ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Tuesday, September 26, 2017

একজন খারাপ বাবার চিঠি.........


বাবু,
তুই হয়তো জানিস না অফিসের হাজার কাজের ফাঁকে একটুখানি অবসর পেলেই আমি তোকে চিঠি লিখতে বসি। কিন্তু কেনো যেনো একটি চিঠিও তোকে দেওয়া হয় না। সব জমা পড়ে থাকে আমার ডায়েরিতে। আমি চাই না তুই আমার ভেতরের আবেগ, অনুভূতিগুলো দেখ। তুই সবসময় আমাকে খুব নিষ্ঠুর ভাবিস, তা আমি জানি। মনে মনে অনেক গালি দিস তোর বাবাকে। কিন্তু তুই হয়তো এটা জানিস না যে তোর এই বাবাটা তোর শত গালি সত্ত্বেও তোকে ঠিক ততটাই ভালোবাসে ঠিক যতটা ভালোবেসেছিলো তোর জন্মের সময়।


তুই জানিস, তোকে যখন আমি প্রথম কোলে নিয়েছিলাম তখন তোর চেয়ে বেশি আমিই কেঁদেছিলাম। ডক্টররা আমাকে দেখে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, বেলাল সাহেব আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে আপনারই জন্ম হল। আর কত কাঁদবেন? বেবিটাকেও একটু কাঁদতে দিন। তবুও আমি কেঁদে চলেছি ছোট্ট বাচ্চার মত আর কিছুক্ষণ পরপরই তোর ছোট্ট কপালে চুমু খাচ্ছি। তোকে আমি সবসময় আমার কোলে করে নিয়ে বেড়াতাম, মনে আছে? আর তুই কতবার যে আমার শার্টের বুকপকেট জলভর্তি করেছিস, তা তো গুনেও শেষ করা যাবে না।
শুধু কি তাই? তুই যে কত চঞ্চল ছিলি তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। খালি কোল থেকে নামতে চাইতি। আমি বারণ করতাম।আর তুই হাত পা ছুঁড়ে আমার গালে চড় মারতি। একবার তো আমার চোখে এমন গুতো দিয়েছিলি যে পরে চোখ ব্যান্ডেজ করতে হয়েছিলো।
তুই মনে হয় ভাবতি, তোর বাবাটা খুব খারাপ। কিন্তু তুই কখনো এটা ভাবতি না যে তোকে কোল থেকে নামালে তুই পড়ে যাবি, ব্যথা পাবি। কত শত ভয়ে তোর বাবার মনটা চুপসে যেতো! তাই তো তোর বাবাটা সারাজীবন তোর কাছে খারাপই থেকে গেলো রে!
তোর প্রথম স্কুলে যাওয়ার কথা মনে আছে, বাবু? তুই আমার কোলে উঠে কত প্রশ্ন করেছিলি— ‘বাবা, বাবা, স্যাররা আমাকে মারবে না তো, আমি পড়া পারবো তো?’ আর আমি একটু পর পর তোর গালে চুমু খাচ্ছিলাম আর বলছিলাম আমার বাবুটা সব পারবে।
তোর বয়স তখন তখন সাত বছর। তুই অনেক জেদ ধরলি ফুটবলের জন্য। আমি তো দিবোইনা। তুইও তোর জেদে অটল। শেষমেশ বাধ্য হয়ে একটা ফুটবল কিনেই দিলাম। সবসময় তোর সাথে সাথে থাকতাম। পাছে আবার ফুটবল নিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যথা পাস। এমনিতেই যে শুকনা ছিলি তুই। ছিলি কি এখনো তো শুকনাই আছিস। একদিন ফুটবল খেলতে খেলতে তুই মাথা ঘুরে পড়ে গেলি। আর আমার সে কি দৌঁড়াদৌঁড়ি! পরে আমি তো রাগ করে তোর ফুটবলটাই চাকু দিয়ে কেটে ফেলেছিলাম। আর আবারও তোর চোখে হয়ে গেলাম পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ বাবা। কিন্তু এই খারাপের মধ্যে একটা ভালো লাগা আছে, জানিস? আছে তোর প্রতি আমার অসীম ভালোবাসা। তাই তো আমি তোর কাছে সারাজীবন খারাপ বাবা হয়েই থাকতে চাই।
আস্তে আস্তে তুই বড় হতে থাকলি আর আমার ভয় আরো বেড়ে যেতে লাগলো। চোখের আড়াল হলেই হাজারো শঙ্কায় বুকটা কেঁপে ওঠে তোর কোন বিপদ হল না তো। আর আমার এই ভয়ের কারণে তুই বঞ্চিত হলি অনেক কিছু থেকে। আশেপাশের নানা ঘটনা দেখে অনেক শঙ্কিত হয়ে যেতাম, এই না এগুলো আমার বাবুকে স্পর্শ করে। তোকে সবসময় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে আমার মনটা খালি আনচান করত। আর তোকে এই বিপদ থেকে দূরে রাখতে গিয়ে আমার মুখের কথা যথেষ্ট ছিল না, একদিন তোকে শাসন করা শুরু করলাম। আমি আরো খারাপ হয়ে গেলাম তোর কাছে। তুই যত বড় হচ্ছিস, আমি ততই খারাপ হচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস কর বাবু, এই খারাপ হওয়ায় আমার কোন দুঃখ নেই, নেই কোন আফসোস। তবে বুকটা কান্নায় ফেটে যেতে থাকে, যখন তুই আমার সাথে
অভিমান করে ভালো করে কথা বলিস না। কত রাত যে আমি তোর পাশে বসে কাটিতেছি, তুই হয়তো জানিসই না।
তুই তোর মাকে বলতি, ‘মা, মা, বাবা আমাকে মেরে কি খুব মজা পায়?’ আমি আড়ালে কথাগুলো শুনতাম আর চোখের পানি ফেলতাম। তুই কখনো আমার চোখে পানি দেখিস নি। ভাবতি তোর বাবার কোন মন নেই। কিন্তু তুই তো জানিসই না যে তোর বাবার মনটা এতো নরম যে সবসময়ই তোর বিপদের শঙ্কায় থাকে।
বাবু, তুই বড় হচ্ছিস। কিন্তু আজও আমার কাছে সেই ছোট্ট বাবুটিই আছিস। এখনও তোকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তোর হাতের আলতো চড় খেতে। ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে, ‘আমার বাবুটাকে আমি অনেক ভালোবাসি। পৃথিবীর সব ভালোবাসা এনে একখানে জড়ো করলেও আমার ভালোবাসার সমতুল্য হতে পারবে না। অনেক ভালোবাসি বাবু তোকে! অনেক ভালোবাসি!’
ইতি,
তোর খারাপ বাবা

Saturday, September 23, 2017

আমার রুমে গিয়ে মেয়েদের মত বিলাপ করে কাঁদতেছি।

আব্বু আম্মুও চমকে গেছে আঞ্জুমানের কথায়। আঞ্জুমান আমার একমাত্র ছোট বোন। তার বিয়ের কথা বার্তা পাকা হয়ে যাচ্ছে।
আব্বু আম্মু আঞ্জুমানকে ডেকে বলতেছে....
"মা'রে আমরাতো তোর বিয়ে ঠিক করতেছি, তোর কোন আপত্তি আছে?"
---ভাইয়া সবকিছু দেখছে?
---হ্যাঁ, তোর ভাই সবই দেখছে। ছেলের পরিবার, বাড়িঘড় সবই।
---ভাইয়া আমাকে নদীতে ফেলে দিলে আমি সেখানেই হাসতে হাসতে চলে যাব।
.
এই কথা শুনে আব্বু আম্মু চুপ হয়ে গেল। আমিও দুই চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারিনি। তারাতারি করে 
 আম্মু গেছে...
--- বাবা তোর কি হইছে?
--- কিছুনা।
--- এটাতো তোর গর্ব করার কথা, তোর বোন তোকে কতটা মেনে চলে কতটা নির্ভর করে একটাবার ভেবে দেখ।
--- সেজন্যইতো কাঁদি, পরের ঘরে গেলে এই মায়াটা থাকবেতো?
--- পাগল ছেলে।
.
আঞ্জুমান আসছে রুমে।
--- দেখিতো আম্মু, যাও তুমি এখান থেকে। ওর কান্না বের করতেছি। এই শোন ভাইয়া, আমি যেমন তোর কথায় নদীতে যাব, তেমনি আমি বললেও আমার পছন্দমত নদীরপাড়ের পেত্নীকেই তোকে বিয়ে করতে হবে।
--- ইশ, যা ভাগ। জানিস আঞ্জু কেন কাঁদি?
--- কেন?
--- তোর জামাইর টাক মাথা, এজন্য।
--- কি? তোর সাথে কথা নাই। তোর জন্য বিশ টাকা রাখছিলাম, আর পাবিনা।
--- না বোন আমার দে, তোর জামাই অনেক সুন্দর।
.
.
আঞ্জু আমার মাত্র দেড় বছরের ছোট, একই সাথে বেড়ে ওঠা। আর কোন ভাইবোন না থাকায় খুঁনসুটিগুলো তার সাথেই।
সবচেয়ে বেশী করতাম, আঞ্জু সুন্দর করে চুলের বেণী করত আর আমি চুলের বেণী ধরে টান দিয়ে দৌড় দিতাম। অথচ বোনটা আমার ওর পছন্দের সবকিছু আমাকে দিয়ে দিত।
মাঝেমধ্যেই বলত, শ্রাবু ভাই আয় তোরে মাইয়া সাজাই।
ওর কাপড় পড়িয়ে আমাকে লিপস্টিক আর হাতের নখে নেলপালিশ দিয়ে দিত। মাঝেমধ্যে ভূতের মত সাজিয়ে আম্মুকে ডেকে এনে দেখাত। আম্মুও অনেক হাসত আমাদের কান্ডকারখানা দেখে।
এখনতো আমি লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারাদিন টৈ টৈ করে ঘুরে বেড়াই। আব্বু আমাকে যত দিত আঞ্জুকেও তত দিত। আমার টাকাতো শেষই, আঞ্জু টাকা খরচ না করে আমাকে চুপি চুপি দিত।
আম্মু কিছু বললে বলত," ভাই সারাদিন বাইরে ঘুরাঘুরি করে ওর টাকার দরকার বেশী, আমার টাকা আমি দেই তোমাদের কি?
সেই বোনটা যখন আজ বলল ভাই যেখানে বিয়ে দেয় সেখানেই, তখন বুকটা কেঁদে ওঠল। বোনটা কত বড় হয়ে গেছে, পরের ঘরে চলে যাবে আমাদের ছেড়ে।
.
ঢাকা দোহারে বিয়ে দিলেও আঞ্জুর স্বামি নরসিংদী ফ্লাট নিয়ে থাকে। দশ টাকা রিক্সাভাড়া হলেই যাওয়া যায়, আমি যেতামনা। খুব লজ্জা করত, মনে হত অন্যের বাড়ি যাচ্ছি। তাই আব্বু আম্মুকে বলে সপ্তাহে দুবার আমাদের বাড়ি নিয়ে আসতাম।
.
২২ শে ফেব্রুয়ারী রাতে হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আঞ্জুর জন্মদিন ২৪ ফেব্রুয়ারী। পকেটে মাত্র নয় টাকা আছে। আব্বু আম্মুর কাছেও বলা যাবেনা। আব্বু আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে যদি আঞ্জুর জন্মদিনের উপহার কিনতে হয় তাহলে আমি কি দিলাম???
কাউকে না জানিয়ে ২৩ শে ফেব্রুয়ারী সকালে রাজমিস্ত্রীর হেল্পারের কাজ করতে চলে গেলাম। ২০১০ সাল, ২০০ টাকা হাজিরা। হঠাৎ পরিশ্রমের কাজ করাতে শরীর খুব দুর্বল। সন্ধা রাতে ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে ওঠেই কেক আর গিফট কিনে আনলাম।
আঞ্জুকে ফোন দিয়ে বলেছি, এখন বাড়িতে আয়। আঞ্জু তার স্বামিকে না বলেই চলে এসেছে।
কেক কেটে খাওয়ানোর সময় আম্মু আঞ্জু আর আমি আরেক দফা কেঁদে নিলাম।
আঞ্জুর স্বামি ফোন করাতে বেশীক্ষন থাকতে পারেনি।
.
.
একদিন ফোন করে আঞ্জু বলতেছে, ভাইয়া তোমাদের জামাই আমারে মারছে।
মাথায় রক্ত ওঠে গেল। মনে হচ্ছিল তখন সামনে পেলে তার স্বামিকে খুন করতাম। কত বড় সাহস, আমার বোনের গায়ে হাত তুলেছে। রিক্সা নিয়ে ছুটে গেলাম।
আবার আরেক রিক্সায় কান্না লুকাতে লুকাতে চলে এলাম।
আঞ্জুর স্বামি আমাকে বলে দিল এটা তাদের স্বামি স্ত্রীর ব্যাপার।
কাঁদতেছি আর ভাবতেছি, একটা অধিকার কত সহজে পরিবর্তন হয়ে যায়।
পরে অবশ্য আঞ্জুর স্বামি আমার হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছে, কিন্তু আমার কষ্ট রয়েই গেল, বিয়ে হলেই কি বোনকে পর করা যায়?
.
.
আলহামদুলিল্লাহ, আঞ্জুর এখন সুখের সংসার। তার এক মেয়ে এক ছেলে। নামগুলো আমিই রেখে দিছি, রিয়া আর রিয়াদ।
ভাগনীর আড়াই বছর বয়সে আমি দেশের বাইরে বাহরাইনে চলে আসি। ভাগিনা হওয়ার পর ভিডিও কলে দেখেছি।
দুজনই মামা মামা বলে তারাতারি দেশে যেতে বলে। আঞ্জু মাঝে মধ্যে কেঁদে দিয়ে বলে, ভাইরে তোকে অনেকদিন দেখিনা। আমার জমানো টাকাগুলো তোকে দিব, তুই আসলে সব টাকা তোর।
.
আজ ফোন করে বলেছিলাম, আঞ্জু তোর কি লাগবে বোন? আমি পাঠাব এখান থেকে।
আঞ্জু বলল, ভাই আমার কিছু লাগবেনা। তোর দিতে ইচ্ছে হলে তোর ভাগনী ভাগিনাকে দিস।
আবারও কাঁদলাম আজ।
বোনরে, তোর ছেলে মেয়েকেতো দিবই। কিন্তু তোকে যে আজো কিছুই দিতে পারলামনা। সারাজীবন তুই শুধু দিয়েই গেলি।
.
আমার মত বোন যাদের আছে, বিয়ের আগেই যা দেয়ার দিও। বোনটি পরের ঘরে গেলে কি খায় কি পড়ে কিছুই দেখা যায়না। বিয়ের আগে না বুঝলেও বোনটির বিয়ের পর বুঝবে বোন কতটা মায়া ভালবাসায় জড়ানো থাকে।
মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে থাকুক পৃথিবীর সকল ভাই বোনের ভালবাসা.......
.
.
লেখনীর শেষ প্রান্তে,,,,,,,,
,,,,,, ওমর ফারুক শ্রাবণ

Friday, September 22, 2017

এমন একটা পাগল বন্ধুর পাগলামিতে আমরা ক্রমশই ওর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলাম।

“জীবনে সবকিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখতে গেলে কেবল যে কষ্টই বাড়ে, তা নয়... অনেক সময় তা জীবননাশেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়”
.
... এই কথাটা যেমন দিবালোকের মতো সত্য, ঠিক তেমনি এই কথাটাও...
“কালবৈশাখী ঝড় কে ঘণ্টাখানেক সময় দেওয়া হলে, খুব সহজেই সে হাজার বছর ধরে বেড়ে উঠা একটি চঞ্চল গ্রামকে শান্ত করে দিতে পারে”
আমার খুব চঞ্চল একটি বন্ধুর নাম ছিল নিবিড়।
.
বন্ধুদের আসরে সে সবাইকে নাচিয়ে ছাড়ত। ওকে সিগারেটে আগুন ধরিয়ে আনতে বলা হলে, সে সিগারেটের ফিলটার পাশটায় আগুন ধরিয়ে এনে বলত, “এই নে, অনেক কষ্ট করে ধরিয়েছি। এখন প্রানখুলে টান”। তখন এমন একটা ভাব নিয়ে দাঁড়াত যেন রাজা হয়ে কোন প্রজার মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে... ব্যাস, তখনি শুরু হয়ে যেত ম্যাট্রিক্স মুভির মতো ঐতিহাসিক যুদ্ধ।
.
সে প্রায়ই একটা কাজ করত। আমরা বন্ধুরা যখন ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ধরে ল্যাব শেষে ক্লান্তবদনে হলের দিকে রওয়ানা দিতাম, তখনি হঠাৎ আমাদের মধ্যে কেউ একজন গর্জে উঠত। পিছনে ফিরে দেখতাম, নিবিড় চুপি চুপি এসে সজোরে ঐ বেচারার পাছায় লাথি বসিয়ে দিয়ে বলছে... “অই শালারা! আমারে ফালাইয়া তোরা কই যাস?” কিন্তু তখনি নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সত্যতা রক্ষার্থে, ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ শুরু হয়ে যেত ম্যাট্রিক্স.!
.
পার্ট-২...
আরেকবার হল কি? সেই রকম সর্দিকাশি সমান তালে আমার নাক ও গলার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করল। তো একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারছি না, নিবিড় এসে বলল, “ কিরে? ঘুম থেকে উঠবি না? কারে নিয়া এতো স্বপ্ন দেখস? বাদ দে ঐসব। আজকে ফার্স্ট ক্লাস তো তোর হৃদয় উতলা করা ম্যাডামের। জলদি রেডি হয়ে নে”।
আমার অবস্থা খুব খারাপ, নাক ও গলারন্ধ্র নিরেট হয়ে গেছে... নিজের কথা নিজেই শুনতে পারছিলাম না। যাই হোক, খুব কষ্টে ওকে আমার অবস্থা বুঝালাম। ও কিছু না বলে ১ জগ বরফতূল্য ঠাণ্ডা পানি এনে সরাসরি আমার মাথায় ঢেলে দিয়ে অনর্গল বলতে লাগল, “আরে পড়স নাই? সমধর্মী চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কাটাকাটি। তুই এখন সুস্থ, তাড়াতাড়ি ক্লাস করতে আয়”- বলেই ও ক্লাসের দিকে ছুট। আমি ম্যাট্রিক্স."
.
পার্ট ৩
রচনার কাজ হাতে নিলেও পর্যাপ্ত অর্থের(শক্তির) অভাবে মুভিটি মুক্তি পায় নি।
এমন একটা পাগল বন্ধুর পাগলামিতে আমরা ক্রমশই ওর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলাম। কিন্তু আমরা জানতাম না যে, নদীর কাজই হল ধীরে ধীরে তীর ভেঙে নিয়ে যেতে চাওয়া... এতেই তার সৌন্দর্য নিহিত। আর যে নদী সেই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সে আর জীবিত থাকে না, হয়ে যায় মৃত।
হঠাৎ করেই ও কেমন যেন বদলে যেতে থাকল। রুমে একা একা ঝিম ধরে বসে থাকে। ক্লাস করে সোজা রুমে এসেই ঘুম। সারা রাত হলের ছাদে গিয়ে বসে থাকে। কেমন যেন এক গভীর চিন্তামগ্নতা। কিছু জানতে চাইলেও কিছু বলে না। ঠিক যেন এক সর্বনাশী কালবৈশাখী আমার চঞ্চল বন্ধুকে গ্রাস করে ফেলছে।
.
একদিন বিকেলে ওর মোবাইলে কল দিয়েই যাচ্ছি কিন্তু ও ধরছে না। ছাদে গিয়ে দেখি, চুপচাপ রেলিং এ বসে কি যেন ভাবছে। আমি কিছু না বলে ওর পাশে গিয়ে বসি। ও আমার দিকে তাকিয়ে খুব কষ্টে সৌজন্য রক্ষার্থে একটা হাসি দিল। আসলে হাসি নয়- বাহ্যিকভাবে অধরদুটো বাঁকানোর চেষ্টা।
কিছুক্ষণ পর আমি নীরবতা ভেঙে দিয়ে বললাম, “ আমাকে কি কিছুই বলা যায় না?”
ও খানিকক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “ কম্পন বলতে কি বুঝায়, জানিস?”
ও দূরে তাকিয়ে থেকে কি যেন ভাবে নিল। তারপর বলল, “একটা মেয়ে আর আমার হৃদয় কম্পন”- বলেই ও চলে গেল। আমি ওর মতো দূরে তাকিয়ে কিছু বুঝার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।
রাত ১০টা। পরদিন ক্লাস টেস্ট ছিল। আমি পড়ছিলাম। হঠাৎ করে ও রুমে ঢুকল। চুপচাপ গিয়ে ওর পি,সি, অন করল।
.
আমার কাছে এসে বলল, “তোর পেনড্রাইভটা দে তো, একটা ফাইল ট্রান্সফার করব”। আমি কিছু না বলে তাই করলাম। দেখলাম, ও পেনড্রাইভ পি,সি, তে লাগাল, কিছুক্ষণ পর ওটা খুলে ওর ড্রয়ারে তালা দিয়ে রেখে রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল... আমি পিছন থেকে ওকে ডাকলাম, “ নিবিড়! কই যাস এতো রাতে? কালকে ক্লাস টেস্ট, পড়তে বস”। ও আমার কথা কানেই নিল না।
“তোর পেনড্রাইভটার খুব প্রয়োজন অনুভব করলে তালা ভেঙে নিয়ে নিস্”- বলেই ও বেরিয়ে গেল। আমি হা করে ওর চলার পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
পরদিন ওকে আর ভার্সিটিতে দেখলাম না, ভাবলাম বাসায় চলে গেল কিনা? ওর বাসায় ফোন করব কিনা? ফোন করেই বা কি বলব? এইসব ভাবতে ভাবতে ৩ দিন কেটে গেল। বড্ড একা হয়ে গেছি আমি। এখন কেউ আমাদের আর জ্বালায় না, কেউ খাবার কেড়ে নেয় না, কেউ ইচ্ছা করে মারামারি করতেও আসে না। শুধুমাত্র ঐ একটা চঞ্চল নিবিড় শান্ত হয়ে যাওয়ায় আমরাও যেন মরা নদীর ন্যায় হয়ে গেছি।
.
এক সপ্তাহ হয়ে গেল, ওর কোন খোঁজ না পেয়ে ওর বাবাকে খবরটা জানাই। ওর ফ্যামিলিও ওর ব্যাপারে কিছু জানে না। তারা অনেক খোঁজাখুঁজি করেন কিন্তু কোন হদীস পেলেন না।
এক মধ্যরাতে ওকে নিয়ে একটা বাজে স্বপ্ন দেখছিলাম, হঠাৎ তখন ঘুম ভেঙে গেল। ওর বিছানাটার দিকে তাকালাম- শূন্যতা বিরাজমান। বুকটা হু হু করে কেঁপে উঠল। ওর টেবিলের ড্রয়ারের দিকে চোখ যেতেই আমার পেনড্রাইভটার কথা মনে পড়ে গেল। তৎক্ষণাৎ তালা ভেঙে পি,সি, তে পেনড্রাইভটা লাগালাম। দেখলাম, একটা মাইক্রোসফট ডকুমেন্ট ফাইল। ফাইলটাতে যা লিখা ছিল...!"
“বন্ধু! মেয়েটার নাম রিনি। আমি ওর কথা পৃথিবীর কাউকে জানাতে চাই না। শুধু তোকে বললাম। ও কেমন সুন্দরী ছিল তা নিয়ে আমি হাজার হাজার পাতা খরচ করতে পারব। ওর প্রসঙ্গে আমি শুধু তোকে একটা কথাই বলব... কিছু চোখ হয় মায়াবিনী, কিছু ঠোঁট হয় আরক্তিম, কিছু চুল হয় স্বর্গীয় লতা আর কিছু হৃদয়?...
দোস্ত! আমি জানি না, স্বর্গসুখ কি জিনিস? কিন্তু এতোটুকুন জানি যে, তার হৃদয়স্পর্শ পৃথিবীর সকল সুখের ঊর্ধ্বে।
.
দোস্ত! আমি ওকে ভালবাসতাম কিনা জানি না, কিন্তু এতটুকু জানি যে, ওকে আমার করে নেওয়ার চেয়ে আমি চাইতাম ও যেন কখনও আমার কাছ থেকে হারিয়ে না যায়।
ওর খুব সখ ছিল ও আমার কোলে মাথা রেখে চোখ বুজে থাকবে, আর আমি গিটারে টুং টাং করে ওকে গান শোনাবো। ও প্রায়ই বলত, “ ইস্! আমাকে যদি কেউ বাইকের পিছনে নিয়ে আমার সাথে কিছুটা সময় কাটাত!”...
.
বন্ধু! আজও মরার আগে খুব ভালো একজন গিটারিস্ট আর বাইক রেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখি।
জানিস দোস্ত! একটা উক্তি প্রায়ই আমার মাথাটায় ঘুরপাক খেত...
“ If you succeed in cheating someone, don’t think that that person is a fool but you should realize that that person trusted you much more than you deserved”
দোস্ত! প্লিজ... ওকে কিছু বলার দরকার নাই। আমি এখনও হিসাব মিলাতে পারি নি যে কে, কার সাথে চিটিং করেছে। আমি তার সাথে নাকি সে আমার সাথে? আমার খাটের নিচে তাকালেই তুই বুঝতে পারবি।
ভালো থাকিস দোস্ত”।।
খাটের নিচে তাকিয়ে দেখি শতখানেক A4 কাগজ ছড়ানো-ছিটানো। সবগুলোতেই লিখা, “WHO IS THE RIGHT ONE? YOU OR ME?”
আমি খুব ভালভাবেই জানি আমার আহত বন্ধুটি ঐ মেয়েটিকে ক্ষমা করে দিয়েছে। কিন্তু কথা হল... ও নিখোঁজ আজ প্রায় ২ বছর। এর মধ্যে ওর মা কম করে হলেও ২০ বার আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন। প্রত্যেকবারই দেখতাম তিনি হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন... আমাকে দেখেই অশ্রুসিক্ত নয়নে ওড়নার বর্ধিত অংশ দিয়ে মুখটা চেপে রেখে বলতেন... “আমার নিবিড়?”
পৃথিবীর সব কিছু সহ্য করা যায় কিন্তু ছেলের জন্য মায়ের সেই নিষ্পাপ ভালবাসায় সিক্ত আঁখিদুটি, আমি কেন? বোধ করি কেউই সহ্য করতে পারবে না।এখন কিছুটা হলেও বুঝি, কালবৈশাখী কতটা হিংস্র হলে নিবিড় নামের একটি চঞ্চল ছেলেকে এভাবে লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে, তাকে মায়ের আদর ভুলিয়ে দিতে পারে, খুব কাছের বন্ধুদের সাথে মারামারি করার তীব্র মজাটুকু মন থেকে মুছে দিতে পারে। আমি আজও জানি না সে কোথায়, কিভাবে আছে, কিংবা... ? হুহ... যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস বন্ধু। আজও হয়তো আমার বন্ধু নিবিড় রিনিকে লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে নিবিড়ভাবে ভালোবাসে, নিবিড়ভাবে ভালোবাসে তার মাকে, তার বাবাকে, হয়তোবা আমাকেও।
.
আমার কলম আর এগুতে চাচ্ছে না। ও আমাকে প্রায়ই একটা কথা বলত... “দোস্ত! দেখিস, আমার মা-বাবার আগে আমি মারা যাব, এমনকি আমি তোর আগে মারা যাব। কারণ আমি মরলে তোরা আমার কষ্ট সহ্য করতে পারবি, কিন্তু তোদের হারানোর কষ্ট আমি কখনই সহ্য করতে পারব না”...
.
নিবিড় হয়তো সত্য কথাটাই বলেছে। তাই যেই সত্য কথাটি দিয়ে গল্পটা শুরু করেছিলাম, সেই কথাটি দিয়েই শেষ করতে চাই...
“জীবনে সবকিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখতে গেলে কেবল যে কষ্টই বাড়ে, তা নয়... অনেক সময় তা জীবননাশেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়”!
.
→Nistobdo Ovimani Hridoy (অভিমানী মেঘ বালক)

আমরা পুরো ফ্যামিলি তোমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

প্রায় বিশ বছর আগের কথা...
"জুয়েল, আজ তোমাকে চিঠিটা না লিখে পারলামনা। কারণ চিঠিটা পড়ার পর তুমি যখন ভাল কিংবা খারাপ রিয়েক্ট নিয়ে আমাকে খুঁজতে আসবে, তখন আমি অনেক দূরে চলে গেছি। আমাকে চাইলেই তুমি রাগী ভঙ্গিমায় গালমন্দ করতে পারবেনা। আমার বাবা হঠাৎ করে আরেকটি ভাল স্কুলে চাকরি হওয়াতে 
 এতদিন যা মুখফুটে তোমাকে বলতে পারিনি, তা আজ বলে দিবো। মনের জমানো কথাগুলো তোমাকে বলবো বলবো করে বলাই হয়নি। আমি যেদিন তোমাকে আমার বাবার কাছে প্রাইভেট পড়তে দেখি, সেদিন আমি ভিষণ খুশি হয়েছিলাম। কারণ তোমাকে অনেক কাছ থেকে দেখতে পাবো। তাই বাবাকে বলে তুমি যে ব্যাচে পড়তে আমি সেই ব্যাচে পড়া শুরু করি। আমি বাবাকে বলেছিলাম "বাবা, জুয়েল তো ভাল স্টুডেন্ট ওর সাথে পড়লে আমারও সুবিধা হবে।" এই কথা বলাতে বাবা রাজি হয়েছিলো। তুমি ক্লাসের ফার্ষ্টবয়, তুমি ভাল স্টুডেন্ট, তোমার ব্যবহারের কথা কি বলব..! ওটা সবাই জানে। তোমার হাতের লেখা দেখলেই তো যেকোনো মেয়ে তোমার প্রেমে পড়ে যাবে..! এত গুন তোমার মধ্যে, বলে শেষ করা যাবেনা। সত্যি কথা বলতে কি আমি তোমাকে ভালবাসি সেই ক্লাস এইট থেকে। কথাটি বলার সাহস হয়নি কোনোদিন। ভাবলাম যখন চলেই যাবো মনের কথাটি তোমাকে জানিয়েই যাই। এতদিন পর মনের কথাটি বলার সাহস হলো তাও আবার চিঠির মাধ্যমে। জানিনা চিঠিটা পড়ে তোমার মনের অনুভূতি কি..!? আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানকার ঠিকানাটাও আমার জানা নেই যে, তোমাকে দিয়ে যাবো। তবে তোমার ঠিকানা যেহেতু আমি জানি, একদিন না একদিন তোমার খোঁজ আমি নিবো। চিঠিটা পড়ে তোমার মনে কি অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে সেটা জানার খুব ইচ্ছে হচ্ছে আমার। তবে না জানাই ভালো, কি বলো..!? যদি নেগেটিভ কিছু ভাবো সেটাই ভয়..! সামনে তোমার এইচএসসি পরীক্ষা, ভালমতো পড়ালেখা করিও, এসএসসির মতো এইচএসসিতেও তুমি ভাল রেজাল্ট করবে এই দোয়া করি। ভাল থেকো...
-ইতি নাতাশা"
.
চিঠিটা কিছুক্ষণ আগে মিজান আমার হাতে এনে দিল। মিজান আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। চিঠিটা পড়তে পড়তে কখন যে আমার দুচোখ পানিতে ভরে গেছে আমি টেরই পাইনি.! এই নাতাশাকে আমিওযে ভালবাসি..! কিন্তু আমিও কোনোদিন মুখফুটে বলতে পারিনি ভয়ে। স্যারের মেয়ে বলে বলতে কখনো সাহস হতোনা। ও যথেষ্ট ভাল ছাত্রী। ক্লাস এইট থেকে এসএসসি পর্যন্ত কেবল ওর সাথেই আমার পড়ালেখার প্রতিযোগীতা হতো। ক্লাসে এক দুই রোলনং আমার আর ওর কাছ থেকে কেউ নিতে পারতোনা। কিন্তু কোনোদিন বুঝতে পারিনি নাতাশা আমার মতই মনে মনে আমাকে ভালবাসে..!
.
মাঝে মাঝে কথা হতো নাতাশার সাথে। ওর বাবা আমাদের স্কুলের ইংরেজী শিক্ষক ছিলো। ইংরেজিটা তিনি ভাল পড়াতেন, তাই স্যারের কাছে এসএসসি পর্যন্ত ইংরেজী প্রাইভেট পড়েছি। আজ নাতাশার চিঠিটা পড়ে ভীষণ আফসোস হচ্ছে! কেন আমি এতদিন মনের কথাটি মনের মধ্যে জিইয়ে রেখেছি!
.
মিজান আমাকে শান্তনা দিয়ে বললো... "দোস্ত, মন খারাপ করিসনা, তোর আর নাতাশার মিলন যদি আল্লাহ তায়ালা লিখে রাখেন, দেখিস একদিন ওর সাথে তোর দেখা হবেই।" আমি বললাম.. "তাই যেন হয় দোস্ত। দোয়া করিস..!"
.
ওদের ঠিকানাটা জানার অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু কেউ সঠিকভাবে বলতে পারলোনা। তারপর এক বছর কেটে গেল। আমি এইচএসসিতেও ভাল রেজাল্ট করলাম। আমি সেই ছোটবেলা থেকেই একটি  স্বপ্ন দেখতাম। আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অনার্স করবো.! যেহেতু আমার এসএসসি এবং এইচএসসির রেজাল্ট অনেক ভাল, তাই এডমিশন দিতে ঢাকা চলে গেলাম।
.
যেদিন ভার্সিটিতে ভর্তি ফর্ম সংগ্রহ করতে গেলাম, সেদিন একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল..! অনেক লম্বা লাইন দেখে আমি লাইনে না দাড়িয়ে ভাবলাম একটু পরেই দাড়াই। তাই আমি কোলাহল ছেড়ে একটু দুরে গিয়ে ক্যাম্পাসের একটি গাছের নিচে সবুজ ঘাসের উপর বসলাম। বসে বসে ভাবছিলাম আমি এত এত ভাল স্টুডেন্টদের মধ্যে থেকে চাঞ্চ পাবো তো..! আমার এতদিনের স্বপ্ন কি সত্যি হবে..! 
.
হঠাৎই অনুভব করলাম আমার পাশে কেউ এসে বসলো..! আমি ঘাড়টা ঘুরিয়ে তাকাতেই আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম..! আমার পাশে বসে আছে নাতাশা..! আমি নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলামনা..! দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে.! ওর দুচোখ অশ্রুতে টলমল করছে..! আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম, কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলানা..!
.
আমি বললাম.. "তুমি এখানে..!?"
ও অশ্রুভেজা কন্ঠে বললো... "এখানেই তো থাকার কথা ছিলো...!"
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম... "মানে কি...!?"
তারপর ও বলতে লাগলো... "তোমার কি মনে আছে এসএসসি রেজাল্টের পর তুমি আমাকে একবার বলেছিলে তোমার ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশে অনার্স পড়ার খুব ইচ্ছে..!? আমি কথাটি ভুলিনি। আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি ভর্তি ফর্ম সংগ্রহ করতে ঢাকা আসবেই। তাই প্রথম দিনই তোমার আর আমার জন্য একসঙ্গে দুটো ফর্মই সংগ্রহ করে রেখেছি। আর তারপর থেকে প্রতিদিনই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই ক্যাম্পাসে আমি তোমাকে খুঁজছি..! আজ সাতদিনের মাথায় তোমাকে পেয়েও গেলাম..!"
.
ওর কথা শুনতে শুনতে আমার দুচোখ বেয়ে টপপট করে অশ্রু পড়তে লাগলো..! আমি অশ্রু শিক্ত চোখে তাকিয়ে আছি নাতাশার দিকে...! আর মনে মনে ভাবছি মেয়েটি সত্যিই আমাকে কত ভালবাসে..! 
চোখের পানি মুছতে মুছতে আমি ওকে বললাম...
"তোমাকে যে আমিও ভালবাসতাম। তোমার মতো আমিও বলতে সাহস পাইনি। তোমার চিঠিটি পেয়ে সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম আর আফসোস করেছিলাম, কেন এতদিন বলিনি মনের কথাটা। তোমার চিঠিটা কতবার যে পড়েছি আর কেঁদেছি তার হিসেব নেই..! স্কুলে গিয়ে তোমাদের ঠিকানা খোঁজ করেছি। কিন্তু সেখান থেকেও সঠিক ঠিকানা দিতে পারলোনা। তোমার চিঠিটা এখনো আমার বুক পকেটে আছে। এই দেখো...!"
.
আমি চিঠিটা পকেট থেকে বের করলাম। ও আমার হাতটি ধরে কাঁদছে আর বলছে... "আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন, সবচেয়ে খুশির দিন!"
আমি শক্ত করে ওর হাত ধরলাম। আর অন্য হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম। 
.
আমরা দুজনেই আল্লাহর রহমতে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশে চাঞ্চ পেয়েছিলাম। আল্লাহ  সত্যিই আমাদের মিলন লিখে রেখেছিলেন। আর সেজন্যই সেই থেকে এখনো দুজন একসঙ্গেই আছি। আজ আমরা দুই সন্তানের বাবা-মা 😍
•••
"তুমি ছিলে নীরবে"
.
✍Ramzan Khondaker (স্লিপলেস বার্ড)

প্রায় দুই ঘন্টা ধরে বসে আছি,কিন্তু মেয়ের কোনো দেখাই নেই

১.
বাবা-মায়ের অনেক জোরাজুরির পর শেষ পর্যন্ত এই পড়ন্ত বিকেলে মেয়ে দেখতে এলাম।অবশ্য এর আগে আরো ছয়জনকে দেখেছি,এটা সাত নম্বর!আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট শিওর,অন্য মেয়েগুলোকে দেখে যেমন আমার পছন্দ হয়নি,এই মেয়েকেও পছন্দ হবে না।
কিন্তু অন্য মেয়েগুলোকে দেখতে গিয়ে যেই ঘটনা কখনোই ঘটে নি,আজকে তাই ঘটছে!
।এই দুই ঘণ্টায় মেয়ের বাবা-মা,ছোট বোন,আত্মীয় সবার পরিচয় মুখস্থ হয়ে গেছে।কিন্তু এখনো মেয়েটাকেই দেখা হয়নি! মেয়ে কি আদৌ আসবে কিনা,তাও বুঝতে পারছি না!মেয়েকে কি সাজিয়ে একেবারে ভুত বানিয়ে আনছে নাকি,তা আল্লাহই জানেন!
আমি আর আমার আত্মীয়রা চলে যাব নাকি ভাবছি,এই সময় হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখলাম,যাকে দেখতে এসেছি তার বোনের সাথে হেঁটে আমাদের দিকে আসছে।তার মানে এটাই কি কনে?কিন্তু মেয়েটা দেখছি একদমই সাজেনি!চোখে কাজল পর্যন্ত নেই!
আমার চাচী মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
--তোমার নাম কি মা?
--রায়না।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।হঠাৎ মেয়েটার কথা বলা শুনে তার দিকে তাকাতে বাধ্য হলাম!এত মিষ্টি গলা আমি কারোর শুনিনি।মেয়েটার গলার স্বরই শুধু মিষ্টি না,এতক্ষণে খেয়াল করলাম,তার চেহারাটাও অপূর্ব সুন্দর!কোনো কৃত্রিমতা নেই চেহারার মাঝে।যেন সাধারণত্বের মাঝেও সে অসাধারণ!শুধু একটাই সমস্যা,মেয়েটা অনেক বেশি চুপচাপ!প্রয়োজনের বেশি একটা কথাও বলে না।

একটু পর আমাকে আর মেয়েটাকে আলাদা রুমে দেওয়া হল কথা বলার জন্য।আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।মেয়েটাও নিজে থেকে একটা কথাও বলছিল না!কিছুক্ষণ চেষ্টা করে আমি বললাম,
--আপনার নাম কি?
--একটু আগেই তো বলেছিলাম!
--ও হ্যা,রায়না।
মেয়েটার এভাবে উত্তর দেওয়া শুনে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম,সে নিশ্চয়ই এনির মতই অনেক ভাব দেখায়।আমি জানতাম সব মেয়েরাই এক!আর এই মেয়েটাও তার বাইরে না।
এনি আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড।আমাদের সম্পর্ক টিকে ছিল প্রায় এক বছর!এর মাঝেই সে আমাকে মোটামুটি নিঃস্ব করে দিয়েছিল।ভাগ্গিস ওইটা আমার শখের কারণে করা টিউশনির টাকা ছিল!এক বছর পর শুনলাম,ঐ মেয়ে নাকি আরো অনেক ছেলের সাথে এমন করে তাদেরকে নিঃস্ব করে ছেড়ে দিয়েছিল।এই কারণেই ওর সাথে আমার ব্রেকাপ হয়।আর এরপর থেকে আমি কোনো মেয়েকেই আর বিশ্বাস করতে পারি না!কিন্তু বাবা-মায়ের চাপে পড়েই আমাকে মেয়ে দেখতে যেতে হয়!
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
--আমাকে বিয়ে করতে আপনার কোনো আপত্তি নেই তো?
--আমার কোনো মতামতেই এখন আর কারো কিছু আসে যায় না!
রায়না নামের এই মেয়েটার এমন কাটাকাটা কথার পর তো আর আমাদের কথাবার্তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না!তাই আমি সেখান থেকে চলে এলাম।
রাতে ফেরার পর মা যখন আমার মতামত জানতে চাইলেন,আমি সাথে সাথেই না করে দিলাম!

২.
--হ্যালো,আপনি কি ঈশান?
--হুম,আপনি কে?
--আমি রায়নার বোন,রিহানা।সেদিন যে মেয়ে দেখতে এলেন..
--ওহ,মনে পড়েছে।
--আপনার সাথে কিছু কথা ছিল,আপনার কি সময় হবে দেখা করার?
--উম..হুম,হবে।বিকেল চারটায় কফিশপে..
--ওকে।
বিকেল চারটায় কফিশপে গিয়ে দেখি রিহানা অপেক্ষা করছে।আমি গিয়েই মুখে একটা হাসি নিয়ে বললাম,
--কি?কি খবর তোমার?
--ভাল।আপনাকে কিছু কথা বলতে এসেছি!আমি অনেক ছোট বলে হয়ত আপনি আমার কথার গুরুত্ব নাও দিতে পারেন,কিন্তু কথাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমি এসেছি তা বলতে..
আমি মুখে গাম্ভীর্যের ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে বললাম,
--বল,কি বলবে?
--আপনি আমার আপুকে সেদিন যেভাবে দেখেছেন,আমার আপু কিন্তু আসলে তেমন না!আমার আপুর জীবনে কি কি ঘটেছে,না জানলে কেউ বুঝতেই পারবে না,কেন আপু এমন হয়েছে।আপনি হয়ত ওকে বিয়ে করার জন্য মত দিতে পারেন,কিন্তু এই কথাগুলো না শুনে বিয়েতে মত দিলে আপনারও ক্ষতি হবে,সাথে আপুরও!যদিও আমি বিয়েটা ভাঙতে আসিনি..
এতক্ষণে আমার মাঝে কৌতুহল হতে শুরু করল।আমি জিজ্ঞেস করলাম,
--কি হয়েছে তোমার আপুর জীবনে?
--আপু আগে অনেক হাসিখুশি ছিল।সবার সাথে মিশত,ভাল ব্যবহার করত।একটা ছেলেকে ও অনেক ভালবাসত।আমরা পরিবারের সবাই জানতাম এই কথা!তিন বছরের রিলেশনশিপের পর হঠাৎ শুনলাম,ছেলেটা কোনো কারণ ছাড়াই আপুর সাথে ব্রেকাপ করেছে!পরে অবশ্য জানলাম,আপুকে সে বলেছিল বিয়ের আগেই তার সাথে এক রাত থাকতে,আপু রাজি হয়নি।তাই সে এভাবে ব্রেকাপ করেছে।সে নাকি আরো অনেক মেয়ের সাথেই এমন করেছে!
--ও।
--ওর স্বাভাবিক হতে অনেকদিন লেগেছিল।তারপর হঠাৎ করেই একটা ছেলের সাথে ওর ফ্রেন্ডশিপ হয়।খুব স্বাভাবিক বন্ধুত্বই ছিল তাদের মধ্যে।ফেসবুকে পরিচয়।একদিন আপু ফেসবুকে ঢুকে দেখে,আপুর আইডি হ্যাক করে তার ছবি এডিট করে অনেক খারাপ খারাপ ছবি দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে।চেনা-পরিচিত যারা ছিল,সবার কাছেই আপুকে চরমভাবে অপমানের স্বীকার হতে হয়!এরপর থেকেই আপু আর বাইরে যায় না।কোনো ছেলের সাথে কথা বলেনা,ফেসবুকেও বসে না।
--হুম,আসলেই তোমার আপুর সাথে অন্যায় হয়েছে!
--এইটুকুতেই শেষ না।
--আরো আছে?
--হ্যা।গত বছর একটা ছেলে এসে আপুকে দেখে যায়।পরিবারের সবার আপুকে খুব পছন্দ হয়।আপুও বিয়েতে মত দেয়।ভেবেছিল,সব ছেলেই তো আর এক না!কত আনন্দের ছিল বিয়ের আগের দিনগুলো!আপুর সাথে ছেলেটার প্রায়ই কথা হত।শুনে মনে হত দুজনেই খুব খুশি!
--তোমার আপুর আগে বিয়েও হয়েছিল?
--না।ছেলেটা আগে আপুকে কিছু না বললেও বিয়ের দিন বলল,সে এই বিয়েতে রাজি না!অন্য মেয়েকে তার পছন্দ,কিন্তু বাবার চাপে পড়ে সে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল।ব্যস,ভেঙে গেল বিয়েটা!
আমি শুনে এতই অবাক হলাম যে,কিছু বলতেই ভুলে গেলাম!এত ট্র‍্যাজিডিও একটা মেয়ের জীবনে ঘটতে পারে!রিহানা বলে চলল,
--এরপর থেকে আপু কোনো ছেলেকে দেখতে পারে না!কথাও বলতে চায়না।শুধু বাবা-মায়ের চাপাচাপিতেই এবার পাত্র দেখতে রাজি হয়েছে।এখন বিয়ে করবেন কি করবেন না এটা আপনার ইচ্ছা!
বলে চলে গেল রিহানা।সে জানতেও পারল না যে আসলে আমি আগে ঠিক করেছিলাম বিয়েটা করব না।কিন্তু এখন ভাবছি,বিয়ে করাই উচিত!

৩.
আজকে আমাদের বিয়ের প্রথম রাত।তাকিয়ে আছি ঘুমন্ত রায়নার দিকে!আমাদের মাঝখানে একটা কোলবালিশ রেখে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে,নিজেই হয়ত টের পায়নি!
যদিও আমি এনির কাছ থেকে ধোকা খাওয়ার পরে ভেবেছিলাম,কোনোদিন আর কোনো মেয়েকে বিয়ে করা দূরে থাক,বিশ্বাসও করব না।কিন্তু আমি এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করেছি,যার জীবন আমার চেয়েও কঠিন হয়ে গিয়েছে!আমি মাত্র একটা মেয়ের কাছ থেকে ধোকা খেয়ে দুনিয়ার সব মেয়েকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম,কিন্তু ও তো তিনটা ছেলের কাছ থেকে তিনভাবে ধোকা খেয়েছে।যখনই কাউকে বিশ্বাস করেছে,তখনই সে তার বিশ্বাস ভেঙেছে!রায়নার এই অবিশ্বাসের জীবন থেকে তো আমাকেই ওকে উদ্ধার করতে হবে!নাহয় ওর এই জীবন হয়ত সব ছেলেকেই অবিশ্বাস করতে করতে কেটে যাবে!

রায়না কাজে খুব চটপটে!সারাদিন মাকে হেল্প করে,রান্নাবান্না করে।মা-বাবাকে গল্প শোনায়,হাসিখুশি থাকে।কিন্তু আমি যখন রাতে অফিস থেকে ফিরি,তখনো ও মায়ের আশেপাশেই ঘুরঘুর করে।এমন ভান করে যেন আমি যে এসেছি,সে দেখেইনি!এতে অবশ্য আমি কোনো কষ্ট পাই না।কারণ আমি তো ওর অতীত জানি।আমাকে দেখে রায়না ভয় পাবে,এটাই হয়ত স্বাভাবিক।ওকে ঠিক হতে আমার সময় দিতে হবে।মা অবশ্য ওকে বোঝানোর চেষ্টা করে,কিন্তু ও কিছু বুঝতে পারেনা,বা বুঝতে চায় না!
ছুটির দিনগুলোতেও একই অবস্থা!সারাক্ষণ সে মায়ের আশেপাশে ঘুরে।ভুলেও আমার কাছে আসে না!
একদিন বস অফিস থেকে আসার সময় বললেন,আমার এরপরের দিন রেস্ট।অফিসে আসা লাগবে না।রেস্ট নিয়ে যাতে আমি আরো ভালভাবে কাজ করতে পারি,সেই জন্যই এই ব্যবস্থা।আমি অফিস থেকে এসে অবশ্য কাউকে বলিনি যে পরের দিন আমার অফিস ছুটি।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার আগেই রায়না সব কাজ করে গোসল করতে যায়।আমি অফিসে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওর কোনো হদিস পাওয়া যায় না।কিন্তু আজকে একেবারেই ভিন্ন।রায়না গোসল করে এসে কল্পনাও করেনি আমাকে দেখবে!আমাকে দেখে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।তারপর তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে যেতে চাইল।আমি পেছন থেকে হাত ধরে টেনে ওকে বিছানায় বসালাম।ওর হাত দেখি ভয়ানক ঠাণ্ডা!আর থরথর করে কাঁপছে!আমার হাত থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল।কিন্তু আমি ওকে শক্ত করে ধরে রেখে বললাম,
--আমাকে তুমি ভয় পাচ্ছ কেন?আমি তো তোমারই হাসবেন্ড।জানি,তুমি সব ছেলেকেই অবিশ্বাস করো।কিন্তু আমাকে একবার বিশ্বাস করেই দেখো,আমি কখনোই তোমার বিশ্বাস ভাঙব না,প্রমিস।
রায়না চোখে অবিশ্বাস নিয়ে বলল,
--সব ছেলেরা বিশ্বাস ভাঙার আগে এই কথাই বলে,কিন্তু ঠিকই পরে সব তছনছ করে দিয়ে যায়!তাই আমার পক্ষে আর কাউকেই বিশ্বাস করা সম্ভব না!হাত ছাড়ুন,আমাকে যেতে দিন।
আমি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ওর হাত ছেড়ে দিলাম,ও রান্নাঘরে চলে গেল।

একটু পরেই রায়নার চিৎকার শুনে ভয়ে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি,মা রায়নার হাতে ঠাণ্ডা পানি ঢালছে।রায়না ব্যাথায় ছটফট করছে!কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম,কি হয়েছে।মা বলল,রায়না রান্না করতে গিয়ে গরম তেল ছিটে ওর হাতে এসে পড়েছে।অনেকখানি পুড়ে গেছে ডান হাত।
আগে তো এমন কখনো হয়নি,আজ কেন হল?আমাকে ভয় পেয়েই কি ওর কাজেও ওলটপালট হয়ে গেছে?
আমি রায়নাকে তাড়াতাড়ি ডাক্তার কাছে নিয়ে গেলাম।ডাক্তার হাতে ওষুধ লাগিয়ে দিল,আর ডান হাত বেশি ব্যবহার করতে না করল।
রাতের বেলা রায়না না খেয়েই ঘুমিয়ে যাচ্ছিল।ওর ক্ষুধা লেগেছিল ঠিকই।কিন্তু ও আমার হাতে খাবে না,নিজের হাত ব্যবহার বন্ধ,কাউকে বলতেও পারছিল না খাইয়ে দিতে।ও যত যাই করুক,আমি যখন একটা ধমক দিয়ে ওকে খাইয়ে দিতে শুরু করলাম,তখন আর না করল না।লক্ষ্মী মেয়ের মত আমার হাতে খেতে শুরু করল।আর আমি ওর মিষ্টি মুখটা আর অপূর্ব চোখ দুটোকে অনেকদিন পর খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেলাম!

৪.
ছুটির দিনগুলোতে এখন আর রায়না আমার থেকে দূরে থাকতে পারেনা।আমি বুঝতে পেরেছি,নিজে থেকে ওর কাছাকাছি থাকার চেষ্টা না করলে ও আমার থেকে আরো দূরে চলে যাবে।তাই যতক্ষণ বাসায় থাকি,ততক্ষণ ওকে ডাকতে থাকি আর আমার এটা ওটা কাজ দিতে থাকি।এতেই ওর কিছুটা হলেও কাছাকাছি থাকতে পারি।
আজকেও অফিস থেকে ছুটি দিয়েছে।কিন্তু আজকের কথা অবশ্য পুরাই ভিন্ন!আজকে বিকেলের ট্রেনে বাবা-মা দুজনেই অনেকদিন পর গ্রামে বেড়াতে গিয়েছেন।একসপ্তাহ ঐখানে থাকবেন।
এই এক সপ্তাহের স্বাধীনতায় আমি যে কি খুশি হয়েছি!প্রত্যেকদিন শুধু রায়না আর আমি থাকব বাড়িতে।অফিসের দিন আর ছুটির দিনগুলোতে কি কি করব,তাই ঠিক করতে শুরু করলাম!অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরির প্ল্যান করলাম,যদিও হয়ত রায়নাকে যেতে রাজি করাতে কষ্টই হবে,কিন্তু রাজি করানো যাবে।আর মনে মনে প্রস্তুত হয়ে রইলাম,ঠিক সপ্তমদিন আমি রায়নাকে প্রপোজ করব!
প্রথমদিন অফিস থেকে সন্ধ্যায় ফিরে তাকে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে বললাম।আজকে আমরা বাইরে খেতে যাব!এনির সাথে প্রেম করে আর কোনো লাভ হোক বা না হোক,মেয়েরা কি টাইপের জিনিস পছন্দ করে,এটা ঠিকই জেনে গিয়েছিলাম।তাই বাবা-মা গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই আমি মেয়েদের সব পছন্দের সব কাজগুলো রায়নার সাথে করব বলে ঠিক করলাম।

তাই আজকে রায়নাকে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে গেলাম।যদিও রায়না যেতে রাজি হচ্ছিল না।ওকে সেজেগুজে শাড়ি পড়ে আসতেও রাজি করিয়েছি।এই আলো-আঁধারের খেলায় রায়নাকে যে কি অপূর্ব সুন্দর আর স্নিগ্ধ লাগছে,আমি বলে বোঝাতে পারব না।আমি নতুন করে আবার ওর প্রেমে পড়তে শুরু করলাম!কিন্তু ওর মধ্যে আমার প্রতি একটুও ভালবাসা আর বিশ্বাস জন্মাতে পেরেছি কিনা,বুঝতে পারলাম না।কিছুক্ষণ চুপচাপ খেতে খেতে একটু পর জিজ্ঞেস করলাম,
--তোমার এতদিন পর বাইরে ঘুরতে এসে কেমন লাগছে?
--অনেক ভাল লাগছে!কিন্তু আপনি আবার ভেবে বসবেন না যে,আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি।আপনার প্রতি আমার কোনোরকমই দুর্বলতা নেই,মনে রাখবেন।
আবার সেই কাটাকাটা উত্তর!কিন্তু আমি সেই কথার তোয়াক্কা না করে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললাম,
--সমস্যা নেই।আমার চেষ্টা আমি করে যাব যতদিন পারি!
মনে মনে বললাম,
--অমূল্য কিছু পেতে হলে তো কষ্ট করতেই হবে!

 আজকে রাতেও রায়না আমাদের মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে ঘুমাল।সে আসলে আমাদের মাঝে যেন কোলবালিশ দিল না,অবিশ্বাসের দেয়াল দিয়ে আলাদা করে দিল আমাকে!কবে যে সেই দেয়াল ভাঙবে?

দ্বিতীয়দিন আমি অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়িই ছুটি পেলাম।রায়নাকে নিয়ে সেদিন গেলাম পার্কে।এনিকে দেখতাম পার্কে ঘুরতে খুব পছন্দ করত।ইচ্ছা,রায়নাকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে একসাথে ফুচকা খাব।পার্কে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই দেখলাম,অনেকগুলো পিচ্চি আমাদের ঘিরে ধরেছে।এদেরকে আমার ভালই লাগে,কিন্তু এনি এদেরকে সহ্য করতে পারত না!
আমি অবাক হয়ে দেখলাম,আসার সময় আমি যে দুশো টাকা দিয়েছিলাম রায়নাকে প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের জন্য,ও সেগুলো দিয়ে বাচ্চাগুলোকে আইসক্রিম কিনে খাওয়াল।আর বাচ্চাদের সাথে এমনভাবে মজা করতে লাগল যে দেখে মনে হল,বাচ্চাগুলো তার নিজেরই!ওকে আমি সেদিন প্রথমবারের মত হাসতে দেখলাম!এত মিষ্টি কারো হাসি হতে পারে,তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি!

আমি অবাক হয়ে ওর পাগলামিগুলো দেখতে লাগলাম আর ভাবতে থাকলাম,এত সুন্দর মনের একটা মেয়েকে ছেলেগুলো কেন এভাবে কষ্ট দিল যে ওর মনে ছেলেদের নিয়ে একেবারে বিতৃষ্ণা জন্মে গেল!ঐ ঘটনাগুলো না ঘটলে আমরা কি সুন্দরভাবে একসাথে দিনগুলো কাটাতে পারতাম!

আমি  যখন তাকে ফুচকা খেতে নিয়ে গেলাম,ও যে কি খুশি হল!আশ্চর্য হয়ে গেলাম আমি।কালকেও তো রায়নাকে নিয়ে দামী রেস্টুরেন্টে বসে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করেছি,কিন্তু কাল তো ওর মাঝে এত খুশি দেখিনি!বুঝলাম,ওর এক্সপেকটেশন অন্য মেয়েদের মত অনেক বেশি না,একটুতেই ও খুব খুশি হয়।আজকে বাচ্চাগুলোকে দেখে যেমন হয়েছে!

তৃতীয়দিন আমি ঠিক করলাম,আমরা শপিং এ যাব।কিন্তু রায়নাকে এতে তেমন আগ্রহী দেখলাম না!বুঝতে পারলাম,অন্য মেয়েদের মত ওর শপিং এ যেতে অতটা ভাল লাগে না!আমি যতই রায়নাকে আবিষ্কার করছি,ততই অবাক হচ্ছি,মেয়েটা অন্যদের চেয়ে একেবারেই আলাদা!
কিন্তু শপিং এ গিয়ে দেখা গেল,খুব শখ করে রায়না এক একটা ড্রেস কিনছে,কিন্তু একটাও নিজের জন্য না!মায়ের জন্য শাড়ি,বাবার জন্য পাঞ্জাবি,তাদের প্রয়োজনের আরো টুকিটাকি জিনিস কিনল।এর ফাঁকে আমি গিয়ে ওর জন্য সুন্দর মেরুন রঙয়ের একটা শাড়ি কিনলাম,যেহেতু ও নিজের জন্য কিছুই কিনে নি।
বাসায় ফিরে যখন শপিং এর ব্যাগগুলো খুলে খুলে দেখছিলাম,তখন খুব অবাক হয়ে দেখলাম,আমার নাম লেখা একটি প্যাকেট!খুলে দেখি,ভেতরে নীল-সাদা স্ট্রাইকের একটি সুন্দর শার্ট।বুঝতে পারলাম,আমি যখন ওর জন্য শাড়ি কিনছিলাম,তখন রায়নাও আমার জন্য শার্ট কিনেছে,আমাকে সে যতই অপছন্দ করুক!কি যে আনন্দ লাগছে!আসলে প্রিয় মানুষের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আনন্দই আলাদা!

৫.
আজ চতুর্থদিন।শুক্রবার বলে আজ অফিসও বন্ধ।ছুটি ছিল বলে একটু দেরিতেই উঠলাম।আর উঠার সাথে সাথেই আমার নাকে খিচুরির সুঘ্রাণ এল!আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখি রায়না মিষ্টি গলায় গান গাইছে,আর রান্না করছে আমার প্রিয় খিচুরি আর গরুর মাংস।আমি অবাক হয়ে গেলাম।কারণ আজ ছুটির দিন বলে প্ল্যান করেছিলাম রায়নাকে বলব,ভাল কিছু রান্না করতে যেন বাসায় বসে দুজন একসাথে মজা করে খেতে পারি।কিন্তু রায়না তো আমার প্ল্যান শোনার আগেই সব করে ফেলেছে!
আজকে প্রথম দুজন একসাথে বাসায় বসে খাচ্ছি।রায়না একটু পর পরই এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে।কিযে ভাল লাগছে!আর ওর হাতের রান্না তো আজকে একেবারে অমৃতের মত মনে হচ্ছে!অনেকদিন পর এত তৃপ্তি নিয়ে খেলাম!
রাতে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।ঘুমঘুম চোখে উঠে অবাক হয়ে দেখি,রায়না হাটুতে মাথা গুজে বাচ্চাদের মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে!জিজ্ঞেস করলাম,
--কি হয়েছে তোমার?
রায়না কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
--ঈশান,বাবা হঠাৎ করে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে!
--এখন কোথায় আছেন?
--হাসপাতালে।কিন্তু এত রাতে কাকে বাবার কাছে আমাকে নিয়ে যেতে বলব বুঝতে পারছি না!
আমি ওর দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা হালকা করার জন্য মুখে একটু হাসি টেনে বললাম,
--পাগলি মেয়ে!এর জন্য এত কাঁদে?আমি আছি না?আমি তোমাকে তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাব।
বলে আমি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললাম,যেহেতু এত রাতে কোনো যানবাহন পাওয়া যাবে না!
আমরা যখন রওনা দিয়েছি,তখনো গাড়িতে বসে রায়না কাঁদছিল।ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য কি করব,বুঝতে পারছিলাম না।
হঠাৎ খেয়াল করে দেখি,গাড়ির ড্রাইভার স্টিয়ারিং এ হাত রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে!আমি সাবধান করে দেওয়ার আগেই সে গাড়িটাকে রাস্তার পাশের একটা উঁচু আইল্যান্ডে উঠিয়ে দিয়েছে।আমি রায়নার মাথার দিকটা দুই হাতে ধরে রাখতে রাখতেই দেখলাম,গাড়িটা কাত হয়ে গেল রায়না যেদিকে বসেছে,সেদিকে!হঠাৎ করে মনে হল,আমার নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই।কিন্তু আমি একটু সাহায্য করলেই তো রায়না বের হতে পারবে!তাই আমি অনেক কষ্ট করে যেদিকে বসে ছিলাম,সেদিক দিয়ে রায়নাকে গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করলাম।কিন্তু যখন আমি নামতে যাব,তখন টের পেলাম,আমার ডান হাতে কোনো শক্তি নেই!বুঝলাম,হাতটা ভেঙে গেছে হয়ত!যখন রায়নাকে ধরে রেখেছিলাম,তখনই ভেঙেছে।

আমি নামতে পারছি না দেখে রায়না আমাকে টেনে নামানোর চেষ্টা করতে লাগল,কিন্তু ওর একার পক্ষে তো এটা সম্ভব না।আর ড্রাইভারের যখন হুশ এল,তখন আমাদের দুজনকে এই বিপদের মাঝে ফেলেই সে পালিয়ে গেল!
আমি যখন নামতে চেষ্টা করছি,তখন হঠাৎ দেখি উলটা দিক থেকে একটা ট্রাক ছুটে আসছে!আমি বুঝতে পারলাম,এটাই হয়ত আমার জীবনের শেষ সময়!মরে যাচ্ছি,এতে এতটুকু চিন্তা হচ্ছে না,কিন্তু বারবার মনে হচ্ছে,রায়নাকে আমার আর মনের কথাগুলো বলা হল না!

পরিশেষ:

চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায়ই  অনুভব করলাম,কেউ খুব সযত্নে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।কারো হাতের পরশে আরামে আমার ঘুম চলে আসছে!আমি ভাবতে লাগলাম,এটা নিশ্চয়ই মৃত্যুর পরের জীবন!
কিন্তু যখন চোখ খুললাম,তখন দেখি আমি হাসপাতালে।রায়না আমার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আর আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে!আমি চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে প্রথম যে কথাটা বললাম,সেটা হল,
--আমি তোমাকে খুব ভালবাসি,রায়না!

রায়না কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।ভাবছে,এক্সিডেন্টে আবার আমার মাথার গোলমাল হয়ে গেল নাতো?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললাম,
--আমি ভেবেছিলাম,এটা বলতে আমার আরো দুইদিন লাগবে,কিন্তু এক্সিডেন্টের পর আমার সাহস কত বেড়ে গেছে দেখেছ?আমি এখনই এই কথা তোমাকে বলে দিতে পেরেছি!
রায়না মুখ ভেংচে বলল,
--সাহস না ছাই!তুমি আসলেই একটা পাগল।কেন তুমি আমাকে ওভাবে কাল ধরে রেখেছিলে?সেজন্যই তো তোমার হাতটা এভাবে ভাঙল!যদিও ডাক্তার বলেছে মারাত্মক কিছু না।তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।তারপরেও তো..আর ট্রাকটাও সেসময়..
--কি হয়েছিল বল তো?আমি তো ভেবেছিলাম মরেই গেছি!কিন্তু ট্রাকটা সেসময় থামল কিভাবে?
--আমি ট্রাকটা দূরে থাকতেই ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছিলাম!
--কি বলছ তুমি?তোমার যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে আমার বেঁচে থাকা আর না থাকা তো একই হত!
--আর তোমার কিছু হলে?আমি এতদিন পরে একজনকে বিশ্বাস করলাম,তাকে আমি আবার হারিয়ে যেতে দেই কিভাবে?
যাক,শেষ পর্যন্ত আমার মিশন সাকসেসফুল হল!রায়নার অবিশ্বাসের অগোচরে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাসকে আমি ঠিকই বের করে আনতে পেরেছি!
সেই আনন্দে হেসে ফেলে রায়নার দিকে তাকিয়ে বললাম,
--বাদ দাও তো।বাবা কেমন আছেন?
--বাবার প্রেশার বেড়ে গিয়েছিল।এখন সব কন্ট্রোলে আছে।
শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।তারপর হঠাৎ মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে ভুরু নাচিয়ে বললাম,
--আমার প্রপোজের উত্তর কিন্তু আমি পাইনি!
দেখি,রায়না লজ্জায় লাল হয়ে গেছে!আমাকে হালকা ধমক দিয়ে বলল,
--উফ্ যাও তো,কিছু বলতে পারব না এখন!
তারপরেই আমার বিষণ্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
--আমাদের সাতদিন তো এখনো শেষ হয়নি।তুমি আগে সুস্থ হয়ে সাতদিনের কাজ কম্পলিট কর,তারপর আমার মত জানাব!
রায়না অবশ্য সাতদিনের কাজ কম্পলিট হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে নি।তার আগেই আমাকে ভালবাসার কথা বলে ফেলেছিল!এত দেরিতে বলা নাকি ওর সহ্য হচ্ছিল না,তাই!

#অবিশ্বাসের অগোচরে
লেখক:অমানিশা তমিস্রা

Thursday, September 21, 2017

বাড়ি কিনলে সঙ্গে বৌ ফ্রি!

এটা কিনলে ওটা ফ্রি এমন ফ্রির অফার দেখা যায় অহরহ। কিন্তু ‘বাড়ি কিনলে বউ ফ্রি’ এমন কোন অফার চমকে দেওয়ার মতো একটি ব্যাপার। এটা বোধহয় আশাপ্রদও নয়। অথচ বাস্তবিক এমনই একটি বিজ্ঞাপন  দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইন্দোনেশিয়ার এক নারী এভাবেই বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।

উইনা লিয়া নামে ওই নারীর বাড়িটি বিক্রি করা হবে। রয়েছে লোভনীয় ছাড়ও। সেখানেই লেখা আছে, বাড়িটিতে মিলবে বাগান, গ্যারেজ ও একজন স্ত্রী। বিজ্ঞাপনের পর ৪০ বছরের ওই নারীকে নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনি স্পষ্টই জানিয়েছেন, এই বিজ্ঞাপনে তার কোনও আপত্তি নেই। এমনিতেও তিনি একজন স্বামী খুঁজছেন।

৬ একর জমির উপর তৈরি একটি বাড়ি। ২ টি বেডরুম, ২ টি বাথরুম রয়েছে। গ্রানাইট মেঝে। একটি গ্যারেজ, একটি প্রশস্ত বাগান রয়েছে। আছে মাছের পুকুরও । উইনা লিয়া জানিয়েছেন, তিনি যতবার প্রেমে পড়ছেন তা ব্যর্থ হয়েছে। তাই এবার এরকম প্ল্যান বানিয়েছেন তিনি।
তথ্যসূত্র : দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট

Tuesday, September 19, 2017

আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম, তখন ফাহিম নামের একটি ছেলে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে যায়।

যেহেতু আমি সাধারণ একটি পরিবারের মেয়ে। তাই আমি সাধারণ ভাবেই চলাফেরা করতাম। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম, তখন ফাহিম নামের একটি ছেলে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে যায়।
.
ফাহিম তখন এইসএসসিতে পড়ে। আসলে ঐ বয়সে সব ছেলে মেয়েরাই রঙিন চোখ দিয়ে রঙিন দুনিয়া দেখে। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলামনা। আমি মনে মনে চাইতাম, আমাকে কেউ ভালবাসুক। কেউ আমাকে বলুক লাবন্য আমি তোমাকে ভালবাসি।
.
আমার মনের চাওয়াটা পুরোন করেছিল ঐ ফাহিম নামের ছেলেটি। আমাকে সেদিন ও প্রথম বললো.. 
- সাথী তুমি কি কাউকে ভালবাসো..?"
- না, এই প্রশ্ন কেন করছেন..?
- যাক এই না শব্দটাই শুনতে চেয়েছিলাম।
- কেন.., হ্যাঁ বললে কি হতো..?
- কষ্ট নিয়ে ফিরে যেতাম!
- তাতে আপনি কষ্ট পাবেন কেন..?
- আরেকদিন বলবো।
.
ফাহিমদের বাড়ি আমাদের পাশের গ্রামে। ওর বাবা গ্রামের নামকরা চেয়ারম্যান। বেশ কয়েকদিন লক্ষ্য করেছি ও আমাকে ফলো করছে। আজ ওর কথাতে বুঝতে পারলাম, ও মনে মনে কি চাইছে! ছেলেটিকে আমার বেশ পছন্দ। আমি ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই ওর প্রেমে পড়ে যাই।
.
একদিন ফাহিম আমাকে বলেই ফেললো সে আমাকে ভালবাসে। আর আমিও তাতে রাজি হয়ে যাই। আসলে ওর প্রতি আমার দুর্বল হওয়ার অনেকগুলো কারণ ছিলো। ও বড়লোক ঘরের সন্তান হলেও ওর মধ্যে কোনো অহংকার ছিলোনা। ও সবসময় সাধারন ভাবেই চলতো। এবং সাধারণ মানুষদের সাথেই চলতো। সত্যি কথা বলতে ওর যতগুলো বন্ধু ছিলো, সবাই ছিলো অসহায় ও গরীব। আর ও সবসময় এই গরীব অসহায়দের নিয়েই চলতো।
.
আমাকে মাঝেমধ্যে অনেক কিছুই গিফট করতো। যেটা আমার কাছে মোটেও ভাল লাগতোনা। একদিন আমি ফাহিমকে বললাম... "তুমি যেদিন নিজে ইনকাম করে আমাকে কিছু কিনে দিবে, সেদিন আমি সব থেকে খুশি হবো। সেটা হোক সামান্য মূল্যের..!"
.
ও যে আমার এই কথাটি সিরিয়াসলি নিবে আমি ভাবতে পারিনি..! একদিন ও আমার হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো.. "এটা আমার টিউশনির টাকা দিয়ে তোমার জন্য কিনেছি। তুমি সেদিন আমাকে নিজে ইনকামের কথা বললে, আমি তারপর থেকে একটা টিউশনি শুরু করি। আর সেই টিউশনির প্রথম টাকা দিয়ে তোমার জন্য এইটা আর মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনেছি।"
.
সেদিন আনন্দে আমার চোখদুটো অশ্রুতে ভরে গিয়েছিল। আমি সেদিন বুঝেছিলাম ফাহিম আমাকে কতটা ভালবাসে..! আমি ওর দেয়া প্যাকেটা যখন বাড়ি গিয়ে খুললাম, খুলেই আমি অবাক হলাম.! প্যাকেটের মধ্যে একটা নীল শাড়ি এবং সাথে ওর লেখা একটি চিঠি দেখে। আমি চিঠিটা পড়তে লাগলাম...
"লাবন্য, নীল শাড়িতে তোমাকে কোনোদিন দেখিনি। কেন যেন দেখতে খুব  ইচ্ছে করছে আমার..! শাড়িটা পরে আগামীকাল বিকেলে আমার সাথে দেখা করবে প্লিজ..! আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো তোমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা নদীর পাড়ের সেই কাঁশবনে। কি আসবে তো..!?"
.
আমি গিয়েছিলাম ফাহিমের উপহার দেওয়া নীল শাড়িটা পরে। আমাকে দেখেই ফাহিমের চোখ দুটো কপালে উঠে গিয়েছিল..! বলেছিলো....
- সত্যিই অসাধারণ! যেন সাদা কাঁশবনে একটা ডানাকাটা নীলপরী নেমে এসেছে..!
.
সেদিন আমিও একটি গিফট কিনেছিলাম ওর জন্য। একটি নীল রঙের পাঞ্জাবি। প্যাকেটটি ওর হাতে দিয়ে বললাম...
- এটা এখনই গায়ে দাও।
- কি এটা..?
- একটি পাঞ্জাবি, আর একটি ঘড়ি। 
- তুমি এসব কিনতে গেছো কেন..? তুমি টাকা কই পেলে..?
- শুধু তুমিই আমাকে দিবে..? কেন, আমিকি কিছু দিতে পারিনা..? এটা আমার নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে কেনা। তুমি তো জানো আমি হাতের কাজ জানি। গত একমাস হাতের কাজ করেছি তোমাকে উপহার দিবো বলে।
.
আমি লক্ষ্য করলাম ফাহিমের দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ও বললো...
- আমি তোমাকে ভালবেসে ভুল করিনি। জানিনা আল্লাহ্ আমাদের দুজনের মিলন লিখে রেখেছেন কিনা!? তবে আল্লাহর কাছে চাইবো, তিনি যেন তোমাকেই আমার জীবন সঙ্গিনী করে দেন। 
- তুমি কি নামাজ পড়ো যে আল্লাহ্ তোমার কথা রাখবেন..?
- এখন থেকে পড়বো।
- সত্যি...!?
- হুম..
- আমিও পড়বো..
সেদিনের বিকেলটা ছিলো আমার জীবনের সেরা স্মৃতি। যা কোনোদিনই ভুলতে পারবোনা।
.
সেদিন থেকে আমি আর ফাহিম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করে দিলাম। তারপর থেকে আমরা দেখা সাক্ষাৎও খুব কম করতাম। আমি নামাজ শুরু করে বুঝতে পারি যে, আমার জন্য পর্দা করা ফরজ। আমি পর্দা করাও শুরু করে দিলাম। ফাহিম আমাকে কয়েকটা বোরকা কিনে দিয়েছিলো। আর সেগুলো ছিলো আমার সবচেয়ে প্রিয় উপহার। 
.
আল্লাহ সত্যি সত্যিই আমাদের দুজনের মিলন লিখে রেখেছিলেন। আমার এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, সহিহ শুদ্ধভাবে পর্দা করা ফাহিমের পরিবারের সবার মন কেড়েছিলো। আর এতেই আমাদের দুজনের মিলন হওয়াটা খুব সহজ করে দেন উপরওয়ালা। দুই বছর পর আমাদের বিয়ে হয়। 
.
আমার আর ফাহিমের আজ বিয়ের একবছর হলো। সেই উপলক্ষে আমার শ্বশুর আব্বা গরীব অসহায়দের মাঝে কাপড় বিতরণ এবং খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। আমার শ্বশুর সবার কাছে আমাদের জন্য দোয়া চাইছেন। সেই কাজে ফাহিমও খুব ব্যস্ত। আমাকে সবাই এত ভালবাসে, আমার কাছে কেবলই মনে হয় তা পাবার যোগ্য আমি নই.! জীবনে আমি আর কিছু চাইনা। শুধু এই ভালবাসা টুকুই চাই.!
.
সত্যিই সুখের কপাল আমার। এত সুখ আল্লাহ আমার কপালে লিখে রেখেছিলেন ভাবিনি, আলহামদুলিল্লাহ্। ভাবতেই আমার দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু পড়ছে। এটাকেই বুঝি সুখের কান্না বলে..!? এভাবেই আমি কাঁদতে চাই আজীবন...
•••
গল্প: "সুখের কান্না"
.
✍Ramzan Khondaker (স্লিপলেস বার্ড)

প্রেমিক ও স্বামী (বড়দের গল্প)

সকাল বেলায় আমি আর আমার স্ত্রী মুক্তা দুইজন এক সাথে বসে নাস্তা করছিলাম ।হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।অামি তখন বললাম, অামি দেখছি কে এসেছে তুমি নাস্তা করো, মুক্তা কোনো কথা না বলে নাস্তা করতে লাগলো । অামি নাস্তা করা রেখে উঠে দরজা খুলে দেখলাম একটা ছেলে দাঁড়িয়ে অাছে ।
তার হাতে একটা খাম।
অামাকে দেখে ছেলেটা খামটা অামর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় । অামি খামটা হাতে নিয়ে দরজা বন্ধ করে নাস্তার টেবিলে এসে বসি ।
তখন মুক্তা জিজ্ঞেস করে , কে এসেছিলো।
অামি বললাম, একটা লোক এসে এই খাম টা দিয়ে গেলো । এরপর খামটা খুলে দেখি ভিতরে একটা চিঠি।
আমি চিঠিটা নিয়ে পড়ি । দেখি তাতে লেখা , মুক্তা তোমার আর আমার সম্পর্কের ঘটনাটা তোমার স্বামীকে যদি বলে দেই তাহলে কেমন হয় । তোমার সাথে আমার সম্পর্ক কিভাবে হয় ।কখন আমরা কোথায় দেখা করি সব কিছু যদি তোমার স্বামীকে বলে দেই তাহলে কেমন হয় । ইতি তোমার পুরোনো প্রেমিক ।
---
চিঠিটা পড়ে আমি ধমক দিয়ে বলি , এসব কি এসবের মানে কি ।
মুক্তা ভয়ে ভয়ে বলে , কি হইছে এতো রাগলে কেনো।
আমি বললাম, কি হইছে তুমি জানো না ,তুমি বিয়ের আগে বলছিলে, তোমার সাথে কোনো ছেলের সম্পর্ক ছিলো না কিন্তু এখন এসব কি দেখছি। এই বলে চিঠিটা তার হাতে দেই । সে তখন সেটা পড়তে শুরু করে ।
চিঠিটা পড়া হলে দেখি তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পরছে । সে কেঁদে কেঁদে বলল, দেখো এসব
মিথ্যা। কেউ আমাকে বদনাম করার জন্য এমন কাজ করছে ,বিশ্বাস করো আমার কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল না ।
আমি তখন রেগে গিয়ে বলি, কিভাবে তোমাকে বিশ্বাস করি' । তুমি আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করছো,
আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিছো ।
সে তখন বলে, আমার কথা শুনো , আমাকে একটু বুঝতে চেষ্টা করো ।
আমি তখন বললাম, তোমার কোন কথাই শুনতে আমি চাইনা, আমি প্রমাণ পেয়েছি কোনটা সত্য কোনটা
মিথ্যা সেটার । এই বলে রাগ করে সেখান থেকে উঠে রুমে চলে আসি। আসার সময় তার দিকে তাকালাম , দেখি সে এখনো কেঁদে চলেছে ।
---
রুমে এসে আমি হাসতে হাসতে শেষ,আজ নিজেকে ভালো একজন অভিনেতা মনে হচ্ছে । মুক্তার সামনে ভালোই অভিনয় করলাম , সে বুঝতে পারে নাই সব কিছু সাজানো একটা নাটক ছিলো।
অাসলে চিঠিতে যা লেখা ছিলো সব মিথ্যে।
অার এই মিথ্যে কাজটা অামার নিজের করা ।
গত রাতে সে অামাকে কথায় কথায় বললো , আমি নাকি মানুষকে কষ্ট দিতে জানি না । মানুষকে কাঁদাতে পারি না । আসলে আমি চাই সবাই জেনো সুখে থাকে
আমি চাইনা আমার কারনে কেউ কষ্ট পাক । আমি হাজার কষ্ট পেলেও সবাই যেন সুখে থাকে এটাই চাই ।
আমি কিন্তু ইচ্ছে করলে মানুষকে কষ্ট দিতে পারি ।
মানুষকে কাঁদতে পারি । এটা ওকে বুঝানোর জন্য মিথ্যে এই নাটকটা করি । গত রাতেই সে যখন বলছিলো এরপরে আমি আমাদের বাড়ির পাশের এক ছোট ভাই কে ফোন করে বলি একটা চিঠি লেখে সকালে আমাকে দিয়ে যেতে । কি কি লিখবে সেটাও বলে দেই, আমি নিজে লিখি নাই কারণ আমার হাতের লেখা সে বুঝতে পারবে । তাই ছোট ভাইকে দিয়ে লেখালাম যাতে সে বুঝতে না পারে এটা অামারি করা কাজ । আর নাস্তা করার সময় সে ছোট ভাইটা এসে চিঠি টা দিয়ে গেছে ।
---
এরপরে আমি একটা চিরকুট লিখলাম।
সবকিছুই সাজানো মিথ্যে একটা নাটক ছিলো ।
কেনোই বা তার সাথে এমন কাজ করলাম সব কিছু
লেখে চিরকুট টা নাস্তা করার টেবিলের উপর রেখে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম । আমি জানি সে টেবিল পরিষ্কার করতে আসবে , তখন সে চিরকুটটা পাবে আর সত্যিটা জানতে পারবে । সত্যিটা চিরকুটে লিখে দিলাম কারন সামনা সামনেই যদি বলতে যাই সবকিছু সাজানো একটা নাটক ছিলো । তাকে শুধু কষ্ট
দেয়ার জন্যই এমন কাজ করেছি। তাহলে সে আমার বারটা বাজাবে ।
এখন চিরকুটে লিখে দিলাম সত্যিটা জানার পর রাগ উঠলে আমাকে যেন কিছু না করতে পারে । চিরকুট পড়ার পর যখন তার রাগ কমবে তখন গিয়ে বাসায় আসবো ।
---
দুপুরে ভয়ে ভয়ে বাসায় এলাম ,এসে দেখি
সে টেবিল পরিষ্কার করে নাই , অামি চিরকুট টা যেভাবে টেবিলের ওপর রেখে গেলাম ঠিক তেমনি অাছে ।
তার মানে সে চিরকুট টা দেখে নাই , সত্যিটা এখনো জানতে পারেনাই । এরপরে আমি রুমে আসলাম
তার নাম ধরে দুবার ডাক দিলাম , কিন্তু তার কোনো সারাশব্দ পেলাম না । তখনি আমার নজর গেল বিছানার উপর , দেখি সকালের চিঠিটা বিছানার ওপর
পড়া , সাথে একটা চিরকুট ।
অামি চিরকুট টা হাতে নিয়ে সেটা পড়তে লাগলাম। সেটাতে দেখি লেখা।
-
প্রিয় স্বামী সকালের চিঠিটার সম্পকে তোমাকে কিছু বলতে চাই, পাঁচ বছর আগের ঘটনা , আমি যখন কলেজে পড়তাম ,তখন একটা ছেলের সাথে অামার সম্পর্ক ছিলো । ওর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল দুই মাস, এর পরেই আমরা ব্রেকাপ করি । আমাদের সম্পর্কটা
তেমন ঘনিষ্ঠ ছিল না । আর ব্রেকপের কিছুদিন পর
আমি সবকিছু ভুলে যাই। তাই তোমার সাথে যখন আমার বিয়ের কথাবার্তা হয় , যখন তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে । কোন ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে কিনা , তখন আমি না বলি । তোমাকে না বলি শুধু এই কারণেই আমি সবকিছু ভুলে গেছিলাম।
নতুন করে আবার সবকিছু মনে করতে চাইনি বলে ।
কিন্তু এতো বছর পর আবার আমার অতীত সামনে এসে দাঁড়াবে তা আমি কখনও কল্পনাও করি নাই ।
হতে পারে অামার অতিত তোমার কাছে সাধারন ব্যাপার। কিন্তু এখন অামি কিভাবে তোমাকে মুখ দেখাবো , তোমার চোখে চোখ রাখবো । প্রতিটা মূহতে মনে হবে অামি তোমাকে ধোকা দিচ্ছি, এই অনূভুতি নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবো । না তা অামি কখনো পারবো না, তাই চিরদিনের জন্য তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আর কখনো আমার এই মুখ তোমাকে দেখাবো না । ভালো থেকো তুমি অার পারলে অামাকে ক্ষমা করে দিও । ইতি তোমার স্ত্রী মুক্তা ।
---
চিরকুট টা পড়ে পাগলের মতো তাকে ডাকতে
লাগলাম । একে একে সব রুমে রান্নাঘরে সব জায়গায় তাকে খুঁজতে লাগলাম । কিন্তু তাকে পেলাম না , তার মোবাইলে কল দিলাম, দেখি তার মোবাইল বন্ধ ।
তারপর এক এক করে তার মা বাবা বন্ধু বান্ধব সকল আত্মীয় স্বজনকে কল করলাম । সে কোথাও নেই ,
কেউ তার সম্পকে কিছুই জানে না। আমার মধ্যে একটা ভয় কাজ করা শুরু করল , তাকে হারানোর ভয় ।
এসব আমার কারনে হলো ফাজলামি করতে গিয়ে
বড় একটা ভুল করে ফেললাম । সবকিছুর জন্য আমি নিজেই দায়ী । আমার কারণেই আমি আমার স্ত্রীকে
চিরদিনের জন্য হারাতে বসলাম।
---
অামার হঠাৎ মনে পড়লে সব জায়গায় তো দেখলাম
কিন্তু ছাদে দেখা হয়নি । তাড়াহুড়া করে ছাদে উঠে গিয়ে দেখি , ছাদের এক কোনায় সে দাঁড়িয়ে আছে ,। আমাকে দেখে সে হাসতে লাগল ।আর আমি ওকে দেখে কেঁদে ফেললাম । তার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম ।
তারপর বললাম, এসব কি এসবের মানে কি , তুমি জানো আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি , এমন কাজ করা তোমার মোটেও ঠিক হয়নি ।
তখন সে বলে, আচ্ছা আর তুমি যে আমার সাথে করছো সেই কাজটা কি ঠিক ছিল ।
তখন আমি বলি , না , সেটাও ঠিক ছিলো না ,
তারজন্য সরি । আচ্ছা তুমি সত্যি টা জানলে কি করে ।
তখন সে অামার চোখের জলের ফোটা গুলো তার শাড়ীর অাঁচল দিয়ে মুচে অামাকে জরিয়ে ধরে
বললো ।
তুমি টেবিলের উপর যে চিরকুট টা রেখে গিয়েছিলে সেটা পড়ে , তখন আমার এত রাগ এসেছিলো তোমাকে
হাতের কাছে পেলে খুন করে ফেলতাম । এরপর যখন রাগ কমলো তখন প্ল্যান করলাম , তুমি যে ভাবে আমাকে কষ্ট দিয়েছো , আমাকে কাঁদিয়েছো , তেমনি আমিও তোমাকে কষ্ট দিবো তোমাকে কাঁদাবো । এরপর তোমার চিরকুটটা টেবিলের উপর রেখে দিলাম যেমন করে তুমি রেখে গেছো ঠিক তেমনি । তারপর আমি মিথ্যে একটা চিরকুট লিখলাম , সেটা বিছানার উপর রেখে ছাদে এসে লুকিয়ে থাকলাম । আমি জানতাম তুমি আমাকে না দেখতে পেয়ে আমাকে পাগলের মত খুঁজবে ।
আমি তখন বললাম , তার মানে আমি কষ্ট দিয়েছি তার প্রতিশোধ নিলে ।
তখন সে বলে , ঠিক তাই তার প্রতিশোধ নিলাম ।
আচ্ছা তুমি কি করে ভাবতে পারলে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাব । আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাব না ।
তুমি যদি আমাকে যেতে বল আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেও তারপরও আমি যাব না । মরার পরও তোমার পিছু আমি ছারবো না , পেত্নী হয়ে তোমার পাশে থাকবো , তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত আমি থাকতে পারবো না । কারন অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায় ।
তখন আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম।
আমিও তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারবো না,
কারন আমিও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি ।


Monday, September 18, 2017

মিয়ামারের জন্য বড় দুঃসংবাদ যা জেনে খুশি হবেন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকায় মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতার খবর অনবরত প্রকাশ পাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশটির পর্যটন খাতে। অনেক বিদেশি পর্যটক মিয়ানমার সফর বাতিল করছেন বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের টুরিজ্যম ফেডারেশন। ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার

ফেডারেশনের চেয়ারম্যান উ খিন অং তান বলেছেন, তার দেশে পর্যটক আগমন আশঙ্কাজনক হারে কমছে। অনেক দেশের সরকার তাদের নাগরিকদের মিয়ানমার সফরে যেতে বারণ করছে। ব্রিটেন তার নাগরিকদের ইতিমধ্যে মিয়ানমার সফরের ব্যাপারে সতর্ক করেছে। এর ফলে মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটকদের ভিড় কমছে। নাগাপালি সৈকতে বিদেশি পর্যটকও হ্রাস পেয়েছে।

খিন অং তান বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রাখাইনে সহিংসতা ও মানবিক সাহায্যের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া এসব খবর বেশ ফলাও করে প্রকাশ করছে। প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মিডিয়া সিএনএন ও বিবিসি ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গা নির্যাতনের খবর প্রকাশ করছে যাচাই না করেই। এবং এধরনের সংবাদ মিয়ানমারের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

খিন অং তান আরও বলেন, পর্যটকরা জানতে চাচ্ছে মিয়ানমার সফর নিরাপদ কী না। আমরা তাদের বলছি রাখাইন অঞ্চলে মাত্র তিনটি শহর আক্রান্ত হয়েছে এ ধরনের সাম্প্রতিক অভিযানে। এছাড়া পুরো মিয়ানমার ভ্রমণ নিরাপদ।

ইয়াঙ্গুনের সেভেন ডেয়েস ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস কোম্পানির সেলস ম্যানেজার উ কং সিতু জার্মানির নাগরিকরা এখনো মিয়ানমার ভ্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। অনেক ট্রাভেল কোম্পানি ভ্রমণ বাতিল করছে।

খিরি ট্রাভেলের এ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার মি স্টিফেন শেরেয়ার জানান, রাখাইন অঞ্চলের সংকট মিয়ানমারের অন্য নিরাপদ অঞ্চলে পর্যটকদের ভ্রমণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ট্রাভেল অপারেটররা আশা করছেন পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে। তবে তা যদি দীর্ঘায়িত হত, অবশ্যই বিষয়টি পর্যটন খাত ছাড়াও মিয়ানমারের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে জানান খিন অং তান।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগষ্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে প্রায় ৪ লাখ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন, লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তা গণহত্যা বলে মিয়ানমারের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশটির অং সাং সুচি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।



Sunday, September 17, 2017

ঢাকায় যারা আছেন সাবধান… বিস্তারিত পড়ুন এবং সাবধান হন

 ঢাকায় যারা আছেন সাবধান – ১। ফার্মগেটে হঠাৎ দেখতে পেলেন, কতগুলো মানুষ একজন মানুষ কে মেরে রক্তাত্ত করে চলেছে আর সে আপনাকে বলছে ভাই, সাহায্য করেন। আপনি দয়া দেখাতে গিয়ে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলেই বিপদ হতে পারে। ওরা আপনাকে মেরে সব কিছু নিয়ে যেতে পারে, কারণ তারা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।

২। ওভার ব্রিজ এর উপর মহিলা কাঁদছে যে, সে যার সাথে দেখা করবে তার মোবাইলে কল দিতে হবে কিন্তু তার কাছে টাকা নেই। বলবে আপনার মোবাইল দিয়ে সেই লোকের নাম্বারে মিসকল দিলেও সে ব্যাক করবে। আপনি কল দিলেন তো ফাঁদে পড়লেন। ওরা নিরীহ মানুষ দেখে তাদের নম্বর সংগ্রহ করে ও পরবর্তীতে সেই নাম্বারে কল করে লোভনীয় প্রস্তাব দেয়, রাজী হলে আপনাকে তাদের আস্তানাতে নিয়ে ব্লাক মেইল করবে।

৩। শাহবাগ, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী জ্যামে আটকে আছেন, নানা ধরণের লিফলেট যেমনঃ দুর্বলতা,রোগে, নানা লোভে আপনাকে ফাঁদে ফেলার ব্যবস্থা। এমন বলে যে রুম ডেট এর ব্যবস্থা আছে।

৪। রাস্তায় সুন্দর চোখ এর বোরকা আলি আপনার সাথে কথা বলতে চায়, প্রেমের প্রস্তাব নয়, কিন্তু ইসারা, যে আপনি ভাববেন একটু চেষ্টা করলে কাছে পাবেন, যদি তাই ভাবেন তবে ধরা পড়ার সম্ভাবনা শতভাগ। আপনাকে তাদের আস্তানায় নিবে, তারপর আর কিছু আপনার করা লাগবে না। সব হারাবেন। মেয়ে দিয়ে ব্লাক মেইল করবে।

৫। গাবতলি, সায়েদাবাদ, কিংবা সদরঘাট , মাওয়া, আরিচা, দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে বসে আছেন, দেখলেন যে বাইরে তাস, লুডু ইত্যাদি খেলছে, কাছে গেলেন কি ফেঁসে গেলেন।

৬। যাত্রাপথে অপরিচিত লোক এর সাথে মতবিনিময় করবেন খুবই কম। আপনি যে স্থানে যাবেন সে স্থান যেন আপনার পরিচিত।

৭। রেলগাড়ির ছাঁদে চলাচল করা থেকে বিরত থাকবেন, কারণ এক দল ছেলে পাওয়া যায়, যারা রেলের ছাদের উপর থেকে ছিনতাই করে ছাদ থাকে ফেলে দেয়।

৮। লঞ্চ এ কম যাত্রী থাকলে উঠবেন না।

৯। যারা দ্রুত যাতায়াত এর জন্য স্পীড বোট এ যাতায়াত করবেন তারা টাকা বা মুল্যবান কিছু সাথে নিবেন না। কারণ দেখা গিয়েছে যে, এক দল আছে যারা বোট ছাড়ার পর নির্জন স্থানে বোট ভিড়িয়ে ছিনতাই করে আপনাকে নামিয়ে দিতে পারে।

১০। হেঁটে যেতে হলে বিভিন্ন বাসের মাঝখান দিয়ে যাওয়া অনুচিত কারণ নেশাখোর ওঁত পেতে থাকে ছিনতাই এর জন্য।








প্রেমের কারণে গোসল করেননি ৬০ বছর, বিস্তারিত পড়ুন

চরম গরম আবহাওয়ার মধ্যে থেকেও টানা ৬০ বছর গোসল করেননি। তবু তিনি দিব্যি আছেন। কী বিশ্বাস হচ্ছে না তো। এমন ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ইরানে।

দক্ষিণ ইরানের একটি গ্রামের বাসিন্দা আমু হাজি-র। বয়স ৮০ ছুঁয়েছে। সে গেলো ৬০ বছর ধরে গোসল করা বন্ধ করে দিয়েছে। বেঁচে চলেছে এক অদ্ভুত জীবন। কিন্তু কেন এমন জীবন বেছে নিয়েছে মানুষটা?

একা একা থাকতে থাকতে একাকীত্বের সঙ্গে লড়াইটা আমু জিতে গেছে ঠিকই। কিন্তু মাঝে মাঝে সাপের বিষের মতো একা থাকার কষ্টটা কেমন যেন রক্তে মিশতে থাকে ৮০ বছরের বৃদ্ধের। তখন মাথা ঠিক থাকে না। মনে হয় একটু ধূমপান করলে ভালো হত। সে সময় আমু ধূমপান করে। বাতাসকে ভারি করে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয় ধোঁয়ার জাল। তবে তিনি তামাক দিয়ে ধূমপান না করে তার পছন্দ প্রাণীদের শুকিয়ে যাওয়া বিষ্ঠা দিয়ে ধূমপান করেন। এমন জিনিস দিয়ে নেশা করলে নাকি দারুণ আমেজ তৈরি হয় বলে দাবি এই আজব মানুষটির।

আমু হাজি-র হঠাৎ একদিন মনে হয়েছিল গোসল করলে নাকি সে অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই সে ২০ বছরের পর থেকে গায়ে পানি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। শুধু তাই নয় তার খাওয়া-দাওয়াও সাধারণ মানুষদের মতো নয়।

আমু খিদে পেলে ভাত-রুটি খায় না তার প্রথম পছন্দ পচে যাওয়া সজারু। আর এমনটা সে ১-২ বছর নয় টানা ৬০ বছর ধরে খেয়ে আসছে। যখন তার দাঁড়ি অনেকটাই বড় হয়ে যায় তখন অতিরিক্ত অংশটা কেটে না ফেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতেই সে ভালবাসে। তবে কেন করেন এমনটা? এই প্রশ্নের উত্তর একবার আমু জানিয়েছিল, স্নান না করলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে সবসময়ই তার মন চায়। তাই তো সে এমনটা করে থাকে।

তবে যে গ্রামে আমুর ২০ বছর কেটেছে সেই গ্রামের বাসিন্দারা জানায় আমু প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর পরই একটি মেয়েকে খুব ভালবেসে ফেলেছিল। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাসে সেই মেয়েটি তাকে ছেড়ে চলে যায়। সেই যন্ত্রণায় সারা জীবন একা থাকার সিদ্ধান্ত নেন আমু হাজি। সেই থেকেই তার বাস জঙ্গলে জঙ্গলে। বন্ধ গোসল খাওয়া-দাওয়া।

তবে ডাক্তাররা ভেবেছিলে নোংরাভাবে থাকতে থাকতে, নোংরা খাবার এবং পানি খেতে খেতে আমুর শরীরটা নিশ্চয় বিষাক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আজব ব্যাপার, বাস্তবে এমনটা হয়নি। ওই চিকিৎসক আমুর শরীর পরীক্ষা করে দেখেন এত অত্যাচারের পরেও তার শরীরে কোনো রোগ বাসা বাঁধেনি। শুধু তাই নয়, সবদিক থেকে মানুষটা বেজায় সুস্থও আছেন। কিভাবে যে এমনটা সম্ভব হল, সে উত্তর আজ পর্যন্ত কেউ পায়নি।

এদিকে আমু জানান, এমন জীবনে তিনি খুব খুশি। তার মতে, যারা বড় বড় অট্টালিকায় থাকে তাদের অনেক কিছু হারানোর ভয় থাকে। তার কাছে কিছু নেই হারানোর মতো, যা ছিল তা অনেক আগেই সে হারিয়ে ফলেছে। তাই এই পৃথিবীতে তার থেকে খুশি মানুষ আর দ্বিতীয় কেউ নেই।



Saturday, September 16, 2017

দুদিন বাদে বিয়ে।আমি তোমায় ছাড়া বাঁচবোনা রফি।

-রফি আমায় বিয়ের জন্য বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে।
-বাসায় আমাদের রিলেশনের কথা জানিয়ে দাও।
-তুমি এখনো কোনো জব করোনা।আব্বু কখনোই আমায় তোমার হাতে তুলে দিবেনা।
-চেষ্টা করে যাচ্ছিতো।বলে দেখো যদি আমায় কিছুটা সময় দিতে রাজি হয়।
-আচ্ছা
-হুম,আমিও আমার বাসায় জানাচ্ছি।এবার যা হবার হবে।
-বাদ দাও,তোমার দাড়ি কত্ত বড় হয়ে গিয়েছে,কাল একদম ক্লিন সেভ হবা।
-শর্ত আছে
-কি শর্ত
-তবে এখন একটা পাপ্পি দাও
-হিহিহি
.
মিমের সাথে পাঁচ বছরের রিলেশন।
এই পাঁচ বছরে দুজন দুজনের মাঝে মিশে গিয়েছি।
*
অনার্স পাশ করেও কোনো চাকরী যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছি।
এই যুগে যে টাকা আর মামা-খালু ছাড়া দামী সার্টিফিকেটও দুষ্কর।
এদিকে মিমকে হারানোর ভয় মনের মাঝে প্রতিটা সময় বিরাজ করছে।
উপায়হীন হয়ে বাসায় জানাতে বাধ্য হলাম।
আব্বু-আম্মু তাতে কিছুতেই সম্মতি জানালেন না।
মিমের কাছ হতে জানতে পারলাম তারো একি অবস্থা।
সেদিন খুব অসহায় লাগছিলো নিজেকে।
এই কি ভালবাসার পরিণতি!দুটি নিষ্পাপ মনের ভালবাসার কি কোনো দাম নেই!
*
সকালে ঘুমিয়ে আছি।৮টায় মিম কখনো ফোন দেয়না।
হয়তো তাঁর জানা,এই সময়টা আমি ঘুমাতে পছন্দ করি।
কিন্তু স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হলাম,মিম ফোন দিয়েছে।
-হ্যালো মিম
-রফি প্লিজ আমার সাথে আজ এখনি দেখা করো[কান্না জড়িত কন্ঠে]
-ক্যানো কি হয়েছে!সব ঠিক আছেতো?
-কিচ্ছু ঠিক নেই,তাড়াতাড়ি সেই বট গাছটার ওখানে আসো।
-আচ্ছা আমি আসছি।
.
আর কিছু না ভেবে কোনো রকম ফ্রেস হয়ে রওনা দিলাম।
যেতে মুটামাটি ১০মিনিট লেগে গেলো।
মিম আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে:
-রফি আব্বু আমাদের রিলেশনের কথা শুনে আমার সাথে আব্বুর এক ফ্রেন্ডের ছেলের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
প্লিজ আমায় তোমার সাথে নিয়ে চলো[কান্নার কন্ঠে]
-তুমি চিন্তা করোনা।আমি দেখি কিছু টাকা জোগাড় করে কালকেই দুজনে কোথাও চলে যাবো
-সত্যি তো
-হুম
*
সেদিন কথা রাখতে ব্যর্থ হই।
বেকারত্ব আর ভাগ্যের খেলায় অল্প কিছু টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলাম।
যেটা দিয়ে হয়তো কাজী অফিসে দুজনের বিয়েটা সম্পূর্ণ করাও সম্ভব হতোনা।
.
চির চেনা বট সেই গাছটার নিচে বসে নিকোটিনের ধোয়াই বুকের পাজড়কে জ্বালিয়ে দিচ্ছি।
আর কল্পনায় ভাবছি,মিম হয়তো এখন বিয়ে নিয়ে কতোইনা ব্যস্ত!
কিন্তু সব কল্পনা মনের ভ্রম ভেঙে মিম দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো।
-তুমি এখানে ক্যানো
-তুমি ভাবলে কি করে,আমি তোমায় ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো
-জানি,কিন্তু এখন কি হবে
-মৃত্যু
-মানে
-দুজনে এক সাথে বাঁচতে না পারলেও,মরতে তো পারবো
*
সেটা আবেগ নাকি ভালবাসা আমার অজানা।
তবে দুজনেই বিষ পান করি।
ভেবেছিলাম সব শেষ।
নাহ্ আসলে কিছুই শেষ হয়নি।
ভালবাসা হোক বা ভাগ্য কিছু একটার টানে দুজন সেদিন বেঁচে যাই।
.
বিষ পান কড়ার পর সেখানকার কিছু লোক অবস্থাটা বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যায়।
আমাদের দুজনেরি বাসার লোক খবর পেয়ে ছুটে আসে।
পেরেছিলাম সেদিন ভালবাসাকে জয় করতে।
সমাজ,জাত-পাত,ধর্ম সব কিছুকে উপেক্ষা করে মিমকে নিজের করে পেতে।
দুজনের পরিবারি অবশেষ হার মেনেই নেয়।
.
কিন্তু এখানেই সব শেষ হলে হয়তো অজানাই রয়ে যেতো ভালবাসার পরিণতি।
আমার বেকারত্বের কারণে উভয়ের পরিবার থেকেই সিদ্ধান্ত নেয় আমায় বিদেশে পাঠানোর।
বিবাহিত জিবনের সবেমাত্র ৫মাস বয়স।
এখনি মিমকে ছেড়ে দূরে থাকতে হবে,ভাবতেই বুকের মাঝটা কেঁপে ওঠে।
কিন্তু আবারো সমাজের কাছে পরাজিত হই।
মিমকে দেশে রেখেই পা বাড়াতে হয় বিদেশের উদ্দেশ্যে।
এয়ারপোর্টে মিম জড়িয়ে ধরে কতোই না কান্না।
একদম বাচ্চা মেয়ের মতন।
আমিও ফেলেছিলাম দু-ফোটা চোখের পানি।
তবে সেটা আড়ালে।
.
বিদেশে এসে ৪মাসে মুটামাটি সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি।
এরি মাঝে বাড়ি দুবার টাকাও পাঠিয়েছি।
এবং মিমের সাথে কথা বলতে একটি এন্ড্রয়েড ফোনো পাঠিয়ে দিই।
প্রতি তিন দিনে কাজের ফাকে একবার করে কথা হতো।
হাজার মাইল দূরত্বের মাঝেও আমাদের ভালবাসায় কোনো কমতি ছিলোনা।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো দুটি বছর।
এখন বাড়ি যাবার পালা।
মিমকে জানাতেই সেকি খুশি।
আমিও এক অন্যরকম ভালোলাগা নিয়ে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
মনের মাঝে সবার জন্য কত্ত কথা জমে আছে সেটা শুধু এই মনটাই জানে।
.
এয়ারপোর্টে নেমে কিছুটা আবাক হলাম।আব্বু-আম্মু কাকা-কাকী সবাই এসেছে শুধু মিম আসেনি।
-আম্মু মিম আসেনি?
-নাহ্,ও বললো তোর জন্য আজ খুব স্পেশাল রান্না করবে।তাই বাড়ি থেকে গেছে।
-একা বাসায়?
-হুম।
-ধ্যাত একা রেখে আসতে গেলে ক্যানো!
-আরে সমস্যা নেই।বুঝিতো!বাসায় গেলেই দেখতে পাবি।
*
বাসায় এসেই অবাক,ঘর খোলা।
মিম বলে ডাক দিয়েও কোনো সাড়া পেলাম না।
প্রতিটা ঘর খুঁজলাম,কিন্তু মিম কোথাও নেই।
আম্মু বললো হয়তো পাশের বাসায় গেছে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে কোথাও পেলাম না।
থানায় মিসিং কম্পেলেন করলাম।
দুই দিন কেটে যায় তিন দিন কেটে যায় চার দিন কেটে যায় মিম আরে ফিরে আসেনা।
আমার সবটা চেষ্টা দিয়েও খুঁজে পেলাম না।
.
কেটে গেলো চারাটি মাস।
সারাদিন মিমের ভাবনায়ি পরে থাকি।
মন বলছিলো মিম হয়তো একদিন পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে রফি আমি চলে এসেছি।
কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠলোনা।
সবাই ধরে নিয়েছে মিমকে কেউ কিডন্যাপ করে মেরে ফেলেছে।
সময়ের সাথে আমিও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি।
.
বিকেলে নদীর ধার দিয়ে হাঁটছি আর পুরোনো দিনগুলো ভাবছি।
এই নদীর ধারে কতোইনা মিমের হাতে হাত রেখে স্রতের সাথে ঢেউএর খেলা দেখেছি।
মিম পাশে থাকলে হয়তো আজো আগের মতন করেই দিনটা ফিরে পেতে পারতাম।
হঠাত ফোনটা বেজে উঠলো।
স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বুকের বাম-পাশটা দুমড়ে-মুচড়ে গেলো।
-মিম কোথায় তুমি?ভালো আছো তো?তোমার কিছু হয়নিতো?
-এত্ত কিছু বাদ দাও,আমার ডিভোর্স চাই।
-মা...মানে।মিম কোথায় তুমি একবার বলো প্লিজ।
-সময় হলে বলবো।আমি এখন রিহানকে ভালবাসি,আর তাকেই বিয়ে করবো।তোমার ডিভোর্সের অপেক্ষায় শুধুমাত্র সম্ভব হচ্ছেনা।
-কি বলছো এগুলো
-তুমি বিদেশ যাবার পর কিভাবে যেন রিহানের সাথে জড়িয়ে যাই।আস্তে আস্তে অনেকটাই ভালবেসে ফেলি রিহানকে।যেদিন তুমি বিদেশ থেকে ফিরে আসবে সেদিন আমি ইচ্ছে করেই এয়ারপোর্টে যাইনি।প্লান অনুযায়ী রিহানের সাথে পালিয়ে যাই।কিন্তু আমরা এখনো বিয়ে করতে পারিনি।প্লিজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভাব আমায় মুক্তি দাও।
*
সেদিন বুকের মাঝে হাজারো অভিমান বিরাজ করেছিলো।
বুঝতে পারিনি এ নিয়তির কোন খেলা।
অশ্রু ভেজা চোখে মিমকে আমার থেকে মুক্তি দিয়ে দিই।
মনের মাঝে তখন প্রশ্নের ছড়া ছড়ি।
তবুও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি মিম যেখানেই থাকুক যেভাবেই থাকুক ভালো থাকুক।
<আব্বু-আম্মুর সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিলে,
হয়তো জিবনের গল্পটা এমন হতোনা।>
-Bristipatuiary  (collect

মেয়ে যখন বড় হয় তখন বাবা মায়ের চিন্তার অন্ত থাকেনা।

মেয়েটি তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাবার। সময় ছোট একটি চিরকুটে লিখেছিল, "বাবা অামাকে ক্ষমা করে দিও।"
মেয়েটির বাবা সেদিন তার মেয়েকে ক্ষমা করতে পারেনি। বাচ্চাদের মত উঠানে বিলাপ করে কেঁদেছিল। প্রলাপ করে প্রায়ই বলত, অামার মেয়েটা একটিবার অামার কথা ভাবলনা।"
.
লোকটির নাম মাসুদুর রহমান। নরসিংদী ইউ, এম, সি জুট মিলস এ কাজ করে। মাসুদুর রহমানের স্ত্রী নরসিংদী সদর হাসপাতালে মেয়েটিকে জন্ম দেয়ার সময় মারা যায়। 
এলাকার মানুষ খুব করে বলত, "অাবার একটা বিয়ে করো, সারাটা জীবন পড়ে অাছে।"
মাসুদুর রহমান মেয়েটিকে কোলে নিয়ে বলত, "অামার মেয়েটাই অামার সারা জীবনের সুখ। সুখীই অামার সুখ। "
সেই থেকে মেয়েটির নামই "সুখী"
মাসুদুর রহমান যখন কাজে চলে যেতেন তখন সুখীকে তার দাদীর কাছে রেখে যেতেন। কাজ থেকে ফিরে সারাক্ষন মেয়েকে নিয়ে সময় কাটাতেন। রাতে বুকে নিয়ে মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। সে সুখী অাজ কত বড় হয়ে গেছে। বাবার কথা একটিবার ভাবার প্রয়োজন মনে করলনা। 
.
মেয়ে যখন বড় হয় তখন বাবা মায়ের চিন্তার অন্ত থাকেনা। সুখী যখন হাইস্কুল পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হল। তখন থেকেই মাসুদুর রহমান মনে মনে একটি যোগ্য পাত্রের সন্ধান করছিলেন। মেয়েটিকে তিনি সুখী দেখতে চান। 
.
যখন ভাল একটি পাত্রের সন্ধান পেলেন তখন গতকাল সুখীকে মাসুদুর রহমান বলেছিলেন, "অামার মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে। পরের ঘরে যাবার সময় হয়েছে। মা'রে শুক্রবার তোকে পাত্রপক্ষ দেখতে অাসবে" 
তখন সুখীর চেহারাটা দুঃখী দুঃখী ভাব ছিল। মাসুদ ভেবেছিল তাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে তাই হয়তো মেয়েটার মন খারাপ। কিন্তু সকালে উঠে অার সুখীকে পেলোনা। মাসুদকে একা রেখে তার মেয়ে নিজের সুখ খুঁজতে চলে গেল। 
.
প্রতিবেশীরাও বলতেছে, "অাগেই বলেছিলাম মা মরা মেয়েটার জন্য হলেও একটা বিয়ে করো। মা ছাড়া মেয়েরা এমনই হয়"
মাসুদ রাতের অন্ধকারে সুখী সুখী বলে কান্না করত। অার প্রতিবেশীরা ঠাট্টা করে বলত, "এমন মেয়ের জন্যও কেউ চোখের জল ফেলে?
.
. চার বছর পরের কথা। মাসুদ অনেক অসুস্থ। বলা চলে জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। মাসুদের মা বুড়া মানুষ হয়েও এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে ডাক্তার দেখাইত। মাসুদ বলত, "মা অযথা চেষ্টা করছ। অামার দিন অার বেশী নেই। সুখীকে একবার দেখে যেতে পারলে শান্তি পেতাম। "
মাসুদের বাবা নেই। বুড়া মা অার কতটুকু দৌড়াতে পারে এদিক সেদিক? প্রতিবেশীরা একদিন অাসলে দ্বিতীয়দিন অার অাসেনা। এমনি করে মাসুদ জীবন অার মৃত্যুর মাঝখানে শুয়ে অাছে। কখন জানি মায়ার এই পৃথিবী ছাড়তে হয়। 
.
মাসুদের মা মাসুদের কানের কাছে এসে বলল, "মাসুদ তোর মেয়ে এসেছে। সুখী এসেছে তোকে দেখতে। "
মাসুদ উঠার চেষ্টা করেও অার পারলনা। সুখী দৌড়ে এসে মাসুদের পায়ে ধরে কান্না করতেছে অার বলতেছে, "বাবা অামাকে তুমি ক্ষমা করোনি, তাই অামি সুখী হইনি"
সুখীর পিছনে তার তিন বছরের ছেলে। মাসুদ একবার নাতিটাকে দেখে নিল। তারপর বলতে লাগল, "মা'রে অামি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তোকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল শেষবারের মত। অাল্লাহ অামার দোয়া কবুল করেছেন। 
.
সুখী চোখের পানিতে বাবার পা ভিজাচ্ছে অার বলতেছে, 
বাবা অামি পালিয়ে গিয়ে সুখী হতে পারিনি। অামার স্বামী বিয়ের দেড় বছর পর থেকে প্রচন্ড নেশা করত। অামি কিছু বললে অামাকে মারধোর করত। গতকাল এত মারছে যে অার সহ্য করতে পারিনি। ছেলেটাকে সাথে করে নিয়ে চলে এসেছি। অামাকে জায়গা দিবানা বাবা? ''
মাসুদ মুচকি হাসি দিয়ে বলল, বাবা মা তাদের অাটটা দশটা ছেলে মেয়েকে জায়গা দিতে পারে অার অামি তোকে জায়গা দিতে পারবনা?
.
পরেরদিন সুখী বাবার হাত ধরে বলতেছে, "বাবা, তুমি অনেক অসুস্থ। তার উপর অামি এসে জুুটেছি। কিভাবে সংসার চলবে? কিভাবে বাকি দিনগুলো যাবে?
মাসুদ মুখে মৃদু হাসির রেখা টেনে বলতেছে, "অামি মরে গেলে তোর বাকি জীবন সুখেই কাটবে। জুট মিলস থেকে অনেকগুলো টাকা পাবি। অামি সবকিছু তোর নামেই করেছি। সুখী মা, তুইতো অামার সুখরে"
.
সুখী তার ছেলেটাকে বুকে নিয়ে বোবার মত স্তব্ধ হয়ে গেছে। চোখে কোন পানি নেই। মাসুদকে বড়ই পাতার গরম জলে শেষ গোসল দিচ্ছে। 
"সুখী সুখ পেল কিনা জানা নেই, মাসুদ তার মেয়েটিকে নিয়ে সুখী হতে চেয়েছিল।"

Wednesday, September 13, 2017

আমি নীলাকে বিয়ে করেছিলাম।যদিও পারিবারিক ভাবে বিয়েটা হয়।

আমি নীলাকে বিয়ে করেছিলাম।যদিও পারিবারিক ভাবে বিয়েটা হয়।আসলে আমাদের মাঝে বিয়ের আগেই সম্পর্ক ছিলো।তবে সেটা ফেসবুকের মেসেনজারের টুংটাং শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো।বাস্তবে দেখা হয়নি।কথা হয়নি ফোনেও।নিশ্চয় ভাবছেন গাজাখুরি গল্প।আসলে সত্যিই বিয়ের আগে কোন ভাবেই আমাদের কথা হয়নি।নীলার নিজেস্ব ফোন ছিলো না।বাসার ফোনে ফেসবুকিং করতো।বড় ভাইয়ার ভয়ে ফোন নম্বর দিতো না।ফোনে কথা বলতে গিয়ে যদি ধরা খেয়ে যায়।তখন যদি আবার সারা জীবনের জন্য আমাকে হারিয়ে ফেলতে হয়।
ভালোবাসতো অনেক।তাই হারানোর কথা চিন্তাই করতে পারে না।
,,
ভালোতো আমি বাসতাম।তা না হলে কি কথা না বলে,অপরিচিতো একটা মেয়ের জন্য সারাক্ষণ বিভোর থাকতাম?ওকে পাওয়ার জন্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার দৃড় চেষ্টা করতাম!
জানিনা!এসব পাগলামী হয়তো।তবুও দিনগুলো হাজারো ব্যস্ততায় কাটালেও,রাতগুলো যেন স্থীর হয়ে গেছিলো আমার জন্য।মনের মাঝে অচিন পাখি কুটির তুলে।কুটিরের আঙিনায় সারাক্ষণ বিচরণ করে।
রাতের অন্ধকার কেটে যায়,কিন্তু সে পাখি রয়ে যায় কুটিরে।এ পাখিরে কি অতিথি ভাবা যায়?
আমি ভাবতে পারিনি।হয়তো আবেগ বেশি ছিল!কিন্তু ভালোবাসাটা খাঁটি।
,,
সেদিন যখন বিয়াল্লিশটি ভাষায় নীলাকে প্রপোজ করেছিলাম অডিও ক্লিপ এর মাধ্যমে।সেদিন আমি সাড়ে ছয়শ কিলোমিটার দূরে থেকেও নীলার জল টলমলে চোখে ভালোবাসা অনুভব করেছিলাম।কিন্তু আজ চাইলেও ঐ আইডির মেসেনজারে হাজারো মেসেজ পাঠিয়ে একটা রিপ্লে আসেনা।
,,
আমি অবাক হয়েছিলাম সেদিন,যেদিন হাজারো বাধা পেরিয়ে ও আমাকে বিয়ে করে।
সেদিনই আমি দেখেছিলাম ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পেতে একজন মেয়ে কতোটা সংগ্রাম করতে পারে।
আর আজ ওসব সৃতি ডুকরে কাঁদায়।
,,
যখন বাসর ঘরে ঢুকি,আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না।সেদিন ও আমাকে বলেছিলো, 'এই বুকের খালি জায়গাটা কি আমাকে দিবেন সারা জীবনের জন্য?'
আমি চুপ করে ছিলাম।ওর কান্নায় আমিও কাঁদছিলাম।বলতে পারিনি এই বুকটা যে শুধু তোমারি পাগলী।
,,
ভালোবেসে বিয়ে করে নাকি সুখি হওয়া যায় না।কিন্তু আমার নীলাকে নিয়ে আমি খুব সুখি ছিলাম।ভোর বেলা জাগিয়ে তুলতো ফযর নামাজটা এক সাথেই পড়তে হতো প্রতিদিন।যখন সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার জন্য বের হতাম,তখন নীল শার্টে লাল টাইটা ঐ বেঁধে দিয়ে কপালে একটা মিষ্টি চুমু এঁকে দিতো।খাবারের টিফিন টা দিতো কখনো ভুল করতো না।ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে যখন দুপুর ০১:০০pm এ থামে,ঠিক তখনি ফোন করে যহর নামাজের কথা স্বরণ করে দিতো।
,,
দীর্ঘ্য ৮ ঘন্টা পর যখন বাড়ি ফিরতাম ব্যস্ত হয়ে,সূর্য তখন চাঁদকে ডাকে।আর আমার নীলা রান্না শেষ করে বাড়ির উঠোন ঝাড়ু দিয়ে,আমার জন্য নাস্তা নিয়ে অপেক্ষা করতো।আমি আসতাম খুব বিরক্ত হতাম।মাঝে মাঝে ওকে প্রচন্ড রাগ দেখাতাম।কিন্তু ও!ও ছিলো একেবারে ভিন্ন রকম।ও আমার রাগে পাত্তা না দিয়ে আমার শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করতো।আমি বারবার ওর ভালোবাসার কাছে হার মানতাম।কিন্তু আমিতো কম ভালোবাসতাম না।
,,
একদিন আমি ওকে দুষ্টামী করে কাছি ডাকি একটা গোপন কথা বলার জন্য।কানটা আমার মুখের খুব কাছে আনতে বলি।আমার কাছে আনতেই ওর গালে একটা মিষ্টি চুমু দেই।আমার দেওয়া প্রথম চুমু।সেদিন আমি নীলার চোখে মুখে সুখ দেখেছিলাম।এই ছোট্ট একটি কাজে সে যে কি খুশি হয়েছিল আজ বোঝাতে পারবো না।এই অবুঝ মেয়েগুলো ছোট ছোট ভালোবাসাগুলো আকড়ে নিয়ে নিজেদের পৃথিবীতে সব থেকে সুখি মনে করি।এটা নীলার কাছেই বুঝে ছিলাম।
,,
আমাদের বাড়িটা গ্রামেই ছিল।চারদিকে সবুজে ঘেরা মাঝে ইট সিমেন্টে তৈরি একটা টিনের চালার সাজানো গুছানো বাড়ি।সে বাড়িতে বাবা মা,ভাইয়া ভাবী,নীলা,ছোট্ট একটা ভাজতি।অনেক সুখের সংসার ছিল আমাদের।
,,
আমার এখনো মনে আছে,বিয়ের কয়েক মাস পরেই আষাঢ় মাস আসে।সেদিন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো।টিনের চালার ঝুমঝুম বৃষ্টি দেখে তোমার সে কি ছেলে মানুষী।তুমিতো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছিলে।
আচ্ছা নীলা এখন যেখানে আছো,সেখানে কি বৃষ্টি হয়?তুমি কি সেখানেও বৃষ্টিতে ছেলে মানুষী করো?
,,
তোমার মনে আছে নীলা?তুমি যেদিন আমার কাছে একটা বেবি চাইছিলে।আমি তোমাকে এক বছর অপেক্ষা করতে বলেছিলাম।কিন্তু তুমি এক মহূর্ত অপেক্ষা করতে রাজি ছিলে না।একদম পাগলী ছিলে তুমি।তোমার পাগলামোতে আমি রাগ করে গালি দিলেও আমার ভালোই লাগতো।আমি অবাক হতাম তুমি আমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে কিভাবে এতো ভালোবাসতে?তুমিতো সবার মন জয় করেছিলে।
তুমি পারতেও ভাই।
আমি আমার জীবনে আমার বড় আপুকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি।কিন্তু তুমি এসে আমাকে হার মানালে।আমার বোন কিন্তু আমার কাছে থেকে আমার বোনের কমল মনটা তুমি চুরি করে নিলে।তোমার জন্য আপুও মাঝে মাঝে কাঁদে।আমি বুঝতাম না যে চোখে জল দেখিনি সে চোখে জল আসে কোথা থেকে?!
,,
তোমার গর্ভে যখন একটা অস্তিত্ত্ব টের পেলে।সে আমাদের সন্তান হবে।আমরা ওকে কোলে নেবো,ওকে দোলনায় দোলাবো।অনেক অনেক স্বপ্ন।সে বোকা অস্তিত্ত্বহীন স্বপ্ন আজ ছোট বাচ্চাদেরকেও হার মানায়।
যখন তোমার ভাইয়াকে ফোন করে বললে যে আমাদের সন্তান পৃথিবীতে আসবে।আমার মনে হয় তোমার ভাইয়া খুশিতে লাফাচ্ছিলো।তা না হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ না হতেই বাবুর জন্য তিন বস্তা কাপড় নিয়ে এতো দূরের পথ পাড়ি দিয়ে আসতো না।
তোমার ভাইয়া সেদিন তোমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তোমাদের বাড়িতে।কিন্তু আমি হতোভাগা আমার বাচ্চার কথা চিন্তা করে যেতে দেয়নি গর্ভাবস্থায়।
,,
যেদিন তোমার খুব প্রসব বেদনা।সাথে সাথেই তোমার ভাইয়াকে ফোন দিয়েছিলাম।
আর তুমি ভয়ে আমার হাত দুটো জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলে অঝরে।তুমি বলছিলে ওগো যদি আমি না থাকি তবে কে এই বুকে কাউকে যায়গা দিবেনাতো?
আমারো কান্না পেয়েছিলো।প্রচুর কেঁদেছিলামও।আমার মা আর তুমি হাসপাতালে যেতে রাজি হওনি কাঁটার ভয়ে।মা তোমাকে ভীষণ ভালোবাসতো।
কিন্তু তোমার বেদনার কান্নায় আমার বুকটা চিরে যাচ্ছিল।
,,
মা যখন ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার করে বললো তুমি আর পৃথিবীতে নেই।মা বেহুশ হয়ে বারান্দায় পড়ে গেছিলো।আর বোবা আমি তোমার কাছে গিয়ে তোমাকে ডাকতে শুরু করলাম নীলা,,,,নীলা........!
তোমার পাশে একটা ফুটফুটে বাচ্চাও কাঁদছিলো।কিন্তু আমার তো তোমাকেই প্রয়োজন ছিলো।কেনো এমন হলো বলতে পারো?
তোমার ভাইয়া আসে।খুব গালি দেয় আমায়।গালি দেওয়ারি কথা তোমাকে হাসপাতালে নেইনি।আসলে এটাই কি বড় ভুল ছিল?তোমার ভাইয়া সেদিনই চলে যায়।
,,
আজ প্রিয়ন্তির দ্বিতীয় জন্মদিন।তোমাকে ভীষণ মনে পড়ছে।এতোটুক একটা বাচ্চা আমার কষ্টগুলো একদম তোমার মতো করে বুঝে।কি সুন্দর করে কথা বলে।তোমার মতো সবা মন জয় করেছে তোমার মেয়ে।হাসলে একদম দু গালে তোমার মতো টোল পড়ে।
কিন্তু তুমি নেই।
এই একটা শূণ্যতা আমাকে সব সময় তাড়িয়ে বেড়ায়।
মেসেনজারে মেসেজগুলো দেখার কেউ নেই।কিন্তু মেসেজ পাঠাতে আজ একটুও বিরক্তি নেই।খালি বুকটার সাথে ভালোবাটা আজও আছে একি রকম।
,,,
লিখা-মোঃএকরামুল হক আবির

বাব্বা আপনি আবার রাগও করতে পারেন।সবসময় তো দেখি চশমা চোখে, মাথা নিচু করেই হাটেন

'-এই যে?
-জি বলুন।
-আপনি রাতে ঘুমান না?
-মানে কি?
-মানে হচ্ছে, এই যে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে টলতে টলতে আসেন ;নিশ্চয় রাতে ঘুমানো হয়না মনে হয়?
-তা শুনে আপনার কি,আমি কি আপনাকে চিনি নাকি যে আপনাকে বলব!
-চেনার দরকার নেই, তবুও বলুন।
-আপু আপনি কে বলুনতো?সেই তখন থেকে প্যাচাল পেরে যাচ্ছেন।
-বাব্বা আপনি আবার রাগও করতে পারেন।সবসময় তো দেখি চশমা চোখে, মাথা নিচু করেই হাটেন।এই ভালো কথা আপনার সেই মোটা ফ্রেমের চশমা খানা কোথায়?আজ পড়েননি যে?
-ইচ্ছে হয়নি তাই পড়িনি।আপনার কোন সমস্যা? পাগল নাকি? এই বলে আমি হনহনিয়ে ক্লাসের দিকে পা বাড়ালাম।
একটু গিয়ে পেছন ফিরে দেখি মেয়েটি হেসে হেসে গড়িয়ে পড়ছে আর আমাকে পেছন ঘুরতে দেখেই চিৎকার করে বলল মিস্টার আহান কালকে যেন চোখে চশমা দেখি?
এতক্ষনে আমি মেয়েটির দিকে ভালভাবে লক্ষ্য করলাম।সাদা চুড়িদারে শ্যামবর্নের মেয়েটিকে কোন পরির সাথে তুলনা করলেও ভুল হবে না।কি মায়াবী একটা মুখ। আমি আর অতকিছু না ভেবে ক্লাসে চলে গেলাম।
সমস্যা কিছুই ছিল না।কিন্তু সমস্যা বাধল রাতে আমি যখন পড়ার টেবিলে বসলাম তখন। কিছুতেই যেন পড়ায় মন দিতে পাড়ছিনা।চোখের সামনে শুধু সেই শ্যামবালিকার ছবি ভাসতে লাগল। আর তার সেই কথা কানে বাজতে লাগল,"মিস্টার আহান কালকে যেন চোখে চশমা দেখি!সে রাতে আর ঘুমই হোলোনা।
রাতে এত প্রতিজ্ঞা করলাম যে আমি কালকে চশমা পড়ব না।নিজেই নিজেকে বলতে লাগলাম কোথাকার কোন মেয়ে বলেছে তার জন্যে তার কথা আমাক শোনার লাগবে নাকি? কিন্তু পরের দিন ঠিকি আমাকে চশমা চোখে দেখা গেল।
-ক্লাসের পর লাইব্রেরির পেছনে বসে ফোন চাপছিলাম।হটাৎ পেছন থেকে কেউ একজন মাথায় টোকা দিল।মেজাজ পুরা ৪২০ ডিগ্রি এঙ্গেল এ খারাপ হয়ে গেল।পেছন ফিরে যেই বকা দিতে যাব অমনি দেখি কালকের সেই মেয়ে হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে চেয়ে আছে।ভাবছিলাম বকা দিব কিন্তু এই মেয়ের নিষ্পাপ হাসি দেখে আমার মুখ দিয়ে আর কথাই বের হচ্ছেনা, তার ওপর এই মেয়ে আবার আমার প্রিয় রং হলুদ কালারের চুড়িদার পড়ছে।আচ্ছা এই মেয়ের কি চুড়িদারের দোকান আছে নাকি?
-এই যে মশাই কি দেখেন অমন করে হু, বলে আমার চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিল।আমার কথামত চশমা পড়ছ তাহলে?
-আমি কারো ইচ্ছায় চশমা পড়ি নাই।আমার ইচ্ছা হইছে তাই পড়ছি।আর আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন কেন?
-শোনো আজ থেকে আমরা বন্ধু। যদিও আমি তোমার এক ব্যাচ জুনিয়র কিন্তু আমরা তুমি করেই কথা বলব।অত আপনি আপনি করতে পারবোনা।
সেই সময়টা থেকেই ইরির সাথে বন্ধুত্ব, তখন থেকেই একসাথে ক্যাম্পাসের সোনালি সময় গুলো পার করা।তার সাজানো তুমি থেকে কবে যে আমরা তুই এ নেমেছি দুজনের কেঊ টের পাইনি।
এর মাঝে আমি একদিন তাকে জিজ্ঞেস করছিলাম যে সে প্রথমে কেন আমার সাথে এভাবে পরিচিত হয়েছে।তার ঊত্তর ছিল এরকম, গাধাদের অতকিছু জানতে হয়না।আমিও আর কিছু জানতে চাইনি।এভাবেই তিনটি বছর কেটে গেল।
'
--ইরি আমাকে মাঝেমাঝেই রান্না করে খাওয়ায়।আজকেও ক্যাাম্পাসে শিমুল তলায় বসে তার হাতের খিচুড়ি তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছি।
বুঝছোস ইরি, তোর হাতের খিচুড়ির সাথে আসলে কোন কিছুর তুলনা হয়না। দেখি মেয়েটা আমার দিকে ভেজা ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে।আমি আর তাকে কিছু না বলে খাওয়ার দিকে নজর দিলাম।সেই সবে থেকেই দেখে আসতেছি আমার খাওয়ার সময় মেয়েটা অপলক আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
-আহান শোন, বাবা না আমার বিয়ে ঠিক করেছে?
-কথাটা শুনে বুকটা যেন ছ্যাত করে উঠল।তবুও কষ্টটা লুকিয়ে বললাম ভালোতোরে।বয়স তো আর কম হোলোনা।দিন দিন তো বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস। এবার বিয়েটা করেই ফেল।
-তুই খুশি হয়েছিস?
-খুশি হবনা কেন;তোর বিয়ে বলে কথা আর তোর বিয়েতে আমিতো নাঁচব।
-এখন থেকেই নাচ তুই বলে সে উঠে গেল।আমি এত ডাকলাম তবুও সে একবার পেছন ফিরে তাকালো না।তবে আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম মেয়েটা হাত দিয়ে তার চোখের জল মুছল।
-আমি জানি ইরি আমাকে ভালোবাসে, আর আমি এটাও জানি ইরিও আমার প্রতিটা সত্তার সাথে মিশে গেছে।
কিন্তু কোন এক অজানা কারনে দুজন দুজনকে কিছুতেই মনের কথাগুলো বলতে পারিনা।
-রাতে ঘুমুতে গেলাম কিন্তু কিছুতেই দু চোখের পাতা এক করতে পারছিলামনা। শুধু ইরির সেই ছলছল চোখ মনে পরতে লাগল;যেই চোখের ভাষা আমাকে ছুতে চায়,যেই চোখ আমার কাছ থেকে কিছু শুনতে চায়।মনের মাঝে কি এক তোলপাড় শুরু হল।না,এই মেয়েকে ছাড়া আমার কিছুতেই চলবে না।তাকে আমি অন্যের হতে দিতে পারিনা।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৯.৩৫ বাজে।১০ টা পর্যন্ত ইরিদের হল খোলা থাকবে।আমি আর কিছু না ভেবে ইরিদের হলের দিকে দৌড় দিলাম।সেখানে গিয়ে তাকে ফোন দিলাম।কিন্তু এই মেয়ে ফোন ধরে না কেনো?দ্বিতীয় বারে সে ফোন ধরে বলল.....
-হুহ,বল
-হু কি,ফোন ধরিসনা কেন?
-কি দরকার সেটা বল(গম্ভীর ভাবে)
-একটু তোর হলের নিচে আয় তো, আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি।
-মানে কি আহান?এই সময় কেন?আমি পারব না।
-আয় না প্লিজ!
- পারব না।
-ওপাশে ফোন কাটার শব্দ পেলাম।কিন্তু আমি জানি সে আসবে,তাকে আসতেই হবে।একটু পরেই আমার ধারনা প্রমাণিত করে তাকে মাথা নিচু করে আসতে দেখা গেল।এসেই বলল....
-কি,বল?
-কই এর আগে তো কখনও কিছু জানতে চাসনি।যখন যা করতে বলেছি তাই করেছিস।তবে অাজ কেন?
-সবসময় সবকিছু এক থাকেনা আহান।কি বলবি বল,দাড়োয়ান চাচা গেট বন্ধ করে দিবেন।
-ইরি শোন,তুই না এই বিয়েটা করিসনা।
-কেন করবোনা?
-কারন আমি তোর হাতের খিচুড়ি না খেয়ে থাকতে পারবোনা,তোকে ছাড়া থাকতে পারবোনা,তোকে অন্যের হতে দেখতে পারবোনা রে।
দেখি ইরি কেঁদে ফেলছে।এই ইরি কাঁদছিস কেন?
-সে কোন কথা না বলে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল হাদারাম,এই কথাটা বলতে তুই এতটাদিন সময় নিলি।তুই আসলেই একটা হাদারাম!কোথথাও বিয়ে করবোনা আমি।আমার সকল সুখতো তোকে ঘিরেই।
-এতক্ষনে বুজলাম আমার চোখ বেয়েও অশ্রুর ধারা নামা শুরু করছে।নামুক এই অশ্রু, মুছে নিয়ে যাক আমাদের দুজনের এতদিনের সকল অসারতা।
,
Parves Alam Shohag

মেঘা, কই তুই মা,ঘুমিয়ে পরলি নাকি?

---- মেঘা, কই তুই মা,ঘুমিয়ে পরলি নাকি?
---- না বাবা,ঘুমাই নি, পড়ছি,এসো।
---- মা তোকে না জানিয়ে একটা কাজ করেছি মা।
---- কি করেছ বাবা।
---- আমার এক বন্ধুর ছেলের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি।ছেলে ভাল।ভাল জব করে।তুই সুখে থাকবি মা।তোর কোনো আপত্তি নেইতো মা।
--- আমার কোনো আপত্তি নেই বাবা।কিন্তু আমি আগে লেখাপড়া শেষ করতে চাই।
---- বিয়ের পর পড়বি। ছেলে বলেছে তোকে পড়াবে।
আর কথা বাড়ালাম না।বাবাকে কিছু বলে লাভ হবেনা।
---- মেঘা, উঠ, ৯টা বেজে গেছে।
---- হুম,আরেকটু ঘুমাই মা।
---- কাল বললি ক্লাশ আছে,ডেকে দিতে সকালে।
---- অহহহ আরো আগে ডাকলেনা কেন?
---- সেই কখন থেকে ডাকছি।
আজও দেরি হয়ে গেল।আজও বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে ওই বজ্জাত স্যার।বিড়বিড় করে ফ্রেশ হতে গেলাম।
রেডি হয়ে নাস্তা না করেই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলাম।
ধুর একটা রিক্সাও দেখা যাচ্ছেনা।তাড়াহু
রোর সময় কিছুই পাওয়া যায়না।অনেকক্ষন পরে রিক্সা পেলাম।
অবশেষে কলেজে পৌছলাম।
---- মে আই কাম ইন স্যার?
---- কটা বাজে মেম?
---- ইয়ে মানে ১০ টা বাজে স্যার।
---- আর কয় মিনিট বাকি ক্লাস শেষ হওয়ার?
----- ১৫ মিনিট স্যার।
----- মেম আপনি ১৫ মিনিট বেশি কেন ক্লাশ করবেন।আপনি একটু অপেক্ষা করুন।আমি যাওয়ার পর ক্লাসে আসবেন কেমন।
মুচকি হেসে উনি ক্লাস নিতে লাগলেন।
ধ্যাত,নাস্তা করে আসলেই ভাল হত।শুধু শুধু এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।আরেকটু দেরি করে আসলে এখানে দাঁড়াতে হতনা।বেটার নাম কত নরম।শুভ্র।কত শীতল নাম।আর উনি কঠোর টাইপের মানুষ।বেটাকে একদিন বাগে পাই,দেখাব কত ধানে কত চাল।
---- এইযে মেম, আপনি এখন ঢুকতে পারেন।আমার ক্লাস শেষ। আর কাল থেকে দেরি করবেন না কেমন।
মুচকি হেসে চলে গেল।রাগে গজগজ করে ক্লাসে গেলাম।
ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় ওদের বললাম
---- বাবা বলেছে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
----- ওহ,গ্রেট নিউজ।ট্রিট বান্ধবী ট্রিট।< ( হেপি)
---- ছেলে কি করে?( সোহাগ)
---- তোর বিয়েতে পেট ভরে খাব।( সালমান)
----আমি আছি আমার যন্ত্রনায়,আর তোরা আছিস খাওয়া নিয়ে।
---- কেন তোর আবার কি হল?(নুসরাত)
----আমি বিয়ে করতে চাইনা।
---- কেন তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?(সোহাগ)
----- আরে ধুর,এরকম হলে তো তোরা জানতি।
---- তাহলে সমস্যা কি? (সালমান)
---- আমি আগে পড়াশোনা শেষ করতে চাই।নিজের মত করে জীবন সাজাতে চাই।এখন সংসারে জড়াতে চাইনা।
---- তুই ছেলেটার সাথে কথা বলে দেখতে পারিস।( সালমান)
----ওকে দেখি কি করা যায়।
ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসি।
দুপুরে খেয়ে দিলাম এক ঘুম।বিকেলে ঘুম ভাঙল।ভাল লাগছিলনা তাই ভাবলাম একটু নদীর পাড় থেকে ঘুরে আসি।
ফ্রেশ হয়ে পছন্দের জামা পরলাম, হিজাব, হাতে কাচের চুড়ি,পায়ে নুপুর, চোখে কাজল মাখলাম।এগুলাই আমার পছন্দের জিনিস।এগুলার একটা কম হলে মনে হয় সাজ হয়নি।
নদীতে বাতাস বইছে।খুব ভাল লাগছিল।গরমের দিনে এরকম পরিবেশ খুব কম ই পাওয়া যায়।
---- তুমি গনিত বিভাগের মেঘা না?
---- আরে স্যার আপনি, আমার নাম জানলেন কেমনে? আমি তো ক্লাশে ঠিক সময় আসিনি একদিনও। নামতো বলা হয়নি কখনও।
---- মেঘলা রহমান।সবায় মেঘা ডাকে। রাইট?
---- হুম।
অবাক হয়ে গেলাম।মনে মনে সুযোগ খুজতে লাগলাম কিভাবে বেটাকে হেস্তনেস্ত করা যায়।ধুর বুদ্ধি আসছেনা।রাগ হল নিজের প্রতি।
----- স্যার, আপনি থাকেন আমি বাসায় যাব।
----- কেন মন খারাপ নাকি?
---- আপনাকে বলার ইচ্ছা নাই।
---- কেন?
----- এইযে হ্যালো,আমি আপনার ছাত্রী।বান্ধবী নই।যে সব আপনাকে বলতে হবে।যত্তসব।
আর হে শুনেন নেক্সটদিন যদি আমায় বাইরে দাঁড় করান খবর আছে আপনার।
বাসায় চলে আসলাম।ধুর গেলাম ভাল সময় কাটাতে।আর কি হল।অসহ্য।
পরেরদিন ও স্যার আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখলেন।খুব রাগ হল। ক্লাশ শেষ হওয়ার পর দেখি স্যারের গাড়ি রাখা।
---- ওই তোরা দাঁড়া আমি আসছি।
---- কই যাস?( নুসরাত)
----- চুপ করে দাঁড়া, আমি আসছি।
স্যারের গাড়ির কাছে গেলাম।সাইসাই করে বাতাস বের হচেছ। হিহিহিহিহি
---- কাজটা কিন্তু ঠিক করলিনা।(নুসরাত)
---- যা করছি ভাল করছি।প্রতিদিন আমায় দাঁড় করিয়ে রাখে আজ বুঝবে মজা।
ওই দিন মনের আনন্দে বাসায় ফিরলাম।
সন্ধার পর হঠাৎ মনে হল ছেলেটাকে কল দেই।ছেলেটার নাম ও জানিনা।ধুর নাম দিয়ে আমার কি।মায়ের ফোনে নাম্বার আছে।লুকিয়ে মায়ের ফোন থেকে নাম্বার এনে কল দিলাম।
----- হ্যালো,আমি মেঘা,আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।
----- এত তাড়াহুরো কিসের আস্তে আস্তে বল।
---- আমি এখন বিয়ে করতে পারবনা।আমি লেখাপড়া আগে শেষ করতে চাই।
---- বিয়ের পর পড়বা।
---- বিয়ের পর না আমি আগেই পড়তে চাই।আপনি এ বিয়ে বন্ধ করেন প্লিজ।
---- ওকে, তোমার কথাই থাক।অনার্স শেষ হওয়ার পর বিয়ে।ঠিক আছে।
---- হুম।
মনে মনে খুশি হলাম যাক, বিয়ের চিন্তা আপাতত দুর হল।বন্ধুদের জানালাম।আর বললাম কাল দেখা করতে।
পরদিন ওদের সাথে দেখা করলাম।ডবল খুশির ট্রিট দিলাম ওদের।কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর যে যার মত চলে গেল।
আমিও বাসায় যাব কিন্তু রিক্সা পাচ্ছিলাম না।হঠাৎ দেখি স্যার দাঁড়িয়ে।রিক্সা খুজছে হয়ত।একটা রিক্সা দেখে স্যার এগিয়ে আসলেন।উনার সাথে অনেক জিনিস পত্রও।আমিও এগিয়ে গেলাম।মজা নেওয়ার ধান্দা আসছে মাথায়।
রিক্সার কাছে যেতে দেখি উনি রিক্সায় উঠে গেছেন।
---- স্যার কেমন আছেন? গাড়ি থাকতে রিক্সায় কেন আপনি?
---- আর বলনা গাড়ির চাকা পাঞ্চার হয়ে গেছে।তুমি এখানে কেন এখন?
---- বাসায় যাব কিন্তু রিক্সা পাচ্ছিনা।আপনি যদি কিছু না মনে করেন তবে আমি যাই এই রিক্সায়।বাবা কল দিচ্ছে বাসায় যাওয়ার জন্য কিন্তু কি করব বলেন।আমার জরুরি দরকার বাসায়।
--- আচ্ছা, ঠিক আছে,তুমি যাও,আমি আরেকটা খুজে নেব।
--- ধন্যবাদ স্যার।
হিহিহিহি।বেটা এখন দেখ এই দুপুরে রিক্সা পাস কিনা।
খুশি মনে বাসায় আসলাম।
বাবা ডেকে বলল, ছেলে জানিয়েছে তোর অনার্স শেষ হওয়ার পর নাকি বিয়ে করবে।আর ওর নাকি খুব পছন্দ হইছে।
ওই ছেলে কখন দেখল আমায়।মনে হয় ছবি দেখছে।অনার্স শেষ করে বিয়ে করতে আমার আপত্তি নেই।
আজ কয়েকদিন দিন খেয়াল করছি শুভ্র স্যার আসছেনা কলেজে।প্রথম প্রথম স্যার না আসাতে ভালই লাগল।আমাকে আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়না।
আজ প্রায় ১৫ দিন হয়ে গেল, স্যার আসেনা।মনে মনে খুব খারাপ লাগতে শুরু করে।মিস করতে লাগলাম ওই বজ্জাত স্যারকে।
সোহাগকে জিজ্ঞেস করলাম। ও বলল উনি নাকি অন্য কলেজে বদলি হয়েগেছেন।ওইদিন আর ক্লাস করিনি। বাসায় এসেও শুধু উনার কথা মনে হচ্ছে। উনার মুচকি হাসি বারবার মনে হচ্ছে। উনার দাঁড় করিয়ে রাখা কেও মিস করছি।
উনার সাথে কত খারাপ বিহেভ করছি।একবার স্যরি ও বলতে পারলাম না।মনের মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগল।
এখন আর কলেজে যেতে ইচেছ হয়না। আমি কি তাহলে উনার প্রেমে পড়ে গেলাম।ধেত এসব কি ভাবছি।আমার বিয়ে ঠিক এইটা ভুলে যাচিছ কেন?
এখন কলেজে গেলে মনে হয় এই বুঝি কেউ বলবে এইযে মেম কটা বাজে,ক্লাস শেষ হওয়ার কয় মিনিট বাকি,বাইরে থাকেন।উফফ কিচ্ছু ভাল লাগছেনা।
একবার যদি উনার দেখা পেতাম।সরি অন্তত বলতে পারতাম।লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদি।হ্যাঁ ওই বজ্জাত কঠোর স্যারকে আমি ভালবেসে ফেলেছি।
কয়েকদিন পর
এক বিকেলে ঘুমিয়ে ছিলাম।মা দেখে বলল রেডি হতে।বাবার বন্ধুর বাসায় আজ নাকি দাওয়াত।কয়েকদিন বাইরে যাইনা,তাই আর না করলাম না।
আমার প্রিয় সাদা শাড়িটা পরলাম। দুহাতে কাচের চুড়ি পরলাম,নূপুর পরলাম,গাঢ় করে চোখে কাজল দিলাম।চুলে বেলিফুলের মালা গুজে দিলাম।
বাবা উনার বনধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।উনারা গল্প করতে লাগলেন।আমি বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।খুব সুন্দর বাসা।অনেক গুছাল।
হঠাৎ বাবা ডাকলেন।উনার কাছে যেয়ে আমি অবাক হয়ে যাই
---- এ হচ্ছে শুভ্র।আমার বন্ধুর ছেলে।যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি।
শুভ্র, তুমি তো মেঘাকে চেন ই,
---- উনি মাথা শুধু মুচকি হাসি দিল।
তখন শুভ্রের বাবা বললেন
---- শুভ্র যা,মেঘা কে নিয়ে তোর রুমে যা,মেয়েটা একা একা বোর হচেছ।
শুভ্র আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল
---- চলেন।
---- হুম চলেন।
উনার পিছে পিছে উনার রুমে গেলাম।গিয়েই দরজা লাগিয়ে দিলাম।
---- এইযে, কি পাইছেন আপনি? হে যখন ইচ্ছা বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবেন আবার যখন ইচ্ছা না বলে চলে আসবেন?
---- আমি বদলি হয়ে গেছি তাই আর যাইনি ওই কলেজে।
---- একবার বলে আসার দরকার মনে করেন নাই।
---- আচ্ছা সরি।
--- নো সরি।আর আপনি জানতেন আমাদের বিয়ে ঠিক তারপরও আমাকে বলেন নাই কেন?
---- আসলে আমি শুধু তোমাকে দেখার জন্য ওই কলেজে ঢুকি।কিন্তু তুমি আমাকে সহ্য করতে পারনা বলেই চলে আসি।
---- কচু,আমার কত কষ্ট হইছে যানেন।কোনো ক্ষমা নাই আপনার।
---- এই দেখ কান ধরছি।প্লিজ ক্ষমা কর এবারের মত।
---- হুম ক্ষমা করব তবে
---- তবে আজকেই বিয়ে করতে হবে
---- তাই, অনার্স কি আপনার শেষ?
---- বিয়ের পরে শেষ হলেই চলবে।
---- কেন কেন?
---- আমি আর আমার বজ্জাত স্যারকে চোখের আড়াল করতে চাইনা।
---- আমিও না আমি সবচেয়ে দুষ্টু ছাত্রীকে সব সময় দেখতে চাই।
---- তাহলে ক্লাসের বাইরে রাখতেন কেন?
---- ক্লাস থেকে বাইরে দরজায় দাঁড়ানো আমার মেঘপরি কে খুব ভাল করে দেখা যায় তাই।
---- মেঘপরি কে?
---- কে আবার আমার বউ।ভালবাসি পাগলি
---- আমিও ভালবাসি।
.
.
লেখিকা:মেঘলা রহমান।(অপরাজিতা)

আজ আমার বিয়ে। কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা আমার কি করা উচিত..!

আজ আমার বিয়ে।
আর আমি রিজুর চিরকুটগুলো হাতে নিয়ে বসে আছি।
এই নিয়ে ১৫-২০ বার পড়া শেষ।
কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা আমার কি করা উচিত..!
.
রিজুর সাথে আমার পরিচয় আরো ৪ বছর আগে।আমাদের বাসার নিচের তলায় থাকে রিজুরা।
যেদিন প্রথম বাসায় উঠেছিলো।সেদিন আম্মু রান্না করে পাঠিয়েছিল আমাকে দিয়ে।যেহেতু তারা নতুন উঠেছে সব গুছিয়ে নিতে নিতে রান্না করতে পারেনি।
কলিং বেল চাপতেই একটা দুষ্টু চেহারার ছেলে দরজা খুলে দিলো।আমি খাবার হাতে না দিতেই ছো মেরে নিয়ে রাক্ষসের মত খাওয়া শুরু করলো।
কি অভদ্র ছেলে রে বাবা..! কেউ কিছু না বলে এভাবে খাওয়া শুরু করে নাকি।আমি যখন এসব ভাবছি তখনি সে বলে উঠলো
-কি চিন্তা করছো মিস চশমিস..?আমি পেটুক তাইতো..? শুনো আমি এমনই।
-এই ছেলে আমাকে চশমিস বললে কেনো..?
-তাহলে কি বলবো হুহ.? রুটির মত বড় বড় দুইটা চোখ লাগিয়েছো।আর সুন্দর ফ্রেমের চশমা কি দোকানে ছিলোনা..?
-একদম বাজে কথা বলবেনা বদ ছেলে।
-একশবার বলবো।কি করবে খুকুমনি.?
-আমি খুকুমনি না আমি রাইসা।
- হেহেহে..! রাইসা,,মাছ খায় বাইছা বাইছা।
.
আমার রাগ চরম পর্যায়ে উঠার আগেই আন্টি এসে বদের হাড্ডি টার কান মলে বললো,তোর জন্য কি কোথাও শান্তি পাবোনা.?যেখানে যাবে সেখানেই কারো না কারো পিছে লাগবে।
তারপর আন্টি ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।আমার চেয়ে ২ বছরের ছোট অথচ কেমন পাকা পাকা কথা।
আন্টির জন্য সেদিন বেচে গেছিলো সয়তানটা।
তারপর থেকে শুরু আমার পিছনে লাগা।আমার সাথে ঝগড়া করে কি মজা পেতো ছেলেটা জানিনা।
ওর সাথে ঝগড়া করতে করতে একসময় ভালোই লাগতো ওর ঝগড়া গুলো। ওকে না মারলে মনেহয় পেটের ভাত হজম হতোনা আমার। ওর জন্য আলাদা একটা টান তৈরি হচ্ছিলো আমার ।
সেবার যখন ওর জ্বর হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো আমরা কতটা কষ্ট হয়েছে বোঝাতে পারবোনা।সেই দিনগুলোতে আমি বুঝেছিলাম ও আমার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর আমি ওকে কতটা ভালোবাসি।
দিনদিন রিজু ছেলেটা আর ওর পাগলামীর অভ্যাস হয়ে গেছিলো আমার।কিন্তু ও তো আমার ছোট। সেটা ভুলে গেলে চলবেনা।
মুখে বলিনি ঠিকি কিন্তু সবসময় চাইতাম ও সব বুঝে নিক।আর ওর হাসিঠাট্টার আড়ালে সব চাপা পড়ে যেতো।
.
হঠৎ একদিন রিজু এসে লাবন্য নামের একজনের কথা বললো।আমার ক্লাসমেটের বোন।ওকে নাকি রিজু পছন্দ করে আর রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।
রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিলো। 
আমি সোজা বলে দিলাম
- দেখ তুই এসব কথা আমাকে আর বলবিনা।এত যখন পছন্দ নিজেই পটা গিয়ে।
- হুহ..! বুঝছিতো তোর হিংসা হচ্ছে। লাবন্য তোর চেয়ে সুন্দরী। ও আমার গার্লফ্রেড হলে তোর তো হিংসা হবেই।
- তোর যা খুশি কর যা।তোর কপালে প্রেম নাই।
- আমি প্রেম করে দেখিয়ে দেবো তোকে।
চশমিশ পেত্নী।
- ওই কি বললি তুই..?? তোকে আজ খুন করেই ফেলবো।
- কচু করবি।হেহেহে
.
.
ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলাম।চিৎকার করে কাদতে পারলে হতো।কিন্তু সেটাও পারছিলামনা।
ওই হারামিটাকে ইচ্ছা মত কিল ঘুশি দিতে পারলে ঠিক হতো।
.
এই কয়দিন রিজু মনেহয় আমাকে এড়িয়ে চলছে।দেখা হলে আগের মত দুষ্টুমি করেনা। দুই একটা কথা বলেই চলে যায়।
মিস করছিলাম আগের রিজুকে।কিন্তু নিজে থেকে জিজ্ঞেস করে নিজেকে ছোট করতে পারবোনা আমি।
.
হঠাৎ একদিন আমার কাছে এসেই চুল টেনে বললো
- কিরে চশমিস? বলছিলি তো আমার কপালে প্রেম নেই।
- হ্যা বলেছিলাম।তো..?
- লাবন্যকে পটিয়ে ফেলেছি।আজ সারাদিন অনেক ঘুরেছি।একসাথে ফুচকা খেয়েছি।শপিং এ গিয়েছি।
- হাহাহা।একদিনের প্রেমে শপিং করিয়ে নিয়েছে।বাহ বাহ। জানতাম তোর জন্য এমন কেউই থাকবে।
- আরে প্রেম করলে একটু খরচ তো করতেই হবে।
তুই এসবের কি বুঝবি।জীবনে তো একটা প্রেম করতে পারলিনা।
- এসব ফালতু বিষয়ে আমি মাথা ঘামাইনা।
- হুহ আর বলতে হবেনা।কেউ প্রোপোজ করলে তো প্রেম করবি।হাহাহা...
.
রাগ করে চলে আসলাম সেদিন।তারপরে থেকে ওর সাথে দূরত্ব বাড়তে লাগলো।
আমার সাথে দেখা হলেই ওর প্রেমকাহিনী বলা শুরু করতো।তাই ওকে এড়িয়ে চলতাম।কিন্তু ওর আমাকে দেখলেই মনেহয় লাবন্য ছাড়া আর কথা খুজে পেতো না।
আমার শুনতে অসহ্য লাগতো।
এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিলো।আমি ওকে আস্তে আস্তে মন থেকে মুছতে শুরু করেছিলাম।
কিন্তু তখনি মনেহয় ও বেশী করে আমার পাশে ঘুরঘুর করতো।
.
.
ছাদে দাড়িয়ে আকাশ দেখছি।কখন আমার পাশে এসে দাড়িয়ে আছে খেয়াল করিনি।পাশে ফিরতেই দেখলাম রিজু হা করে দাঁড়িয়ে আছে।
- কিরে..! কিছু বলবি..?
- জানিস চশমিশ..? তুই যখন দুইটা বিনুনি করে থাকিস তোকে অনেক বাচ্চা বাচ্চা লাগে।
- তাই..? জানতামনা তো।
- জানিস তোর চশমার ভেতরের চোখ দুটো অনেক মায়াবী। এমনি বোঝা যায়না।কিন্তু অনুভব করা যায়।
- আচ্ছা...!!! তোর লাবন্য তো আমার চেয়ে অনেক সুন্দর।সবসময় তো ওর কথা বলে আমাকে খোঁচা দিস।আজ কি হলো..?
- হুমম ও অনেক সুন্দরী। কিন্তু মায়াবী না।ওর মধ্যে আমি মায়ার চেয়ে অহংকার বেশী খুঁজে পাই।
- কাহিনী কি বলতো..! অন্যকাউকে আবার পছন্দ হলো নাকি? তোর তো বিশ্বাস নেই।
- আরে ধুরর..! আমাদের সব ঠিকআছে। আর আমিতো ওকে ভালোবাসি।মাঝেমধ্যে একটু ঝগড়া হলেও পরে ঠিক হয়ে যায়।
- ও আচ্ছা।
.
.
এরমধ্যে আব্বু একদিন ডেকে বললো আমার জন্য ছেলে দেখেছে।অনেক ভালো চাকরী করে।ফ্যামিলিও ভালো।
আমার কিছু বলার থাকলে বলতে।
রিজুর চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছিলো।তবুও বলা যাবেনা।
আব্বুকে বলে দিলাম তোমরা যা ভালো মনেকরো তাই করো।
তারপরে সব অনেক তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো।বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছো।
এর মধ্যে অনেককিছু পাল্টে গেছে।রিজুর সাথে তেমন কথা হয়না।
একদিন কলেজে লাবন্যর সাথে দেখা হয়েছিল।
রিজুর কথা জিজ্ঞেস করতেই চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে বললো
আর বলোনা আপু...! রিজু আজকাল আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করছে।ইচ্ছা করে ঝামেলা করছে।
আমার সব অসহ্য লাগছে।ওর সাথে সম্পর্ক টা মনেহয় আর আগাবেনা।
সব শুনে আমি অনেকটা অবাক হলাম।রিজু আমাকে তো কিছু বললোনা।
.
.
বিয়ের দিনটা চলে এসেছে।আজ আমাকে অনেক সাজানো হয়েছে।ভারী গয়না আর মেকআপে দম আটকে আসছে।
রিজু একবার মাত্র এলো আমার কাছে।এসেই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে বললো, চশমিশ তুই এতো সুন্দর হলি কবে হুমম..?
আমি একটা বোতল ছুড়ে মারার জন্য তুলতেই দৌঁড়ে পালালো।
অনেকক্ষণ পরে রিজুর ছোটবোন কলি এসে আমার হাতে একটা বাক্স ধরিয়ে দিয়ে কিছু বলার আগেই চলে গেলো।
আমি অনেকটা অবাক হলাম।
আস্তে বাক্সটা খুললাম।
ভেতরে কয়েকটা চিরকুট।আর আমার চশমার একটা ভাঙা ফ্রেম।
একটা একটা করে চিরকুট গুলো পড়তে লাগলাম।
.
"আজ তোকে অনেক সুন্দর লাগছিলো।তোর কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু তুই মারবি তাই পারিনি।"
.
"জানিস চশমিশ, লাবন্যর সাথে থাকলেও আমার মন মনেহয় অন্য কোথাও থাকে।ওর মধ্যে আমি টান অনুভব করিনা।ওর কাছে থাকার চেয়ে তোর হাতে মার খেতেই বেশী ইচ্ছা করে।জানিনা এটা কেমন অনুভূতি।তবে আমি শুধু তোর কাছাকাছি থাকতে চাই।আর তোকে রাগাতে চাই।রাগলে তোর গাল টমেটোর মত হয়ে যায় জানিস?"
সবশেষে আজকের তারিখ লিখা চিরকুট টা খুললাম।আর লিখাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়লাম।
.
"আম্মু যখন বললো তোর বিয়ের কথা চলছে আমার বিশ্বাস হচ্ছিলোনা।তুই দূরে কোথাও চলে যাবি আমি ভাবতেও পারিনা।আমি মনেহয় তোকে ভালোবাসি।জানি বলবি আমি তোর ছোট।তাইবলে কি ভালোবাসা যাবেনা।আমি তোকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা।তুই আমার সামনে অন্য কারো হাত ধরে চলে যাবি।আমি মানতে পারবোনা।তুই বিয়ে করতে পারবিনা শেষ কথা।বিয়ে করলে আমাকে করবি অন্য কাউকে বিয়ে করলে তোর চুল সব ছিড়ে ফেলবো পেত্নী।
সত্যি অনেক ভালোবাসি তোকে।থাকতে পারবোনা আমি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাসনা।মরে যাবো আমি।
আমি বাসার পিছনে বসে আছি তুই চলে আয়।দুজনে পালিয়ে যাবো।কয়দিন পরে ফিরে আসলে সবাই মেনে নিবে দেখিস।
.
আমি কি করবো জানিনাহ। ওর কথায় ছেলেমানুষি করে পালিয়ে যাওয়া একদম ঠিক হবেনা জানি।তবুও যেতে ইচ্ছে করছে।
সবাই বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত।সব আয়োজন হয়ে গেছে।একটুপর বরযাত্রী আসবে।আমার হাত পা বাধা।চাইলেও রিজুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলতে পারবোনা বকুরাম আমিও তোকে অনেক ভালোবাসি।
কিছু ইচ্ছে সবসময় অপূর্ণ থেকে যায়।পরিবারের ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা একদম তুচ্ছ। আমাকে শক্ত হতে হবে।
নিজেকে সামলে রাখতে হবে।
বর এসে গেছে।সবাই চিৎকার চেঁচামিচি করছে।তাড়াতাড়ি চিরকুট গুলো বাক্সে ঢুকিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের পুকুরটায় ছুড়ে মারলাম।
চোখমুখ মুছে আবার বসে পড়লাম।এতক্ষনে আমার চোখমুখ ফুলে গেছে।সবাই হয়ত ভাববে চেনা পরিবেশ ছেড়ে যাচ্ছি তাই। কিন্তু সাথে জীবনের প্রথম অনুভূতি আর ভালোবাসা ছেড়ে যাচ্ছি সেটা হয়ত কেউ জানবেনা।
দূর থেকেই নাহয় ভালোবেসে যাবো।

---চিরকুটের শব্দ------
#Bristi_patuiary
#colltect