ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Monday, September 4, 2017

ছেলের কান্না দেখে মাও তার চোখের পানি আড়াল করতে পারলেন না।

#মনে_পড়ে 

রাত অনেক হয়েছে..
শুভ্রর রুমের বাতি জ্বলছে।
ব্যাপার কি!! এত রাতে শুভ্রর
রুমে বাতি জ্বালানো কেনো!
মনে মনে ভাবছেন শুভ্রর মা।
নিজের রুমের বাতি জ্বালিয়ে দেখলেন
রাত
সোয়া দুইয়া প্রায়।
--কিরে, এত রাতে বসে বসে কি করছিস?
--কিছু না তো!
চমকে ওঠে জবাব দিলো শুভ্র।
--কিছু না হলে এত
রাতে বাতি জ্বালিয়ে বসে আছিস যে?
--আরে বললাম তো কিছু না। যাও তো এখান
থেকে।
অনেকটা রেগে চিৎকার করে উঠলো।
--কি ব্যাপার, এমন ভাবে কেউ মায়ের
সাথে কথা বলে? কি হয়েছে বল আমাকে।
শুনি আমার বাপটার কি হয়েছে..
--না মা কিছু হয়নি। এমনি বসে আছি। ঘুম
আসছিলো না। তাই।
--তাহলে কাঁদছিস কেনো?
--কই কাঁদলাম?! তুমি আসলেই বেশি বোঝো।
যাও
ঘুমাও গিয়ে।
--আমিতো বেশি বুঝিই। এটা আর নতুন কি.. এখন
বল
কি হয়েছে তোর?
--বললাম তো মা কিচ্ছু হয়নি।
--বন্যা কিছু বলেছে?
--আরে নাহ!
--মিথ্যে বলবি না। ওকে তুই আবার ফোন
দিয়েছিলি বুঝি?
--না গো মা।
--কিছু একটা তো হয়েছে। আমি মা,
আমিতো আর
ভুলভাল বুঝতে পারি না। বল শোনা আমার,
কি হয়েছে?
শুভ্রর
পাশে এসে বসে মা কথাগুলো জিজ্ঞাস
করছেন।
--মা, আমার ভাল লাগে না।
কথাটুকু বলেই মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ
করে কেঁদে ফেললো।
--বুঝতে পেরেছি, ওকে স্বপ্নে দেখেছিস,
তাই
তো?
--হুঁ। মাথা নাড়ালো শুভ্র।
--ওর সাথে কথা হয়েছে আজ?
--না।
--কেনো? আবার রাগ করেছে? নাকি তুই কিছু
উল্টাপাল্টা বল্রছিস?
--না।
--কাঁদে বাবা। তুই না ছেলেমানুষ..
ছেলেদের
এভাবে কাঁদতে নেই বাবা। প্লিজ কাঁদিস
না বাবা।
মা হাত দিয়ে শুভ্রর চোখের
পানি মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন।
--আচ্ছা ওকে ফোন দেই আমি?
আমি কথা বলিয়ে দেই?
শুভ্র জবাবে হ্যাঁ/না কিছুই বললো না।
--অপেক্ষা কর। আমার মোবাইল
ফোনটা আনছি।
শুভ্র চুপচাপ মাথা নিচু করে বসেই রইলো।
--দে, ওর নাম্বারটা বের করে দে।
ফোনবুক থেকে শুভ্র বন্যার নাম্বার বের
করে মায়ের হাতে ধরিয়ে দিলো।
ফোনে রিং হচ্ছে। টুঁট টুঁট...
ওপাশ থেকে ঘুমে জড়ানো গলায় আওয়াজ
আসলো। হ্যালো...
--বন্যা, আমি তোমার আন্টি।
বন্যা আর শুভ্রর মায়ের সাথে কথোপকথন
চলছে...
--তোমাকে এত রাতে বিরক্ত করার জন্য
আমি খুবই
দুঃখিত মামনি।
--ছিঃ ছিঃ আন্টি, কি বলছেন এসব। আমার
কোনো সমস্যা নেই। আপনি বলুন। কি হয়েছে?
--কি আর হবে! আমার ঘরে যে একটা পাগল
আছে না, সেই পাগল আবার পাগলামি শুরু
করেছে।
--কি হয়েছে শুভ্রর!!??
বন্যা অনেকটা আতংকিত স্বরেই বললো।
--কি আর করবে.. আমি ঘুম
থেকে উঠে দেখি বসে বসে কাঁদছে।
--কেনো! আংকেল
কি ওকে বকাঝকা করেছেন?
--আরে না। তোমার আংকেলের
সাথে তো তার কথাই হয় না। সে থাকে তার
মত
করেই।
কারো সাথে কি সে সেধেসেধে কথা বলে!!
কি একটা ছেলে যে জন্ম দিলাম, কিছু
হলে কাউকে কিছু বললবে না।
একা একা বসে শুধু
ভাববে আর কাঁন্নাকাটি করবে।
--আন্টি, আপনি মন খারাপ করবেন না প্লিজ।
দিন,
ওকে দিন। আমি ওর সাথে কথা বলছি।
আমি বুঝিয়ে বললে অবশ্যই কাজ হবে।
--আচ্ছা দিচ্ছি। দেখো কি বলে...
শুভ্র আর বন্যার কথোপকথন....
--কিরে শুভ্র কি হইসে তোর?
--কিছু না।
--আমাকেও বলবি না?
--কিছু হয়নি তো। কিছু হলেই না বলবো। আজিব
তো!
--ঢং করিস না।
--আমি কি মেয়ে মানুষ যে ঢং করবো?
--ইসস আসছে আমার পুরুষ মানুষ!!
তাহলে কাঁদছিলি কেনো?
--আমি কাঁদছিলাম তোকে কে বললো?
--ফাজলামি ছাড়। বল কেনো কাঁদছিলি?
--কাঁদিনি। চোখের এলার্জি বেড়েছে।
তাই
চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো।
--হুম। খুব পন্ডিত হয়েছিস, তাই না?!!? আজকাল
মিথ্যেও বলা শিখে গেছিস!
--আর কিছু বলবি? আমার ঘুম পাচ্ছে। ফোন
রাখবো।
বললো শুভ্র।
--হুম ঘুমা। নো মোর পাগলামি। ওকে!
--হুম।
--সকালে আমি আসছি।
--কোথায়?
--তোর বাসায়।
--সত্যি!!??
--হুম। সত্যি।
মাকে দেখে চাপা উত্তেজনাকে চাপাই
রাখলো শুভ্র।
--আচ্ছা রাখি এখন। বাই। গুড নাইট।
--হুম, গুড নাইট।
শুভ্রর মাঃ খুশি? এখন ঘুমান বাপজান।
শুভ মুচকি হেসে বললো, আচ্ছা ঘুমোচ্ছি। যাও
তুমি।
--সকালে ও আসবে?
--হুম।
--আচ্ছা, ঘুমা।
--যাওয়ার আগে লাইট অফ করে যেও।
--আচ্ছা করছি।
রাত ৪ টা.....
একবার বিছানার এপাশ থেকে ওপাশ। এই
চলছে গত দেড় দুই ঘন্টা যাবৎ।
এটা অবশ্য নতুন কিছু না। বন্যার সাথে যেদিন
দেখা হবে তার আগের রাত থেকে ঘুম বাদ।
এটা শুভ্রর সয়ে গেছে। তাই তেমন সমস্যাও
হচ্ছে না।
বেশি টেনশনেও মানুষ সুখের
নিদ্রা দিতে পারে না, আবার খুব খুশির সময়ও
না।
মানুষ বড়ই আজিব কিসিমের প্রানী।
মাঝে মাঝেঅদ্ভুত লাগে ভাবতে।
সকাল ৮:১০ মিনিট। ঘুম ভেঙেই মোবাইল
ফোনে টাইম দেখে নিলো শুভ্র।
আরে বন্যাকে তো ফোন দিলামই না।
রওনা দিলো কিনা আল্লাহ্ই জানেন।
--হ্যাঁ, কই তুই?
--এইতো আধা ঘন্টা পরই রওনা দেবো। তুই
ওঠে নাস্তা করে নে। শার্ট প্যান্ট
পড়ে রেডি থাকিস। বাইরে বের হবো।
--কোথায় যাবি?
--আগে আসি, তারপর বলি?
--আচ্ছা ঠিক আছে।
--ভাল কথা, আজকে কালো শাড়িটা পড়বি।
--তুই বললেই কি আমি পড়বো?
--হুঁ। পড়তে হবে। তার
সাথে কপালে কালো টিপও দিতে হবে।
বুঝেছিস।
--আচ্ছা ফোন রাখ শয়তান। আমি আসছি। জ্যাম
না থাকলে ঘন্টা খানিক সময় লাগবে।
--আচ্ছা। সাবধানে আসিস।
শাহবাগে বাস জ্যামে আটকে আছে।
বন্যা আর
শুভ্র পাশাপাশি বসে আছে। ইয়ারফোনের
একটা স্পিকার বন্যার ডান কানে, আর
দ্বিতীয়
স্পিকারটা শুভ্রর বাম কানে। দুজন খুব মনোযোগ
সহকারে গান শুনছে। শিরোনামহীন ব্যান্ডের
হাসিমুখ।
"তুমি যে আছো তাই আমি পথে হেঁটে যাই,
হেঁটে হেঁটে বহুদুর, বহুদুর যেতে চাই।"
গানটা দুজনেরই অসম্ভব প্রিয়। --এই শুভ্র, একটু
নীলক্ষেত যেতে হবে। যাবি?
--আচ্ছা ঠিক আছে চল।
তবে কেনো তা জিজ্ঞাস করলো না শুভ্র।
--ওখানে কাজ সেরে লাঞ্চ করে তারপর
মুভি দেখতে যাবো।
--ওকে। বলে মাথা নাড়ালো শুভ্র।
বন্যা বইয়ের দোকান থেকে IELTS এর কিছু বই
কিনলো। শুভ্র
পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে বন্যার
কান্ড।
কিভাবে মেয়েটা বই দোকানির সাথে বই
দামাদামি করছে।
বই কেনা শেষ।
--চল।
--এবার কোথায়?
প্রশ্ন করলো শুভ্র।
--ক্ষুদা লেগেছেরে। খেতে হবে কিছু। চল,
আজকে ভারি কিছু
না খেয়ে হালকাপাতলা কিছু
খাই..
--হালকাপাতলা খাবার!!
হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
--কিরে হাসছিস কেন?
--তোর কথা শুনে। হালকাপাতলা খাবার। খুব
মজা লাগলো শুনে।
--শয়তান.... শুভ্রর গাল টেনে এই
হাসিটা মাঝে মাঝে কই থাকে!!??
শুভ্র জবাব দিলো না।
--চল, ফুটওভার ব্রীজে উঠা যাক।
--উফ!! আবার এই প্যারা!! বন্যা খুব বিরক্ত হয়েই
বললো।
--কিসের প্যারা? বাসের চাকার
নিচে পড়ে আমার মরার ইচ্ছে নেই। আয় বলছি।
নিউমার্কেটের এখানে ভাল কিছু ফাষ্ট
ফুডের
দোকান আছে। ভাল বলতে তেমন ভাল না।
চলে আর কি। মোটামুটি সস্তাই।
একটা ফাষ্টফুড কর্নারে মুখোমুখি বসা দুজন।
--কি খাবি?
--পিৎজা।
--চিকেন নাকি বিফ?
--বিফ।
--আচ্ছা অর্ডার দে।
--পারবো না। তুই দে।
--তুই দিতে সমস্যা কি! আজিব ছেলে তো তুই!!
--আচ্ছা আচ্ছা দিচ্ছি।
--এই যে ভাইয়া, একটা পিৎজা। চিকেন
না কিন্তু।
বিফ বিফ।
বন্যা হাসছে।
--কিরে হাসছিস কেনো?
--না, এমনি হাসছি।
হাসি থামাতে পারছে না।
উল্টো হাসির পরিমাণ বেড়ে গেলো।
--কি রে!! কি হয়েছে!!
--তোর অর্ডার দেয়ার স্টাইল
দেখে হাসি পাচ্ছে।
--কেনো? এতে হাসির কি হলো?
--না কিছু হয়নি। এমনি। বাদ দে তো.. বলেই
এবার
খিলখিল করে হেসে উঠলো।
--হাস তুই। আমি গেলাম। বলেই শুভ্র চেয়ার
ছেড়ে উঠে দাড়ালো।
--কই যাচ্ছিস!!
শুভ্রর হাত ধরে বললো বন্যা।
আচ্ছা বাবা সরি। আর হাসবো না।
--একটা পিৎজা দুজন মিলে শেষ
করতে পারলাম
না এখনো! বললো বন্যা।
কথাটা শেষ হতে না হতেই দুই পিস
পিৎজা একসাথে হাতে নিয়ে মুখে পুড়ে দিলো।
খাবার মুখে নিয়ে চাবাচ্ছে আর বলছে,
এইবার
শেষ হলো তো?
--হুম শেষ। এইবার বন্যার হাসির লিমিট ক্রস
করলো।
পেটে খিল ধরে যাবার মত হাসি। এই
হাসিকে আমি বলি খিল হাসি।
--আমি খাবারের বিল দিচ্ছি। তুই
আমাকে মুভি দেখাবি।
--জ্বি ম্যাডাম। আপনার আর্জি বলে কথা।
মানতেই হবে।
--বাহ বাহ!! খুব ভাব দেখচ্ছিস দেখছি!
পকেটে আজ অনেক পয়সা মনে হচ্ছে?
--চল। এখান থেকে বের হই।
বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স এর
সামনে দুজন। দুটো প্রিমিয়াম ক্লাসের
টিকিট
শুভ্রর হাতে। টোয়াইলাইটঃ ব্রেকিং ডন (১)
এর
টিকিট। শো শুরু ১:৪০ মিনিটে। আরো ১৫
মিনিট
বাকি আছে শুরু হতে। তাই
উপরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিচের দৃশ্য
অবলোকন
করছে। সাথে বন্যাও যোগ দিয়েছে।
--কি দেখিস?
--মানুষ।
--নতুন দেখছিস?
--না।
--তো! মানুষ দেখার কি আছে?
--জানি না।
--পাগল একটা। চল টাইম আর বেশি নেই।
ভেতরে গিয়ে বসি।
--চল।
নিজেদের
আসনে পাশাপাশি বসে আছে দুজন।
মুভি প্রায় আধা ঘন্টা হলো চলছে।
শুভ্রকে দেখে মনে হচ্ছে না তার মন
মুভিতে আছে।
--কিরে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
না সূচক মাথা নাড়ালো শুভ্র।
--ভাল লাগছে না বুঝি?
শুভ্র আবারো না সূচক মাথা নাড়ালো।
কপালে হাত রেখে দেখলো শুভ্রর কপাল একটু
বেশিই গরম। হাত ছুঁয়ে দেখলো, হাত বেশ
ঠান্ডা।
--কিরে, জ্বর আসছে নাকি? খুব খারাপ
লাগছে বুঝি? চল বাসায় চল।
মুভি দেখতে হবে না।
--আরে না! কিছু হয়নি। এসির
বাতাসে বেশিক্ষণ
থাকলে আমার এমনই হয়। ওই যে কথায় আছে না,
কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না। সেরকম।
--থাপ্পর খাবি শয়তান। মুখে যা আসে তাই
বলতে হয় নাকি! তুই বড় হয়েছিস না এখন!
জ্বরে কপাল পুড়ে যাচ্ছে, আর
সে এখানে ঢং করছে।
বিকেল চারটা....
বসুন্ধরা সিটির বাইরে দুজন।
গন্তব্য বাসে উঠা। একটা ছোট
মেয়ে ছুটে এসে বললো, ভাইজান নেন
না ফুলগুলা। মাত্র দশ ট্যাকা। শুভ্র অবাক হলো।
এতগুলো গোলাপ দশ টাকা মাত্র! মানিব্যাগ
থেকে দশ টাকা বের করে মেয়েটির
হাতে দিতেই মেয়েটি দৌড়। ফুলগুলো বন্যার
হাতে দিলো শুভ্র।
বন্যাকে এত খুশি হতে খুব কমই দেখা যায়। ও
মাই
গড!! গোলাপ!! আমার খুব প্রিয়। অনেক থ্যাংক্স
তোকে। বলেই বন্যা শুভ্রর চিবুক
আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে বললো, আমার কিউট
বাবুটা।
বাবু বলাতে শুভ্র মনে হয় বেশ লজ্জাই
পেয়েছে। অন্তত তার হাসি দেখে তাই
বোঝা যাচ্ছে।
বাসে দুজন। বন্যা বসে আছে। পাশেই শুভ্র
দাঁড়িয়ে আছে। বসার জায়গা নেই।
দাড়িয়েই
যেতে হবে। কি আর করার। এ আর নতুন কি...
--আমাকে কিন্তু গুলিস্তান
থেকে বাসে উঠিয়ে তারপর বাসায়
যাবি তুই।
বললো বন্যা।
--আচ্ছা ঠিক আছে। এটা আবার বলার
কি হলো।
সবসময় তো তাই করি।
--না, এমনিই বললাম। ভাবলাম আবার
ভুলে গেছিস
নাকি।
গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের
সামনে বিআরটিসি এর কাউন্টারের
সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে শুভ্র। বন্যা পাশেই
দাঁড়ানো।
--যাবি তুই আর লাইনে দাঁড়ানো আমি।
বলছে শুভ্র।
বন্যা কিছু বলছে না। হাসছে। শুধুই হাসছে।
--একটু দাঁড়া। আমি আসছি।
--কই যাবি!!
--এইতো, যাবো আর আসবো।
--সিগারেট খাবি, এই তো!!
--আরে না। মুচকি হেসে জবাব দিলো শুভ্র।
--জদলি আসবি। বাস চলে আসবে।
--আচ্ছা।
এই তোর যাওয়া আর আসা তাই না!!
বললো বন্যা।
--দুইতিন মিনিটে একটা সিগারেট শেষ
করা কি সহজ ব্যাপার?
--চুপ কর শয়তান।
শুভ্র চুপ করে রইলো।
--আমি আর তোর
সাথে বন্যাঃ ঘুরাফেরা করবো না।
শুভ্রঃ করিস না।
ওই যে বাস চলে এসেছে। যা ভাগ।
--আমার বিয়ের কথা চলছে। আমি চাইলেও আর
আগের মত আসতে পারবো না। বাসে ওঠার
আগ
মুহূর্তে বন্যার শেষ কথা এটাই ছিল।
শুভ্র কিছু বললো না।
তাকে দেখে মনে হলো না যে সে কথাগুলো শুনেছে।
এভাবেই যাচ্ছে শুভ্র আর বন্যার দিনগুলো।
মাস খানিক পরের ঘটনা...
শুভ্রর মোবাইল বেজে যাচ্ছে।
--হ্যালো। বল।
--তুই বিকেলে নারায়নগঞ্জ আসতে পারবি?
ওপাশ থেকে বন্যা বললো।
--অবশ্যই পারবো। বান্দা এনিটাইম আজাইরা।
কখন
আসতে হবে?
--বিকেল ৫ টার মধ্যে।
--ওকে। আইএম কামিং মাই ডিয়ার।
বিকেল পাঁচটা.... নারায়নগঞ্জ শহীদ মিনার।
বন্যাকে আজ বিষন্ন মনে হচ্ছে।
--মন খারাপ?
বন্যার কোনো জবাব নেই।
--কি হলো? কথা বল। উফ কি গরম রে বাপ!!
আইসক্রিম খাবি? নিয়ে আসি?
বন্যার জবাব নেই।
শুভ্র আইসক্রিম নিয়ে হাজির।
--এই নে। খা। কিরে ধর!! কতক্ষণ ধরে থাকবো?
না খেলে বল, আমিই দুইটা সাবাড়
করে দিচ্ছি।
হাঃ হাঃ হাঃ
--তুই আমার বাসায় আর আসিস না। আমার
সাথে দেখা করার চেষ্টা করিস না।
ফোনে কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করিস না।
গম্ভীর ভাব নিয়ে কথা গুলো বললো বন্যা।
শুভ্র তেমন পাত্তা দিলো না। এই আর নতুন কিছু
না। বন্যা মাঝে মাঝেই এমন করে। আবার
ঠিক
হয়ে যায়।
--এই নে গল্পের বই। তোর জন্য এনেছি।
পড়া শেষে দিয়ে দিবি। বললো শুভ্র।
--না। নিবো না। আমি চাই না তুই বইয়ের
বাহানা ধরে আমার
সাথে কোনো প্রকারের
দেখা করার চেষ্টা করিস। আমি যাচ্ছি।
একটা রিকশা করে দে তো।
শুভ্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই বন্যা রিকশায়
ওঠে, হুড
উঠিয়ে চলে গেলো।
শুভ্র কিছুই বুঝতে পারলো না। বুঝবে কি করে!!
বেচারা বন্যার কথাগুলোই যে এখনো হজম
করতে পারলো না।
বাসে বসে বসে ভাবছে এমন আচরণ করার
কারন
কি? আমি কি কোনো ভুল করেছি? কেনো এমন
করলো? বাসায় গিয়ে ফোন দেবো। সব ঠিক
হয়ে যাবে।
ভাবতে ভাবতেই যাত্রাবাড়ী চলে এলো।
রাত
৮ টা বাজে। জলদি বাসায় যেতে হবে।
.
.
.
দুইদিন পর...
শুভ্রর বাবাঃ ওই মেয়ের সাথে তোর
ঘোরাফেরা বন্ধ। যদি না পারিস, সোজা ঘর
থেকে বের হয়ে যাবি। আমার সোজা কথা।
বলেই হনহন করে শুভ্রর রুম ত্যাগ করলেন।
শুভ্র কিছুই বুঝছে না। কি হচ্ছে এসব!! ২ দিন
ধরে বন্যাও ফোন ধরছে না। কি হচ্ছে এসব!
রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো শুভ্রর। অবশ্য
ইদানীং ঘুম তেমন হচ্ছে না।
ওঠে আগে ডাইনিং রুমে গিয়ে ফ্রীজ
থেকে এক বোতল শীতল পানি বের করে ডগডগ
করে খেয়ে নিলো।
নিজের রুমে এসেই ওয়ার ড্রব খুলে বন্যার
একটা ছবি বের করে চোখের
সামনে মেলে ধরে।
শুভ্রর চোখ বেয়ে টপটপিয়ে পানি পড়ছে।
আজ প্রায় ৬ মাস হলো বন্যার সাথে শুভ্রর
কোনো ধরনের দেখাসাক্ষাৎ
কিংবা কথাবার্তা হয় না। শুভ্র অবশ্য
চেষ্টা করেছে। গতকালও ফোন দিয়েছিল।
ওপাশ
থেকে কেউ সাড়া দেয়নি।
কিছুদিন পর.....
শুভ্র হাঁটছে। এখন কোথায় তা তার
জানা নেই।
সকাল থেকে থেমে থেমে হেঁটেই চলছে।
এখন
সন্ধ্যা প্রায়। পকেট থেকে বন্যার সেই
ছবিটা বের করে দেখলো। একটু পরপরই সে এই
কাজটি করছে।
সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে।
দোকানিকে বললো, ভাই একটা বেনসন &
হেজেস দেন। দোকানি বললো, বেনচন?
শুভ্রঃ হুম।
সিগারেট হাতে নিয়ে পকেটে হাত
দিয়ে দেখলো পকেট শূন্য।
মনে পড়েছে। আরে আমিতো কোনো টাকাই
আনিনি। মনে মনে হাসলো সে।
মামা সিগারেট
খাবো না। ফেরত নেন। পানি হবে?
দোকানিঃ হ হইবো। ওই যে ড্রাম
থ্যাইকা তুইলা গেলাসে ঢাইলা খান।
শুভ্রঃ টাকা লাগে নাকি?
দোকানিঃ না ভাই।
শুভ্রঃ তাহলে দুই গ্লাস খাই?
দোকানিঃ খান। আইচ্ছা ভাইজান, আপনে কই
যাইবেন?
শুভ্রঃ জানি না.....
দোকানিঃ কই থ্যাইকা আইসেন?
শুভ্রঃ কোথাও থেকে আসিনি। কোথাও
যাবো না।
প্রায় দেড় মাস পর...
শুভ্রর বাবার ফোন বাজছে। হ্যালো।
ভাইজান, শুভ্রকে পাওয়া গেছে। কুমিল্লার
লাকসাম রেলস্টেশনে পাওয়া গেছে। ও এখন
হসপিটালে। ডাক্তার বলছে উন্নত চিকিৎসার
জন্য
ঢাকায় নিয়ে আসতে। আমি আসছি।
সাথে আমার
এক বন্ধুও আছে। আপনি চিন্তা করবেন না।
আমরা এম্বুলেন্স নিয়ে এখনই ঢাকার
উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।
এতক্ষণ কথাগুলো শুভ্রর ছোট চাচার ছিল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
বেডে শুভ্র শুয়ে আছে। দাড়িগোঁফ অনেক বড়
হয়ে গেছে। শরীরে হাড় ছাড়া আর কিছুই
দেখা যাচ্ছে না। শুভ্রকে চেনার
কোনো উপায়
নেই। একি হাল শুভ্রর!
দুর থেকে শুভ্রর মা ছেলেকে দেখে কাঁদছেন।
মাকে সান্তনা দিচ্ছে শুভ্রর ছোটবোন।
রোগীর সুস্থ হতে সময় লাগতে পারে।
আপনারা চাইলে বাসায়
নিয়ে যেতে পারেন।
বাসাই তার জন্য একমাত্র নিরাপদ আর ভাল
জায়গা।
একমাস হয়ে গেলো ছেলের
কোনো উন্নতি দেখছেন না তার বাবা মা।
কথা নেই বার্তা নেই। খালি ফ্যালফ্যাল
করে চেয়ে থাকে। চোখের পলকও ফেলে না।
এই কোন রোগ!! এভাবে কতদিন যাবে?
বসে বসে ভাবছেন শুভ্রর মা।
শুভ্ররে, ও শুভ্রর। কথা বল বাবা।
ছেলের মাথার পাশে বসে মা এভাবেই
বলছিলেন। শুভ্রর কোনো সাড়া নেই।
ফ্যালফ্যাল
চাহনি ছাড়া।
আরো বেশকিছুদিন পর...
শুভ্রর পাশে বন্যা। বসে আছে। কিছু বলছে না।
শুভ্রর সেই ফ্যালফ্যালানি চাহনি।
বন্যা কাঁদছে।
চোখের পানি তার গাল টপকিয়ে শুভ্রর
শরীরে পরার আগেই
ওড়না দিয়ে মুছে নিলো।
একি!! শুভ্রর চোখের কোনেও জল। চোখ
থেকে জল গড়িয়ে কান বেয়ে পড়ছে।
বন্যা দেখে সহ্য করতে পারলো না।
হয়তো তাই
না দেখার ভান করে ওঠে চলে গেলো।
সেদিনই ছিল শুভ্র আর বন্যার শেষ দেখা।
আজ বহুবছর পর.....
কারো জন্য কারো জীবন থেমে নেই। সবাই
নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। প্রকৃতির নিয়নেই
সবার
জীবন চলছে নিজ গতিতে।
শুভ্রর বাবা মার বয়স বেড়েছে। বৃদ্ধই বলা চলে।
ছোটবোনটা স্বামীর সংসার করছে। একটা ৮
বছরের মেয়ে আছে। নাম সোহানা। ক্লাশ
থ্রি তে পড়ছে।
বন্যা আর তার স্বামী দুজনই
একটা বেসরকারি ব্যাংকে জব করছে।
তাদেরও
দুটো সন্তান আছে। বড়টি ছেলে। আর
ছোটোটি মেয়ে। ছেলের নাম রুদ্র। মেয়ের
নাম তন্দ্রা। ছেলে ক্লাশ থ্রি তে পড়ছে। আর
মেয়েটার বয়স ৩ বছর।
আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই
বন্যা বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ
তার
কোনো কাজ নেই। আজ সে মুক্ত। কাজ
থাকলেও
আজকে সব বাদ। কারন আজ আজ ৪ঠা অগ্রহায়ণ।
শুভ্রর
মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনটায় বন্যা শুভ্রর পছন্দের
কালো শাড়ি আর কালো টিপ
পড়ে নারায়নগঞ্জ
শহীদ মিনারে একা একা কিছুক্ষণ
বসে থাকে।