর মা আর ও (আমি) তার স্বামী।
সিনথিয়া একটুর জন্য হলেও থমকেছে। কারন আমি ওর চোখ দেখে বুঝতে পারছি সে এটা শুনে বিরাট ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু আমার সামনে সেটা প্রকাশ করতে দিচ্ছে না। এমনভাবে সে পরিস্থিতি সামলালো যে তার মনে যে ঝড় উঠেছিল সেটা সে নিজেও টের পায়নি।
আমি ওর চোখেরজ্যোতির ভিতর ঢুকে দেখতে পাচ্ছি তার চোখেরজল সামনের দিকে গড়াতে যাচ্ছে। আমি তখনই ওর চোখ থেকে আমার চোখ সরিয়ে নিই। আমি চাই না আমি আর ওর মায়ায় পড়ি।
সুমাইয়ার আম্মুকে সিনথিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন;
--সবকিছু ঠিক আছে তো ডাক্টার! মানে আমার মেয়ে ঠিক আছে তো!
সে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,
--ঠিক আছে কি না সেটা বলা এখন ঠিক হবে না কিন্তু অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল। বাচ্চা এক সাইডে আটকে গিয়েছে। ডেলিভারিতে একটু সমস্যা হবে সাথে রিস্কও।
ওর কথা শুনে আমি আতঁকে গেলাম। ওকে বললাম,
--যত টাকা লাগে আমি দিব আপনি শুধু আমার স্ত্রী আর বাচ্চাটাকে সুস্থ করে আমার হাতে ফিরিয়ে দিন।
সিনথিয়া আমার কথা শুনে একটু চুপ থাকলো। সে হয়ত কোন কথা খুজে পাচ্ছে না কি বলবে। তখন সুমাইয়ার আম্মু বললেন;
--আপনি ওসব নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না। শুধু আপনি আমার মেয়ে আর নাতনীকে সহি-সালামত আমার হাতে তুলে দিন।
সিনথিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
--দেখুন, টাকাটা বড় কথা না, সবকিছু টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন আর দুয়া করুন।
এটা বলে অপারেশন করার জন্যে সে আবার রুমে চলে গেল। আমি একটু ভয় পেলাম যে আমার স্ত্রী-বাচ্চা শুনে সে আবার কিছু অঘটন ঘটাবে না তো! ওকে তো আমি ভালো করেই চিনি সে মারাত্বক রাগী আর বদমেজাজি একটা মেয়ে। পুরনো কথা ভেবে, আমাকে কষ্ট দিতে সে যদি আমার স্ত্রী-বাচ্চাকে ________!!!!!
ভয়ে আমার সমস্ত হাত-পা টান্ডা হয়ে গেল। টানা দু-ঘন্টার অপারেশনের পর সিনথিয়া বের হল কোলে একটা বাচ্চাকে নিয়ে। আমি দৌড়ে গিয়ে ওর সামনে দাড়ালাম। ওর কোল থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে আমার কোলে নিলাম। সে বললো;
--কংগ্রেচুলেশন! আপনার মেয়ে হয়েছে। আর আপনার স্ত্রীও সুস্থ আছে।
কেন জানি আমি ওর কথায় ভরসা পেলাম না। তাই আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে অপারেশন রুমের সামনে গেলাম। সিনথিয়া পিছন থেকে বললো,
-আমি পেশায় ডাক্তার আর ডাক্তারের কাজ মানুষকে মারা না, মানুষকে নতুন জীবন উপহার দেওয়া।
আমি ওর কথায় একটু লজ্জিতবোধ করলাম তবুও কিছু বললাম না। সেও আর কিছু না বলে চলে গেল। আমি বাচ্চাটাকে সুমাইয়ার কাছে ওর মায়ের হাতে তুলে দিয়ে সিনথিয়াকে খুজতে বের হলাম। অবশেষে তাকে পেলাম। পিছন থেকে তাকে ডাক দিলাম। সে শুনে দাড়ালো। আমি ওকে বললাম;
--দুঃখিত! তোমাকে ভুল বুঝেছি।
--তুমি কি মনে করেছো আমি তোমার ওপর প্রতিশোধ নিবো বলে _______........
আমি ওর কথায় বাধা দিলাম।
--নাহ ওসব কিছুনা। আমি শুধু একটু ভয় পেয়েছিলাম। 
--হুম। তা এখানে কি করছো! যাও বউ-বাচ্চার পাশে যাও।
--তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছি।
--ওহ! তোমার পরিবারকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি সেজন্যে!
--হ্যা।
--এটা আমার জন্য ফরজ ছিল তাই করেছি। ধন্যবাদ জানাতে হবে না।
--ওকে। 
--বাচ্চাটা তোমার আর তোমার বউয়ের মত সুন্দর-ই হয়েছে।
এই কথাটা সে একটু তাচ্ছিল্য স্বরে বললো। আমিও একটু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শুনেছি।
-হুম জানি। 
--ভালো। আচ্ছা আমি এখন যাই। আমার কাজ আছে।
--শুনো, একটা কথা ছিল,
--বলো,
--কেমন আছো তুমি?
--কেমন রেখেছো তুমি?
--আমাকে ভুলো নি?
--তুমি কি ভুলেছো?
--হুম, অনেকটা।
--ভুলবেই তো, আমি তো আর এত আহামরি সুন্দরী নাহ।
--আমি কি কখনো সাদা-কালো নিয়ে বড়াই করেছি?
--তাহলে মাঝপথে আমার হাত ছেড়ে দিলে কেন?
--আমি ছাড়িনি, তুমি ছেড়েছো। 
--আমি ছেড়েছি মানে!
--তুমি-ই তো আমার আগে বিয়ের পিড়িতে বসেছো আর আমাকে দাওয়াত দিয়েছো।
--কি বলছো কি তুমি! আমি কখন তোমার আগে বিয়ের পিড়িতে বসলাম!
--আচ্ছা! তোমার মনে নেই! ওই কার্ড যে তুমি দিলে! তোমার বিয়ের কার্ড! 
--দাঁড়াও দাড়াও! আমার কথাটা শুনো, 
--কি শুনবো! ভুল তোমার আর দোষ আমার! 
--শান, আমি কোন বিয়ে করিইনি।
এ কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার মাথায় বজ্রপাত ভেঙে পড়লো। আমি নিঃস্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সে বললো;
--তুমি আমার বিয়ের কোন কার্ড পাও নি বরং আমি তোমার কার্ড পেয়েছি। তোমার বাবা নিয়ে এসেছেন। 
--তোমার বিয়ের কার্ডও তো আমার বাবা নিয়ে এসেছিলেন।
--বিশ্বাস করো শান, আমি বিয়ে করিনি। তুমি-ই আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা।
--তাহলে বাবা আমাকে মিথ্যে কথা বললেন কেন!
--উনার পুত্রবধু হিসেবে আমি ঠিক ছিলাম না। কিন্তু তোমার বউ হিসেবে আমি ঠিক ছিলাম। আর সেটা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই,,,,
আমি কল্পনাও করতে পারছিনা বাবা এরকম আমার সাথে কিভাবে করলেন! এরকম ধোকা তো কেউ তার শত্রুর সাথেও করবে না আর আমি তো উনার নিজের ছেলেও হয়েও____…………। আমি ওকে বললাম,,
--সিনথি শুনো,,,
--আর বলতে হবে না। আমি সব বুঝতে পেরেছি।
--বিশ্বাস করো আমি এসবের কিছুই জানিনা।
--বাদ দাও, যা হবার হয়ে গিয়েছে।
--কিন্তু,,
--কোন কিন্তু না। তুমি ভুলে যেওনা তুমি কারোর স্বামী, তুমি কারোর বাবা। অতীতটাকে নিয়ে আর ভেবো না। 
--আর তুমি!
--আমার তো এই ক্লিনিক ওই ক্লিনিকে দৌড়া-দৌড়ি করতে কর‍তেই চলে যাবে। এখন আর নিজের জীবন নিয়ে না, অন্যের জীবন নিয়েই ভাবি।
--তুমি এরকম বাকি জীবন চালিয়ে যেতে পারবে!
--হ্যা পারবো। তুমি যদি খুশি হয়ে থাকতে পারো তাহলে আমি কেন পারবোনা!
--আমি তোমার সবকিছু নষ্ট করে দিলাম, সবকিছু।
--তুমি না, বা তোমার বাবাও না, পরিস্থিতি আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে।
--আমি জানিনা এর পরে আমি কি বলবো বা কিছু বলার আছে কি না। শুধু বলবো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর আজীবন রাতের তারা ভেবে ভালোবেসে যাবো।
--হুম। ভালো হবে যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও।
--নাহ, ভুলবো না। আজ তুমি আমার স্ত্রীকে বাচিয়েছো, আমার মেয়েকে বাচিয়েছো। এটার মুল্য আমি তোমাকে দিতে না পারলেও,,,,,,,,,,,
--না পারলেও?
--আমার মেয়ের নাম তোমার নামানুসারে রাখবো। হ্যা, সিনথিয়া-ই রাখবো আমার মেয়ের নাম।
--কিইই! না ওসব করো না।
--এটাই আমি করবো। আর আমি মনে করি বাবার ভুল এভাবেই উনি বুঝতে পারবেন।
--উনি তোমার বাবা, উনাকে কষ্ট দিও না।
--নাহ, আমি উনাকে কিছু বলবো না। উনি সবকিছু আপনা-আপনি-ই বুঝবেন।
কথা বলার ফাঁকে হঠাৎ সুমাইয়ার আম্মু পিছন থেকে ডাক দিলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে পিছনে তাকালাম। উনি সিনথিয়াকে দেখতে পেলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। উনি সবকিছু বুঝে ফেললেন না তো! আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
--তুমি এখানে কি কর? সুমাইয়া তোমাকে খুজছে।
--আমি আসলে ডাক্টারকে ধন্যবাদ জানাতে আসছিলাম। 
--ওহ!
তিনি সিনথিয়ার হাত ধরে বললেন,
--তুমি খুব লক্ষি একটা মেয়ে। তোমার জন্যই আজ আমার মেয়ে-নাতনী বেচে আছে। কিভাবে তোমার শুকরিয়া আদায় করবো বুঝতে পারছিনা।
--না না এসব কিছু করতে হবে না। এটা তো আমার কাজ। আমার কিছু লাগবে না আপনি শুধু আমার জন্য দুয়া করেন।
--তা তো করবোই।
--ধন্যবাদ। আমি এখন যাই, আমার আরেকটা অপারেশন আছে।
--হ্যা হ্যা নিশ্চই।
অতঃপর সিনথিয়া চলে যাচ্ছে। আমি দেখছি। আমি জানি সে পিছন মোড়ে তাকাবে না। কিন্তু আমি এও জানি যে সে জানে আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি। তবুও সে তাকাবে না। সে হয়ত চায়না আমি আর ওর চোখটাকে দেখি, ওর চুলটাকে দেখি বা ওর হাসিটাকে দেখি। তবুও আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি।
দেখতে দেখতে হঠাৎ সে হারিয়ে গেল। নেই কোন কুয়াশা নেই কোন জাল তবুও সে হারিয়ে গিয়েছে। আমি ইচ্ছে করলে ওর ঘ্রান শুঁকতে শুঁকতে তাকে ফিরে পেতে পারি কিন্তু পারবোনা। আমি এখন শুধু শান না, একজন স্বামীও, একজন বাবাও। আর এইসব পরিচয় নিয়ে পিছনে ফিরে তাকানোটা শোভা পাবে না, একদম না। এরচেয়ে বরং কঠিন বাস্তব আর সত্যটাকে মেনে নিয়ে ভবিষ্যত আলোকিত করা সহজতর হবে। এভাবেই না হয় কেটে যাবে দিন নামের দিন আর রাত নামের রাত।
...
...
...
_______গল্প:- সাদা-কালোতে নেই আর আমি তুমি__________