ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Sunday, August 27, 2017

আমি বেশ্যা নই। গল্প:


============
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেবা একমনে তাকিয়ে আছে গলার কাছে বাদামি দাগটির দিকে, যেন একটা মোটা শুঁয়ো  পোকা। দাগটির দিকে তাকিয়ে ওর গতরাতের সব আদরের কথা মনে পড়ছে, প্রতিটা মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে আর সেই সাথে দৃঢ় হচ্ছে প্রতিজ্ঞা, খুনটা তাকে করতেই হবে।
এক ঝটকায় গায়ের হাল্কা গোলাপি ম্যাক্সিটা দু কাঁধ গলিয়ে নামিয়ে দিল রেবা। শ্যামলা ত্বকের নীচ থেকে যেন চাপা কোমল আলো বের হচ্ছে। ওর চোখ ধীরে ধীরে গলা থেকে নেমে যাচ্ছে, আরও দাগ আছে এদিক ওদিক, সব মিলিয়ে পাঁচটি। কিশোরীর মতো উন্নত বুক দুটো যেন চির বিদ্রোহী মৌন সৈনিক। মসৃণ পেট, গভীর নাভি, বেতের মতো কোমর, ভারী নিতম্ব আর কলা গাছের মতো চকচকে উরু সবই ওর শত্রু পক্ষ। এই শরীর নিয়ে একসময় চাপা অহংকার ছিল। আর ছিল গোপন সুখ, বড্ড বেশি ভালোবাসতো তারেক। তখন জানতো না, এই শরীরই  একদিন কী ভয়ানক শত্রুতা করবে ওর সাথে। 
পরিষ্কার মনে আছে সেই দিনটির কথা। তারেকের ডায়ালাইসিস শুরু হবে দুদিন পরেই। দুটো কিডনিই  কাজ  করছে না এই খবরে ওদের ছোট্ট সুখী পরিবারটায় যেন ধ্বস নেমেছে। গত দুমাস ধরেই তারেক ছুটিতে আছে। চাকরিটা মনে হচ্ছে না আর রাখা যাবে, প্রাইভেট কোম্পানি বলে কথা। বড় মেয়ে রুমকির বয়স এগার, ও অনেক কিছুই বুঝতে পারছে আর সারা দিন মুখ কালো করে ঘুরছে। বাবার আহ্লাদী মেয়ে, ওকে সামলানো এক কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চার বছরের রনি  তেমন কিছু বুঝতে পারছে না, না বুঝে সবাইকে বিরক্ত করছে  আর অকারণে ধমক  খাচ্ছে। রেবা পরিষ্কার বুঝতে পারছে সামনে ঘোর  আঁধার, ওর এই অফিস সহকারীর চাকরিটাই একমাত্র সম্বল। সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে, ওর বস জামান সাহেব তারেককে দেখতে এলেন অফিস ফেরত, একাই এসেছিলেন। তারেকের ঘরে বসে দু চারটা ভদ্রতার কথা বলে আয়েশ করে  এসে ড্রয়িং রুমে বসলেন। 'আজ তোমার হাতের চা না খেয়ে উঠছি না।' রেবার দিকে তাকিয়ে বেশ  ঘনিষ্ঠ ভাবে বলেছিলেন। বোকা রেবা বুঝতে পারেনি সেদিন। আর বুঝবেই বা কীভাবে। ষাটের কাছাকাছি জামান সাহেবের সুখী, বিবাহিত জীবন। ছেলে, মেয়েরা যার যার সংসার নিয়ে বাইরে থাকে। সাহস করে বলে ফেলেছিল 'স্যার সে তো রোজই খান অফিসে, এ আর নতুন কী?' 
'অফিস আর বাসা কী এক হোল? অফিসে কী আমি তোমার এই তাজা, খাঁটি রূপ দেখতে পাই বল?' বলেই হাহা করে হেসেছিলেন ওর বুকের  দিকে তাকিয়ে। ওনার দৃষ্টি অনুসরণ করে রেবা দেখতে পেলো তাড়াহুড়োয় জামার সামনের দুটো বোতাম লাগাতে ভুলে গেছে, বাসায় কেউ থাকে না বলে ওড়নাও পরে না ও সচরাচর। যা গরম পড়েছে, পাতলা ফিনফিনে এক সাদা জামার নীচে কালো অন্তর্বাস পুরো দেখা যাচ্ছে। থতমত খেয়ে কিচেনে পালিয়ে বেঁচেছে তখন। চা আনার সময় ওড়নাটা গায়ে দিতে ভুলে নি। 
'আগেই তো বেশ লাগছিল' আরেক দফা হাসি। 
যাওয়ার সময় জামান সাহেব জোর করে ওর হাতে হাজার বিশেক টাকা গুঁজে  দিয়েছিল, রেবা নিতে চায় নি একদম। 'এতো বছর আমার সাথে কাজ করো, এখনো  আমাকে চিনলে না, পরই ভাবো?' স্যার কিছুটা আবেগপ্রবণ মানুষ, রেবা সেটা জানে, কে জানে হয়তো ওর দুঃসময়ে ওর মন ভালো করতে চাইছে। 
'এতো সঙ্কোচের কী আছে? কোনভাবে পুষিয়ে দিও।' ওর হাত দুটো চেপে ধরে রহস্যময় ভাবে বলেছিলেন জামান সাহেব। আজ বুঝতে পারে, সেদিন তার হাত দুটো একটু বেশিক্ষণই ধরেছিল রেবার হাত।  
তারেকের জন্য দুহশ্চিন্তায় বেশি কিছু ভাবতে পারে নি সেসময়। ওর শ্বশুর শাশুড়ি  নেই। বাবা, মাও ঢাকায় থাকে না। বাচ্চাদের দেখাশোনা কে করবে আর রুগীর সাথেই বা কে থাকবে? জামান সাহেবকে একদিন কথায় কথায় ওর দুহশ্চিন্তার কথা বলে ফেলেছিল। বসের রুম, দরজা ভেজানো ছিল। অনুমতি ছাড়া কারো প্রবেশ নিষেধ। রেবার অশ্রু টলমল চোখে চোখ রেখে, এক হাতে থুঁতনি ধরে বলেছিলেন 'কিচ্ছু চিন্তা করো  না, সব ব্যাবস্থা করে দেব আমি।' একই সাথে অসস্থি লেগেছিল আর অবাক হয়েছিল রেবা। ও ভাবতেও পারে নি, পরের দিন বিকেলে জামান সাহেব সত্যি সত্যি এক  নার্স নিয়ে এসে হাজির হবেন। বিদায় নেওয়ার সময় হতবিহবল রেবা বলেছিল 'স্যার, আপনি তো সবই জানেন, নার্সের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। আমি এখন কী করবো?' জবাবে রেবাকে  বিস্মিত করে দিয়ে ভেজানো দরজার আড়ালে ওকে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে বলেছিলেন 'তুমি শুধু হাসি, খুশি থাকো সেক্সি, তাহলেই হবে, আর আমার দিকে মাঝে মাঝে একটু নজর দিও, বাকিটা অফিস সামলাবে।' তীব্র ঘৃণায় মাথা নিচু করেছিল রেবা। না সেদিন কোন প্রতিবাদ সে করে নি, প্রতিবাদ করলেই চাকরিটা যাবে। জামান সাহেব এই প্রাইভেট কোম্পানির সর্বময় কর্তা। চাকরি গেলে এই অসুস্থ স্বামী আর বাচ্চা দুটো নিয়ে কোথায় যাবে সে? 
তার  পর প্রতিদিন আবদার বেড়েছে জামান সাহেবের। এখন প্রায় প্রতিদিনই আসে। তারেক কতোটা বুঝতে পারে, সেটা জানে না রেবা। তবে যেদিন  দুপুরে অসময়ে অফিস থেকে রেবাকে নিয়ে চলে এসেছিলেন, রেবার নিজেকে একটা খাঁচায় বন্দি অসহায় প্রাণী মনে হচ্ছিল। তারেক ওর ঘরে ঘুমুচ্ছে। রনি  ওর পাশেই ঘুম আর রুমকি স্কুলে।  'আমার খুব টায়ার্ড লাগছে, রুমকির ঘরে যাচ্ছি, তুমি একটু ফ্রেশ হয়ে এসো।'  অবাধ্য হওয়ার  সাহস ছিল না রেবার। ইচ্ছে করছিল শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করতে, পারে নি। বরং তারেক আর রনি ঘুমাচ্ছে নিশ্চিত করে অভিসারিণীর মতো পা টিপে টিপে এসেছিল মেয়ের ঘরে। ভারী পর্দা টেনে দিয়েছিল যেন প্রতিবেশীরা কিছু না দেখে। বন্ধ ঘরের আলো আধারিতে সেদিন অনেক আদর করেছিল জামান সাহেব। নিজের অসুখী দাম্পত্যের কথা, বদ মেজাজি স্ত্রীর অত্যাচারে তার রোম্যান্টিক মনটার অপমৃত্যুর কথা, নিজের একাকীত্বের কথা  বলেছিল, আরও বলেছিল রেবা কত  সুন্দর, কোমল, কত আকর্ষণীয়, রেবাকে তার কত ভালো লাগে ইত্যাদি। বয়স ষাটের কাছাকাছি হলেও জামান সাহেব যথেষ্ট সুপুরুষ। তার উষ্ণ আলিঙ্গনে রেবার দীর্ঘ উপোষী যুবতী শরীরটা মোমের মতো গলে  যাওয়ার পরিবর্তে বরফের মতো শীতল আর শক্ত হয়ে ছিল।  জীবনের সবচেয়ে বেশি কেঁদেছিল সে সেদিন।  জামান সাহেব  চলে যাওয়ার পর এক ঘণ্টা ধরে ডলে  ডলে  গোসল করে যখন চামড়া লাল করে ফেলেছিল, তারেক ওর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে ছিল। সে রাতেই ওর স্ট্রোকটা হয়। তার পর থেকে কথা  বন্ধ। 
তারেকের চিকিৎসার আর কোন অসুবিধা হচ্ছে না, জলের মতো টাকা খরচ করছে জামান সাহেব। তারেকের জন্য চব্বিশ ঘণ্টার নার্স আছে, সে রনিকেও দেখা  শোনা করে। সোমা খালাকে পেয়ে রনিও বেজায় খুশি। শুধু রুমকিটা বড্ড চুপচাপ হয়ে গেছে আজকাল। মায়ের চোখের দিকে পারত পক্ষে তাকায় না সে। জামান সাহেব তার অনেক দয়ার  সাথে একটি ভদ্রতা করেছেন, রাতে যখন রুমকি বাসায় থাকে তখন তিনি রেবাকে পুরোটা চান না,  আড়ালে আবডালে চুমো টুমো খেয়ে, ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে চলে যান। অফিসেও তার প্রেমের জোয়ার  আসে আজকাল প্রতিদিনই। চা দিতে গেলে, কোমর জড়িয়ে একটু আদর নিত্যদিনকার অভ্যাস হয়ে গেছে। রেবার শরীরটা বুঝি যন্ত্র হয়ে গেছে একটা, মনটা পাথর। জামান সাহেব যখন আদর করে বলে ' মাই গড, ছত্রিশেও তুমি দিব্যি বাইশের ফিগার ধরে রেখেছ।' ওর তখন বমি পায়। 
কাল রাতে শরীর খারাপের অজুহাতে ওদের বাড়িতে থেকে গিয়েছিল জামান সাহেব। ড্রয়িং রুমে যখন তার বিছানা করে দিচ্ছিল তখন আলতো করে গাল ছুঁয়ে বলেছিল 'রাতে মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে চলে এস কিন্তু'। তখনো কিচ্ছু বলতে পারে নি রেবা। রুমকি ঘুমানোর পর চোরের মতো পা টিপে টিপে এসেছিল। পুরোটা সময় ঘেন্নায় গা রি রি করছিল আর বুকের ভিতরে প্রচণ্ড ভয় পাথরের মতো চেপে ছিল। প্রবল আতঙ্কে খেয়াল করে নি কখন যেন রুমকি জেগে উঠে পানি খেতে বসার ঘরের পাশের ডাইনিং রুমে চলে এসেছে। প্রচণ্ড বিস্ময় নিয়ে সে দেখছে ড্রয়িং রুমের ডিভানে দুটো আধা নগ্ন ছায়া, ছায়া দুটোর একটা  যে তার মা এ ব্যাপারে তার সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড ভয়ে  চিৎকার করে উঠলো রুমকি 'মা, ও মা।' 
আতঙ্কে জমে গেছে রেবা, মনে মনে খালি ঘুরপাক খাচ্ছে কয়েকটি  কথা 'আমি বেশ্যা নই, আমি তোমাদের মা, তারেকের স্ত্রী।' আর তখন থেকেই খুনের চিন্তাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। খুনটা তাকে করতেই হবে। যেমন করেই হোক।

আংকেল কি সত্যি তোমার বিয়ে ঠিক করেছেন??...!!

--নিহা,, ক্লাস তো শেষ... বাসায় যাবেনা...?? (আরশ)
-- (নিহা চুপ করে অসহায়ের মতো আরশের দিকে তাকিয়ে আছে)...!!
--আজব তো, এরকম বোবার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো?? বাসায় যাবেনা...??
--আরশ, আমি আর বাসায় ফিরে যেতে চাইনা,, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে... আজকেই মনে হয় আমার শেষ ক্লাস... আমি আর বাসায় ফিরে যাবোনা...!!
--হিহিহি,, মজা করতে করতে এখন নিজের বিয়ে নিয়েও মজা করা শুরু করছো...? মাত্রই তো আমরা অনার্স ২য় ইয়ারে উঠলাম,, এখন আবার কিসের বিয়ে?? ফান বন্ধ করো প্লিজ...!!
কথাটা বলে নিহার চোখের দিকে তাকায় আরশ,, নিহার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে... এই পানিটুকু আর যাইহোক, কখনো মজা হতে পারেনা...!!
--আংকেল কি সত্যি তোমার বিয়ে ঠিক করেছেন??...!!
আরশের প্রশ্নের উত্তর মুখ দিয়ে দিতে পারেনা নিহা,, কাঁদতে কাদঁতে মাথা নেড়ে হ্যা সূচক উত্তর দেয় সে...! নিহা আরশের হাত ধরে বলে-
--আরশ,, বাবা এবার সত্যি সত্যি আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে... ছেলে  অনেক ভালো জব করে,, বিয়ের পর আমাকে স্টাডিও করতে দিবে... এরকম পাত্র বাবা কখনোই হাতছাড়া করবেন না,,, কিন্তু আমি যে তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কখনো কল্পনাও করতে পারিনা... আমি তোমাকে না পেলে সত্যি মরে যাবো... কিছু একটা করো প্লিজ,, আমাকে এখন তোমার বাসায় নিয়ে যাও...!!
নিহার কথা শুনে নিহার চোখের দিকে তাকায় আরশ,, এরকম কান্না করতে মেয়েটাকে সে কখনোই দেখেনি... আরশ নিহার চোখের দিকে তাকিয়ে শক্ত করে নিহার হাতটা ধরে বলে-
--আমি আছিতো,, বিশ্বাস রাখো আমার উপর... আমি নিশ্চই কিছু একটা করবো... আমাকে আজকের দিনটা সময় দাও প্লিজ... তুমি এখন বাসায় যাও, আমি দেখি কি করা যায়...!!
আরশের কথা শুনে ডান হাত দিয়ে চোখটা মুছতে মুছতে বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করে নিহা... তার মনে আরশের উপর অনেকটা বিশ্বাস,, আরশ নিশ্চই কিছু একটা করবে... নিশ্চই করবে...!!
.
নিহার বিয়ে হয়ে যাবে শুনার পর আরশের মাথা একদম কাজ করছেনা... মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, "কি করে নিহার বিয়ে বন্ধ করা যায়"... কি করে...?? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আম্মুর রুমের দিকে হাটাঁ শুরু করে আরশ...!!!
--আম্মু,, তোমার সাথে আমার একটা জুরুরি কথা আছে...!!
ছেলের মুখে জুরুরি শব্দটা শুনে আরশের মুখের দিকে তাকালেন মিসেস মেহরাব,, আরশের চেহারাটা প্রচন্ড সিরিয়াস টাইপের মনে হচ্ছে...
 এরকম চেহারা আরশের খুব একটা দেখা যায়না...!!
--কিছু হইছে বাবা?? কোনো সিরিয়াস কিছু...??
--হুম আম্মু,, আমি কথাটা কিভাবে তোমাকে বলবো বুঝতে পারছিনা,, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি তুমি আমার প্রবলেমটা বুঝবে...!!
--আরশ,, আম্মুকে সব খুলে বলতো,, হইছে টা কি??...!!
--আম্মু, আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি...!!
ছেলের মুখে কথাটা শুনে মুচকি হাসি দিলেন মিসেস মেহরাব... আরশের গালে আলতো করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললেন-
--উফফফ,, ধুর বোকা ছেলে, এই কথাটা বলার জন্য তুই এরকম মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলি...?? আমি আরো ভাবলাম কি না'কি... ভালোবাসিস এটা তো ভালো কথা,, মেয়েটাকে একদিন নিয়ে এসে আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিস...!!
--আম্মু,, আমি মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাই...!!
--হুম বিয়ে করবি তো,, আমি আর তোর পাপা সবসময় তোর পছন্দ সবার আগে রাখি,, এবার ও রাখবো... মেয়েটাকে নিয়ে আয় একদিন, আমরা কথা বলি ওর সাথে... তারপর তোর পড়া শেষ হয়ে গেলে আমরা ওর বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবো...!!
--না আম্মু,,, অনেক দেরি হয়ে যাবে... আমি ২-৩দিনের মধ্যেই বিয়েটা করতে চাই আম্মু...!!
আরশের মুখে ২-৩দিন শুনে মিসেস মেহরাবের হাসিভরা মুখটা মুহৃর্তের মধ্যেই কালো হয়ে গেলো... মাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়া ছেলের মুখে এরকম কথা শুনতে হবে এটা তিনি কখনোই কল্পনা করেন নি...!!
--তোর মাথা ঠিক আছে আরশ?? তুই এখন মাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে... এখন তোর ক্যারিয়ার গড়ার সময়,, বিয়ে করার নয়...!!
--আম্মু, এখন বিয়ে না করলে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে চিরদিনের জন্য হারাতে হবে... তুমি পাপাকে একটু বুঝাও আম্মু,, প্লিজ...!!
--জাস্ট চুপ করো আরশ,, ছোট থেকে তুমি যা চাইছো তাই দিয়ে আসছি,, কিন্তু তোমার এই আবেগ আর পাগলামিটাকে আমরা কখনোই মেনে নিবনা... তুমি কি করে ভাবলে এই কথাটা আমি তোমার পাপাকে গিয়ে বলবো??...!!
--আম্মু প্লিজ,, এরকম করিওনা,, একটু শুনো আমার কথা...!!
--আমি বলছিনা চুপ থাকতে,,, কি করে তোমার মাথায় এসব চিন্তা আসে?? তোমার পাপা শুনলে কতোটা কষ্ট পাবে একবার ও ভাবছো?? ওনার স্বপ্ন তুমি,, ওনার এতো কষ্ট করে টাকা ইনকাম কারন তুমি,, ওনার রাতে ঘুম না আসার চিন্তা তুমি,, শুধুই তুমি... সেই পাপা যদি শুনেন তার ২০বছরের ছেলে পড়াশুনায় মন না দিয়ে বিয়ে করতে চাইছে, তখন তার অবস্থা কি হবে একবার ও ভাবছো?? নিজের রুমে গিয়ে কথাগুলো চিন্তা করে দেখো... এখন যাও এখান থেকে...!!
আম্মুর কথা শুনে অসহায়ের মতো রুমে চলে যায় আরশ...!! ঠিক এই মুহৃর্তে আরশের কি করা উচিত আরশ সেটা জানেনা...  সে শুধু জানে, তার পাপাকে সে কষ্ট দিতে পারবেনা,, কখনোই না...!!
.
পরেরদিন সকালে ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আরশের জন্য অপেক্ষা করছে নিহা... আরশকে রিক্সা থেকে নামতে দেখেই দৌড়ে আরশের কাছে যায় সে..!!
--আরশ,, আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম...!!
--আমাকে ভুলে যাও নিহা...!!
আরশের মুখ থেকে এরকম কথা শুনার জন্য একদম রেডি ছিলোনা নিহা,,, কথাটা শুনেই বিশাল রকমের ধাক্কা খেলো সে...!!
--কি বললে আরশ??..
--আমাকে ভুলে যাও তুমি,,, যদি এখন আমি তোমাকে বিয়ে করি, তাহলে আমার পাপা-আম্মু অনেক কষ্ট পাবে,, তোমার আব্বু-আম্মুও অনেক কষ্ট পাবে... ওনাদের কষ্ট দিয়ে আমরা কখনোই সুখি হতে পারবনা নিহা,, তার চাইতে ভালো এটাই হবে যে, তুমি তোমার আব্বুর পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলো... (কথাগুলো নিচের দিকে তাকিয়ে বললো আরশ, নিহার মুখের দিকে তাকিয়ে তার পক্ষে কথাগুলো বলা সম্ভব ছিলোনা)...!!
--আরশের মুখে কথাগুলো শুনে ২পা পিছন দিকে হেটেঁ গেলো নিহা,, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে করতে আরশকে বললো-
--ঠিক আছে, তুমি যেটা চাও সেটাই হবে...!!
এই মুহৃর্তে কান্না করতে করতে আরশের কাছ থেকে একটু একটু করে দূরে চলে যাচ্ছে নিহা... আরশ একবার ও ফিরে তাকাচ্ছে'না নিহার দিকে,,, কোনো একটা অজানা ভয় কাজ করছে তার ভিতর... নিহার চোখের পানি দেখে যদি তার ভিতর মায়াটা বেড়ে যায়?? যদি নিহাকে আটকাতে মন চায়?? তাই নিহার দিকে তাকাবেনা সে,, হয়তো এটাই আরশ আর নিহার শেষ দেখা... হয়তো এটাই শেষ কথা...!!
.
"""২বছর পর"""
.
নিহা নামের মেয়েটার আজকে বিয়ের ২বছর পূর্ণ হলো,,, একটা ৬মাসের ছেলেও আছে তার... বিয়ের প্রথম বছর আরশকে খুব মনে পড়তো নিহার,, কিন্তু একটা সন্তান হওয়ার পর আরশকে এখন আর প্রতিদিন মনে পড়েনা,, মাঝে মাঝে তার মনেহয় ২বছর আগে আরশ নামে তার লাইফে কেউ একজন ছিলো... কেউ একজন...!!
.
আরশ নামের ছেলেটার কিছুদিন আগেই অনার্স কমপ্লিট হলো,, এই ২বছরে পড়াশুনায় খুব একটা মন দিতে না পারলেও রেজাল্ট খুব একটা খারাপ হয়নি,, এই ২বছরে এমন একটা রাত নেই, যে রাতটা সে নিহাকে মিস করেনি... নিহার জন্য কতোবার যে তার চোখের পানিতে বালিশটা ভিজেছে, তার হিসাব কেউই জানেনা...!! তারপরেও সে প্রতিদিন সকালটা একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে শুরু করে, হাসিটা স্রেফ তার পাপার জন্য,, তার আম্মুর জন্য...!!
.
'""আরো ৩ বছর পর"""
.
নিহা নামের মেয়েটা এখন ২সন্তানের মা,, গতবছর সে আরো একটা ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়... এইতো ৫বছর আগেও আরশ নামে তার লাইফে কেউ একজন ছিলো, নিহার সেটা এখন আর মনে পড়েনা... নিহার মাথায় এখন ১টাই চিন্তা, তার ২টা ছেলের ফিউচার সুন্দর করতে হবে... ওদের মানুষের মতো মানুষ বানাতে হবে...!!
.
আরশ নামের ছেলেটা এখন পড়াশুনা শেষ করে ভালো একটা জব করে,, পাপা আর আম্মুর মুখে হাসি দেখেই শুরু হয় তার প্রতিটাদিন,, কিন্তু আজও কোনো একটা রাতে ঘুমাতে যাবার সময় তার একা লাগে,, খুব একা লাগে... নিহা নামের কেউ একজন এখন অন্য কারো পাশের বালিশে ঘুমিয়ে আছে, কথাটা ভাবতেই তার বুকটা ধুক করে উঠে... হয়তো নিহার পাশের বালিশটায় আজকে তার থাকার কথা ছিলো...! তাই একটা দীর্ঘশ্বাস আজও থেকে গেছে আরশের মনের ভিতর...!!!
.
--বাবা আরশ,, এখন তো তোমার লাইফটা ভালোই গুছিয়ে নিয়েছো... এবার আমরা একটা বউমা নিয়ে আসি..?? (মিঃ মেহরাব)...!!
পাপার প্রশ্ন শুনে আরশ মুচকি হেসে বলে-
--ভুল বললে পাপা, লাইফটা আমি গুছিয়ে নেইনি,, তুমিই গুছিয়ে দিয়েছো... আর বউমা?? সেটা তোমাদের যা ভালো মনে হয় তাই করো...!!
--ঠিক আছে,, তোমার তাহলে কেমন মেয়ে পছন্দ আমাদের বলো??...!!
"কেমন মেয়ে পছন্দ" প্রশ্নটা শুনেই আরশ আনমনা হয়ে যায়,, চোখের সামনে ভেসে উঠে নিহার মুখের ছবি,,, ওর দুষ্টুমি,, ওর কেয়ারিং সবকিছু আরশের চোখের সামনে ভাসতে থাকে... মুহৃর্তের মধ্যেই ৫বছর আগে চলে যায় আরশ...!!
--এই আরশ,, কোথায় হারিয়ে গেলে??...
পাপার ডাক শুনে কল্পনা কাটে আরশের... পাপাকে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে-
--বললাম তো পাপা, তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো... আমার তেমন কোনো পছন্দ নেই...!!
--আমি জানতাম তুমি এটাই বলবে... এইজন্য আমি আগে থেকে সব ঠিক করে রেখেছি... ছবিটা দেখোতো  পছন্দ হয় কি'না?? (পকেট থেকে একটা ফটো আরশের দিকে বাড়িয়ে দিলেন মিঃ মেহরাব)
আরশ ফটোটা হাতে নিয়ে না দেখেই বলে-
--দেখতে হবেনা পাপা,, আমি জানি তোমার পছন্দ কখনোই খারাপ হতে পারেনা... তুমি আমার জন্য যেটাই করবে, ভালোর জন্যই করবে...!!
--আমার ছেলের মুখ থেকে এটাই এক্সেপ্ট করছিলাম,, মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর,, অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে,, বিয়ের পর আমাদের এখানে থেকেই অনার্স কমপ্লিট করবে...!!
অনার্স সেকেন্ড ইয়ার কথাটা শুনে বুকটা ধুক করে উঠলো আরশের... হয়তো আরো একটা নিহা তার লাইফে আসতে চলেছে... হয়তো আরশের মতো অন্য কোনো আরশের চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে নির্ঘুম রাত কাটানোর সময় এসে গেছে... হয়তো...!!
.
পৃথিবীর হাজারো কোণায় এভাবেই চলছে হাজারো আরশ-নিহার গল্প... গল্পগুলো চলছে, চলবে... এভাবে চলতেই থাকবে...!!!  😊 😞 ✌