ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

Tuesday, September 19, 2017

আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম, তখন ফাহিম নামের একটি ছেলে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে যায়।

যেহেতু আমি সাধারণ একটি পরিবারের মেয়ে। তাই আমি সাধারণ ভাবেই চলাফেরা করতাম। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম, তখন ফাহিম নামের একটি ছেলে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে যায়।
.
ফাহিম তখন এইসএসসিতে পড়ে। আসলে ঐ বয়সে সব ছেলে মেয়েরাই রঙিন চোখ দিয়ে রঙিন দুনিয়া দেখে। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলামনা। আমি মনে মনে চাইতাম, আমাকে কেউ ভালবাসুক। কেউ আমাকে বলুক লাবন্য আমি তোমাকে ভালবাসি।
.
আমার মনের চাওয়াটা পুরোন করেছিল ঐ ফাহিম নামের ছেলেটি। আমাকে সেদিন ও প্রথম বললো.. 
- সাথী তুমি কি কাউকে ভালবাসো..?"
- না, এই প্রশ্ন কেন করছেন..?
- যাক এই না শব্দটাই শুনতে চেয়েছিলাম।
- কেন.., হ্যাঁ বললে কি হতো..?
- কষ্ট নিয়ে ফিরে যেতাম!
- তাতে আপনি কষ্ট পাবেন কেন..?
- আরেকদিন বলবো।
.
ফাহিমদের বাড়ি আমাদের পাশের গ্রামে। ওর বাবা গ্রামের নামকরা চেয়ারম্যান। বেশ কয়েকদিন লক্ষ্য করেছি ও আমাকে ফলো করছে। আজ ওর কথাতে বুঝতে পারলাম, ও মনে মনে কি চাইছে! ছেলেটিকে আমার বেশ পছন্দ। আমি ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই ওর প্রেমে পড়ে যাই।
.
একদিন ফাহিম আমাকে বলেই ফেললো সে আমাকে ভালবাসে। আর আমিও তাতে রাজি হয়ে যাই। আসলে ওর প্রতি আমার দুর্বল হওয়ার অনেকগুলো কারণ ছিলো। ও বড়লোক ঘরের সন্তান হলেও ওর মধ্যে কোনো অহংকার ছিলোনা। ও সবসময় সাধারন ভাবেই চলতো। এবং সাধারণ মানুষদের সাথেই চলতো। সত্যি কথা বলতে ওর যতগুলো বন্ধু ছিলো, সবাই ছিলো অসহায় ও গরীব। আর ও সবসময় এই গরীব অসহায়দের নিয়েই চলতো।
.
আমাকে মাঝেমধ্যে অনেক কিছুই গিফট করতো। যেটা আমার কাছে মোটেও ভাল লাগতোনা। একদিন আমি ফাহিমকে বললাম... "তুমি যেদিন নিজে ইনকাম করে আমাকে কিছু কিনে দিবে, সেদিন আমি সব থেকে খুশি হবো। সেটা হোক সামান্য মূল্যের..!"
.
ও যে আমার এই কথাটি সিরিয়াসলি নিবে আমি ভাবতে পারিনি..! একদিন ও আমার হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো.. "এটা আমার টিউশনির টাকা দিয়ে তোমার জন্য কিনেছি। তুমি সেদিন আমাকে নিজে ইনকামের কথা বললে, আমি তারপর থেকে একটা টিউশনি শুরু করি। আর সেই টিউশনির প্রথম টাকা দিয়ে তোমার জন্য এইটা আর মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনেছি।"
.
সেদিন আনন্দে আমার চোখদুটো অশ্রুতে ভরে গিয়েছিল। আমি সেদিন বুঝেছিলাম ফাহিম আমাকে কতটা ভালবাসে..! আমি ওর দেয়া প্যাকেটা যখন বাড়ি গিয়ে খুললাম, খুলেই আমি অবাক হলাম.! প্যাকেটের মধ্যে একটা নীল শাড়ি এবং সাথে ওর লেখা একটি চিঠি দেখে। আমি চিঠিটা পড়তে লাগলাম...
"লাবন্য, নীল শাড়িতে তোমাকে কোনোদিন দেখিনি। কেন যেন দেখতে খুব  ইচ্ছে করছে আমার..! শাড়িটা পরে আগামীকাল বিকেলে আমার সাথে দেখা করবে প্লিজ..! আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো তোমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা নদীর পাড়ের সেই কাঁশবনে। কি আসবে তো..!?"
.
আমি গিয়েছিলাম ফাহিমের উপহার দেওয়া নীল শাড়িটা পরে। আমাকে দেখেই ফাহিমের চোখ দুটো কপালে উঠে গিয়েছিল..! বলেছিলো....
- সত্যিই অসাধারণ! যেন সাদা কাঁশবনে একটা ডানাকাটা নীলপরী নেমে এসেছে..!
.
সেদিন আমিও একটি গিফট কিনেছিলাম ওর জন্য। একটি নীল রঙের পাঞ্জাবি। প্যাকেটটি ওর হাতে দিয়ে বললাম...
- এটা এখনই গায়ে দাও।
- কি এটা..?
- একটি পাঞ্জাবি, আর একটি ঘড়ি। 
- তুমি এসব কিনতে গেছো কেন..? তুমি টাকা কই পেলে..?
- শুধু তুমিই আমাকে দিবে..? কেন, আমিকি কিছু দিতে পারিনা..? এটা আমার নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে কেনা। তুমি তো জানো আমি হাতের কাজ জানি। গত একমাস হাতের কাজ করেছি তোমাকে উপহার দিবো বলে।
.
আমি লক্ষ্য করলাম ফাহিমের দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ও বললো...
- আমি তোমাকে ভালবেসে ভুল করিনি। জানিনা আল্লাহ্ আমাদের দুজনের মিলন লিখে রেখেছেন কিনা!? তবে আল্লাহর কাছে চাইবো, তিনি যেন তোমাকেই আমার জীবন সঙ্গিনী করে দেন। 
- তুমি কি নামাজ পড়ো যে আল্লাহ্ তোমার কথা রাখবেন..?
- এখন থেকে পড়বো।
- সত্যি...!?
- হুম..
- আমিও পড়বো..
সেদিনের বিকেলটা ছিলো আমার জীবনের সেরা স্মৃতি। যা কোনোদিনই ভুলতে পারবোনা।
.
সেদিন থেকে আমি আর ফাহিম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করে দিলাম। তারপর থেকে আমরা দেখা সাক্ষাৎও খুব কম করতাম। আমি নামাজ শুরু করে বুঝতে পারি যে, আমার জন্য পর্দা করা ফরজ। আমি পর্দা করাও শুরু করে দিলাম। ফাহিম আমাকে কয়েকটা বোরকা কিনে দিয়েছিলো। আর সেগুলো ছিলো আমার সবচেয়ে প্রিয় উপহার। 
.
আল্লাহ সত্যি সত্যিই আমাদের দুজনের মিলন লিখে রেখেছিলেন। আমার এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, সহিহ শুদ্ধভাবে পর্দা করা ফাহিমের পরিবারের সবার মন কেড়েছিলো। আর এতেই আমাদের দুজনের মিলন হওয়াটা খুব সহজ করে দেন উপরওয়ালা। দুই বছর পর আমাদের বিয়ে হয়। 
.
আমার আর ফাহিমের আজ বিয়ের একবছর হলো। সেই উপলক্ষে আমার শ্বশুর আব্বা গরীব অসহায়দের মাঝে কাপড় বিতরণ এবং খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। আমার শ্বশুর সবার কাছে আমাদের জন্য দোয়া চাইছেন। সেই কাজে ফাহিমও খুব ব্যস্ত। আমাকে সবাই এত ভালবাসে, আমার কাছে কেবলই মনে হয় তা পাবার যোগ্য আমি নই.! জীবনে আমি আর কিছু চাইনা। শুধু এই ভালবাসা টুকুই চাই.!
.
সত্যিই সুখের কপাল আমার। এত সুখ আল্লাহ আমার কপালে লিখে রেখেছিলেন ভাবিনি, আলহামদুলিল্লাহ্। ভাবতেই আমার দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু পড়ছে। এটাকেই বুঝি সুখের কান্না বলে..!? এভাবেই আমি কাঁদতে চাই আজীবন...
•••
গল্প: "সুখের কান্না"
.
✍Ramzan Khondaker (স্লিপলেস বার্ড)

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment