আজ ১৫ আগষ্ট। রাজনীতির রাজপথে খুবই
গুরুত্ববহ একটা দিনের নাম। আর তেমনি এক
বিতর্কের নাম।অভিযোগের পাহাড়ের নাম।
যেমন শোক দিবসের নাম, তেমনি নোংরা
কাদা ছোড়া-ছুড়ির দিবসের নাম।
কিছু বিষয়ে লক্ষ করে আসি।
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা
জিয়া আজই কিছুক্ষণের মধ্যেই কেক
কাটবেন। কারণ তিনি তার জন্মদিনের উৎসব
উদযাপন করবেন।
আজই তার জন্মদিন কিনা, সে বিতর্কে যাবো
না। বেশ কিছু পত্রিকা এবং আওয়ামী
ঘরানার ব্যক্তিবর্গ তো প্রমাণের প্রমাণ
দিয়ে চলেছেন যে, আজ খালেদা জিয়ার
জন্মদিন নয়। ১৯৪৪ সাল থেকে ১৯৪৯ সালের
মাঝে বেশ কয়েকটা জন্মদিনের তারিখের
তথ্য তারা প্রমাণস্বরুপ দেখিয়েছেন।
বেগম জিয়ার ১৫ তারিখের জন্মদিন প্রথম
পালন করা হয়, ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার
পর। তার আগে কি তিনি ভুলে গিয়েছিলেন
তার জন্মদিনের তারিখ? প্রশ্ন উনার জন্যই
তোলা রইল।
সব কিছু বাদ দিয়ে, বেগম জিয়ার জন্মদিনের
দিনক্ষণ মেনে নিলাম। কিন্তু কথা হচ্ছে,
জন্মদিন পালন করেন, ঠিক আছে। তবে
কাউকে তাচ্ছিল্য করা হয়, এমন ভাবে
উদযাপন করা তো কোনভাবেই সভ্য সমাজে
স্বাভাবিক হতে পারে না।
বেগম জিয়া যতটা নিজের জন্মদিন পালন
করছেন, তার চেয়ে বেশি জেদের বশীভূত
হয়ে করছেন। শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা
দেন নাই, ঠিক আছে। শেখ মুজিব খারাপ
লোক, তাও ঠিক আছে। কিন্তু এই ব্যক্তির
জন্যই তো আপনি আপনার সংসার ফিরে
পেয়েছেন। যার সহযোগিতার জন্যই ক্ষমতার
মধুর স্বাদ নিয়েছেন। তার মানটুকু তো রাখুন।
সেই দিনটাতে শেখ মুজিবুর রহমানের
পরিবারের আরেকজন সদস্য মারা গিয়েছিল।
নাম ছিল শেখ রাসেল। নিঃসন্দেহে সে
নিষ্পাপ। তার জন্যও তো একটু রয়ে সয়ে
উদযাপন করতে পারেন নিজের জন্মদিনটা।
নিজের বিয়েতে পড়শী ঘরের কেউ মারা
গেলেও, সেই বিয়ের আনন্দটাই সাদামাটা
হয়ে যায়। নিরানন্দে পরিণত হয় হয় নিজের
আনন্দ-মুখর উৎসব।
আর বেগম জিয়া তো দেশনেত্রী। তার তো
এগুলো ভাল জানার কথা। কিন্তু সমস্যা
একটাই.........
জেদ আর ইগো...................যেটা শুরু
করেছিলেন, সেটা চালিয়ে যেতে হবে। না
হলে সম্মান কমে যাবে। নিচু হয়ে যেতে হবে।
তাই চলতে থাকবে, যেমন চলছিল।
এবার আসি, ছাত্রলীগ আর আওয়ামী লীগের
১৫ আগষ্টের জন্মদিনকে মিথ্যা প্রমাণিত
করতে এতো তৎপরতা কেন? জন্মদিনকে
মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য? সত্যিই কি
নিজেদের আদর্শের সম্মান রক্ষা করার জন্য?
নো ওয়ে........কখনোই না। হাতে-গোণা কিছু
আর্দশবাদীকে বাদ দিয়ে তারা তাদের
আদর্শের জন্য লড়াই করছে না। তারা
রাজনৈতিক যুদ্ধ করছে। জেদের বশে এবং
ইগোর বশে। প্রতিপক্ষকে ছোট দেখাতে।
শেখ মুজিবুর রহমানের কথায় আসি। তিনি
স্বাধীনতার আগে ও পরে বাংলাদেশের
রাজনীতির উত্তর পুরুষ। স্বাধীনতার ডাক
তিনি ৭ মার্চ দেন। তবে বেশ কিছু মানুষই
তাকে জাতির জনক মানে না। তার ভূমিকা
নিয়েও এক পক্ষের প্রচুর আপত্তি। যা
আমাদের দেশের রাজনীতির জন্য খুবই
স্বাভাবিক কথা।
তবে বিতর্কগুলো পরিহার করে কিছু কথা
বলি।
অনেক নেতা-কর্মীই কালো ব্যানার, কালো
ব্যাজ, কালো পোশাক সহ অনেক কিছুই
ব্যবহার করছেন, তারা কতটা শোকাহত সেটা
দেখানোর জন্য। সবাইকে দেখিয়ে চলেছেন,
তারা কতটা ব্যথিত।
আমি হলপ করে বলতে পারি, যারা এভাবে
দেখাচ্ছেন যে তারা শোকাহত, তাদের মনে
বিন্দুমাত্র দুঃখের লেশ মাত্রই নেই। তারা
এগুলো করছেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থে।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষাতে।
নেত্রীর কাছে, দলের কাছে পাবলিসিটির
জন্য। ক্ষমতার উপরের সিড়িতে উঠার জন্য।
শোক দিবস পালন করতে জোর পূর্বক চাঁদা
আদায় করা হচ্ছে। দোকানে দোকানে টাকা
আদায় করা হচ্ছে। কর্মজীবী মানুষ যারা কস্ট
করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার
করে, তাদের থেকে টাকা নেওয়া কোন
সংবিধানে আছে। আমি দেখতে চাই।
এগুলো আদর্শের রাজনীতি নয়। এগুলো
নিজের পকেট ভর্তি করার রাজনীতি।
হাসি-মুখ করে তোলা ছবি বিভিন্ন স্থানে,
বিভিন্ন সড়কে দেখা যাচ্ছে। হাসিমুখে
শোক দিবস পালন। এভাবে শোক দিবস
পৃথিবীর কোথাও পালন করা হয় না। এভাবে
শোক ছাড়া শোক দিবস করে নিজেদের
আদর্শকেই অপমান করা হচ্ছে। যে টাকা
চাঁদা তোলা হচ্ছে, সে টাকার ঠিক কত
শতাংশের সৎ ব্যবহার হচ্ছে, তা ব্যাপক
সন্দেহজনক।
আদর্শ তারাই পালন করে চলে, যারা
প্রচারবিমুখ। তারাই নিশ্চুপ, স্বার্থহীন ভাবে
নিজ নিজ দলকে সমর্থন এবং ভালবেসে
যাচ্ছেন। সব দলেই এই শ্রেণী বর্তমান।
ময়মনসিংহের হারুন সালেহ রতন চল্লিশ বছর
ভাত খাননি। শেখ মুজিবুর রহমানের
স্বপরিবারে নিহতের ঘটনা বুকে ধারণ করে
নীরব প্রতিবাদী হয়ে বেচে ছিলেন তিনি।
যা ময়মনসিংহ বাসীর জন্য এক বিস্ময়।
চল্লিশ বছর পর্যন্ত তিনি তরল খাবার খেয়ে
বেচে আছেন। বেচে আছেন আদর্শ বুকে
নিয়ে।
এমন কোন আদর্শবাদী আছে আওয়ামী লীগে,
যারা প্রচার করে যাচ্ছেন, তারা
শোকাহত.......তারা সত্যিকার অর্থে কতটা
শোকাহত? ভাবতে হবে.............
যেই হাসানুর হক ইনু আর মতিয়া চৌধুরী শেখ
মুজিবুর রহমানের মৃত্যুতে খুশি এবং আগে
তাকে জঘন্য ভাবে অপমান করে কথা
বলেছিল, তারাই আজ সবচেয়ে বেশি
শোকাহত। খুবই বেশি।
বুঝতে হবে.........দিস ইজ সো কলড
রাজনীতি!....!. যার কোন নীতিই নাই।
দুই দলের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের
মাঝে চিন্তিত এবং বিরক্ত দেশের সাধারণ
জনগণ। যাদের সংখ্যাই পারতপক্ষে বেশি।
তাদের জন্য ভাবার কেউ নাই। কেউ ভাবেও
না।
কষ্ট করে নিজেদের জীবন-সংগ্রামে ব্যস্ত
তারা। এদের এমন নোংরা কাঁদা ছোড়া-
ছুড়িতে অতিষ্ট তারা। তারা বেশি কিছু চায়
না। চায় সামান্য শান্তি। একটু করে
স্বস্তিদায়ক জীবন।
বড় দুই দলের দুই নেত্রীকেই এগিয়ে আসতে
হবে। জনগণের উপকার এবং দুঃখ লাঘবের
জন্য। সে লক্ষণ অবশ্য কিঞ্চিৎ পরিমাণেও
দেখা যাচ্ছে না। হয়তো হবেও না।
ভবিষৎ বলে দিবে কি হবে না হবে......
অপেক্ষায় রইলাম সেদিনের.......
একটু সুন্দর আগামীর.......
একটু সুন্দর ভবিষৎ এর।
যেদিন রাজনীতির কারণে মায়ের পেটের
শিশু নিরাপদ নয়, যাদের জন্য এই রাজনীতি,
সেই সাধারণ জনগণ যখন অতিষ্ট, আমরা সেই
রাজনীতি চাই না।
সাধারণ জনগণের নিরাপদ জীবনে বাধা না
আসার নিশ্চয়তা শেখ হাসিনা- বেগম
খালেদা কেই দিতে হবে। প্রয়োজনে সব
বিবাদ ভুলে এক হয়ে।
দেশের বড় দুই দল এবং তাদের শীর্ষ দুই
নেত্রী যতদিন মতপার্থক্য জিইয়ে রাখবেন
ততদিন সমস্যা বৃদ্ধিই পাবে। কখনো কমবে না
বিন্দু-মাত্র।
পরিশেষে, বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে
শুভেচ্ছা জানাই।
শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীত
শোকের বার্তা জানাই।
দুই পক্ষই যতই চিল্লাক না কেন, এটার কোন
সমাধার বা পরিসমাপ্তি কখনো আসবে না।
তাই এটা শেষ করে দেওয়াই উত্তম। অন্তত
দেশ ও মানুষের জন্য হলেও।