ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

Thursday, August 24, 2017

প্রতারণা চিরকুটের ভালোবাসব



ইন্টার প্রথম বর্ষ শেষ করে আমি এখন দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছি। কলেজে কিছুদিন যাওয়ার পর একটা মেয়ে আমার চোখে পড়ে। মেয়েটা অনেক সুন্দর ছিলো। কিন্তু মেয়েটি আমার চোখে পড়ে তার পোশাকের কারণে। তখন শীতকাল ছিলো, মেয়েটি প্রথম যেদিন দেখি সেদিন মেয়েটি গোলাপি আর সাদা রঙের শীতের পোশাক পড়ে আসে। যার কারণে মেয়েটা অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো। প্রথম দেখাতেই মেয়েটাকে আমাকে ভালো লেগে যায়। আস্তে আস্তে মেয়েটাকে ভালোবাসতেও শুরু করি। কিন্তু তখনও আমি জানতাম না, মেয়েটা কে? মেয়েটার নাম কি? কোথায় থাকে? বলতে গেলে মেয়েটাকে চিনা ছাড়া আর কিছুই জানি না।
.
কিছুদিন যাওয়ার পর আমি আনিলার মাধ্যমে মেয়ের সম্পর্কে জানতে পারলাম। মেয়েটার নাম মিতু, আমার থেকে এক বছরের জুনিয়র। ও হ্যাঁ, আনিলা হচ্ছে আমার বান্ধবী। ওর কাছে আমি আমার সবকিছু শেয়ার করতাম। যাকে বলে বেষ্টফ্রেন্ড বা অন্তরঙ্গ বন্ধু। তারপর কিছুদিন যেতে না যেতে আমি মিতুর সাথে পরিচয় করে নিলাম। এরপর কলেজে আসলে মাঝে মাঝে মিতুর সাথে কথা হতো। কিন্তু এভাবে কতদিন থাকা যায় আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি মিতুকে আমার ভালোবাসার কথা জানাবো। পরেরদিন কলেজে গিয়ে মিতুকে দেখতে পেলাম। তারপর বললাম...
.
“মিতু”
“কি,”
“এদিকে আসো।”
“হুম, বলেন।”
“আসলে কিভাবে বলতে হয় আমার জানা নেই, শুধু বলতে চাই তোমাকে আমার ভালো লাগে। মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“আমি আপনাকে ঘৃণা করি।”
.
মিতু কোনো কথা চিন্তা না করেই আমার সরাসরি বলে দিলো আমাকে ঘৃণা করে। এরপর আমি মিতুর সামনে থেকে চলে আসলাম। পরের দিন যখন কলেজে যাই মিতু আমার কাছে এসে আমাকে ছোট্ট একটা চিরকুট দিলো।
যেটাতে লেখা ছিলো, “সরি!” 
সরি লেখা দেখে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “সরি কেন?” 
ও উত্তর দিলো, “আমি আপনাকে ঘৃণা করি না তাই।” 
এরপর কিছুদিন আর মিতুর সাথে কোনো কথাবার্তা হয়নি। কিন্তু আমার কিছু ভালো লাগতো না। তাই কিছুদিন পর আমি মিতুকে আবারও প্রপোজ করলাম। মিতু কোনো উত্তর দিলো না। আমি ওকে একসপ্তাহ সময় দিলাম। একসপ্তাহ পার হয়ে গেল, কিন্তু মিতু তখনও কোনো উত্তর জানালো না।
.
আমি বেশ কিছুদিন আর কলেজে যাইনি। একদিন আমার একটা ফ্রেন্ড আমাদের বাসায় এসে একটা চিরকটু দিলো। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “এটা কে দিলো?” ও বললো, “মিতু তোকে দিতে বলেছে।” তারপর বন্ধুটা চলে গেল। আমি চিরকুটটা খুলে দেখলাম, চিরকুটে লেখা ছিলো...
.
“তৌহিদ,
আমি জানি যে, আপনি কেন কলেজে আসেন না! আপনার বান্ধবী সব বলেছে। আমি আপনাকে পছন্দ করি কিন্তু আপনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না। কারণ বাড়ি থেকে জানলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। তাই বলছি, আপনি আমাকে ছেড়ে দেন।
ইতি মিতু”
.
এরপর আমি কলেজে যাই আর সেদিন কলেজ থেকে ফেরার পর আমার বাবা আমাকে একটা থাপ্পড় দিলো। প্রথমে বুঝতে পারিনি বাবা কেন আমাকে থাপ্পড় দিলো? পরে বাবা বলে, মিতুর বাবা নাকি আমার নামে বাবার কাছে নালিশ দিয়েছেন। আমি বুঝতে পারলাম সব মিতুর কাজ। আমি ভেতর থেকে অনেক ভেঙ্গে পড়লাম। এরপর আমি আস্তে আস্তে মিতুকে ঘৃণা করতে শুরু করলাম। ওকে দূর থেকে দেখলে আমি আর ওর দিকে ফিরেও তাকাতাম না। তারপর একদিন আমার একটা বান্ধবী এসে আমাকে একটা চিরকুটট দিলো। যাতে লেখা ছিলো...
.
“তৌহিদ,
আমি জানি যে, আপনি ভাবতেছেন আমান বাবাকে আমি বলেছি। আসলে সবি আমার এক বান্ধবী বলেছে। ও আপনাকে পছন্দ করে। কিন্তু আপনি আমাকে ভালোবাসেন সেই হিংসায় ও এসব করেছে। কালকে আপনি কলেজের পিছনের দিকে আমার সাথে দেখা করে।
ইতি মিতু”
.
পরেরদিন ওর কথা মতো কলেজের পিছন দিকে আমি ওর সাথে দেখা করতে গেলাম...
“বলো, কেন ডেকেছো?”
“আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আর হ্যাঁ, এটা কাউকে বলো না প্লিজ। বাসায় জানতে পারলে অনেক সমস্যা হবে।”
“ঠিক আছে, বলবো না।”
“আমার নাম্বারটা নাও। 016*** এটা আমার নাম্বার কল দিও। এখন যাই কেউ দেখলে আবার ঝামেলা বাঁধবে।”
.
মিতুর কাছ থেকে জবাবটা পেয়ে আমি খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু আমাদের প্রেমটা শুধু মোবাইলের কথা আর মেসেজের কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কারণটা হচ্ছে যদি ওর বাবাকে কেউ বলে দেয়, বিশেষ করে ওর ঐ বান্ধবীটা যে আমাকে ভালোবাসে। তারপরও ওর আড়ালে আমাদের কথা হতো সামনাসামনি। আমাদের দিনগুলো বেশ ভালোই যাচ্ছিলো। দু’জনের শেয়ারিং, কেয়ারিং দিনে দিনে আমাদের ভালোবাসাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো কোনো সময় মনে হতো আমি ওকে ছাড়া একটা মুহূর্তও থাকতে পারবো না। একদিন ওর সাথে কথা বলার সময় বললাম...
.
“তুমি আমার জীবন থেকে কখনো হারিয়ে যাবে না তো?”
“ধুর পাগল, হারিয়ে যাবো কেন? হারিয়ে যেতে ভালোবেসেছি নাকি হুম।”
“জানো মাঝে মাঝে ভাবি যদি কখনো তোমাকে হারিয়ে ফেলি আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো? মনে হয় যেন তুমি ছাড়া আমার পৃথিবীতে আর কেউ নেই শুধু তুমিই আছো।”
“তাই পাগল একটা, কখনো হারিয়ে যাবো না। তোমার বুকে স্থান করে নিয়েছি না। তোমার বুকেই থাকবো।”
“তাই, কিন্তু আমার বুকে তো এতো বড় জায়গা নেই তোমাকে রাখবো কিভাবে?”
“এই তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছো বলো তো?”
“কই কিছু না তো।”
“কিছুু তো বুঝাতে চাচ্ছো, আমি মোটা এমন কিছু তো? নিশ্চয়..”
“আরে না, এমনিতে দুষ্টামি করতেছিলাম। তুমি তো আমার থেকেও চিকন।”
“জ্বি না! আমি এতটাও চিকন না।”
“তাহলে কেমন শুনি?”
“তোমার বুকে থাকার মতোই আমি।”
“তাই,”
“কেন কোনো সন্দেহ আছে?”
“না কোনো সন্দেহ নাই, আরও একটু চিকন হলে ভালো হতো আর কি?”
“কেন?”
“না, তেমন কিছু না। আরেকজনকে জায়গা দিতাম আর কি? ঐ যে তোমার বান্ধবীটাকে।”
“কি বললে তুমি?”
“কোথায় কিছু বলিনি তো।”
“একদম মেরে ফেলবো যদি আমার স্থানে অন্য কেউ আসে। তোমার বুকে শুধু আমি থাকবো আর কেউ না।”
“মেরো ফেললে যদি মরে যাই।”
“চুপ মরবে কেন?”
“তুমি মেরে ফেলবে বললে যে, এজন্য!”
“ধুর বোকা আমি কি মরার জন্য মারবো নাকি?”
“আমি বোকা?”
“হুম, বোকা! কিছুই বুঝো না।”
“তাহলে তুমি চালাক বানিয়ে দাও না।”
“না চালাক হতে হবে না। চালাক হলে দুষ্টু হয়ে যাবে।”
“দুষ্টু নাহয় একটু হলাম তাতে কি? তোমার দুষ্টুি তো হবো তাই না।”
“না না বাবা দরকার নেই।”
“তুমি তো দেখছি নানা, বাবা দু’জনকেই ডাকতেছো, ভূত দেখলে নাকি?”
“উফ্, তুমি না।”
“আমি কি?”
“তুমি ফাজিল একটা”
“তাই,”
“হুম, এই বাবা আসছে এখন পড়তে বসতে হবে। পরে কথা হবে বাই, বাই বাই বাবু, টেককেয়ার।”
“শুনো না..”
.
বলার আগেই কলটা কেটে দিলো। দেখতে দেখতে আমাদের সম্পর্কের একটা বছর হয়ে গেলো। আমারও এইচ এস সি পরিক্ষা শুরু হয়ে গেলো। পরিক্ষা শেষ হলো। মিতুও ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠলো। রেজাল্ট প্রকাশের পর আমি একটা ভার্সিটি চান্স পেলাম। ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার পর মিতু ইদানীং আমাকে খুব অবহেলা করছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে না বায়না দেখায়। আস্তে আস্তে অবহেলার পরিমাণটা বেড়েই চলেছে মিতুর সাথে তেমন কথা হয় না। কারণ ওকে মেসেজ দিলে রিপ্লে করে না। কল দিলে কলও রিসিভ করে না। এখন একবারেই কমে গেছে। এখন আর অন্যকোনো বায়না দেখায় না শুধু একটাই বায়না দেখায় সেটা হচ্ছে সামনে পরিক্ষা রেজাল্ট ভালো করতে হবে তাই পড়ার অনেক চাপ পড়তে হয়।
.
মিতুর সাথে এখন আমার একদম যোগাযোগ বন্ধ কোনো কথাই হয় না। এক বন্ধুর সাথে দেখা হলে সে আমাকে বলে...
.
“কিরে তোর কি খবর?”
“এইতো ভালো, তোর কি অবস্থা?”
“ভালোই, মিতু তোকে ছ্যাঁকা ট্যাকা দিলো নাকি?”
“না তো, ও ছ্যাঁকা দিবে কেন?”
“তাহলে একটা ছেলের সাথে ঘুরে যে ছেলেটা কে?”
“কোন ছেলের সাথে ঘুরে?”
“চিনি না।”
“ওকে পরে কথা হবে।”
.
পরে খবর নিয়ে দেখলাম, মিতু শুভ নামের একটা ছেলের সাথে প্রেম করে। তারপর আমি মিতুর সাথে দেখা করলাম।
.
“শুভ ছেলেটা কে? তুমি নাকি ওর সাথে প্রেম করো?”
“হুম, যা শুনেছো, সব ঠিকই শুনেছো। আমি শুভকে ভালোবাসি। আমি তোমার সাথে এই সম্পর্ক রাখতে পারবো না।”
.
মিতুর কথা শুনে কি করবো বুঝতেছিলাম না। ওর কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম। অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম। এর প্রতিশোধ আমি নিবো। কিন্তু আমি যে ওকে ভালোবাসি আমার বিবেক আমাকে বাধা দিলো। আমি পারিনি ওর কোনো ক্ষতি করতে। আমাকে ছাড়া যদি ও সুখে থাকে তাহলে থাকুক না। আমি নাহয় ভালোবেসে কষ্টটুকুই পেলাম। ও সুখে থাকলেই আমি খুশি।
.
Moral: এমন মেয়েগুলোর না শুধু মেয়ে না এমন অনেক ছেলে ও মেয়েগুলোর প্রতারণার কারণে এমন অনেকের সুন্দর স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে যায়। আর কেউ কেউ ভালোবাসার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যেটা শুধু সাময়িক প্রশান্তি মাত্র বই আর কিছু নয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment