ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

Friday, September 22, 2017

আমরা পুরো ফ্যামিলি তোমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

প্রায় বিশ বছর আগের কথা...
"জুয়েল, আজ তোমাকে চিঠিটা না লিখে পারলামনা। কারণ চিঠিটা পড়ার পর তুমি যখন ভাল কিংবা খারাপ রিয়েক্ট নিয়ে আমাকে খুঁজতে আসবে, তখন আমি অনেক দূরে চলে গেছি। আমাকে চাইলেই তুমি রাগী ভঙ্গিমায় গালমন্দ করতে পারবেনা। আমার বাবা হঠাৎ করে আরেকটি ভাল স্কুলে চাকরি হওয়াতে 
 এতদিন যা মুখফুটে তোমাকে বলতে পারিনি, তা আজ বলে দিবো। মনের জমানো কথাগুলো তোমাকে বলবো বলবো করে বলাই হয়নি। আমি যেদিন তোমাকে আমার বাবার কাছে প্রাইভেট পড়তে দেখি, সেদিন আমি ভিষণ খুশি হয়েছিলাম। কারণ তোমাকে অনেক কাছ থেকে দেখতে পাবো। তাই বাবাকে বলে তুমি যে ব্যাচে পড়তে আমি সেই ব্যাচে পড়া শুরু করি। আমি বাবাকে বলেছিলাম "বাবা, জুয়েল তো ভাল স্টুডেন্ট ওর সাথে পড়লে আমারও সুবিধা হবে।" এই কথা বলাতে বাবা রাজি হয়েছিলো। তুমি ক্লাসের ফার্ষ্টবয়, তুমি ভাল স্টুডেন্ট, তোমার ব্যবহারের কথা কি বলব..! ওটা সবাই জানে। তোমার হাতের লেখা দেখলেই তো যেকোনো মেয়ে তোমার প্রেমে পড়ে যাবে..! এত গুন তোমার মধ্যে, বলে শেষ করা যাবেনা। সত্যি কথা বলতে কি আমি তোমাকে ভালবাসি সেই ক্লাস এইট থেকে। কথাটি বলার সাহস হয়নি কোনোদিন। ভাবলাম যখন চলেই যাবো মনের কথাটি তোমাকে জানিয়েই যাই। এতদিন পর মনের কথাটি বলার সাহস হলো তাও আবার চিঠির মাধ্যমে। জানিনা চিঠিটা পড়ে তোমার মনের অনুভূতি কি..!? আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানকার ঠিকানাটাও আমার জানা নেই যে, তোমাকে দিয়ে যাবো। তবে তোমার ঠিকানা যেহেতু আমি জানি, একদিন না একদিন তোমার খোঁজ আমি নিবো। চিঠিটা পড়ে তোমার মনে কি অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে সেটা জানার খুব ইচ্ছে হচ্ছে আমার। তবে না জানাই ভালো, কি বলো..!? যদি নেগেটিভ কিছু ভাবো সেটাই ভয়..! সামনে তোমার এইচএসসি পরীক্ষা, ভালমতো পড়ালেখা করিও, এসএসসির মতো এইচএসসিতেও তুমি ভাল রেজাল্ট করবে এই দোয়া করি। ভাল থেকো...
-ইতি নাতাশা"
.
চিঠিটা কিছুক্ষণ আগে মিজান আমার হাতে এনে দিল। মিজান আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। চিঠিটা পড়তে পড়তে কখন যে আমার দুচোখ পানিতে ভরে গেছে আমি টেরই পাইনি.! এই নাতাশাকে আমিওযে ভালবাসি..! কিন্তু আমিও কোনোদিন মুখফুটে বলতে পারিনি ভয়ে। স্যারের মেয়ে বলে বলতে কখনো সাহস হতোনা। ও যথেষ্ট ভাল ছাত্রী। ক্লাস এইট থেকে এসএসসি পর্যন্ত কেবল ওর সাথেই আমার পড়ালেখার প্রতিযোগীতা হতো। ক্লাসে এক দুই রোলনং আমার আর ওর কাছ থেকে কেউ নিতে পারতোনা। কিন্তু কোনোদিন বুঝতে পারিনি নাতাশা আমার মতই মনে মনে আমাকে ভালবাসে..!
.
মাঝে মাঝে কথা হতো নাতাশার সাথে। ওর বাবা আমাদের স্কুলের ইংরেজী শিক্ষক ছিলো। ইংরেজিটা তিনি ভাল পড়াতেন, তাই স্যারের কাছে এসএসসি পর্যন্ত ইংরেজী প্রাইভেট পড়েছি। আজ নাতাশার চিঠিটা পড়ে ভীষণ আফসোস হচ্ছে! কেন আমি এতদিন মনের কথাটি মনের মধ্যে জিইয়ে রেখেছি!
.
মিজান আমাকে শান্তনা দিয়ে বললো... "দোস্ত, মন খারাপ করিসনা, তোর আর নাতাশার মিলন যদি আল্লাহ তায়ালা লিখে রাখেন, দেখিস একদিন ওর সাথে তোর দেখা হবেই।" আমি বললাম.. "তাই যেন হয় দোস্ত। দোয়া করিস..!"
.
ওদের ঠিকানাটা জানার অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু কেউ সঠিকভাবে বলতে পারলোনা। তারপর এক বছর কেটে গেল। আমি এইচএসসিতেও ভাল রেজাল্ট করলাম। আমি সেই ছোটবেলা থেকেই একটি  স্বপ্ন দেখতাম। আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অনার্স করবো.! যেহেতু আমার এসএসসি এবং এইচএসসির রেজাল্ট অনেক ভাল, তাই এডমিশন দিতে ঢাকা চলে গেলাম।
.
যেদিন ভার্সিটিতে ভর্তি ফর্ম সংগ্রহ করতে গেলাম, সেদিন একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল..! অনেক লম্বা লাইন দেখে আমি লাইনে না দাড়িয়ে ভাবলাম একটু পরেই দাড়াই। তাই আমি কোলাহল ছেড়ে একটু দুরে গিয়ে ক্যাম্পাসের একটি গাছের নিচে সবুজ ঘাসের উপর বসলাম। বসে বসে ভাবছিলাম আমি এত এত ভাল স্টুডেন্টদের মধ্যে থেকে চাঞ্চ পাবো তো..! আমার এতদিনের স্বপ্ন কি সত্যি হবে..! 
.
হঠাৎই অনুভব করলাম আমার পাশে কেউ এসে বসলো..! আমি ঘাড়টা ঘুরিয়ে তাকাতেই আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম..! আমার পাশে বসে আছে নাতাশা..! আমি নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলামনা..! দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে.! ওর দুচোখ অশ্রুতে টলমল করছে..! আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম, কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলানা..!
.
আমি বললাম.. "তুমি এখানে..!?"
ও অশ্রুভেজা কন্ঠে বললো... "এখানেই তো থাকার কথা ছিলো...!"
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম... "মানে কি...!?"
তারপর ও বলতে লাগলো... "তোমার কি মনে আছে এসএসসি রেজাল্টের পর তুমি আমাকে একবার বলেছিলে তোমার ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশে অনার্স পড়ার খুব ইচ্ছে..!? আমি কথাটি ভুলিনি। আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি ভর্তি ফর্ম সংগ্রহ করতে ঢাকা আসবেই। তাই প্রথম দিনই তোমার আর আমার জন্য একসঙ্গে দুটো ফর্মই সংগ্রহ করে রেখেছি। আর তারপর থেকে প্রতিদিনই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই ক্যাম্পাসে আমি তোমাকে খুঁজছি..! আজ সাতদিনের মাথায় তোমাকে পেয়েও গেলাম..!"
.
ওর কথা শুনতে শুনতে আমার দুচোখ বেয়ে টপপট করে অশ্রু পড়তে লাগলো..! আমি অশ্রু শিক্ত চোখে তাকিয়ে আছি নাতাশার দিকে...! আর মনে মনে ভাবছি মেয়েটি সত্যিই আমাকে কত ভালবাসে..! 
চোখের পানি মুছতে মুছতে আমি ওকে বললাম...
"তোমাকে যে আমিও ভালবাসতাম। তোমার মতো আমিও বলতে সাহস পাইনি। তোমার চিঠিটি পেয়ে সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম আর আফসোস করেছিলাম, কেন এতদিন বলিনি মনের কথাটা। তোমার চিঠিটা কতবার যে পড়েছি আর কেঁদেছি তার হিসেব নেই..! স্কুলে গিয়ে তোমাদের ঠিকানা খোঁজ করেছি। কিন্তু সেখান থেকেও সঠিক ঠিকানা দিতে পারলোনা। তোমার চিঠিটা এখনো আমার বুক পকেটে আছে। এই দেখো...!"
.
আমি চিঠিটা পকেট থেকে বের করলাম। ও আমার হাতটি ধরে কাঁদছে আর বলছে... "আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন, সবচেয়ে খুশির দিন!"
আমি শক্ত করে ওর হাত ধরলাম। আর অন্য হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম। 
.
আমরা দুজনেই আল্লাহর রহমতে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশে চাঞ্চ পেয়েছিলাম। আল্লাহ  সত্যিই আমাদের মিলন লিখে রেখেছিলেন। আর সেজন্যই সেই থেকে এখনো দুজন একসঙ্গেই আছি। আজ আমরা দুই সন্তানের বাবা-মা 😍
•••
"তুমি ছিলে নীরবে"
.
✍Ramzan Khondaker (স্লিপলেস বার্ড)

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment