ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

Monday, August 14, 2017

হ্যালো সোনাপাখি, তুমি কোথায়?

#রুমডেট

--হ্যালো সোনাপাখি, তুমি কোথায়?
--এই মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম আবির,সকাল সকাল ফোন কেন?
--তোমাকে মিস করছি জেরিন। অনেক বেশি।
--কেন,কাল সারারাতই তো কথা বললাম তোমার সাথে, সকাল না হতেই মিস করছো!!!
--হুম, কি করবো বলো। তোমাকে ছাড়া একমুহূর্ত থাকতে পারছি না।
--ইশ রে,আমার বাবুটা!!! এই নাও, উ..ম্মা..হ। আদর করে দিলাম।
--সোনাপাখি, আজ একটু তাড়াতাড়ি বের হতে পারবে? বাসা একদম খালি। সবাই একটা অনুষ্ঠানে গেছে।সন্ধ্যার আগে কেউ ফিরবেনা।
--আমার আজ পরীক্ষা আছে আবির, তাছাড়া আম্মু টের পেলে মেরেই ফেলবে।
--জেরিন,তুমি আমাকে ভালবাসো না?
--এই,আম্মু আসছে। রাখি রাখি...
মিথ্যে বলে ফোনটা রেখে দিলো জেরিন। আবিরের সাথে ছয়মাস ধরে প্রেম করছে জেরিন। 
ধনী পরিবারের একমাত্র সন্তান আবির। খুব স্মার্ট আর পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়ায় দুহাতে টাকা খরচ করে আবির। জেরিনের কলেজে যাওয়ার পথে আবির একটা চায়ের দোকানের পাশে তার মোটরবাইক রেখে চা খেতে খেতে দাঁড়িয়ে থাকতো আর জেরিনের দিকে তাকিয়ে থাকতো। সেই থেকে আস্তে আস্তে পরিচয়, ফোন নাম্বার আদানপ্রদান, কথা, প্রেম ভালবাসার শুরু হয়।
জেরিনের আকস্মিকভাবে ফোন রেখে দেয়ায়,আবির আবার ফোন করলো-
--কি হলো জেরিন, তুমি কি আমায় ভালবাসো না?
--হুম,তোমাকে আমি অনেক বেশি ভালবাসি। তোমার চাইতেও বেশি।
--সত্যি তো?
--হুম,ভালবাসি,ভালবাসি,ভালবাসি!!!
--যদি তুমি আমাকে ভালবেসে থাক,তাইলে আজ আমার বাসায় আসতে হবে,একদম খালি বাসা, কেউ নেই। খুব একা একা লাগছে।
--আবির, আম্মু টের পেলে একদম মেরেই ফেলবে। 
--বুঝেছি, তুমি আমায় একটুও ভালবাসো না। যাও তোমার আসা লাগবে না।
এই বলে আবির ফোন রেখে দিলো। ফোন রেখে দেয়ায় জেরিন খুব কষ্ট পেতে লাগলো।
ভাবছে, আবিরকে মুখের এভাবে উপর না বলে দেয়া উচিত হয়নি। এই প্রথমইতো ডাকছিলো ওর বাসায়। বাসাও খালি ছিলো। সেতো ভালবাসে আমাকে। না বলা উচিত হয়নি।
আবার ফোন দিলো জেরিন-
--হ্যালো, আবির আমি আসছি। রমনাপার্কে এসে অপেক্ষা করবো। তারপর এখান থেকে তুমি এসে নিয়ে যাবে আমাকে। তবে এক ঘন্টার বেশি থাকতে পারবো না তোমার বাসায়।
--প্লিজ,দুই ঘন্টা থেকো সোনাপাখি।
--আচ্ছা, দেড় ঘন্টার এক মিনিটও বেশি নাহ।
--ওকে তুমি আসো, আমি রওয়ানা দিচ্ছি।
কপালে ছোট কাল টিপ, আর চোখে কাজল পড়লো জেরিন। আবিরের দেওয়া পিংক কালারের থ্রিপিছটা পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে। এই প্রথম সে রুমডেটে যাচ্ছে জেরিন। মোটা প্রলেপ দেওয়া কসমেটিক ভেদ করে ঘাম বেরিয়ে আসছে। থ্রিপিছের উপরে বোরকা পড়লো জেরিন, প্রতিদিন যেভাবে সে কলেজে যাবার জন্য বের হয়,সেভাবেই বেড়োচ্ছে। জেরিনের এমন তাড়াহুড়ো দেখে তার মা বললোঃ
--কিরে জেরিন, আজ এতো তাড়াতাড়ি কলেজে যাচ্ছিস কেন?
--আম্মু, আজ একটু কাজ আছে কলেজে, গ্রুপ স্টাডি করতে হবে আজকে, তাই স্যার তাড়াতাড়ি যেতে বলছে আজকে।
--ঘামছিস কেন এভাবে তুই?
--না, ইয়ে মানে... একটু তাড়াহুড়ো করেছি তো, তাই আরকি!!!
কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে রিক্সা করে বেড়িয়ে পড়লো জেরিন। রমনাপার্কে এসে বসে আছে, এখনো আবির আসেনি, আবির কে ফোন দিলো জেরিনঃ
--তুমি কোথায়, আমি রমনাপার্কে এসে বসে আছি।
--এইতো সোনাপাখি, আসছি আমি। একটু জ্যামে আছি, কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌছে যাবো।
--আজ প্রথম রুমডেট, খুব ভয় হচ্ছে আমার। আম্মুকে মিথ্যা বলে বোকা বানিয়ে আসলাম। তাড়াতাড়ি করে এসে নিয়ে যাও আমাকে।
--ভয় পেয়ো না,এক্ষুনী আসছি আমি।
একটা গাছের নিচে থাকা বেঞ্চে বসে ফোনে কথা বলছিলো জেরিন। হঠাত করে পেছন থেকে ১৩/১৪ বছর বয়সী একটা মেয়ে আসলো। হাতে কিছু ফুলের মালা,আর ছোট ছোট কিছু ফুলের তোড়া!!!
--আফা, একটা ফুলের মালা নেন।
--এই সর,যাহ। আমি মালা-টালা কিনবো নাহ।
--একটা নেন না আফা!!
--তোকে যেতে বলছিনা, আমি মালা কিনবো না। আমি অপেক্ষা করছি একজনের জন্য।
--তাইলে দুইটা মালা নেন আফা। দুইজনের জন্য দুইটা।
--আজব তো!!! আমি একটা মালাই নিতে চাচ্ছি না, আর এখন বলতেছিস দুইটা নিতে!!! 
--আফা এমন করেন ক্যান, আপনেরা না কিনলে আমরা কি করে খামু। কি করে চলুম!!! 
--ক্যান, তোর বাপ মা নাই? 
--বাপ মা থাকলে কি আর আপনাগো পেছনে দৌড়াইয়া ফুল বেচি? জারজ বলতে পারেন,বাপ-মা চিনিনা। আফা তাইলে একটা পেকেট নেন, পঞ্চাশ টাহা দিয়েন।
--কিসের পেকেট? 
--আফা, ভাব নেন ক্যান? জানেন না বুঝি!!! আপনি যখন ফোনে কথা বলছিলেন,তখন আমি পিছন থাইক্কা দাঁড়াইয়া সব শুনছি, রুমডেটে যাইবেন আইজ। এইসব কাহিনী প্রতিদিনই দেহি এইখানে।
--এই, তুই যাতো আমার কাছ থেকে। এ বয়সে অনেক পেকে গেছিস। 
--আপা পার্কে, রাস্তায়, ট্রাফিক সিগন্যালে ঘুরে ঘুরে ফুল বেচি। রংবেরঙ এর জোড়া জোড়া পাখি দেহি। পাকুম না তো কি!!! পেকেট নেন আর না নেন,একটা কথা বলি শুনবেন?
--না শুনবোনা,তুই যাহ এখান থেকে।
--বইলাই চইলা যাইমু, আর বিরক্ত করুম না।
--বল, বলে বিদায় হ।
--আফা, পেকেট না নেন সমইস্যা নাই। অনাকাঙ্ক্ষিত যে সন্তান আইবো,পিলিজ, ঐডারে নষ্ট(Abortion)না করে কোন আশ্রমে দিয়া দিয়েন। কিছুডা বড় হইয়া আমার মতো রাস্তায়,ট্রাফিক সিগন্যালে,পার্কে ঘুইরা ঘুইরা ফুল আর পেকেট বেচবো।
হওক না জারজ, তাতে কি!!!
জীবনের চেয়ে মূইল্যবান কিচ্ছু নাই।
ফুলওয়ালি এসব বলে চলে গেলো। জেরিন, মেয়েটার কথা শুনে ঝিম মেরে বসে আছে,আর ভাবছে কি বললো মেয়েটা!!! এসব কি করতে যাচ্ছি আমি।
আবির কি আমাকে ভালবাসে? না আমার.....
নাহ, আবির আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে চাচ্ছে, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং...
ভালবাসি কি বা বাসিনা, তার প্রমান দিতে যদি রুম ডেটে যেতে হয় তবে সে কেমন ভালবাসে আমাকে?
আবিরের ফোনঃ
--সোনাপাখি, তুমি কোথায়?
--চলে যাচ্ছি আমি। তুমি ভালো থেকো...
--মানে কি জেরিন?
--আবির, যে ভালবাসার প্রমান দিতে আমাকে রুমডেট করতে হবে, সে ভালবাসা আমি চাই না।
--এই জেরিন তোমার কি হলো এখন?
হ্যালো... এই জেরিন... হ্যালো... হ্যালো.....



0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment