মেয়েটি তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাবার। সময় ছোট একটি চিরকুটে লিখেছিল, "বাবা অামাকে ক্ষমা করে দিও।"
মেয়েটির বাবা সেদিন তার মেয়েকে ক্ষমা করতে পারেনি। বাচ্চাদের মত উঠানে বিলাপ করে কেঁদেছিল। প্রলাপ করে প্রায়ই বলত, অামার মেয়েটা একটিবার অামার কথা ভাবলনা।"
.
লোকটির নাম মাসুদুর রহমান। নরসিংদী ইউ, এম, সি জুট মিলস এ কাজ করে। মাসুদুর রহমানের স্ত্রী নরসিংদী সদর হাসপাতালে মেয়েটিকে জন্ম দেয়ার সময় মারা যায়।
এলাকার মানুষ খুব করে বলত, "অাবার একটা বিয়ে করো, সারাটা জীবন পড়ে অাছে।"
মাসুদুর রহমান মেয়েটিকে কোলে নিয়ে বলত, "অামার মেয়েটাই অামার সারা জীবনের সুখ। সুখীই অামার সুখ। "
সেই থেকে মেয়েটির নামই "সুখী"
মাসুদুর রহমান যখন কাজে চলে যেতেন তখন সুখীকে তার দাদীর কাছে রেখে যেতেন। কাজ থেকে ফিরে সারাক্ষন মেয়েকে নিয়ে সময় কাটাতেন। রাতে বুকে নিয়ে মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। সে সুখী অাজ কত বড় হয়ে গেছে। বাবার কথা একটিবার ভাবার প্রয়োজন মনে করলনা।
.
মেয়ে যখন বড় হয় তখন বাবা মায়ের চিন্তার অন্ত থাকেনা। সুখী যখন হাইস্কুল পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হল। তখন থেকেই মাসুদুর রহমান মনে মনে একটি যোগ্য পাত্রের সন্ধান করছিলেন। মেয়েটিকে তিনি সুখী দেখতে চান।
.
যখন ভাল একটি পাত্রের সন্ধান পেলেন তখন গতকাল সুখীকে মাসুদুর রহমান বলেছিলেন, "অামার মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে। পরের ঘরে যাবার সময় হয়েছে। মা'রে শুক্রবার তোকে পাত্রপক্ষ দেখতে অাসবে"
তখন সুখীর চেহারাটা দুঃখী দুঃখী ভাব ছিল। মাসুদ ভেবেছিল তাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে তাই হয়তো মেয়েটার মন খারাপ। কিন্তু সকালে উঠে অার সুখীকে পেলোনা। মাসুদকে একা রেখে তার মেয়ে নিজের সুখ খুঁজতে চলে গেল।
.
প্রতিবেশীরাও বলতেছে, "অাগেই বলেছিলাম মা মরা মেয়েটার জন্য হলেও একটা বিয়ে করো। মা ছাড়া মেয়েরা এমনই হয়"
মাসুদ রাতের অন্ধকারে সুখী সুখী বলে কান্না করত। অার প্রতিবেশীরা ঠাট্টা করে বলত, "এমন মেয়ের জন্যও কেউ চোখের জল ফেলে?
.
. চার বছর পরের কথা। মাসুদ অনেক অসুস্থ। বলা চলে জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। মাসুদের মা বুড়া মানুষ হয়েও এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে ডাক্তার দেখাইত। মাসুদ বলত, "মা অযথা চেষ্টা করছ। অামার দিন অার বেশী নেই। সুখীকে একবার দেখে যেতে পারলে শান্তি পেতাম। "
মাসুদের বাবা নেই। বুড়া মা অার কতটুকু দৌড়াতে পারে এদিক সেদিক? প্রতিবেশীরা একদিন অাসলে দ্বিতীয়দিন অার অাসেনা। এমনি করে মাসুদ জীবন অার মৃত্যুর মাঝখানে শুয়ে অাছে। কখন জানি মায়ার এই পৃথিবী ছাড়তে হয়।
.
মাসুদের মা মাসুদের কানের কাছে এসে বলল, "মাসুদ তোর মেয়ে এসেছে। সুখী এসেছে তোকে দেখতে। "
মাসুদ উঠার চেষ্টা করেও অার পারলনা। সুখী দৌড়ে এসে মাসুদের পায়ে ধরে কান্না করতেছে অার বলতেছে, "বাবা অামাকে তুমি ক্ষমা করোনি, তাই অামি সুখী হইনি"
সুখীর পিছনে তার তিন বছরের ছেলে। মাসুদ একবার নাতিটাকে দেখে নিল। তারপর বলতে লাগল, "মা'রে অামি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তোকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল শেষবারের মত। অাল্লাহ অামার দোয়া কবুল করেছেন।
.
সুখী চোখের পানিতে বাবার পা ভিজাচ্ছে অার বলতেছে,
বাবা অামি পালিয়ে গিয়ে সুখী হতে পারিনি। অামার স্বামী বিয়ের দেড় বছর পর থেকে প্রচন্ড নেশা করত। অামি কিছু বললে অামাকে মারধোর করত। গতকাল এত মারছে যে অার সহ্য করতে পারিনি। ছেলেটাকে সাথে করে নিয়ে চলে এসেছি। অামাকে জায়গা দিবানা বাবা? ''
মাসুদ মুচকি হাসি দিয়ে বলল, বাবা মা তাদের অাটটা দশটা ছেলে মেয়েকে জায়গা দিতে পারে অার অামি তোকে জায়গা দিতে পারবনা?
.
পরেরদিন সুখী বাবার হাত ধরে বলতেছে, "বাবা, তুমি অনেক অসুস্থ। তার উপর অামি এসে জুুটেছি। কিভাবে সংসার চলবে? কিভাবে বাকি দিনগুলো যাবে?
মাসুদ মুখে মৃদু হাসির রেখা টেনে বলতেছে, "অামি মরে গেলে তোর বাকি জীবন সুখেই কাটবে। জুট মিলস থেকে অনেকগুলো টাকা পাবি। অামি সবকিছু তোর নামেই করেছি। সুখী মা, তুইতো অামার সুখরে"
.
সুখী তার ছেলেটাকে বুকে নিয়ে বোবার মত স্তব্ধ হয়ে গেছে। চোখে কোন পানি নেই। মাসুদকে বড়ই পাতার গরম জলে শেষ গোসল দিচ্ছে।
"সুখী সুখ পেল কিনা জানা নেই, মাসুদ তার মেয়েটিকে নিয়ে সুখী হতে চেয়েছিল।"
0 মন্তব্য(গুলি):
Post a Comment