ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Wednesday, September 13, 2017

১৫ বছর এর বড় হওয়া সত্ত্বেও রায়হান এর সাথে বিয়েটা হয়েই গেলো।

১৫ বছর এর বড় হওয়া সত্ত্বেও রায়হান এর সাথে বিয়েটা
হয়েই গেলো।
এই ঈদ আমার শ্বশুর বাড়িতে প্রথম ঈদ।
আম্মা শিখিয়ে দিয়েছিল,বাসায় গুরু জনরে সবাইকে
পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবে।
গাড়ি থেকে নেমে যখন রায়হান আর আমি বাসার ভিতরে
ঢুকবো,দরজার সামনে প্রায় ৩০জন দাড়ানো,কয় জনকে
সালাম দিব এই ভেবে বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
সালাম দেয়া শুরু করলে রাত শেষ হয়ে যাবে।একদম
সামনে দুজন মহিলা দাড়ানো ছিল,রায়হান এর মা এবং
দাদি।
আগে মা কে সালাম দিলাম,সালাম দিয়ে উঠে
বললাম,ঈদ মোবারাক মা।
সে আমায় কিছু না বলেই ভিতরে চলে গেল।
কিছুই বুঝলাম না,হয়তো দাদির আগে তাকে সালাম দিছি
তাই রেগে গেছে।
যাক, দাদিকে সালাম দিয়ে বললাম,দাদি শরীর ভালো
আপনার?
দাদি ও কিছু না বলে হন হন করে ভিতরে চলে গেল।
চারদিকের সবাই হাসছে,ভাবলাম এ আমি কই আসলাম?
সবাই পাগল নাকি?
এর মাঝেই রায়হান আমার হাত ধরে রুম এ নিয়ে গেল।
আমিতো লজ্জা ই পেয়েছিলাম,বুড়া হলেও বউ এর প্রতি
কি টান।
আমি:- এই যে বুড়া লজ্জা নাই?সবার সামনে দিয়া নতুন বউ
কে নিয়ে রুম এ আসলা যে?
রায়হান:- রুম এ আসছি কি স্বাধ এ?
তুমি আমার বড় বোন কে মা বলছো
আমি:- তাহলে মা কই? :o
রায়হান:- তারে তো তুমি দাদি বানাইয়া দিছো। :/
আল্লাহগো,কি মসিবত এ পরলাম আমি।সালাম দিয়া কি
ভেজাল এ পরলাম।ওর বড় বোন তাই আমার মায়ের বয়সি।
আর ওই বুড়া মহিলা আমার শাশুড়ি।
বিয়ের আগে ছবি দেখা উচিৎ ছিল।
যাই শাশুরীর মান ভাঙিয়ে আসি।
গিয়ে দেখি সে রুম এ দরজা দিয়ে রেখেছে।
অনেক নক করার পর দরজা খুলছে।
-মা আপনি রাগ করেছেন?
না মা আমি রাগ করিনি।
মন খারাপ।
-কেন মা?
আসলে আমার নানু খুব অসুস্থ।
আমি কতক্ষন হা করে তাকিয়ে বলি আপনার নানু?
বলে হি হি করে হেসে দিছি। :D
শাশুড়ি আম্মা ক্ষেপে আমায় বের করে রুম দিয়া বের
করে দিলেন।
আমার কি দোষ,শাশুড়ি আম্মাই এক পা কবরে দেয়ার বয়স
তার মা ও না,তার নানু এখনো জীবিত।
বেশ বয়স পেয়েছে।
মন খারাপ করে রায়হান এর রুম এ যাচ্ছি, এমন সময় আমার
বয়সী কয়েকজন আমায় পা ধরে সালাম দিল।
আমি তাদের উঠিয়ে বললাম,ওঠো ভাইয়ারা।ভাবলাম
দেবর-ননদ।ওরা হেসেই বলে,মামি তুমি আমাদের ভাইয়া
কেন বলো?
খাইলাম আবার বিলা
ভাবছি আর মুখ খুলবো না।রায়হান এর কাছে
গেলাম,ভাবলাম আজ ঈদ এর দিন,রায়হান কে একটা
সালাম দেয়া উচিৎ।
একমাত্র ওরে সালাম দিয়াই লজ্জা পাবোনা।বুড়া
আছে। ;)
সালাম দিব বলে প্রস্তুত হচ্ছি,
ভাবলাম হয়তো ও সিনেমার মতন আমায় তুলে বলবে,ওগো
তোমার জায়গা আমার বুকে।নিচু করে বসে সালাম দিতে
নিলাম,রায়হান আটকাচ্ছে না।সালাম দিয়ে দেখি
সামনে রায়হান নাই,আছে একটা বাচ্চা।আনুমানিক ৫বছর
হবে।
রায়হান সামনে দিয়া চলে গেছে।আমি ভুলে ওই
বাচ্চারেই সালাম দিছি।
এই বাচ্চা আবার কে!
যেহেতু বুড়া বুড়া পোলাপান ই আমার ভাগ্নে -ভাগ্নি
তাহলে এ বাচ্চা মনে হয় আমার নাতি।
বিয়ে হতে না হতেই আমি নানী হয়ে গেলাম।
বাচ্চারে কোলে নিয়া বলি,কি বাবু নতুন নানী কে পছন্দ
হয়েছে?
ও বলছে তুমি তো আমার রাঙা ভাবি।
পরে জানি ও রায়হান এর চাচাতো ভাই। :3
কোন ঘরে আসলাম,বুড়া রা সম্পর্কে ছোট আর বাচ্চারা
সম্পর্কে বড়। :3
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি,রায়হান কাঁদছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?
ও বলে ওর বড় মা মারা গেছে।
বললাল,আমার শ্বশুর আব্বার দুটা বউ আগে জানতাম
নাতো।
রায়হান রেগে বললো,আমার মা এর নানীকে বড় মা বলি।
আমি আবার আহাম্মক হইলাম।  :( এখন সান্তনা দেয়ার
ভাষা
ই খুঁজে পাচ্ছিনা।নতুন বিয়ে স্বামীর প্রতি ই মায়া
হয়নায় তার উপর নানী শাশুড়ির প্রতি।
যাক একটা সান্তনা দেয়া উচিৎ। উঠেই বললাম,রায়হান,
সে মারা গেছে তুমি কিছু মনে করোনা।
ও আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,না কিছু
মনে করবো কেন,সে তো আমার বেয়াইন লাগে। >_<
রায়হান ও হন হন করে চলে গেল রুম থেকে।
শ্বশুর বাড়ি আমায় পুড়া বিলা বানাইয়া দিল। :(
.
# সম্পর্কের গোলকধাঁধা। ;)
.
Bristi Patuiary

Wednesday, September 6, 2017

M y maMy rriage love marriage. Ladka ladkor type jhgodrut, love love

M y maMy rriage love marriage. Ladka ladkor type jhgodrut, love love!
It was a lot of arguing before the wedding, I thought we should be marriage must be reduced. And what will be reduced, but increased Hari!!
Even before both were two-place "some relief, but after marriage together because of the rehytoukuk hapoosh! Argument ' quality ' and ' qozeranetus ' both continued to increase.

We have two polar inhabitants. According to one mill with anyone. I get my wife to North South. Surprised I thought this woman was married to? So big a mistake could! I'm so stupid man? Chi Chi Chi!

While my wife and similar charges. Marry me is the result of sin, of the birth of his seven or like me a disgusting animal on Earth, etc.

One argument in the extreme.
Then at 10:11. Up his fingers at me eyes, his wife said, "it is not possible for me to live with you. "I'm chewing said" it is not possible for me to live with. ' This is a place where both shall agree. There is the argument stop. Right is we both get different. Any person who does not see the face. Then a good seeing both go to court together with a mutual divorce.

My wife said, ' lawyers look? You didn't I? ' and I said, ' you look! Not my poshab of those searched everything. Where will we sign, sign up-wrong khals! "
"Don't eat the pulse again?"
"Of course not! Pulse is playing in my name bitch pusho. "But my wife is happy his father went home and packed suitcase.

I Pant left to save. At first, I did a huge jump, "Yahoo", then we go to my house about friends. Today all night mochaichab.
The next day, at khoraziadh, after a lot of whistling from the home started to be broken, and people saw two-hand said, "I am now free, hah hah hah!"

The free show in front of father-in-law after ten days the streets throughout and adds a cigarette after the walk.
People began to ask, "How is it?" and I said "nothing severe neck!"

Shaubshurmshai home the second day came out and said "Daddy don't go inside such madness. People say? "I'm hard neck than the day before, said" no!!! "

On the third day my wife came out. Told me said, ' what do you want? ' and I cry cry neck said "House Let's go. "Lifting the forehead eyes the wife said," go home? Jesus Christ? Lawyer system, two-four days of notice. Go home and go. "I have another cigarette get caught a second time in in said" House Let's go. "My wife ordered a bajkhari-" chopau! "I said" a third stop rickshaw moving house. "My wife disappointed voice said," do you have any time to fill? The clothes go? Clothes at least leave me! "

The together. It has a lot of jadarjhapa, but did not leave anyone. This does not mean that we should stop! Rather than dashgun.
My wife who is panting noise when I'm low tone say "How is breath?"
The same thing is breath work. Wife double encouraged starts again.

When does kordom teeth in extreme anger and say "look, I'll probably kill your ass out!"
It's reliable enough. This woman, it is not impossible. Don't need any assassin foon, he lived alone.

But the interesting thing is that such a terrible thing after hearing my particular fear fright. Teeth smiled and went, because I know this woman cannot even leave to kill me!

Then again, what fear! 😍❤😂

কাজী অফিসে আসার কারন দুটি। প্রথমত আমার আর সাহেদার ডিভোর্স, দ্বিতীয়ত সাহেদা আর আরিফের বিয়ে।

চার বছর সংসার করে আজ আমরা দুজন আবার কাজী অফিসে এসেছি। আজকের কাজী অফিসে আসার কারন দুটি। প্রথমত আমার আর সাহেদার ডিভোর্স, দ্বিতীয়ত সাহেদা আর আরিফের বিয়ে। এমন সময় ঠিক কেমন অনুভুতি হওয়া উচিত তা আমার জানা নেই। তবে আজ যা হতে যাচ্ছে অকল্পনীয় হলেও বাস্তব।
আজ থেকে চার বছর আগে আমার আর সাহেদার বিয়ে হয়। যে সময়টিতে আমাদের বিয়ে হয়, তখন আমরা একজন আরেকজন কে চিনতাম না। পরিবারের পছন্দে আমাদের দুজনের বিয়ে হয়েছে। এতগুলো বছরে অনেক স্মৃতি জরিয়ে আছে। এর মধ্যে সাহেদা কে আমি অনেক ভালোবেসেও ফেলেছি, তাকে ভালোবাসা টা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে, ভালো না বেসে থাকতেই পারিনা। আমি জানি সাহেদাও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আজ সাহেদার থেকেই আমি মুক্তি নিচ্ছি।
আমার এখনো মনে আছে যখন আমাদের বিয়ে হয়, সাহেদা তার কাছে আমাকে যেতে দিতে চায়নি। এক মাস পর্যন্ত সে আমার সাথে এক বিছানাতেও থাকেনি। আমিও সাধারন একটি বেপার ভেবে এড়িয়ে যেতাম, ভাবতাম সে হয়ত এখনো প্রস্তুত না। ধীরে ধীরে তার মন জয় করতে লাগলাম, আমার লুকানো ভালোবাসা তাকে প্রকাশ করতে লাগলাম। সময় যত বয়ে যেতে লাগলো, সাহেদা আমার তত নিকটে আসতে লাগলো। এক সময় সাহেদাও আমাকে ভালোবেসে ফেলে। আর তাকে তো আমি ভালোবেসেছিলাম সেই প্রথম দেখা থেকে।
মৃত্যু যন্ত্রনা আমি দেখেনি, কিংবা কখনো অনুভব করিনি, কিন্তু আজ সাহেদাকে কাজী অফিসে নিয়ে আসার সময় মৃত্যু যন্ত্রনার থেকেও যে ভয়ানক কষ্ট হতে পারে ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হাতে তুলে দিতে আজ আমি তা বুঝেছি। যদিও আমার জানা আছে এই যন্ত্রনা খানিক সময়ের জন্যই। আজকাল সাহেদা আমাকে প্রচন্ড ঘৃনা করে, আমি নিজেই তার সামনে এমন কাজ করেছি যা কখনো কোন নারীই মেনে নিতে পারেনা। রোজ নাইট ক্লাবে মেয়েদের সাথে ফুর্তি করা, মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ঘরে ফেরা, এ ছাড়াও সব চেয়ে নিকৃষ্ট যে কাজ করেছি তা আমার স্ত্রী কে চরিত্রহীনা প্রমান করে তাকে ডিভোর্স দিতে যাচ্ছি।
আরিফ আর সাহেদা একই কলেজে পড়ালেখা করতো। কলেজ জীবনে তাদের মাঝে প্রেম হয়, যা সাহেদার পরিবার মেনে নেয়নি আর আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে । সাহেদা আমাকে প্রায় আরিফের কথা বলতো, আমিও খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম, তাতে যতটুকু জানতে পেরেছি সাহেদার মনের অন্তগভীরে আজো কোথাও না কোথাও আরিফের প্রেমের ফুল ফুটে রয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোন পুরুষ আছে যে নিজ প্রেমিকা, নিজ ভালোবাসা, নিজ স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দিতে চাইবে। কিন্তু আমার এই কাজটি আরো আগেই করা উচিত ছিলো, ভেবেছিলাম আমি ঠিক হয়ে যাবো। কিন্তু আমার ভাবনা আর বাস্তবতা কোনদিন আমাকে মেনে নিতে পারেনি। তাই বাধ্য হয়েই আজ আমার এই কাজটি করতে হচ্ছে।
ছয় মাস আগে আমি জানতে পারি আমার হৃদয়ের মাঝে একটি ছেদ রয়েছে, যা ধীরে ধীরে আমাকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যাচ্ছে। একবার ডাক্তার আমাকে শান্তনা দিয়েছিলো অপারেশন করে হয়ত আমাকে ঠিক করা যাবে। কিন্তু শত চিকিৎসামুলক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তারের কথা একটাই, আমার রোগ শেষ পর্যায় আমাকে কোনভাবেই সুস্থ করা যাবেনা।
তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি আমার স্ত্রীকে কখনো বিধবার বেশে ধুকে ধুকে জীবন কাটাতে দিবো না। অনেক খোজ করে আরিফের সন্ধান করেছি, এবং সব কিছু জানিয়েছে। সবচেয়ে আনন্দদায়ক যে খবরটি আমার কাছে ছিলো, আরিফ আজো সাহেদা কে ততটাই ভালোবাসে যতটা সে প্রথম যৌবন থেকে ভালোবেসেছিলো। আমার অক্ষমতার কারনে আমাদের কোন সন্তানাদি হয়নি। আর আরিফ আজো সাহেদাকে ফিরে পেতে চায়। আরিফের সাথে বুদ্ধি করেই আমার এই নতুন নাটক সাজানো। আমি সাহেদার চোখে খারাপ হবার কাজ করতাম, আর আরিফ তাকে শান্তনা দিতো, ধীরে ধীরে আমি সাহেদার থেকে দূরে যেতে লাগলাম, আর আরিফ কে সাহেদার কাছে আসার সুযোগ দিলাম। আজকের এই দিনে নতুন এক ইতিহাস রচিত হবে, এক স্বাক্ষরে তালাক, দ্বিতীয় স্বাক্ষরে বিয়ে।
আরিফ সাহেদা আমি তিনজন আরিফের এক বন্ধু কাজী অফিসে দাঁড়িয়ে রয়েছি। অনেক্ষন নিরবতা পালন করে কাজী সাহেব কে বললাম, 
০- কাজী সাহেব আর কতক্ষন। আমাকে বের হতে হবে, তাড়াতাড়ি আমাদের কাজ শেষ করুন।
ততক্ষনে কাজী সাহেবের দলিলপত্র লেখা শেষ, শুধু আমাদের দুজনের স্বাক্ষর বাকী। আমি কোনকিছু না ভেবে স্বাক্ষর দিয়ে সাহেদার দিকে এগিয়ে দিলাম, সে আড়চোখে আমার পানে একবার তাকিয়ে স্বাক্ষর দিলো। আমি সাহেদার চোখে স্পষ্ট আমার জন্য চরম ঘৃনা দেখতে পেয়েছি, যে ঘৃনা কোন নারীই পারে কোন চরিত্রহীন পুরুষকে করতে। সব কথা ভুলে গিয়ে মুখে চিলতে হাসি নিয়ে কাজী সাহেব কে বললাম,
০- আমি জানি তিন মাসের আগে আমি অথবা আমার স্ত্রী বিয়ে করতে পারবনা। কিন্তু কাজী সাহেব আমি আমার স্ত্রীর বিয়ে আরিফের সংগে করাতে চাই, এবং সেখানে স্বাক্ষী হিসেবে নিজেকে উপস্থিত করতে চাই। যদিও আমার তিন মাস পর আসা সম্ভব না, তাই আমি আজই স্বাক্ষীর জায়গায় সই দিয়ে যেতে চাই। তিনমাস পর আমার স্ত্রী যখন আরিফকে নিয়ে আসবে বিয়ে করতে তখন যেন আমার স্বাক্ষী দেওয়া কাগজের মাধ্যমেই তাদের বিয়ে হয়।
আগে থেকে কাজীকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছিলাম, তাই এখন আর নতুন করে অবাক হলেন না। কিন্তু অবাক হলো সাহেদা, সে প্রতিবাদ করতে যাবে যাবে অবস্থা, নতুবা আমাকে কিছু শোনাতে যাবে, আরিফ তা হতে দিলোনা। আমি আরিফ কে আগেই জানিয়েছিলাম, আমার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আরিফ যেন কোন কিছু না জানায়। আরিফ সাহেদার হাত চেপে বারন করলো, কিছু জিজ্ঞেস করতে না। কিন্তু এখন সাহেদার চোখে ঘৃনার ছাপ পেলাম না, কৌতুহলের ছাপ পেলাম।
যাই হোক আমি স্বাক্ষীর স্থানে সই করে সোজা আমাদের গ্রামের বাড়ী দিনাজপুর চলে আসলাম। গ্রামে আসতেই আমার শরীর খারাপ হতে লাগলো, দিন যায় আমার অবস্থা বেহাল হয়। তিন মাসের আগেই আমার উপরের টিকেট কনফার্ম হয়ে গেলো। আজ আমার মরনের খবর পৌছে গেছে আমার ভালোবাসা সাহেদার কাছে। সাহেদা আর আরিফ ছুটে এসেছে আমার লাশ শেষবারের মত দেখতে। সাহেদার জন্য আমার লেখা ছোট্ট একটি চিঠি দিয়ে গেলাম, আমার ছোট ভাই রাতুলের কাছে। সাহেদ যখন চিঠিটা পড়বে তখন আমি অনেক দূরে থাকবো এই মোহময় জীবন থেকে অনেক দূরে।
প্রিয় সাহেদা,
আমি জানি তুমি হয়ত আমাকে অনেক ঘৃনা করো, কিন্তু আজ অনুরোধ করছি আমাকে আর ঘৃনা করিও না। মৃত মানুষের উপর নাকি রাগ পুষে রাখতে হয়না। এমন কথা বড়রা বলে। তোমাকে চরিত্রহীন বলার জন্য, আর সবার সামনে ছোট করার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। আমার হৃদয়ে ছেদ ছিলো, যা আমাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করতেছিলো। আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না, আমি চলে যাবার পর তুমি বিধবার বেশে সারাজীবন সন্তানহীন হয়েই কাটিয়ে দাও। আমি জানি তোমার একটি সন্তান কত প্রয়োজন। এতগুলো বছরে আমি এটা জেনে গেছি তুমি মা হবার জন্য সব ত্যাগ করতে রাজী কিন্তু আমার অক্ষমতা কোনদিন তোমাকে মা হবার সুখ প্রদান করবে না।
আমি কোন নেশাবাজ নই, তোমার সামনে মাতাল হবার নাটক করতাম যেন আমাকে তুমি ঘৃনা করো। আর যে সব মেয়েদের সাথে তুমি আমাকে দেখেছো, তাদের সবাইকে টাকা দিয়ে নাটক করিয়েছিলাম, যেন তোমার মন আমাকে ঘৃনা করতে বাধ্য হয়, নতুবা তুমি কোনদিন আমাকে ছেড়ে যেতে চাইতে না তা আমি খুব ভালোকরে জানি।
আরিফের সাথে কয়েকমাস আগে আমার দেখা হয়, ছেলেটা তোমাকে বড্ড ভালোবাসে, এত ভালো তো কোনদিন আমিও বাসতে পারিনি। আজো সে তোমাকে আপন করে পেতে চায়, তোমার কারনে সে আজো বিয়ে করেনি। আরিফের মা বাবা গত হয়েছে বছর দুয়েক হলো, সে আজ সত্যিই একা হয়ে গেছে শুধু কল্পনা করে তার জীবনে তুমি ফিরে আসবে। আমি বেচে থাকতে তোমাকে যে সুখ দিতে পারিনি, মরে যদি দিতে পারি সেটাই আমার জীবনের পাওয়া সবচেয়ে বড় উপহার।
বড্ড সাধ ছিলো তোমার আর আরিফের বিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে দেওয়া, কিন্তু আমার জীবন আমাকে সেই সময় দিবে না, তাই আগে থেকেই স্বাক্ষীর জায়গায় সই দিয়ে এসেছিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দিও, আর আরিফের সাথে নতুন সংসার করে জীবনে অনেক সুখী হও।
আর একটি কথা, আজ হয়ত তুমি কাদবে অনেক চিৎকার করে কাদবে, তা আমি দেখবো না তোমার চোখের পানিও মুছে দিতে পারবো না, কিন্তু তুমি কাদবে না আমাকে হাসি মুখে বিদায় দাও, আর পরজনম বলে যদি কিছু থাকে আমি তোমার স্বামীই হতে চাইবো। অনেক ভালোবাসা আর শুভকামনা রইলো।
কিছু ত্যাগ কিছু ভালোবাসা এমনি হয় যার কোন অন্ত নেই।


আপনার বাড়িতে অশুভ শক্তি রয়েছে কিনা বলে দেবে এই পরীক্ষা!

আপনি কি ভূত-প্রেত বা অশুভ শক্তিতে বিশ্বাস করেন? আপনার কি মনে হয় যে আপনার বাড়িতে সব কিছু স্বাভাবিক নেই, কোনও এক অশুভ কিছুর উপস্থিতি কি আপনাকে তাড়া করে? কয়েকটি পরীক্ষা থেকে কিন্তু জানতে পারেন এমন কিছু আদৌ ঘটছে কিনা৷ হয়ে যেতে পারেন সাবধানও৷ তবে সবই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বিষয়৷ এ নিয়ে হাজার তর্ক-বিতর্ক রয়েছে৷ ইচ্ছে হলে একবার নিচের সহজ পরীক্ষাটি করে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন নিজের বাড়ি নিয়ে৷
১) একটি অক্ষত, পরিষ্কার কাঁচের গ্লাস নিন৷ তার গায়ে যাতে আপনার আঙুলের ছাপ না পড়ে তাই সেটি গ্লাভস পরে ধরুন৷

২) গ্লাসের এক তৃতীয়াংশ ভর্তি করুন সি সল্ট দিয়ে৷

৩) এরপর গ্লাসের আরও এক তৃতীয়াংশ ভর্তি করুন সাদা ভিনিগার দিয়ে, কিন্তু কোনওমতেই সি সল্টের সঙ্গে ভিনিগারটি মিশিয়ে দেবেন না৷

আরও পড়ুন: ব্যস্ত শহরের আনাচে-কানাচেই আছে হাড় হিম করা ভূতের বাস

৪) গ্লাসের বাকি অংশ পরিষ্কার জল দিয়ে পরিপূর্ণ করুন৷

৫) এবার এই গ্লাসটি বাড়ি ফাঁকা থাকা অবস্থায়, দিনের বেলা, সকলের অলক্ষ্যে এমন একটি জায়গায় রাখুন যেখানে আপনি নেগেটিভ এনার্জি অনুভব করছেন বলে মনে হয়৷

৮) টানা একদিন এভাবেই রেখে দিন৷ যদি দেখেন গ্লাসের জল পরিষ্কারই রয়েছে তাহলে ভয়ের কোনও কারণ নেই৷

৯) তবে একদিন পর যদি দেখে জলের রং-এ একটু হলেও পরিবর্তন এসেছে তাহলে, আরও একবার একই পরীক্ষা করুন বাড়ির অন্য কোন স্থানে গ্লাস রেখে৷ বারবার যদি জল রং পরিবর্তন করে তাহলে অশুভ শক্তি আপনার ধারেকাছে ঘোরাফেরা করলেও করতে পারে৷ তবে সমগ্র বিষয়টিই রহস্যে ঘেরা৷ তাই বিষয়টি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক রয়েছেই৷

Monday, September 4, 2017

ছেলের কান্না দেখে মাও তার চোখের পানি আড়াল করতে পারলেন না।

#মনে_পড়ে 

রাত অনেক হয়েছে..
শুভ্রর রুমের বাতি জ্বলছে।
ব্যাপার কি!! এত রাতে শুভ্রর
রুমে বাতি জ্বালানো কেনো!
মনে মনে ভাবছেন শুভ্রর মা।
নিজের রুমের বাতি জ্বালিয়ে দেখলেন
রাত
সোয়া দুইয়া প্রায়।
--কিরে, এত রাতে বসে বসে কি করছিস?
--কিছু না তো!
চমকে ওঠে জবাব দিলো শুভ্র।
--কিছু না হলে এত
রাতে বাতি জ্বালিয়ে বসে আছিস যে?
--আরে বললাম তো কিছু না। যাও তো এখান
থেকে।
অনেকটা রেগে চিৎকার করে উঠলো।
--কি ব্যাপার, এমন ভাবে কেউ মায়ের
সাথে কথা বলে? কি হয়েছে বল আমাকে।
শুনি আমার বাপটার কি হয়েছে..
--না মা কিছু হয়নি। এমনি বসে আছি। ঘুম
আসছিলো না। তাই।
--তাহলে কাঁদছিস কেনো?
--কই কাঁদলাম?! তুমি আসলেই বেশি বোঝো।
যাও
ঘুমাও গিয়ে।
--আমিতো বেশি বুঝিই। এটা আর নতুন কি.. এখন
বল
কি হয়েছে তোর?
--বললাম তো মা কিচ্ছু হয়নি।
--বন্যা কিছু বলেছে?
--আরে নাহ!
--মিথ্যে বলবি না। ওকে তুই আবার ফোন
দিয়েছিলি বুঝি?
--না গো মা।
--কিছু একটা তো হয়েছে। আমি মা,
আমিতো আর
ভুলভাল বুঝতে পারি না। বল শোনা আমার,
কি হয়েছে?
শুভ্রর
পাশে এসে বসে মা কথাগুলো জিজ্ঞাস
করছেন।
--মা, আমার ভাল লাগে না।
কথাটুকু বলেই মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ
করে কেঁদে ফেললো।
--বুঝতে পেরেছি, ওকে স্বপ্নে দেখেছিস,
তাই
তো?
--হুঁ। মাথা নাড়ালো শুভ্র।
--ওর সাথে কথা হয়েছে আজ?
--না।
--কেনো? আবার রাগ করেছে? নাকি তুই কিছু
উল্টাপাল্টা বল্রছিস?
--না।
--কাঁদে বাবা। তুই না ছেলেমানুষ..
ছেলেদের
এভাবে কাঁদতে নেই বাবা। প্লিজ কাঁদিস
না বাবা।
মা হাত দিয়ে শুভ্রর চোখের
পানি মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন।
--আচ্ছা ওকে ফোন দেই আমি?
আমি কথা বলিয়ে দেই?
শুভ্র জবাবে হ্যাঁ/না কিছুই বললো না।
--অপেক্ষা কর। আমার মোবাইল
ফোনটা আনছি।
শুভ্র চুপচাপ মাথা নিচু করে বসেই রইলো।
--দে, ওর নাম্বারটা বের করে দে।
ফোনবুক থেকে শুভ্র বন্যার নাম্বার বের
করে মায়ের হাতে ধরিয়ে দিলো।
ফোনে রিং হচ্ছে। টুঁট টুঁট...
ওপাশ থেকে ঘুমে জড়ানো গলায় আওয়াজ
আসলো। হ্যালো...
--বন্যা, আমি তোমার আন্টি।
বন্যা আর শুভ্রর মায়ের সাথে কথোপকথন
চলছে...
--তোমাকে এত রাতে বিরক্ত করার জন্য
আমি খুবই
দুঃখিত মামনি।
--ছিঃ ছিঃ আন্টি, কি বলছেন এসব। আমার
কোনো সমস্যা নেই। আপনি বলুন। কি হয়েছে?
--কি আর হবে! আমার ঘরে যে একটা পাগল
আছে না, সেই পাগল আবার পাগলামি শুরু
করেছে।
--কি হয়েছে শুভ্রর!!??
বন্যা অনেকটা আতংকিত স্বরেই বললো।
--কি আর করবে.. আমি ঘুম
থেকে উঠে দেখি বসে বসে কাঁদছে।
--কেনো! আংকেল
কি ওকে বকাঝকা করেছেন?
--আরে না। তোমার আংকেলের
সাথে তো তার কথাই হয় না। সে থাকে তার
মত
করেই।
কারো সাথে কি সে সেধেসেধে কথা বলে!!
কি একটা ছেলে যে জন্ম দিলাম, কিছু
হলে কাউকে কিছু বললবে না।
একা একা বসে শুধু
ভাববে আর কাঁন্নাকাটি করবে।
--আন্টি, আপনি মন খারাপ করবেন না প্লিজ।
দিন,
ওকে দিন। আমি ওর সাথে কথা বলছি।
আমি বুঝিয়ে বললে অবশ্যই কাজ হবে।
--আচ্ছা দিচ্ছি। দেখো কি বলে...
শুভ্র আর বন্যার কথোপকথন....
--কিরে শুভ্র কি হইসে তোর?
--কিছু না।
--আমাকেও বলবি না?
--কিছু হয়নি তো। কিছু হলেই না বলবো। আজিব
তো!
--ঢং করিস না।
--আমি কি মেয়ে মানুষ যে ঢং করবো?
--ইসস আসছে আমার পুরুষ মানুষ!!
তাহলে কাঁদছিলি কেনো?
--আমি কাঁদছিলাম তোকে কে বললো?
--ফাজলামি ছাড়। বল কেনো কাঁদছিলি?
--কাঁদিনি। চোখের এলার্জি বেড়েছে।
তাই
চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো।
--হুম। খুব পন্ডিত হয়েছিস, তাই না?!!? আজকাল
মিথ্যেও বলা শিখে গেছিস!
--আর কিছু বলবি? আমার ঘুম পাচ্ছে। ফোন
রাখবো।
বললো শুভ্র।
--হুম ঘুমা। নো মোর পাগলামি। ওকে!
--হুম।
--সকালে আমি আসছি।
--কোথায়?
--তোর বাসায়।
--সত্যি!!??
--হুম। সত্যি।
মাকে দেখে চাপা উত্তেজনাকে চাপাই
রাখলো শুভ্র।
--আচ্ছা রাখি এখন। বাই। গুড নাইট।
--হুম, গুড নাইট।
শুভ্রর মাঃ খুশি? এখন ঘুমান বাপজান।
শুভ মুচকি হেসে বললো, আচ্ছা ঘুমোচ্ছি। যাও
তুমি।
--সকালে ও আসবে?
--হুম।
--আচ্ছা, ঘুমা।
--যাওয়ার আগে লাইট অফ করে যেও।
--আচ্ছা করছি।
রাত ৪ টা.....
একবার বিছানার এপাশ থেকে ওপাশ। এই
চলছে গত দেড় দুই ঘন্টা যাবৎ।
এটা অবশ্য নতুন কিছু না। বন্যার সাথে যেদিন
দেখা হবে তার আগের রাত থেকে ঘুম বাদ।
এটা শুভ্রর সয়ে গেছে। তাই তেমন সমস্যাও
হচ্ছে না।
বেশি টেনশনেও মানুষ সুখের
নিদ্রা দিতে পারে না, আবার খুব খুশির সময়ও
না।
মানুষ বড়ই আজিব কিসিমের প্রানী।
মাঝে মাঝেঅদ্ভুত লাগে ভাবতে।
সকাল ৮:১০ মিনিট। ঘুম ভেঙেই মোবাইল
ফোনে টাইম দেখে নিলো শুভ্র।
আরে বন্যাকে তো ফোন দিলামই না।
রওনা দিলো কিনা আল্লাহ্ই জানেন।
--হ্যাঁ, কই তুই?
--এইতো আধা ঘন্টা পরই রওনা দেবো। তুই
ওঠে নাস্তা করে নে। শার্ট প্যান্ট
পড়ে রেডি থাকিস। বাইরে বের হবো।
--কোথায় যাবি?
--আগে আসি, তারপর বলি?
--আচ্ছা ঠিক আছে।
--ভাল কথা, আজকে কালো শাড়িটা পড়বি।
--তুই বললেই কি আমি পড়বো?
--হুঁ। পড়তে হবে। তার
সাথে কপালে কালো টিপও দিতে হবে।
বুঝেছিস।
--আচ্ছা ফোন রাখ শয়তান। আমি আসছি। জ্যাম
না থাকলে ঘন্টা খানিক সময় লাগবে।
--আচ্ছা। সাবধানে আসিস।
শাহবাগে বাস জ্যামে আটকে আছে।
বন্যা আর
শুভ্র পাশাপাশি বসে আছে। ইয়ারফোনের
একটা স্পিকার বন্যার ডান কানে, আর
দ্বিতীয়
স্পিকারটা শুভ্রর বাম কানে। দুজন খুব মনোযোগ
সহকারে গান শুনছে। শিরোনামহীন ব্যান্ডের
হাসিমুখ।
"তুমি যে আছো তাই আমি পথে হেঁটে যাই,
হেঁটে হেঁটে বহুদুর, বহুদুর যেতে চাই।"
গানটা দুজনেরই অসম্ভব প্রিয়। --এই শুভ্র, একটু
নীলক্ষেত যেতে হবে। যাবি?
--আচ্ছা ঠিক আছে চল।
তবে কেনো তা জিজ্ঞাস করলো না শুভ্র।
--ওখানে কাজ সেরে লাঞ্চ করে তারপর
মুভি দেখতে যাবো।
--ওকে। বলে মাথা নাড়ালো শুভ্র।
বন্যা বইয়ের দোকান থেকে IELTS এর কিছু বই
কিনলো। শুভ্র
পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে বন্যার
কান্ড।
কিভাবে মেয়েটা বই দোকানির সাথে বই
দামাদামি করছে।
বই কেনা শেষ।
--চল।
--এবার কোথায়?
প্রশ্ন করলো শুভ্র।
--ক্ষুদা লেগেছেরে। খেতে হবে কিছু। চল,
আজকে ভারি কিছু
না খেয়ে হালকাপাতলা কিছু
খাই..
--হালকাপাতলা খাবার!!
হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
--কিরে হাসছিস কেন?
--তোর কথা শুনে। হালকাপাতলা খাবার। খুব
মজা লাগলো শুনে।
--শয়তান.... শুভ্রর গাল টেনে এই
হাসিটা মাঝে মাঝে কই থাকে!!??
শুভ্র জবাব দিলো না।
--চল, ফুটওভার ব্রীজে উঠা যাক।
--উফ!! আবার এই প্যারা!! বন্যা খুব বিরক্ত হয়েই
বললো।
--কিসের প্যারা? বাসের চাকার
নিচে পড়ে আমার মরার ইচ্ছে নেই। আয় বলছি।
নিউমার্কেটের এখানে ভাল কিছু ফাষ্ট
ফুডের
দোকান আছে। ভাল বলতে তেমন ভাল না।
চলে আর কি। মোটামুটি সস্তাই।
একটা ফাষ্টফুড কর্নারে মুখোমুখি বসা দুজন।
--কি খাবি?
--পিৎজা।
--চিকেন নাকি বিফ?
--বিফ।
--আচ্ছা অর্ডার দে।
--পারবো না। তুই দে।
--তুই দিতে সমস্যা কি! আজিব ছেলে তো তুই!!
--আচ্ছা আচ্ছা দিচ্ছি।
--এই যে ভাইয়া, একটা পিৎজা। চিকেন
না কিন্তু।
বিফ বিফ।
বন্যা হাসছে।
--কিরে হাসছিস কেনো?
--না, এমনি হাসছি।
হাসি থামাতে পারছে না।
উল্টো হাসির পরিমাণ বেড়ে গেলো।
--কি রে!! কি হয়েছে!!
--তোর অর্ডার দেয়ার স্টাইল
দেখে হাসি পাচ্ছে।
--কেনো? এতে হাসির কি হলো?
--না কিছু হয়নি। এমনি। বাদ দে তো.. বলেই
এবার
খিলখিল করে হেসে উঠলো।
--হাস তুই। আমি গেলাম। বলেই শুভ্র চেয়ার
ছেড়ে উঠে দাড়ালো।
--কই যাচ্ছিস!!
শুভ্রর হাত ধরে বললো বন্যা।
আচ্ছা বাবা সরি। আর হাসবো না।
--একটা পিৎজা দুজন মিলে শেষ
করতে পারলাম
না এখনো! বললো বন্যা।
কথাটা শেষ হতে না হতেই দুই পিস
পিৎজা একসাথে হাতে নিয়ে মুখে পুড়ে দিলো।
খাবার মুখে নিয়ে চাবাচ্ছে আর বলছে,
এইবার
শেষ হলো তো?
--হুম শেষ। এইবার বন্যার হাসির লিমিট ক্রস
করলো।
পেটে খিল ধরে যাবার মত হাসি। এই
হাসিকে আমি বলি খিল হাসি।
--আমি খাবারের বিল দিচ্ছি। তুই
আমাকে মুভি দেখাবি।
--জ্বি ম্যাডাম। আপনার আর্জি বলে কথা।
মানতেই হবে।
--বাহ বাহ!! খুব ভাব দেখচ্ছিস দেখছি!
পকেটে আজ অনেক পয়সা মনে হচ্ছে?
--চল। এখান থেকে বের হই।
বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স এর
সামনে দুজন। দুটো প্রিমিয়াম ক্লাসের
টিকিট
শুভ্রর হাতে। টোয়াইলাইটঃ ব্রেকিং ডন (১)
এর
টিকিট। শো শুরু ১:৪০ মিনিটে। আরো ১৫
মিনিট
বাকি আছে শুরু হতে। তাই
উপরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিচের দৃশ্য
অবলোকন
করছে। সাথে বন্যাও যোগ দিয়েছে।
--কি দেখিস?
--মানুষ।
--নতুন দেখছিস?
--না।
--তো! মানুষ দেখার কি আছে?
--জানি না।
--পাগল একটা। চল টাইম আর বেশি নেই।
ভেতরে গিয়ে বসি।
--চল।
নিজেদের
আসনে পাশাপাশি বসে আছে দুজন।
মুভি প্রায় আধা ঘন্টা হলো চলছে।
শুভ্রকে দেখে মনে হচ্ছে না তার মন
মুভিতে আছে।
--কিরে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
না সূচক মাথা নাড়ালো শুভ্র।
--ভাল লাগছে না বুঝি?
শুভ্র আবারো না সূচক মাথা নাড়ালো।
কপালে হাত রেখে দেখলো শুভ্রর কপাল একটু
বেশিই গরম। হাত ছুঁয়ে দেখলো, হাত বেশ
ঠান্ডা।
--কিরে, জ্বর আসছে নাকি? খুব খারাপ
লাগছে বুঝি? চল বাসায় চল।
মুভি দেখতে হবে না।
--আরে না! কিছু হয়নি। এসির
বাতাসে বেশিক্ষণ
থাকলে আমার এমনই হয়। ওই যে কথায় আছে না,
কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না। সেরকম।
--থাপ্পর খাবি শয়তান। মুখে যা আসে তাই
বলতে হয় নাকি! তুই বড় হয়েছিস না এখন!
জ্বরে কপাল পুড়ে যাচ্ছে, আর
সে এখানে ঢং করছে।
বিকেল চারটা....
বসুন্ধরা সিটির বাইরে দুজন।
গন্তব্য বাসে উঠা। একটা ছোট
মেয়ে ছুটে এসে বললো, ভাইজান নেন
না ফুলগুলা। মাত্র দশ ট্যাকা। শুভ্র অবাক হলো।
এতগুলো গোলাপ দশ টাকা মাত্র! মানিব্যাগ
থেকে দশ টাকা বের করে মেয়েটির
হাতে দিতেই মেয়েটি দৌড়। ফুলগুলো বন্যার
হাতে দিলো শুভ্র।
বন্যাকে এত খুশি হতে খুব কমই দেখা যায়। ও
মাই
গড!! গোলাপ!! আমার খুব প্রিয়। অনেক থ্যাংক্স
তোকে। বলেই বন্যা শুভ্রর চিবুক
আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে বললো, আমার কিউট
বাবুটা।
বাবু বলাতে শুভ্র মনে হয় বেশ লজ্জাই
পেয়েছে। অন্তত তার হাসি দেখে তাই
বোঝা যাচ্ছে।
বাসে দুজন। বন্যা বসে আছে। পাশেই শুভ্র
দাঁড়িয়ে আছে। বসার জায়গা নেই।
দাড়িয়েই
যেতে হবে। কি আর করার। এ আর নতুন কি...
--আমাকে কিন্তু গুলিস্তান
থেকে বাসে উঠিয়ে তারপর বাসায়
যাবি তুই।
বললো বন্যা।
--আচ্ছা ঠিক আছে। এটা আবার বলার
কি হলো।
সবসময় তো তাই করি।
--না, এমনিই বললাম। ভাবলাম আবার
ভুলে গেছিস
নাকি।
গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের
সামনে বিআরটিসি এর কাউন্টারের
সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে শুভ্র। বন্যা পাশেই
দাঁড়ানো।
--যাবি তুই আর লাইনে দাঁড়ানো আমি।
বলছে শুভ্র।
বন্যা কিছু বলছে না। হাসছে। শুধুই হাসছে।
--একটু দাঁড়া। আমি আসছি।
--কই যাবি!!
--এইতো, যাবো আর আসবো।
--সিগারেট খাবি, এই তো!!
--আরে না। মুচকি হেসে জবাব দিলো শুভ্র।
--জদলি আসবি। বাস চলে আসবে।
--আচ্ছা।
এই তোর যাওয়া আর আসা তাই না!!
বললো বন্যা।
--দুইতিন মিনিটে একটা সিগারেট শেষ
করা কি সহজ ব্যাপার?
--চুপ কর শয়তান।
শুভ্র চুপ করে রইলো।
--আমি আর তোর
সাথে বন্যাঃ ঘুরাফেরা করবো না।
শুভ্রঃ করিস না।
ওই যে বাস চলে এসেছে। যা ভাগ।
--আমার বিয়ের কথা চলছে। আমি চাইলেও আর
আগের মত আসতে পারবো না। বাসে ওঠার
আগ
মুহূর্তে বন্যার শেষ কথা এটাই ছিল।
শুভ্র কিছু বললো না।
তাকে দেখে মনে হলো না যে সে কথাগুলো শুনেছে।
এভাবেই যাচ্ছে শুভ্র আর বন্যার দিনগুলো।
মাস খানিক পরের ঘটনা...
শুভ্রর মোবাইল বেজে যাচ্ছে।
--হ্যালো। বল।
--তুই বিকেলে নারায়নগঞ্জ আসতে পারবি?
ওপাশ থেকে বন্যা বললো।
--অবশ্যই পারবো। বান্দা এনিটাইম আজাইরা।
কখন
আসতে হবে?
--বিকেল ৫ টার মধ্যে।
--ওকে। আইএম কামিং মাই ডিয়ার।
বিকেল পাঁচটা.... নারায়নগঞ্জ শহীদ মিনার।
বন্যাকে আজ বিষন্ন মনে হচ্ছে।
--মন খারাপ?
বন্যার কোনো জবাব নেই।
--কি হলো? কথা বল। উফ কি গরম রে বাপ!!
আইসক্রিম খাবি? নিয়ে আসি?
বন্যার জবাব নেই।
শুভ্র আইসক্রিম নিয়ে হাজির।
--এই নে। খা। কিরে ধর!! কতক্ষণ ধরে থাকবো?
না খেলে বল, আমিই দুইটা সাবাড়
করে দিচ্ছি।
হাঃ হাঃ হাঃ
--তুই আমার বাসায় আর আসিস না। আমার
সাথে দেখা করার চেষ্টা করিস না।
ফোনে কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করিস না।
গম্ভীর ভাব নিয়ে কথা গুলো বললো বন্যা।
শুভ্র তেমন পাত্তা দিলো না। এই আর নতুন কিছু
না। বন্যা মাঝে মাঝেই এমন করে। আবার
ঠিক
হয়ে যায়।
--এই নে গল্পের বই। তোর জন্য এনেছি।
পড়া শেষে দিয়ে দিবি। বললো শুভ্র।
--না। নিবো না। আমি চাই না তুই বইয়ের
বাহানা ধরে আমার
সাথে কোনো প্রকারের
দেখা করার চেষ্টা করিস। আমি যাচ্ছি।
একটা রিকশা করে দে তো।
শুভ্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই বন্যা রিকশায়
ওঠে, হুড
উঠিয়ে চলে গেলো।
শুভ্র কিছুই বুঝতে পারলো না। বুঝবে কি করে!!
বেচারা বন্যার কথাগুলোই যে এখনো হজম
করতে পারলো না।
বাসে বসে বসে ভাবছে এমন আচরণ করার
কারন
কি? আমি কি কোনো ভুল করেছি? কেনো এমন
করলো? বাসায় গিয়ে ফোন দেবো। সব ঠিক
হয়ে যাবে।
ভাবতে ভাবতেই যাত্রাবাড়ী চলে এলো।
রাত
৮ টা বাজে। জলদি বাসায় যেতে হবে।
.
.
.
দুইদিন পর...
শুভ্রর বাবাঃ ওই মেয়ের সাথে তোর
ঘোরাফেরা বন্ধ। যদি না পারিস, সোজা ঘর
থেকে বের হয়ে যাবি। আমার সোজা কথা।
বলেই হনহন করে শুভ্রর রুম ত্যাগ করলেন।
শুভ্র কিছুই বুঝছে না। কি হচ্ছে এসব!! ২ দিন
ধরে বন্যাও ফোন ধরছে না। কি হচ্ছে এসব!
রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো শুভ্রর। অবশ্য
ইদানীং ঘুম তেমন হচ্ছে না।
ওঠে আগে ডাইনিং রুমে গিয়ে ফ্রীজ
থেকে এক বোতল শীতল পানি বের করে ডগডগ
করে খেয়ে নিলো।
নিজের রুমে এসেই ওয়ার ড্রব খুলে বন্যার
একটা ছবি বের করে চোখের
সামনে মেলে ধরে।
শুভ্রর চোখ বেয়ে টপটপিয়ে পানি পড়ছে।
আজ প্রায় ৬ মাস হলো বন্যার সাথে শুভ্রর
কোনো ধরনের দেখাসাক্ষাৎ
কিংবা কথাবার্তা হয় না। শুভ্র অবশ্য
চেষ্টা করেছে। গতকালও ফোন দিয়েছিল।
ওপাশ
থেকে কেউ সাড়া দেয়নি।
কিছুদিন পর.....
শুভ্র হাঁটছে। এখন কোথায় তা তার
জানা নেই।
সকাল থেকে থেমে থেমে হেঁটেই চলছে।
এখন
সন্ধ্যা প্রায়। পকেট থেকে বন্যার সেই
ছবিটা বের করে দেখলো। একটু পরপরই সে এই
কাজটি করছে।
সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে।
দোকানিকে বললো, ভাই একটা বেনসন &
হেজেস দেন। দোকানি বললো, বেনচন?
শুভ্রঃ হুম।
সিগারেট হাতে নিয়ে পকেটে হাত
দিয়ে দেখলো পকেট শূন্য।
মনে পড়েছে। আরে আমিতো কোনো টাকাই
আনিনি। মনে মনে হাসলো সে।
মামা সিগারেট
খাবো না। ফেরত নেন। পানি হবে?
দোকানিঃ হ হইবো। ওই যে ড্রাম
থ্যাইকা তুইলা গেলাসে ঢাইলা খান।
শুভ্রঃ টাকা লাগে নাকি?
দোকানিঃ না ভাই।
শুভ্রঃ তাহলে দুই গ্লাস খাই?
দোকানিঃ খান। আইচ্ছা ভাইজান, আপনে কই
যাইবেন?
শুভ্রঃ জানি না.....
দোকানিঃ কই থ্যাইকা আইসেন?
শুভ্রঃ কোথাও থেকে আসিনি। কোথাও
যাবো না।
প্রায় দেড় মাস পর...
শুভ্রর বাবার ফোন বাজছে। হ্যালো।
ভাইজান, শুভ্রকে পাওয়া গেছে। কুমিল্লার
লাকসাম রেলস্টেশনে পাওয়া গেছে। ও এখন
হসপিটালে। ডাক্তার বলছে উন্নত চিকিৎসার
জন্য
ঢাকায় নিয়ে আসতে। আমি আসছি।
সাথে আমার
এক বন্ধুও আছে। আপনি চিন্তা করবেন না।
আমরা এম্বুলেন্স নিয়ে এখনই ঢাকার
উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।
এতক্ষণ কথাগুলো শুভ্রর ছোট চাচার ছিল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
বেডে শুভ্র শুয়ে আছে। দাড়িগোঁফ অনেক বড়
হয়ে গেছে। শরীরে হাড় ছাড়া আর কিছুই
দেখা যাচ্ছে না। শুভ্রকে চেনার
কোনো উপায়
নেই। একি হাল শুভ্রর!
দুর থেকে শুভ্রর মা ছেলেকে দেখে কাঁদছেন।
মাকে সান্তনা দিচ্ছে শুভ্রর ছোটবোন।
রোগীর সুস্থ হতে সময় লাগতে পারে।
আপনারা চাইলে বাসায়
নিয়ে যেতে পারেন।
বাসাই তার জন্য একমাত্র নিরাপদ আর ভাল
জায়গা।
একমাস হয়ে গেলো ছেলের
কোনো উন্নতি দেখছেন না তার বাবা মা।
কথা নেই বার্তা নেই। খালি ফ্যালফ্যাল
করে চেয়ে থাকে। চোখের পলকও ফেলে না।
এই কোন রোগ!! এভাবে কতদিন যাবে?
বসে বসে ভাবছেন শুভ্রর মা।
শুভ্ররে, ও শুভ্রর। কথা বল বাবা।
ছেলের মাথার পাশে বসে মা এভাবেই
বলছিলেন। শুভ্রর কোনো সাড়া নেই।
ফ্যালফ্যাল
চাহনি ছাড়া।
আরো বেশকিছুদিন পর...
শুভ্রর পাশে বন্যা। বসে আছে। কিছু বলছে না।
শুভ্রর সেই ফ্যালফ্যালানি চাহনি।
বন্যা কাঁদছে।
চোখের পানি তার গাল টপকিয়ে শুভ্রর
শরীরে পরার আগেই
ওড়না দিয়ে মুছে নিলো।
একি!! শুভ্রর চোখের কোনেও জল। চোখ
থেকে জল গড়িয়ে কান বেয়ে পড়ছে।
বন্যা দেখে সহ্য করতে পারলো না।
হয়তো তাই
না দেখার ভান করে ওঠে চলে গেলো।
সেদিনই ছিল শুভ্র আর বন্যার শেষ দেখা।
আজ বহুবছর পর.....
কারো জন্য কারো জীবন থেমে নেই। সবাই
নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। প্রকৃতির নিয়নেই
সবার
জীবন চলছে নিজ গতিতে।
শুভ্রর বাবা মার বয়স বেড়েছে। বৃদ্ধই বলা চলে।
ছোটবোনটা স্বামীর সংসার করছে। একটা ৮
বছরের মেয়ে আছে। নাম সোহানা। ক্লাশ
থ্রি তে পড়ছে।
বন্যা আর তার স্বামী দুজনই
একটা বেসরকারি ব্যাংকে জব করছে।
তাদেরও
দুটো সন্তান আছে। বড়টি ছেলে। আর
ছোটোটি মেয়ে। ছেলের নাম রুদ্র। মেয়ের
নাম তন্দ্রা। ছেলে ক্লাশ থ্রি তে পড়ছে। আর
মেয়েটার বয়স ৩ বছর।
আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই
বন্যা বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ
তার
কোনো কাজ নেই। আজ সে মুক্ত। কাজ
থাকলেও
আজকে সব বাদ। কারন আজ আজ ৪ঠা অগ্রহায়ণ।
শুভ্রর
মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনটায় বন্যা শুভ্রর পছন্দের
কালো শাড়ি আর কালো টিপ
পড়ে নারায়নগঞ্জ
শহীদ মিনারে একা একা কিছুক্ষণ
বসে থাকে।

Monday, August 28, 2017

ফারিয়া আমার সামনে দাড়িয়ে।আমি অবাক হলাম!

.⛤⛤⛤"আমি স্বার্থপর⛤⛤⛤

সেদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটতেছিলাম হঠাৎ দেখি 
 ফারিয়া একা নয়,সাথে একটা ফুটফুটে মেয়েও দাড়িয়ে আছে। ও'র ডান হাতের আঙ্গুলগুলো ধরে।ফারিয়াকে প্রথমে কিছু জিজ্ঞাসা না করে বাচ্ছা মেয়েটাকেই জিজ্ঞাসা করলাম-আম্মু তোমার নাম কি? মেয়েটা জবাব দিল-অরনী।আমি বললাম-হুম খুব সুন্দর নাম মা'মনি।মেয়েটা একটু হাসল।হাসিটাও অনেক সুন্দর।তারপর ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে ফারিয়াকে জিজ্ঞাস করলাম।
-কেমন আছ?
-এইতো ভালোই।তোমার কি খবর?
-এইতো চলছে কোনরকম।তোমার মেয়ে কিন্তু দেখতে ভারী মিষ্টি।নামটা আরো বেশি।নামটা কে রেখেছে?
-আমি।তোমার নামের সাথে মিল রেখেই নামটা রেখেছি।
-এ তো তোমার পাগলামি।যাইহোক দেশে কবে আসছো?
-এই তো গতকাল।
-কতদিন আছো?
-এইতো একসপ্তাহের জন্য আসা।এক সপ্তাহ পরেই চলে যাবো।
-ও।তৌসিফ কোথায়?
-ও বাসায় আছে।বিশ্রাম নিচ্ছে।
-তাহলে একা বের হলে কেন? তুমিও বিশ্রাম নিতে।
-একা বের হলাম কোথায়? মেয়েকে নিয়েই তো বের হয়েছি।
-হুম।কোথাও যাবা?
-হুম একটু মার্কেটের দিকে যাব।অরনীর জন্য টুকটাক কিছু কেনা লাগবে।
-আচ্ছা তাহলে যাও।
-তোমার তাড়া আছে?
-তেমন না।তবে একটা টিউশনি ছিল।ওখানে পড়াতে যেতে হবে।কাল আবার স্টুডেন্টের পরীক্ষা।
-তুমি এখনোও চাকরি নাও নাই?
-না।
-তাহলে এখনো?.....
-হুম।
-চাকরির জন্য চেষ্টা কর নাই?
-করেছি।তিন-চার জায়গায় চাকরিও নিয়েছি তবে দু'তিন মাসের বেশি আর চাকরি করা হয়নি।
-কেন?
-অফিসের বস,অন্যান্য কর্মচারীদের আমার ভালো লাগত না।নিন্ম শ্রেণির মানুষদের উপর যারা অমানবিক অত্যাচার চালায়,যারা ক্ষণে ক্ষণে অন্যায় কাজ করে তাদের সাথে আমি কাজ করতে ইচ্ছুক নই।তাই চাকরিগুলো আর করা হত না। এখন তো আর চাকরির জন্য চেষ্টাও করিনা।
-তাহলে চলো কিভাবে?
-এইতো বাবার দোকানে একটু সময় দেই। দু'একটা টিউশনি করানো হয়।এভাবেই চলে যাচ্ছে।
-তুমি আর পরিবর্তন হলেনা।
-কি আর করার বল? প্রকৃতি কিছু মানুষকে এমন করেই রেখেছে।
-প্রকৃতির দোষ দিবেনা।দোষ তো তোমার নিজের।একগুঁয়েমির জন্য নিজের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছ।ভবিষৎ নিয়ে কোন চিন্তাই তোমার নাই!
-আবার শুরু করলে? আর রাস্তায় দাড়িয়েই কি সব কথা বলবে?
-না।
-তৌসিফকে সাথে করে বাসায় আইসো।
-আচ্ছা যাব।আংকেল আন্টি কেমন আছে?
-এইতো ভালোই।
-বিয়ে করেছো?
-না।
-কেন?
-আচ্ছা আমি তাহলে এখন যাই।পরে কথা বলি? তুমি তাহলে মার্কেটের দিকে যাও।ভালো থেকো।মা'মনি তুমিও ভালো থেকো।
ফারিয়ার সাথে দীর্ঘ ৭ বছর পর আবার দেখা হবে তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল।ফারিয়ার আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর আমি আর তাকে কখনো খুঁজিনি।শুনেছিলাম বিয়ের পর জামাই সহ অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছিল।খুঁজেও বা কি লাভ হত? আমি তো বয়স আর বেকারত্বের কাছে বন্দী ছিলাম;নিরুপায় ছিলাম।মেয়েটা আমায় খুব ভালোবাসত।সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে আমায় কত কিছু বলত।আমাদের বিয়ের পর সংসার কেমন হবে? কিভাবে সাজাবে? এই নিয়ে কত পরিকল্পনা।ও'র কিছু দুষ্টামি বাচ্চাদের মত মনে হত।আমি ও'র কান্ড দেখে শুধু হাসতাম;মাঝে মাঝে বিরক্তও হতাম।প্রায় সময় আমায় বলত,আমাদের সন্তান ন'জন হবে এবং ও একটা ক্রিকেট টিম গঠন করবে।টিমের নাম থাকবে একক সংসার টিম।সে টিমের কেপ্টেন আমি আর ফারিয়া ভাইস কেপ্টেন।ভালোই লাগত।ফারিয়া যেদিন ও'র বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা আমায় জানিয়ে ছিল তখন আমার মনে হয়েছিল এই পুরো আকাশটা আমার মাথায় ভেঙ্গে পড়েছে।আমার নৌকা অন্যকেউ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।ফারিয়াও অনেক কেঁদেছিল।অনেক্ষন আমায় বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল।আমি নিরুপায়;নিশ্চুপ হয়ে শুধু কষ্টগুলো সয়ে যাচ্ছিলাম।ফারিয়া বলেছিল পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি কিন্তু আমার নিরুপায়ের দৃশ্য দেখে ও বলে উঠল আমি নাকি খুব স্বার্থপর।তারপর ও চলে গেল।আমি বসে রইলাম।আর কোনদিন ফারিয়াকে খুঁজিনি।সত্যিই আমার কিছু করার ছিল না।মনে মনে ফারিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম।সুখে থাকুক আল্লাহর কাছে সেই প্রার্থনাই করেছিলাম।
দু'দিন পর আমি বাহিরের থেকে এসে দেখি ফারিয়া মা'য়ের সাথে বসে কথা বলছে।বাবাও পাশে বসে আছে।আমি ভিতরে প্রবেশ করেই ফারিয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম।
-কখন এলে?
-এইতো এক থেেক দেড় ঘন্টা হবে।
-ও।অরনী কোথায়? তৌসিফ ভাই?
-অরনী আন্টির রুমে ঘুমাচ্ছে।তোসিফ একটু কাজে এক জায়গায় গিয়েছপ।বলল কাজ শেষ করপ রাতে আসবে।
-আচ্ছা।তাহলে তুমি মা'য়ের সাথে কথা বল।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।তারপর অরনীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে ও'র সাথে কথা বলব।বাবার দিকে তাকিয়ে বাবাকে বললাম-কি ব্যাপার বাবা,তুমি দোকান খুলোনি? বাবা জবাব দিল-খুলেছি তো।ফারিয়া মা'কে দেখে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে এলাম।
বাবা এমনি করত।যখনি ফারিয়া আমাদের বাসায় আসত তখনি উনি দোকান বন্ধ করে চলে আসত।ফারিয়ার সাথে আড্ডা দিত।আমি ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে ডুকতেই ফারিয়া ডাক দিল।
-আমিও তোমার রুমে যাব।
-কেন?
-কেন আবার? তোমার রুমে কি যেতে মানা?
-না।
-তাহলে? আন্টি বলল আমি যাওয়ার পর তুমি নাকি কাউকেই তোমার রুমে ডুকতে দাওনি? লক করে বাহিরে যাও।রুমে থাকলে দরজা লক করে থাক? তাছাড়া আমি বাসায় এসেও দেখি রুম লক করা।
- ও তেমন কিছুনা।দেখ তো অরনী উঠেছে কিনা?
-রুম খুলো আগে।তোমার রুমটা একটু দেখি।কতদিন হল তোমার রুমে যাওয়া হয়নি।তোমার বিছানায় শোয়া হয়নি।তোমার টেবিলে বসা হয়নি।বেলকোনিতে বসে গল্প করা হয়নি।
-পাগলামি করনা।তুমি অরনীকে জাগাও?
-কেন অরনীকেই শুধু তোমার রুমে ডুকতে দিবা নাকি? আমি ডুকতে পারব না?
নিষেধ আছে?
-তা তো বলিনি।
মা দূর থেকে ফারিয়াকে বলে উঠল,পাগলকে রাগাইসনা।ফারিয়া বলে উঠল,ওর রাগকে কে ভয় পায়? অরনীও ঘুম থেকে উঠে পরল।ফারিয়া জোর করেই আমার হাত থেকে রুমের চাবিটা নিয়ে দরজার লক খুলে ফেলল।মা এবং বাবা দূরেই দাড়িয়ে আছে।দরজা খুলে রুমে ডুকেই ফারিয়া কাঁদতে শুরু করল।ড্রিম লাইটের আলোতে সারা রুমের দেয়াল জুড়ে ওর ছবি আর ছবি আর ও'কে নিয়ে লিখা ছোট ছোট কবিতাগুলো।আমি রুমের দরজার সামনেই দাড়িয়ে ছিলাম। তারপর ও'র কান্নার আওয়াজ শুনে দরজার কাছ থেকে সরে এলাম।অরনীও ঘুম থেকে উঠে গেছে।আমায় দেখেই আবদার করে বসল গল্প শুনাতে।অরনীকে আমি গল্প শুনাচ্ছি।ফারিয়া কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বের হয়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে আরো বেশি করে কাঁদতে শুরু করল।আমি আবেগীপ্রবন হয়ে পরলাম।আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করে ও'কে বলে উঠলাম,ফারিয়া ছাড়! এইসব কি হচ্ছে? অরনী,মা-বাবা সামনে আছে।ছাড়! মা-বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি উনারা কাঁদছেন।আর অরনী হাসতেছে।শুধু আমার চোখেই জল নেই।ফারিয়ার কাঁদো কন্ঠে বলে উঠল।
-তুমি আমায় এখনো ভালোবাসো?
-এখন আর এইসব বলে কি লাভ?
-না তুমি বল, আমায় এখনো ভালবাসো?
-হুম অনেক ভালবাসি।
-তুমি বিয়ে কর নি কেন?
-একজনকে ভালবেসে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করব কিভাবে, বল?
-তাহলে সেদিন আমায় আটকালে না কেন?
কেন পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার জন্য রাজি ছিলেনা?
-আমি নিরুপায় ছিলাম।জানো ফারিয়া তুমি আমায় যেদিন ছেড়ে চলে গিয়েছিলে সেদিন মনে হয়েছিল আমি মনে হয় আমার তৃতীয় রত্নটা হারিয়ে ফেলেছি।তুমি আমায় বলেছিলে না আমি খুব স্বার্থপর? হুম ফারিয়া আমি স্বার্থপর; খুব স্বার্থপর।কারন যে নিজের সাথে স্বার্থপরতা করতে পারে তার চেয়ে বড় স্বার্থপর আর কে হতে পারে?
ফারিয়া নিশ্চুপ হয়ে গেল কিন্তু ও'র চোজের জল থেমে নেই।অরনী বসা থেকে হঠাৎ বলে উঠল-জানো আঙ্কেল আমি না তোমায় অনেক আগে থেকেই চিনি।বিদেশে আম্মু প্রায় সময় তোমার ছবি দেখিয়ে আমাকে আর আব্বুকে তোমাদের প্রেমের কথাগুলো বলত।আমিই তোমাকে দেখার জন্য আব্বুর কাছে বায়না করি আর আব্বু ছুটি পেয়েই আমাদেরকে দেশে নিয়ে এসেছে।আব্বুও তোমাকে দেখতে চেয়েছিল।অরনীর কথাগুলো শুনে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে আমার কঠিন মনও কাঁদতে শুরু করে দিল।মেয়েটা এত ভালবাসে আমায়? একটুপর তৌসিফ সাহেব বাসায় আসল।তারপর সবাই একসাথে বসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম।তারপর ফারিয়া,অরনী,তৌসিফ সবাই চলে গেল।আর হয়ত দেখা হবেনা।ফারিয়া যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল যেন বিয়ে করে নেই।আমি আমার রুমে চলে গেলাম।দরজাটা লক করে দেয়ালে ও'র ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে আবেগ জড়িতে বলে উঠলাম,জানো ফারিয়া আমি স্বার্থপর।সত্যিই আমি খুব স্বার্থপর।তোমায় ভালবেসেও আজও আমি স্বার্থপর।

"#Bristi_patuiary
-

Sunday, August 27, 2017

আমি বেশ্যা নই। গল্প:


============
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেবা একমনে তাকিয়ে আছে গলার কাছে বাদামি দাগটির দিকে, যেন একটা মোটা শুঁয়ো  পোকা। দাগটির দিকে তাকিয়ে ওর গতরাতের সব আদরের কথা মনে পড়ছে, প্রতিটা মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে আর সেই সাথে দৃঢ় হচ্ছে প্রতিজ্ঞা, খুনটা তাকে করতেই হবে।
এক ঝটকায় গায়ের হাল্কা গোলাপি ম্যাক্সিটা দু কাঁধ গলিয়ে নামিয়ে দিল রেবা। শ্যামলা ত্বকের নীচ থেকে যেন চাপা কোমল আলো বের হচ্ছে। ওর চোখ ধীরে ধীরে গলা থেকে নেমে যাচ্ছে, আরও দাগ আছে এদিক ওদিক, সব মিলিয়ে পাঁচটি। কিশোরীর মতো উন্নত বুক দুটো যেন চির বিদ্রোহী মৌন সৈনিক। মসৃণ পেট, গভীর নাভি, বেতের মতো কোমর, ভারী নিতম্ব আর কলা গাছের মতো চকচকে উরু সবই ওর শত্রু পক্ষ। এই শরীর নিয়ে একসময় চাপা অহংকার ছিল। আর ছিল গোপন সুখ, বড্ড বেশি ভালোবাসতো তারেক। তখন জানতো না, এই শরীরই  একদিন কী ভয়ানক শত্রুতা করবে ওর সাথে। 
পরিষ্কার মনে আছে সেই দিনটির কথা। তারেকের ডায়ালাইসিস শুরু হবে দুদিন পরেই। দুটো কিডনিই  কাজ  করছে না এই খবরে ওদের ছোট্ট সুখী পরিবারটায় যেন ধ্বস নেমেছে। গত দুমাস ধরেই তারেক ছুটিতে আছে। চাকরিটা মনে হচ্ছে না আর রাখা যাবে, প্রাইভেট কোম্পানি বলে কথা। বড় মেয়ে রুমকির বয়স এগার, ও অনেক কিছুই বুঝতে পারছে আর সারা দিন মুখ কালো করে ঘুরছে। বাবার আহ্লাদী মেয়ে, ওকে সামলানো এক কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চার বছরের রনি  তেমন কিছু বুঝতে পারছে না, না বুঝে সবাইকে বিরক্ত করছে  আর অকারণে ধমক  খাচ্ছে। রেবা পরিষ্কার বুঝতে পারছে সামনে ঘোর  আঁধার, ওর এই অফিস সহকারীর চাকরিটাই একমাত্র সম্বল। সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে, ওর বস জামান সাহেব তারেককে দেখতে এলেন অফিস ফেরত, একাই এসেছিলেন। তারেকের ঘরে বসে দু চারটা ভদ্রতার কথা বলে আয়েশ করে  এসে ড্রয়িং রুমে বসলেন। 'আজ তোমার হাতের চা না খেয়ে উঠছি না।' রেবার দিকে তাকিয়ে বেশ  ঘনিষ্ঠ ভাবে বলেছিলেন। বোকা রেবা বুঝতে পারেনি সেদিন। আর বুঝবেই বা কীভাবে। ষাটের কাছাকাছি জামান সাহেবের সুখী, বিবাহিত জীবন। ছেলে, মেয়েরা যার যার সংসার নিয়ে বাইরে থাকে। সাহস করে বলে ফেলেছিল 'স্যার সে তো রোজই খান অফিসে, এ আর নতুন কী?' 
'অফিস আর বাসা কী এক হোল? অফিসে কী আমি তোমার এই তাজা, খাঁটি রূপ দেখতে পাই বল?' বলেই হাহা করে হেসেছিলেন ওর বুকের  দিকে তাকিয়ে। ওনার দৃষ্টি অনুসরণ করে রেবা দেখতে পেলো তাড়াহুড়োয় জামার সামনের দুটো বোতাম লাগাতে ভুলে গেছে, বাসায় কেউ থাকে না বলে ওড়নাও পরে না ও সচরাচর। যা গরম পড়েছে, পাতলা ফিনফিনে এক সাদা জামার নীচে কালো অন্তর্বাস পুরো দেখা যাচ্ছে। থতমত খেয়ে কিচেনে পালিয়ে বেঁচেছে তখন। চা আনার সময় ওড়নাটা গায়ে দিতে ভুলে নি। 
'আগেই তো বেশ লাগছিল' আরেক দফা হাসি। 
যাওয়ার সময় জামান সাহেব জোর করে ওর হাতে হাজার বিশেক টাকা গুঁজে  দিয়েছিল, রেবা নিতে চায় নি একদম। 'এতো বছর আমার সাথে কাজ করো, এখনো  আমাকে চিনলে না, পরই ভাবো?' স্যার কিছুটা আবেগপ্রবণ মানুষ, রেবা সেটা জানে, কে জানে হয়তো ওর দুঃসময়ে ওর মন ভালো করতে চাইছে। 
'এতো সঙ্কোচের কী আছে? কোনভাবে পুষিয়ে দিও।' ওর হাত দুটো চেপে ধরে রহস্যময় ভাবে বলেছিলেন জামান সাহেব। আজ বুঝতে পারে, সেদিন তার হাত দুটো একটু বেশিক্ষণই ধরেছিল রেবার হাত।  
তারেকের জন্য দুহশ্চিন্তায় বেশি কিছু ভাবতে পারে নি সেসময়। ওর শ্বশুর শাশুড়ি  নেই। বাবা, মাও ঢাকায় থাকে না। বাচ্চাদের দেখাশোনা কে করবে আর রুগীর সাথেই বা কে থাকবে? জামান সাহেবকে একদিন কথায় কথায় ওর দুহশ্চিন্তার কথা বলে ফেলেছিল। বসের রুম, দরজা ভেজানো ছিল। অনুমতি ছাড়া কারো প্রবেশ নিষেধ। রেবার অশ্রু টলমল চোখে চোখ রেখে, এক হাতে থুঁতনি ধরে বলেছিলেন 'কিচ্ছু চিন্তা করো  না, সব ব্যাবস্থা করে দেব আমি।' একই সাথে অসস্থি লেগেছিল আর অবাক হয়েছিল রেবা। ও ভাবতেও পারে নি, পরের দিন বিকেলে জামান সাহেব সত্যি সত্যি এক  নার্স নিয়ে এসে হাজির হবেন। বিদায় নেওয়ার সময় হতবিহবল রেবা বলেছিল 'স্যার, আপনি তো সবই জানেন, নার্সের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। আমি এখন কী করবো?' জবাবে রেবাকে  বিস্মিত করে দিয়ে ভেজানো দরজার আড়ালে ওকে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে বলেছিলেন 'তুমি শুধু হাসি, খুশি থাকো সেক্সি, তাহলেই হবে, আর আমার দিকে মাঝে মাঝে একটু নজর দিও, বাকিটা অফিস সামলাবে।' তীব্র ঘৃণায় মাথা নিচু করেছিল রেবা। না সেদিন কোন প্রতিবাদ সে করে নি, প্রতিবাদ করলেই চাকরিটা যাবে। জামান সাহেব এই প্রাইভেট কোম্পানির সর্বময় কর্তা। চাকরি গেলে এই অসুস্থ স্বামী আর বাচ্চা দুটো নিয়ে কোথায় যাবে সে? 
তার  পর প্রতিদিন আবদার বেড়েছে জামান সাহেবের। এখন প্রায় প্রতিদিনই আসে। তারেক কতোটা বুঝতে পারে, সেটা জানে না রেবা। তবে যেদিন  দুপুরে অসময়ে অফিস থেকে রেবাকে নিয়ে চলে এসেছিলেন, রেবার নিজেকে একটা খাঁচায় বন্দি অসহায় প্রাণী মনে হচ্ছিল। তারেক ওর ঘরে ঘুমুচ্ছে। রনি  ওর পাশেই ঘুম আর রুমকি স্কুলে।  'আমার খুব টায়ার্ড লাগছে, রুমকির ঘরে যাচ্ছি, তুমি একটু ফ্রেশ হয়ে এসো।'  অবাধ্য হওয়ার  সাহস ছিল না রেবার। ইচ্ছে করছিল শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করতে, পারে নি। বরং তারেক আর রনি ঘুমাচ্ছে নিশ্চিত করে অভিসারিণীর মতো পা টিপে টিপে এসেছিল মেয়ের ঘরে। ভারী পর্দা টেনে দিয়েছিল যেন প্রতিবেশীরা কিছু না দেখে। বন্ধ ঘরের আলো আধারিতে সেদিন অনেক আদর করেছিল জামান সাহেব। নিজের অসুখী দাম্পত্যের কথা, বদ মেজাজি স্ত্রীর অত্যাচারে তার রোম্যান্টিক মনটার অপমৃত্যুর কথা, নিজের একাকীত্বের কথা  বলেছিল, আরও বলেছিল রেবা কত  সুন্দর, কোমল, কত আকর্ষণীয়, রেবাকে তার কত ভালো লাগে ইত্যাদি। বয়স ষাটের কাছাকাছি হলেও জামান সাহেব যথেষ্ট সুপুরুষ। তার উষ্ণ আলিঙ্গনে রেবার দীর্ঘ উপোষী যুবতী শরীরটা মোমের মতো গলে  যাওয়ার পরিবর্তে বরফের মতো শীতল আর শক্ত হয়ে ছিল।  জীবনের সবচেয়ে বেশি কেঁদেছিল সে সেদিন।  জামান সাহেব  চলে যাওয়ার পর এক ঘণ্টা ধরে ডলে  ডলে  গোসল করে যখন চামড়া লাল করে ফেলেছিল, তারেক ওর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে ছিল। সে রাতেই ওর স্ট্রোকটা হয়। তার পর থেকে কথা  বন্ধ। 
তারেকের চিকিৎসার আর কোন অসুবিধা হচ্ছে না, জলের মতো টাকা খরচ করছে জামান সাহেব। তারেকের জন্য চব্বিশ ঘণ্টার নার্স আছে, সে রনিকেও দেখা  শোনা করে। সোমা খালাকে পেয়ে রনিও বেজায় খুশি। শুধু রুমকিটা বড্ড চুপচাপ হয়ে গেছে আজকাল। মায়ের চোখের দিকে পারত পক্ষে তাকায় না সে। জামান সাহেব তার অনেক দয়ার  সাথে একটি ভদ্রতা করেছেন, রাতে যখন রুমকি বাসায় থাকে তখন তিনি রেবাকে পুরোটা চান না,  আড়ালে আবডালে চুমো টুমো খেয়ে, ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে চলে যান। অফিসেও তার প্রেমের জোয়ার  আসে আজকাল প্রতিদিনই। চা দিতে গেলে, কোমর জড়িয়ে একটু আদর নিত্যদিনকার অভ্যাস হয়ে গেছে। রেবার শরীরটা বুঝি যন্ত্র হয়ে গেছে একটা, মনটা পাথর। জামান সাহেব যখন আদর করে বলে ' মাই গড, ছত্রিশেও তুমি দিব্যি বাইশের ফিগার ধরে রেখেছ।' ওর তখন বমি পায়। 
কাল রাতে শরীর খারাপের অজুহাতে ওদের বাড়িতে থেকে গিয়েছিল জামান সাহেব। ড্রয়িং রুমে যখন তার বিছানা করে দিচ্ছিল তখন আলতো করে গাল ছুঁয়ে বলেছিল 'রাতে মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে চলে এস কিন্তু'। তখনো কিচ্ছু বলতে পারে নি রেবা। রুমকি ঘুমানোর পর চোরের মতো পা টিপে টিপে এসেছিল। পুরোটা সময় ঘেন্নায় গা রি রি করছিল আর বুকের ভিতরে প্রচণ্ড ভয় পাথরের মতো চেপে ছিল। প্রবল আতঙ্কে খেয়াল করে নি কখন যেন রুমকি জেগে উঠে পানি খেতে বসার ঘরের পাশের ডাইনিং রুমে চলে এসেছে। প্রচণ্ড বিস্ময় নিয়ে সে দেখছে ড্রয়িং রুমের ডিভানে দুটো আধা নগ্ন ছায়া, ছায়া দুটোর একটা  যে তার মা এ ব্যাপারে তার সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড ভয়ে  চিৎকার করে উঠলো রুমকি 'মা, ও মা।' 
আতঙ্কে জমে গেছে রেবা, মনে মনে খালি ঘুরপাক খাচ্ছে কয়েকটি  কথা 'আমি বেশ্যা নই, আমি তোমাদের মা, তারেকের স্ত্রী।' আর তখন থেকেই খুনের চিন্তাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। খুনটা তাকে করতেই হবে। যেমন করেই হোক।