ভালবাসার গল্প বাংলা love story bangla

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Friday, September 22, 2017

প্রায় দুই ঘন্টা ধরে বসে আছি,কিন্তু মেয়ের কোনো দেখাই নেই

১.
বাবা-মায়ের অনেক জোরাজুরির পর শেষ পর্যন্ত এই পড়ন্ত বিকেলে মেয়ে দেখতে এলাম।অবশ্য এর আগে আরো ছয়জনকে দেখেছি,এটা সাত নম্বর!আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট শিওর,অন্য মেয়েগুলোকে দেখে যেমন আমার পছন্দ হয়নি,এই মেয়েকেও পছন্দ হবে না।
কিন্তু অন্য মেয়েগুলোকে দেখতে গিয়ে যেই ঘটনা কখনোই ঘটে নি,আজকে তাই ঘটছে!
।এই দুই ঘণ্টায় মেয়ের বাবা-মা,ছোট বোন,আত্মীয় সবার পরিচয় মুখস্থ হয়ে গেছে।কিন্তু এখনো মেয়েটাকেই দেখা হয়নি! মেয়ে কি আদৌ আসবে কিনা,তাও বুঝতে পারছি না!মেয়েকে কি সাজিয়ে একেবারে ভুত বানিয়ে আনছে নাকি,তা আল্লাহই জানেন!
আমি আর আমার আত্মীয়রা চলে যাব নাকি ভাবছি,এই সময় হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখলাম,যাকে দেখতে এসেছি তার বোনের সাথে হেঁটে আমাদের দিকে আসছে।তার মানে এটাই কি কনে?কিন্তু মেয়েটা দেখছি একদমই সাজেনি!চোখে কাজল পর্যন্ত নেই!
আমার চাচী মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
--তোমার নাম কি মা?
--রায়না।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।হঠাৎ মেয়েটার কথা বলা শুনে তার দিকে তাকাতে বাধ্য হলাম!এত মিষ্টি গলা আমি কারোর শুনিনি।মেয়েটার গলার স্বরই শুধু মিষ্টি না,এতক্ষণে খেয়াল করলাম,তার চেহারাটাও অপূর্ব সুন্দর!কোনো কৃত্রিমতা নেই চেহারার মাঝে।যেন সাধারণত্বের মাঝেও সে অসাধারণ!শুধু একটাই সমস্যা,মেয়েটা অনেক বেশি চুপচাপ!প্রয়োজনের বেশি একটা কথাও বলে না।

একটু পর আমাকে আর মেয়েটাকে আলাদা রুমে দেওয়া হল কথা বলার জন্য।আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।মেয়েটাও নিজে থেকে একটা কথাও বলছিল না!কিছুক্ষণ চেষ্টা করে আমি বললাম,
--আপনার নাম কি?
--একটু আগেই তো বলেছিলাম!
--ও হ্যা,রায়না।
মেয়েটার এভাবে উত্তর দেওয়া শুনে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম,সে নিশ্চয়ই এনির মতই অনেক ভাব দেখায়।আমি জানতাম সব মেয়েরাই এক!আর এই মেয়েটাও তার বাইরে না।
এনি আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড।আমাদের সম্পর্ক টিকে ছিল প্রায় এক বছর!এর মাঝেই সে আমাকে মোটামুটি নিঃস্ব করে দিয়েছিল।ভাগ্গিস ওইটা আমার শখের কারণে করা টিউশনির টাকা ছিল!এক বছর পর শুনলাম,ঐ মেয়ে নাকি আরো অনেক ছেলের সাথে এমন করে তাদেরকে নিঃস্ব করে ছেড়ে দিয়েছিল।এই কারণেই ওর সাথে আমার ব্রেকাপ হয়।আর এরপর থেকে আমি কোনো মেয়েকেই আর বিশ্বাস করতে পারি না!কিন্তু বাবা-মায়ের চাপে পড়েই আমাকে মেয়ে দেখতে যেতে হয়!
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
--আমাকে বিয়ে করতে আপনার কোনো আপত্তি নেই তো?
--আমার কোনো মতামতেই এখন আর কারো কিছু আসে যায় না!
রায়না নামের এই মেয়েটার এমন কাটাকাটা কথার পর তো আর আমাদের কথাবার্তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না!তাই আমি সেখান থেকে চলে এলাম।
রাতে ফেরার পর মা যখন আমার মতামত জানতে চাইলেন,আমি সাথে সাথেই না করে দিলাম!

২.
--হ্যালো,আপনি কি ঈশান?
--হুম,আপনি কে?
--আমি রায়নার বোন,রিহানা।সেদিন যে মেয়ে দেখতে এলেন..
--ওহ,মনে পড়েছে।
--আপনার সাথে কিছু কথা ছিল,আপনার কি সময় হবে দেখা করার?
--উম..হুম,হবে।বিকেল চারটায় কফিশপে..
--ওকে।
বিকেল চারটায় কফিশপে গিয়ে দেখি রিহানা অপেক্ষা করছে।আমি গিয়েই মুখে একটা হাসি নিয়ে বললাম,
--কি?কি খবর তোমার?
--ভাল।আপনাকে কিছু কথা বলতে এসেছি!আমি অনেক ছোট বলে হয়ত আপনি আমার কথার গুরুত্ব নাও দিতে পারেন,কিন্তু কথাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমি এসেছি তা বলতে..
আমি মুখে গাম্ভীর্যের ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে বললাম,
--বল,কি বলবে?
--আপনি আমার আপুকে সেদিন যেভাবে দেখেছেন,আমার আপু কিন্তু আসলে তেমন না!আমার আপুর জীবনে কি কি ঘটেছে,না জানলে কেউ বুঝতেই পারবে না,কেন আপু এমন হয়েছে।আপনি হয়ত ওকে বিয়ে করার জন্য মত দিতে পারেন,কিন্তু এই কথাগুলো না শুনে বিয়েতে মত দিলে আপনারও ক্ষতি হবে,সাথে আপুরও!যদিও আমি বিয়েটা ভাঙতে আসিনি..
এতক্ষণে আমার মাঝে কৌতুহল হতে শুরু করল।আমি জিজ্ঞেস করলাম,
--কি হয়েছে তোমার আপুর জীবনে?
--আপু আগে অনেক হাসিখুশি ছিল।সবার সাথে মিশত,ভাল ব্যবহার করত।একটা ছেলেকে ও অনেক ভালবাসত।আমরা পরিবারের সবাই জানতাম এই কথা!তিন বছরের রিলেশনশিপের পর হঠাৎ শুনলাম,ছেলেটা কোনো কারণ ছাড়াই আপুর সাথে ব্রেকাপ করেছে!পরে অবশ্য জানলাম,আপুকে সে বলেছিল বিয়ের আগেই তার সাথে এক রাত থাকতে,আপু রাজি হয়নি।তাই সে এভাবে ব্রেকাপ করেছে।সে নাকি আরো অনেক মেয়ের সাথেই এমন করেছে!
--ও।
--ওর স্বাভাবিক হতে অনেকদিন লেগেছিল।তারপর হঠাৎ করেই একটা ছেলের সাথে ওর ফ্রেন্ডশিপ হয়।খুব স্বাভাবিক বন্ধুত্বই ছিল তাদের মধ্যে।ফেসবুকে পরিচয়।একদিন আপু ফেসবুকে ঢুকে দেখে,আপুর আইডি হ্যাক করে তার ছবি এডিট করে অনেক খারাপ খারাপ ছবি দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে।চেনা-পরিচিত যারা ছিল,সবার কাছেই আপুকে চরমভাবে অপমানের স্বীকার হতে হয়!এরপর থেকেই আপু আর বাইরে যায় না।কোনো ছেলের সাথে কথা বলেনা,ফেসবুকেও বসে না।
--হুম,আসলেই তোমার আপুর সাথে অন্যায় হয়েছে!
--এইটুকুতেই শেষ না।
--আরো আছে?
--হ্যা।গত বছর একটা ছেলে এসে আপুকে দেখে যায়।পরিবারের সবার আপুকে খুব পছন্দ হয়।আপুও বিয়েতে মত দেয়।ভেবেছিল,সব ছেলেই তো আর এক না!কত আনন্দের ছিল বিয়ের আগের দিনগুলো!আপুর সাথে ছেলেটার প্রায়ই কথা হত।শুনে মনে হত দুজনেই খুব খুশি!
--তোমার আপুর আগে বিয়েও হয়েছিল?
--না।ছেলেটা আগে আপুকে কিছু না বললেও বিয়ের দিন বলল,সে এই বিয়েতে রাজি না!অন্য মেয়েকে তার পছন্দ,কিন্তু বাবার চাপে পড়ে সে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল।ব্যস,ভেঙে গেল বিয়েটা!
আমি শুনে এতই অবাক হলাম যে,কিছু বলতেই ভুলে গেলাম!এত ট্র‍্যাজিডিও একটা মেয়ের জীবনে ঘটতে পারে!রিহানা বলে চলল,
--এরপর থেকে আপু কোনো ছেলেকে দেখতে পারে না!কথাও বলতে চায়না।শুধু বাবা-মায়ের চাপাচাপিতেই এবার পাত্র দেখতে রাজি হয়েছে।এখন বিয়ে করবেন কি করবেন না এটা আপনার ইচ্ছা!
বলে চলে গেল রিহানা।সে জানতেও পারল না যে আসলে আমি আগে ঠিক করেছিলাম বিয়েটা করব না।কিন্তু এখন ভাবছি,বিয়ে করাই উচিত!

৩.
আজকে আমাদের বিয়ের প্রথম রাত।তাকিয়ে আছি ঘুমন্ত রায়নার দিকে!আমাদের মাঝখানে একটা কোলবালিশ রেখে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে,নিজেই হয়ত টের পায়নি!
যদিও আমি এনির কাছ থেকে ধোকা খাওয়ার পরে ভেবেছিলাম,কোনোদিন আর কোনো মেয়েকে বিয়ে করা দূরে থাক,বিশ্বাসও করব না।কিন্তু আমি এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করেছি,যার জীবন আমার চেয়েও কঠিন হয়ে গিয়েছে!আমি মাত্র একটা মেয়ের কাছ থেকে ধোকা খেয়ে দুনিয়ার সব মেয়েকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম,কিন্তু ও তো তিনটা ছেলের কাছ থেকে তিনভাবে ধোকা খেয়েছে।যখনই কাউকে বিশ্বাস করেছে,তখনই সে তার বিশ্বাস ভেঙেছে!রায়নার এই অবিশ্বাসের জীবন থেকে তো আমাকেই ওকে উদ্ধার করতে হবে!নাহয় ওর এই জীবন হয়ত সব ছেলেকেই অবিশ্বাস করতে করতে কেটে যাবে!

রায়না কাজে খুব চটপটে!সারাদিন মাকে হেল্প করে,রান্নাবান্না করে।মা-বাবাকে গল্প শোনায়,হাসিখুশি থাকে।কিন্তু আমি যখন রাতে অফিস থেকে ফিরি,তখনো ও মায়ের আশেপাশেই ঘুরঘুর করে।এমন ভান করে যেন আমি যে এসেছি,সে দেখেইনি!এতে অবশ্য আমি কোনো কষ্ট পাই না।কারণ আমি তো ওর অতীত জানি।আমাকে দেখে রায়না ভয় পাবে,এটাই হয়ত স্বাভাবিক।ওকে ঠিক হতে আমার সময় দিতে হবে।মা অবশ্য ওকে বোঝানোর চেষ্টা করে,কিন্তু ও কিছু বুঝতে পারেনা,বা বুঝতে চায় না!
ছুটির দিনগুলোতেও একই অবস্থা!সারাক্ষণ সে মায়ের আশেপাশে ঘুরে।ভুলেও আমার কাছে আসে না!
একদিন বস অফিস থেকে আসার সময় বললেন,আমার এরপরের দিন রেস্ট।অফিসে আসা লাগবে না।রেস্ট নিয়ে যাতে আমি আরো ভালভাবে কাজ করতে পারি,সেই জন্যই এই ব্যবস্থা।আমি অফিস থেকে এসে অবশ্য কাউকে বলিনি যে পরের দিন আমার অফিস ছুটি।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার আগেই রায়না সব কাজ করে গোসল করতে যায়।আমি অফিসে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওর কোনো হদিস পাওয়া যায় না।কিন্তু আজকে একেবারেই ভিন্ন।রায়না গোসল করে এসে কল্পনাও করেনি আমাকে দেখবে!আমাকে দেখে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।তারপর তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে যেতে চাইল।আমি পেছন থেকে হাত ধরে টেনে ওকে বিছানায় বসালাম।ওর হাত দেখি ভয়ানক ঠাণ্ডা!আর থরথর করে কাঁপছে!আমার হাত থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল।কিন্তু আমি ওকে শক্ত করে ধরে রেখে বললাম,
--আমাকে তুমি ভয় পাচ্ছ কেন?আমি তো তোমারই হাসবেন্ড।জানি,তুমি সব ছেলেকেই অবিশ্বাস করো।কিন্তু আমাকে একবার বিশ্বাস করেই দেখো,আমি কখনোই তোমার বিশ্বাস ভাঙব না,প্রমিস।
রায়না চোখে অবিশ্বাস নিয়ে বলল,
--সব ছেলেরা বিশ্বাস ভাঙার আগে এই কথাই বলে,কিন্তু ঠিকই পরে সব তছনছ করে দিয়ে যায়!তাই আমার পক্ষে আর কাউকেই বিশ্বাস করা সম্ভব না!হাত ছাড়ুন,আমাকে যেতে দিন।
আমি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ওর হাত ছেড়ে দিলাম,ও রান্নাঘরে চলে গেল।

একটু পরেই রায়নার চিৎকার শুনে ভয়ে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি,মা রায়নার হাতে ঠাণ্ডা পানি ঢালছে।রায়না ব্যাথায় ছটফট করছে!কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম,কি হয়েছে।মা বলল,রায়না রান্না করতে গিয়ে গরম তেল ছিটে ওর হাতে এসে পড়েছে।অনেকখানি পুড়ে গেছে ডান হাত।
আগে তো এমন কখনো হয়নি,আজ কেন হল?আমাকে ভয় পেয়েই কি ওর কাজেও ওলটপালট হয়ে গেছে?
আমি রায়নাকে তাড়াতাড়ি ডাক্তার কাছে নিয়ে গেলাম।ডাক্তার হাতে ওষুধ লাগিয়ে দিল,আর ডান হাত বেশি ব্যবহার করতে না করল।
রাতের বেলা রায়না না খেয়েই ঘুমিয়ে যাচ্ছিল।ওর ক্ষুধা লেগেছিল ঠিকই।কিন্তু ও আমার হাতে খাবে না,নিজের হাত ব্যবহার বন্ধ,কাউকে বলতেও পারছিল না খাইয়ে দিতে।ও যত যাই করুক,আমি যখন একটা ধমক দিয়ে ওকে খাইয়ে দিতে শুরু করলাম,তখন আর না করল না।লক্ষ্মী মেয়ের মত আমার হাতে খেতে শুরু করল।আর আমি ওর মিষ্টি মুখটা আর অপূর্ব চোখ দুটোকে অনেকদিন পর খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেলাম!

৪.
ছুটির দিনগুলোতে এখন আর রায়না আমার থেকে দূরে থাকতে পারেনা।আমি বুঝতে পেরেছি,নিজে থেকে ওর কাছাকাছি থাকার চেষ্টা না করলে ও আমার থেকে আরো দূরে চলে যাবে।তাই যতক্ষণ বাসায় থাকি,ততক্ষণ ওকে ডাকতে থাকি আর আমার এটা ওটা কাজ দিতে থাকি।এতেই ওর কিছুটা হলেও কাছাকাছি থাকতে পারি।
আজকেও অফিস থেকে ছুটি দিয়েছে।কিন্তু আজকের কথা অবশ্য পুরাই ভিন্ন!আজকে বিকেলের ট্রেনে বাবা-মা দুজনেই অনেকদিন পর গ্রামে বেড়াতে গিয়েছেন।একসপ্তাহ ঐখানে থাকবেন।
এই এক সপ্তাহের স্বাধীনতায় আমি যে কি খুশি হয়েছি!প্রত্যেকদিন শুধু রায়না আর আমি থাকব বাড়িতে।অফিসের দিন আর ছুটির দিনগুলোতে কি কি করব,তাই ঠিক করতে শুরু করলাম!অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরির প্ল্যান করলাম,যদিও হয়ত রায়নাকে যেতে রাজি করাতে কষ্টই হবে,কিন্তু রাজি করানো যাবে।আর মনে মনে প্রস্তুত হয়ে রইলাম,ঠিক সপ্তমদিন আমি রায়নাকে প্রপোজ করব!
প্রথমদিন অফিস থেকে সন্ধ্যায় ফিরে তাকে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে বললাম।আজকে আমরা বাইরে খেতে যাব!এনির সাথে প্রেম করে আর কোনো লাভ হোক বা না হোক,মেয়েরা কি টাইপের জিনিস পছন্দ করে,এটা ঠিকই জেনে গিয়েছিলাম।তাই বাবা-মা গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই আমি মেয়েদের সব পছন্দের সব কাজগুলো রায়নার সাথে করব বলে ঠিক করলাম।

তাই আজকে রায়নাকে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে গেলাম।যদিও রায়না যেতে রাজি হচ্ছিল না।ওকে সেজেগুজে শাড়ি পড়ে আসতেও রাজি করিয়েছি।এই আলো-আঁধারের খেলায় রায়নাকে যে কি অপূর্ব সুন্দর আর স্নিগ্ধ লাগছে,আমি বলে বোঝাতে পারব না।আমি নতুন করে আবার ওর প্রেমে পড়তে শুরু করলাম!কিন্তু ওর মধ্যে আমার প্রতি একটুও ভালবাসা আর বিশ্বাস জন্মাতে পেরেছি কিনা,বুঝতে পারলাম না।কিছুক্ষণ চুপচাপ খেতে খেতে একটু পর জিজ্ঞেস করলাম,
--তোমার এতদিন পর বাইরে ঘুরতে এসে কেমন লাগছে?
--অনেক ভাল লাগছে!কিন্তু আপনি আবার ভেবে বসবেন না যে,আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি।আপনার প্রতি আমার কোনোরকমই দুর্বলতা নেই,মনে রাখবেন।
আবার সেই কাটাকাটা উত্তর!কিন্তু আমি সেই কথার তোয়াক্কা না করে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললাম,
--সমস্যা নেই।আমার চেষ্টা আমি করে যাব যতদিন পারি!
মনে মনে বললাম,
--অমূল্য কিছু পেতে হলে তো কষ্ট করতেই হবে!

 আজকে রাতেও রায়না আমাদের মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে ঘুমাল।সে আসলে আমাদের মাঝে যেন কোলবালিশ দিল না,অবিশ্বাসের দেয়াল দিয়ে আলাদা করে দিল আমাকে!কবে যে সেই দেয়াল ভাঙবে?

দ্বিতীয়দিন আমি অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়িই ছুটি পেলাম।রায়নাকে নিয়ে সেদিন গেলাম পার্কে।এনিকে দেখতাম পার্কে ঘুরতে খুব পছন্দ করত।ইচ্ছা,রায়নাকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে একসাথে ফুচকা খাব।পার্কে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই দেখলাম,অনেকগুলো পিচ্চি আমাদের ঘিরে ধরেছে।এদেরকে আমার ভালই লাগে,কিন্তু এনি এদেরকে সহ্য করতে পারত না!
আমি অবাক হয়ে দেখলাম,আসার সময় আমি যে দুশো টাকা দিয়েছিলাম রায়নাকে প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের জন্য,ও সেগুলো দিয়ে বাচ্চাগুলোকে আইসক্রিম কিনে খাওয়াল।আর বাচ্চাদের সাথে এমনভাবে মজা করতে লাগল যে দেখে মনে হল,বাচ্চাগুলো তার নিজেরই!ওকে আমি সেদিন প্রথমবারের মত হাসতে দেখলাম!এত মিষ্টি কারো হাসি হতে পারে,তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি!

আমি অবাক হয়ে ওর পাগলামিগুলো দেখতে লাগলাম আর ভাবতে থাকলাম,এত সুন্দর মনের একটা মেয়েকে ছেলেগুলো কেন এভাবে কষ্ট দিল যে ওর মনে ছেলেদের নিয়ে একেবারে বিতৃষ্ণা জন্মে গেল!ঐ ঘটনাগুলো না ঘটলে আমরা কি সুন্দরভাবে একসাথে দিনগুলো কাটাতে পারতাম!

আমি  যখন তাকে ফুচকা খেতে নিয়ে গেলাম,ও যে কি খুশি হল!আশ্চর্য হয়ে গেলাম আমি।কালকেও তো রায়নাকে নিয়ে দামী রেস্টুরেন্টে বসে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করেছি,কিন্তু কাল তো ওর মাঝে এত খুশি দেখিনি!বুঝলাম,ওর এক্সপেকটেশন অন্য মেয়েদের মত অনেক বেশি না,একটুতেই ও খুব খুশি হয়।আজকে বাচ্চাগুলোকে দেখে যেমন হয়েছে!

তৃতীয়দিন আমি ঠিক করলাম,আমরা শপিং এ যাব।কিন্তু রায়নাকে এতে তেমন আগ্রহী দেখলাম না!বুঝতে পারলাম,অন্য মেয়েদের মত ওর শপিং এ যেতে অতটা ভাল লাগে না!আমি যতই রায়নাকে আবিষ্কার করছি,ততই অবাক হচ্ছি,মেয়েটা অন্যদের চেয়ে একেবারেই আলাদা!
কিন্তু শপিং এ গিয়ে দেখা গেল,খুব শখ করে রায়না এক একটা ড্রেস কিনছে,কিন্তু একটাও নিজের জন্য না!মায়ের জন্য শাড়ি,বাবার জন্য পাঞ্জাবি,তাদের প্রয়োজনের আরো টুকিটাকি জিনিস কিনল।এর ফাঁকে আমি গিয়ে ওর জন্য সুন্দর মেরুন রঙয়ের একটা শাড়ি কিনলাম,যেহেতু ও নিজের জন্য কিছুই কিনে নি।
বাসায় ফিরে যখন শপিং এর ব্যাগগুলো খুলে খুলে দেখছিলাম,তখন খুব অবাক হয়ে দেখলাম,আমার নাম লেখা একটি প্যাকেট!খুলে দেখি,ভেতরে নীল-সাদা স্ট্রাইকের একটি সুন্দর শার্ট।বুঝতে পারলাম,আমি যখন ওর জন্য শাড়ি কিনছিলাম,তখন রায়নাও আমার জন্য শার্ট কিনেছে,আমাকে সে যতই অপছন্দ করুক!কি যে আনন্দ লাগছে!আসলে প্রিয় মানুষের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আনন্দই আলাদা!

৫.
আজ চতুর্থদিন।শুক্রবার বলে আজ অফিসও বন্ধ।ছুটি ছিল বলে একটু দেরিতেই উঠলাম।আর উঠার সাথে সাথেই আমার নাকে খিচুরির সুঘ্রাণ এল!আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখি রায়না মিষ্টি গলায় গান গাইছে,আর রান্না করছে আমার প্রিয় খিচুরি আর গরুর মাংস।আমি অবাক হয়ে গেলাম।কারণ আজ ছুটির দিন বলে প্ল্যান করেছিলাম রায়নাকে বলব,ভাল কিছু রান্না করতে যেন বাসায় বসে দুজন একসাথে মজা করে খেতে পারি।কিন্তু রায়না তো আমার প্ল্যান শোনার আগেই সব করে ফেলেছে!
আজকে প্রথম দুজন একসাথে বাসায় বসে খাচ্ছি।রায়না একটু পর পরই এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে।কিযে ভাল লাগছে!আর ওর হাতের রান্না তো আজকে একেবারে অমৃতের মত মনে হচ্ছে!অনেকদিন পর এত তৃপ্তি নিয়ে খেলাম!
রাতে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।ঘুমঘুম চোখে উঠে অবাক হয়ে দেখি,রায়না হাটুতে মাথা গুজে বাচ্চাদের মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে!জিজ্ঞেস করলাম,
--কি হয়েছে তোমার?
রায়না কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
--ঈশান,বাবা হঠাৎ করে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে!
--এখন কোথায় আছেন?
--হাসপাতালে।কিন্তু এত রাতে কাকে বাবার কাছে আমাকে নিয়ে যেতে বলব বুঝতে পারছি না!
আমি ওর দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা হালকা করার জন্য মুখে একটু হাসি টেনে বললাম,
--পাগলি মেয়ে!এর জন্য এত কাঁদে?আমি আছি না?আমি তোমাকে তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাব।
বলে আমি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললাম,যেহেতু এত রাতে কোনো যানবাহন পাওয়া যাবে না!
আমরা যখন রওনা দিয়েছি,তখনো গাড়িতে বসে রায়না কাঁদছিল।ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য কি করব,বুঝতে পারছিলাম না।
হঠাৎ খেয়াল করে দেখি,গাড়ির ড্রাইভার স্টিয়ারিং এ হাত রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে!আমি সাবধান করে দেওয়ার আগেই সে গাড়িটাকে রাস্তার পাশের একটা উঁচু আইল্যান্ডে উঠিয়ে দিয়েছে।আমি রায়নার মাথার দিকটা দুই হাতে ধরে রাখতে রাখতেই দেখলাম,গাড়িটা কাত হয়ে গেল রায়না যেদিকে বসেছে,সেদিকে!হঠাৎ করে মনে হল,আমার নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই।কিন্তু আমি একটু সাহায্য করলেই তো রায়না বের হতে পারবে!তাই আমি অনেক কষ্ট করে যেদিকে বসে ছিলাম,সেদিক দিয়ে রায়নাকে গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করলাম।কিন্তু যখন আমি নামতে যাব,তখন টের পেলাম,আমার ডান হাতে কোনো শক্তি নেই!বুঝলাম,হাতটা ভেঙে গেছে হয়ত!যখন রায়নাকে ধরে রেখেছিলাম,তখনই ভেঙেছে।

আমি নামতে পারছি না দেখে রায়না আমাকে টেনে নামানোর চেষ্টা করতে লাগল,কিন্তু ওর একার পক্ষে তো এটা সম্ভব না।আর ড্রাইভারের যখন হুশ এল,তখন আমাদের দুজনকে এই বিপদের মাঝে ফেলেই সে পালিয়ে গেল!
আমি যখন নামতে চেষ্টা করছি,তখন হঠাৎ দেখি উলটা দিক থেকে একটা ট্রাক ছুটে আসছে!আমি বুঝতে পারলাম,এটাই হয়ত আমার জীবনের শেষ সময়!মরে যাচ্ছি,এতে এতটুকু চিন্তা হচ্ছে না,কিন্তু বারবার মনে হচ্ছে,রায়নাকে আমার আর মনের কথাগুলো বলা হল না!

পরিশেষ:

চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায়ই  অনুভব করলাম,কেউ খুব সযত্নে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।কারো হাতের পরশে আরামে আমার ঘুম চলে আসছে!আমি ভাবতে লাগলাম,এটা নিশ্চয়ই মৃত্যুর পরের জীবন!
কিন্তু যখন চোখ খুললাম,তখন দেখি আমি হাসপাতালে।রায়না আমার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আর আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে!আমি চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে প্রথম যে কথাটা বললাম,সেটা হল,
--আমি তোমাকে খুব ভালবাসি,রায়না!

রায়না কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।ভাবছে,এক্সিডেন্টে আবার আমার মাথার গোলমাল হয়ে গেল নাতো?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললাম,
--আমি ভেবেছিলাম,এটা বলতে আমার আরো দুইদিন লাগবে,কিন্তু এক্সিডেন্টের পর আমার সাহস কত বেড়ে গেছে দেখেছ?আমি এখনই এই কথা তোমাকে বলে দিতে পেরেছি!
রায়না মুখ ভেংচে বলল,
--সাহস না ছাই!তুমি আসলেই একটা পাগল।কেন তুমি আমাকে ওভাবে কাল ধরে রেখেছিলে?সেজন্যই তো তোমার হাতটা এভাবে ভাঙল!যদিও ডাক্তার বলেছে মারাত্মক কিছু না।তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।তারপরেও তো..আর ট্রাকটাও সেসময়..
--কি হয়েছিল বল তো?আমি তো ভেবেছিলাম মরেই গেছি!কিন্তু ট্রাকটা সেসময় থামল কিভাবে?
--আমি ট্রাকটা দূরে থাকতেই ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছিলাম!
--কি বলছ তুমি?তোমার যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে আমার বেঁচে থাকা আর না থাকা তো একই হত!
--আর তোমার কিছু হলে?আমি এতদিন পরে একজনকে বিশ্বাস করলাম,তাকে আমি আবার হারিয়ে যেতে দেই কিভাবে?
যাক,শেষ পর্যন্ত আমার মিশন সাকসেসফুল হল!রায়নার অবিশ্বাসের অগোচরে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাসকে আমি ঠিকই বের করে আনতে পেরেছি!
সেই আনন্দে হেসে ফেলে রায়নার দিকে তাকিয়ে বললাম,
--বাদ দাও তো।বাবা কেমন আছেন?
--বাবার প্রেশার বেড়ে গিয়েছিল।এখন সব কন্ট্রোলে আছে।
শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।তারপর হঠাৎ মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে ভুরু নাচিয়ে বললাম,
--আমার প্রপোজের উত্তর কিন্তু আমি পাইনি!
দেখি,রায়না লজ্জায় লাল হয়ে গেছে!আমাকে হালকা ধমক দিয়ে বলল,
--উফ্ যাও তো,কিছু বলতে পারব না এখন!
তারপরেই আমার বিষণ্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
--আমাদের সাতদিন তো এখনো শেষ হয়নি।তুমি আগে সুস্থ হয়ে সাতদিনের কাজ কম্পলিট কর,তারপর আমার মত জানাব!
রায়না অবশ্য সাতদিনের কাজ কম্পলিট হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে নি।তার আগেই আমাকে ভালবাসার কথা বলে ফেলেছিল!এত দেরিতে বলা নাকি ওর সহ্য হচ্ছিল না,তাই!

#অবিশ্বাসের অগোচরে
লেখক:অমানিশা তমিস্রা

Thursday, September 21, 2017

বাড়ি কিনলে সঙ্গে বৌ ফ্রি!

এটা কিনলে ওটা ফ্রি এমন ফ্রির অফার দেখা যায় অহরহ। কিন্তু ‘বাড়ি কিনলে বউ ফ্রি’ এমন কোন অফার চমকে দেওয়ার মতো একটি ব্যাপার। এটা বোধহয় আশাপ্রদও নয়। অথচ বাস্তবিক এমনই একটি বিজ্ঞাপন  দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইন্দোনেশিয়ার এক নারী এভাবেই বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।

উইনা লিয়া নামে ওই নারীর বাড়িটি বিক্রি করা হবে। রয়েছে লোভনীয় ছাড়ও। সেখানেই লেখা আছে, বাড়িটিতে মিলবে বাগান, গ্যারেজ ও একজন স্ত্রী। বিজ্ঞাপনের পর ৪০ বছরের ওই নারীকে নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনি স্পষ্টই জানিয়েছেন, এই বিজ্ঞাপনে তার কোনও আপত্তি নেই। এমনিতেও তিনি একজন স্বামী খুঁজছেন।

৬ একর জমির উপর তৈরি একটি বাড়ি। ২ টি বেডরুম, ২ টি বাথরুম রয়েছে। গ্রানাইট মেঝে। একটি গ্যারেজ, একটি প্রশস্ত বাগান রয়েছে। আছে মাছের পুকুরও । উইনা লিয়া জানিয়েছেন, তিনি যতবার প্রেমে পড়ছেন তা ব্যর্থ হয়েছে। তাই এবার এরকম প্ল্যান বানিয়েছেন তিনি।
তথ্যসূত্র : দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট

Tuesday, September 19, 2017

আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম, তখন ফাহিম নামের একটি ছেলে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে যায়।

যেহেতু আমি সাধারণ একটি পরিবারের মেয়ে। তাই আমি সাধারণ ভাবেই চলাফেরা করতাম। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম, তখন ফাহিম নামের একটি ছেলে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে যায়।
.
ফাহিম তখন এইসএসসিতে পড়ে। আসলে ঐ বয়সে সব ছেলে মেয়েরাই রঙিন চোখ দিয়ে রঙিন দুনিয়া দেখে। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলামনা। আমি মনে মনে চাইতাম, আমাকে কেউ ভালবাসুক। কেউ আমাকে বলুক লাবন্য আমি তোমাকে ভালবাসি।
.
আমার মনের চাওয়াটা পুরোন করেছিল ঐ ফাহিম নামের ছেলেটি। আমাকে সেদিন ও প্রথম বললো.. 
- সাথী তুমি কি কাউকে ভালবাসো..?"
- না, এই প্রশ্ন কেন করছেন..?
- যাক এই না শব্দটাই শুনতে চেয়েছিলাম।
- কেন.., হ্যাঁ বললে কি হতো..?
- কষ্ট নিয়ে ফিরে যেতাম!
- তাতে আপনি কষ্ট পাবেন কেন..?
- আরেকদিন বলবো।
.
ফাহিমদের বাড়ি আমাদের পাশের গ্রামে। ওর বাবা গ্রামের নামকরা চেয়ারম্যান। বেশ কয়েকদিন লক্ষ্য করেছি ও আমাকে ফলো করছে। আজ ওর কথাতে বুঝতে পারলাম, ও মনে মনে কি চাইছে! ছেলেটিকে আমার বেশ পছন্দ। আমি ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই ওর প্রেমে পড়ে যাই।
.
একদিন ফাহিম আমাকে বলেই ফেললো সে আমাকে ভালবাসে। আর আমিও তাতে রাজি হয়ে যাই। আসলে ওর প্রতি আমার দুর্বল হওয়ার অনেকগুলো কারণ ছিলো। ও বড়লোক ঘরের সন্তান হলেও ওর মধ্যে কোনো অহংকার ছিলোনা। ও সবসময় সাধারন ভাবেই চলতো। এবং সাধারণ মানুষদের সাথেই চলতো। সত্যি কথা বলতে ওর যতগুলো বন্ধু ছিলো, সবাই ছিলো অসহায় ও গরীব। আর ও সবসময় এই গরীব অসহায়দের নিয়েই চলতো।
.
আমাকে মাঝেমধ্যে অনেক কিছুই গিফট করতো। যেটা আমার কাছে মোটেও ভাল লাগতোনা। একদিন আমি ফাহিমকে বললাম... "তুমি যেদিন নিজে ইনকাম করে আমাকে কিছু কিনে দিবে, সেদিন আমি সব থেকে খুশি হবো। সেটা হোক সামান্য মূল্যের..!"
.
ও যে আমার এই কথাটি সিরিয়াসলি নিবে আমি ভাবতে পারিনি..! একদিন ও আমার হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো.. "এটা আমার টিউশনির টাকা দিয়ে তোমার জন্য কিনেছি। তুমি সেদিন আমাকে নিজে ইনকামের কথা বললে, আমি তারপর থেকে একটা টিউশনি শুরু করি। আর সেই টিউশনির প্রথম টাকা দিয়ে তোমার জন্য এইটা আর মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনেছি।"
.
সেদিন আনন্দে আমার চোখদুটো অশ্রুতে ভরে গিয়েছিল। আমি সেদিন বুঝেছিলাম ফাহিম আমাকে কতটা ভালবাসে..! আমি ওর দেয়া প্যাকেটা যখন বাড়ি গিয়ে খুললাম, খুলেই আমি অবাক হলাম.! প্যাকেটের মধ্যে একটা নীল শাড়ি এবং সাথে ওর লেখা একটি চিঠি দেখে। আমি চিঠিটা পড়তে লাগলাম...
"লাবন্য, নীল শাড়িতে তোমাকে কোনোদিন দেখিনি। কেন যেন দেখতে খুব  ইচ্ছে করছে আমার..! শাড়িটা পরে আগামীকাল বিকেলে আমার সাথে দেখা করবে প্লিজ..! আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো তোমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা নদীর পাড়ের সেই কাঁশবনে। কি আসবে তো..!?"
.
আমি গিয়েছিলাম ফাহিমের উপহার দেওয়া নীল শাড়িটা পরে। আমাকে দেখেই ফাহিমের চোখ দুটো কপালে উঠে গিয়েছিল..! বলেছিলো....
- সত্যিই অসাধারণ! যেন সাদা কাঁশবনে একটা ডানাকাটা নীলপরী নেমে এসেছে..!
.
সেদিন আমিও একটি গিফট কিনেছিলাম ওর জন্য। একটি নীল রঙের পাঞ্জাবি। প্যাকেটটি ওর হাতে দিয়ে বললাম...
- এটা এখনই গায়ে দাও।
- কি এটা..?
- একটি পাঞ্জাবি, আর একটি ঘড়ি। 
- তুমি এসব কিনতে গেছো কেন..? তুমি টাকা কই পেলে..?
- শুধু তুমিই আমাকে দিবে..? কেন, আমিকি কিছু দিতে পারিনা..? এটা আমার নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে কেনা। তুমি তো জানো আমি হাতের কাজ জানি। গত একমাস হাতের কাজ করেছি তোমাকে উপহার দিবো বলে।
.
আমি লক্ষ্য করলাম ফাহিমের দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ও বললো...
- আমি তোমাকে ভালবেসে ভুল করিনি। জানিনা আল্লাহ্ আমাদের দুজনের মিলন লিখে রেখেছেন কিনা!? তবে আল্লাহর কাছে চাইবো, তিনি যেন তোমাকেই আমার জীবন সঙ্গিনী করে দেন। 
- তুমি কি নামাজ পড়ো যে আল্লাহ্ তোমার কথা রাখবেন..?
- এখন থেকে পড়বো।
- সত্যি...!?
- হুম..
- আমিও পড়বো..
সেদিনের বিকেলটা ছিলো আমার জীবনের সেরা স্মৃতি। যা কোনোদিনই ভুলতে পারবোনা।
.
সেদিন থেকে আমি আর ফাহিম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করে দিলাম। তারপর থেকে আমরা দেখা সাক্ষাৎও খুব কম করতাম। আমি নামাজ শুরু করে বুঝতে পারি যে, আমার জন্য পর্দা করা ফরজ। আমি পর্দা করাও শুরু করে দিলাম। ফাহিম আমাকে কয়েকটা বোরকা কিনে দিয়েছিলো। আর সেগুলো ছিলো আমার সবচেয়ে প্রিয় উপহার। 
.
আল্লাহ সত্যি সত্যিই আমাদের দুজনের মিলন লিখে রেখেছিলেন। আমার এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, সহিহ শুদ্ধভাবে পর্দা করা ফাহিমের পরিবারের সবার মন কেড়েছিলো। আর এতেই আমাদের দুজনের মিলন হওয়াটা খুব সহজ করে দেন উপরওয়ালা। দুই বছর পর আমাদের বিয়ে হয়। 
.
আমার আর ফাহিমের আজ বিয়ের একবছর হলো। সেই উপলক্ষে আমার শ্বশুর আব্বা গরীব অসহায়দের মাঝে কাপড় বিতরণ এবং খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। আমার শ্বশুর সবার কাছে আমাদের জন্য দোয়া চাইছেন। সেই কাজে ফাহিমও খুব ব্যস্ত। আমাকে সবাই এত ভালবাসে, আমার কাছে কেবলই মনে হয় তা পাবার যোগ্য আমি নই.! জীবনে আমি আর কিছু চাইনা। শুধু এই ভালবাসা টুকুই চাই.!
.
সত্যিই সুখের কপাল আমার। এত সুখ আল্লাহ আমার কপালে লিখে রেখেছিলেন ভাবিনি, আলহামদুলিল্লাহ্। ভাবতেই আমার দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু পড়ছে। এটাকেই বুঝি সুখের কান্না বলে..!? এভাবেই আমি কাঁদতে চাই আজীবন...
•••
গল্প: "সুখের কান্না"
.
✍Ramzan Khondaker (স্লিপলেস বার্ড)

প্রেমিক ও স্বামী (বড়দের গল্প)

সকাল বেলায় আমি আর আমার স্ত্রী মুক্তা দুইজন এক সাথে বসে নাস্তা করছিলাম ।হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।অামি তখন বললাম, অামি দেখছি কে এসেছে তুমি নাস্তা করো, মুক্তা কোনো কথা না বলে নাস্তা করতে লাগলো । অামি নাস্তা করা রেখে উঠে দরজা খুলে দেখলাম একটা ছেলে দাঁড়িয়ে অাছে ।
তার হাতে একটা খাম।
অামাকে দেখে ছেলেটা খামটা অামর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় । অামি খামটা হাতে নিয়ে দরজা বন্ধ করে নাস্তার টেবিলে এসে বসি ।
তখন মুক্তা জিজ্ঞেস করে , কে এসেছিলো।
অামি বললাম, একটা লোক এসে এই খাম টা দিয়ে গেলো । এরপর খামটা খুলে দেখি ভিতরে একটা চিঠি।
আমি চিঠিটা নিয়ে পড়ি । দেখি তাতে লেখা , মুক্তা তোমার আর আমার সম্পর্কের ঘটনাটা তোমার স্বামীকে যদি বলে দেই তাহলে কেমন হয় । তোমার সাথে আমার সম্পর্ক কিভাবে হয় ।কখন আমরা কোথায় দেখা করি সব কিছু যদি তোমার স্বামীকে বলে দেই তাহলে কেমন হয় । ইতি তোমার পুরোনো প্রেমিক ।
---
চিঠিটা পড়ে আমি ধমক দিয়ে বলি , এসব কি এসবের মানে কি ।
মুক্তা ভয়ে ভয়ে বলে , কি হইছে এতো রাগলে কেনো।
আমি বললাম, কি হইছে তুমি জানো না ,তুমি বিয়ের আগে বলছিলে, তোমার সাথে কোনো ছেলের সম্পর্ক ছিলো না কিন্তু এখন এসব কি দেখছি। এই বলে চিঠিটা তার হাতে দেই । সে তখন সেটা পড়তে শুরু করে ।
চিঠিটা পড়া হলে দেখি তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পরছে । সে কেঁদে কেঁদে বলল, দেখো এসব
মিথ্যা। কেউ আমাকে বদনাম করার জন্য এমন কাজ করছে ,বিশ্বাস করো আমার কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল না ।
আমি তখন রেগে গিয়ে বলি, কিভাবে তোমাকে বিশ্বাস করি' । তুমি আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করছো,
আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিছো ।
সে তখন বলে, আমার কথা শুনো , আমাকে একটু বুঝতে চেষ্টা করো ।
আমি তখন বললাম, তোমার কোন কথাই শুনতে আমি চাইনা, আমি প্রমাণ পেয়েছি কোনটা সত্য কোনটা
মিথ্যা সেটার । এই বলে রাগ করে সেখান থেকে উঠে রুমে চলে আসি। আসার সময় তার দিকে তাকালাম , দেখি সে এখনো কেঁদে চলেছে ।
---
রুমে এসে আমি হাসতে হাসতে শেষ,আজ নিজেকে ভালো একজন অভিনেতা মনে হচ্ছে । মুক্তার সামনে ভালোই অভিনয় করলাম , সে বুঝতে পারে নাই সব কিছু সাজানো একটা নাটক ছিলো।
অাসলে চিঠিতে যা লেখা ছিলো সব মিথ্যে।
অার এই মিথ্যে কাজটা অামার নিজের করা ।
গত রাতে সে অামাকে কথায় কথায় বললো , আমি নাকি মানুষকে কষ্ট দিতে জানি না । মানুষকে কাঁদাতে পারি না । আসলে আমি চাই সবাই জেনো সুখে থাকে
আমি চাইনা আমার কারনে কেউ কষ্ট পাক । আমি হাজার কষ্ট পেলেও সবাই যেন সুখে থাকে এটাই চাই ।
আমি কিন্তু ইচ্ছে করলে মানুষকে কষ্ট দিতে পারি ।
মানুষকে কাঁদতে পারি । এটা ওকে বুঝানোর জন্য মিথ্যে এই নাটকটা করি । গত রাতেই সে যখন বলছিলো এরপরে আমি আমাদের বাড়ির পাশের এক ছোট ভাই কে ফোন করে বলি একটা চিঠি লেখে সকালে আমাকে দিয়ে যেতে । কি কি লিখবে সেটাও বলে দেই, আমি নিজে লিখি নাই কারণ আমার হাতের লেখা সে বুঝতে পারবে । তাই ছোট ভাইকে দিয়ে লেখালাম যাতে সে বুঝতে না পারে এটা অামারি করা কাজ । আর নাস্তা করার সময় সে ছোট ভাইটা এসে চিঠি টা দিয়ে গেছে ।
---
এরপরে আমি একটা চিরকুট লিখলাম।
সবকিছুই সাজানো মিথ্যে একটা নাটক ছিলো ।
কেনোই বা তার সাথে এমন কাজ করলাম সব কিছু
লেখে চিরকুট টা নাস্তা করার টেবিলের উপর রেখে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম । আমি জানি সে টেবিল পরিষ্কার করতে আসবে , তখন সে চিরকুটটা পাবে আর সত্যিটা জানতে পারবে । সত্যিটা চিরকুটে লিখে দিলাম কারন সামনা সামনেই যদি বলতে যাই সবকিছু সাজানো একটা নাটক ছিলো । তাকে শুধু কষ্ট
দেয়ার জন্যই এমন কাজ করেছি। তাহলে সে আমার বারটা বাজাবে ।
এখন চিরকুটে লিখে দিলাম সত্যিটা জানার পর রাগ উঠলে আমাকে যেন কিছু না করতে পারে । চিরকুট পড়ার পর যখন তার রাগ কমবে তখন গিয়ে বাসায় আসবো ।
---
দুপুরে ভয়ে ভয়ে বাসায় এলাম ,এসে দেখি
সে টেবিল পরিষ্কার করে নাই , অামি চিরকুট টা যেভাবে টেবিলের ওপর রেখে গেলাম ঠিক তেমনি অাছে ।
তার মানে সে চিরকুট টা দেখে নাই , সত্যিটা এখনো জানতে পারেনাই । এরপরে আমি রুমে আসলাম
তার নাম ধরে দুবার ডাক দিলাম , কিন্তু তার কোনো সারাশব্দ পেলাম না । তখনি আমার নজর গেল বিছানার উপর , দেখি সকালের চিঠিটা বিছানার ওপর
পড়া , সাথে একটা চিরকুট ।
অামি চিরকুট টা হাতে নিয়ে সেটা পড়তে লাগলাম। সেটাতে দেখি লেখা।
-
প্রিয় স্বামী সকালের চিঠিটার সম্পকে তোমাকে কিছু বলতে চাই, পাঁচ বছর আগের ঘটনা , আমি যখন কলেজে পড়তাম ,তখন একটা ছেলের সাথে অামার সম্পর্ক ছিলো । ওর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল দুই মাস, এর পরেই আমরা ব্রেকাপ করি । আমাদের সম্পর্কটা
তেমন ঘনিষ্ঠ ছিল না । আর ব্রেকপের কিছুদিন পর
আমি সবকিছু ভুলে যাই। তাই তোমার সাথে যখন আমার বিয়ের কথাবার্তা হয় , যখন তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে । কোন ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে কিনা , তখন আমি না বলি । তোমাকে না বলি শুধু এই কারণেই আমি সবকিছু ভুলে গেছিলাম।
নতুন করে আবার সবকিছু মনে করতে চাইনি বলে ।
কিন্তু এতো বছর পর আবার আমার অতীত সামনে এসে দাঁড়াবে তা আমি কখনও কল্পনাও করি নাই ।
হতে পারে অামার অতিত তোমার কাছে সাধারন ব্যাপার। কিন্তু এখন অামি কিভাবে তোমাকে মুখ দেখাবো , তোমার চোখে চোখ রাখবো । প্রতিটা মূহতে মনে হবে অামি তোমাকে ধোকা দিচ্ছি, এই অনূভুতি নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবো । না তা অামি কখনো পারবো না, তাই চিরদিনের জন্য তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আর কখনো আমার এই মুখ তোমাকে দেখাবো না । ভালো থেকো তুমি অার পারলে অামাকে ক্ষমা করে দিও । ইতি তোমার স্ত্রী মুক্তা ।
---
চিরকুট টা পড়ে পাগলের মতো তাকে ডাকতে
লাগলাম । একে একে সব রুমে রান্নাঘরে সব জায়গায় তাকে খুঁজতে লাগলাম । কিন্তু তাকে পেলাম না , তার মোবাইলে কল দিলাম, দেখি তার মোবাইল বন্ধ ।
তারপর এক এক করে তার মা বাবা বন্ধু বান্ধব সকল আত্মীয় স্বজনকে কল করলাম । সে কোথাও নেই ,
কেউ তার সম্পকে কিছুই জানে না। আমার মধ্যে একটা ভয় কাজ করা শুরু করল , তাকে হারানোর ভয় ।
এসব আমার কারনে হলো ফাজলামি করতে গিয়ে
বড় একটা ভুল করে ফেললাম । সবকিছুর জন্য আমি নিজেই দায়ী । আমার কারণেই আমি আমার স্ত্রীকে
চিরদিনের জন্য হারাতে বসলাম।
---
অামার হঠাৎ মনে পড়লে সব জায়গায় তো দেখলাম
কিন্তু ছাদে দেখা হয়নি । তাড়াহুড়া করে ছাদে উঠে গিয়ে দেখি , ছাদের এক কোনায় সে দাঁড়িয়ে আছে ,। আমাকে দেখে সে হাসতে লাগল ।আর আমি ওকে দেখে কেঁদে ফেললাম । তার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম ।
তারপর বললাম, এসব কি এসবের মানে কি , তুমি জানো আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি , এমন কাজ করা তোমার মোটেও ঠিক হয়নি ।
তখন সে বলে, আচ্ছা আর তুমি যে আমার সাথে করছো সেই কাজটা কি ঠিক ছিল ।
তখন আমি বলি , না , সেটাও ঠিক ছিলো না ,
তারজন্য সরি । আচ্ছা তুমি সত্যি টা জানলে কি করে ।
তখন সে অামার চোখের জলের ফোটা গুলো তার শাড়ীর অাঁচল দিয়ে মুচে অামাকে জরিয়ে ধরে
বললো ।
তুমি টেবিলের উপর যে চিরকুট টা রেখে গিয়েছিলে সেটা পড়ে , তখন আমার এত রাগ এসেছিলো তোমাকে
হাতের কাছে পেলে খুন করে ফেলতাম । এরপর যখন রাগ কমলো তখন প্ল্যান করলাম , তুমি যে ভাবে আমাকে কষ্ট দিয়েছো , আমাকে কাঁদিয়েছো , তেমনি আমিও তোমাকে কষ্ট দিবো তোমাকে কাঁদাবো । এরপর তোমার চিরকুটটা টেবিলের উপর রেখে দিলাম যেমন করে তুমি রেখে গেছো ঠিক তেমনি । তারপর আমি মিথ্যে একটা চিরকুট লিখলাম , সেটা বিছানার উপর রেখে ছাদে এসে লুকিয়ে থাকলাম । আমি জানতাম তুমি আমাকে না দেখতে পেয়ে আমাকে পাগলের মত খুঁজবে ।
আমি তখন বললাম , তার মানে আমি কষ্ট দিয়েছি তার প্রতিশোধ নিলে ।
তখন সে বলে , ঠিক তাই তার প্রতিশোধ নিলাম ।
আচ্ছা তুমি কি করে ভাবতে পারলে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাব । আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাব না ।
তুমি যদি আমাকে যেতে বল আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেও তারপরও আমি যাব না । মরার পরও তোমার পিছু আমি ছারবো না , পেত্নী হয়ে তোমার পাশে থাকবো , তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত আমি থাকতে পারবো না । কারন অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায় ।
তখন আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম।
আমিও তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারবো না,
কারন আমিও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি ।


Monday, September 18, 2017

মিয়ামারের জন্য বড় দুঃসংবাদ যা জেনে খুশি হবেন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকায় মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতার খবর অনবরত প্রকাশ পাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশটির পর্যটন খাতে। অনেক বিদেশি পর্যটক মিয়ানমার সফর বাতিল করছেন বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের টুরিজ্যম ফেডারেশন। ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার

ফেডারেশনের চেয়ারম্যান উ খিন অং তান বলেছেন, তার দেশে পর্যটক আগমন আশঙ্কাজনক হারে কমছে। অনেক দেশের সরকার তাদের নাগরিকদের মিয়ানমার সফরে যেতে বারণ করছে। ব্রিটেন তার নাগরিকদের ইতিমধ্যে মিয়ানমার সফরের ব্যাপারে সতর্ক করেছে। এর ফলে মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটকদের ভিড় কমছে। নাগাপালি সৈকতে বিদেশি পর্যটকও হ্রাস পেয়েছে।

খিন অং তান বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রাখাইনে সহিংসতা ও মানবিক সাহায্যের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া এসব খবর বেশ ফলাও করে প্রকাশ করছে। প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মিডিয়া সিএনএন ও বিবিসি ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গা নির্যাতনের খবর প্রকাশ করছে যাচাই না করেই। এবং এধরনের সংবাদ মিয়ানমারের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

খিন অং তান আরও বলেন, পর্যটকরা জানতে চাচ্ছে মিয়ানমার সফর নিরাপদ কী না। আমরা তাদের বলছি রাখাইন অঞ্চলে মাত্র তিনটি শহর আক্রান্ত হয়েছে এ ধরনের সাম্প্রতিক অভিযানে। এছাড়া পুরো মিয়ানমার ভ্রমণ নিরাপদ।

ইয়াঙ্গুনের সেভেন ডেয়েস ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস কোম্পানির সেলস ম্যানেজার উ কং সিতু জার্মানির নাগরিকরা এখনো মিয়ানমার ভ্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। অনেক ট্রাভেল কোম্পানি ভ্রমণ বাতিল করছে।

খিরি ট্রাভেলের এ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার মি স্টিফেন শেরেয়ার জানান, রাখাইন অঞ্চলের সংকট মিয়ানমারের অন্য নিরাপদ অঞ্চলে পর্যটকদের ভ্রমণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ট্রাভেল অপারেটররা আশা করছেন পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে। তবে তা যদি দীর্ঘায়িত হত, অবশ্যই বিষয়টি পর্যটন খাত ছাড়াও মিয়ানমারের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে জানান খিন অং তান।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগষ্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে প্রায় ৪ লাখ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন, লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তা গণহত্যা বলে মিয়ানমারের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশটির অং সাং সুচি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।



Sunday, September 17, 2017

ঢাকায় যারা আছেন সাবধান… বিস্তারিত পড়ুন এবং সাবধান হন

 ঢাকায় যারা আছেন সাবধান – ১। ফার্মগেটে হঠাৎ দেখতে পেলেন, কতগুলো মানুষ একজন মানুষ কে মেরে রক্তাত্ত করে চলেছে আর সে আপনাকে বলছে ভাই, সাহায্য করেন। আপনি দয়া দেখাতে গিয়ে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলেই বিপদ হতে পারে। ওরা আপনাকে মেরে সব কিছু নিয়ে যেতে পারে, কারণ তারা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।

২। ওভার ব্রিজ এর উপর মহিলা কাঁদছে যে, সে যার সাথে দেখা করবে তার মোবাইলে কল দিতে হবে কিন্তু তার কাছে টাকা নেই। বলবে আপনার মোবাইল দিয়ে সেই লোকের নাম্বারে মিসকল দিলেও সে ব্যাক করবে। আপনি কল দিলেন তো ফাঁদে পড়লেন। ওরা নিরীহ মানুষ দেখে তাদের নম্বর সংগ্রহ করে ও পরবর্তীতে সেই নাম্বারে কল করে লোভনীয় প্রস্তাব দেয়, রাজী হলে আপনাকে তাদের আস্তানাতে নিয়ে ব্লাক মেইল করবে।

৩। শাহবাগ, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী জ্যামে আটকে আছেন, নানা ধরণের লিফলেট যেমনঃ দুর্বলতা,রোগে, নানা লোভে আপনাকে ফাঁদে ফেলার ব্যবস্থা। এমন বলে যে রুম ডেট এর ব্যবস্থা আছে।

৪। রাস্তায় সুন্দর চোখ এর বোরকা আলি আপনার সাথে কথা বলতে চায়, প্রেমের প্রস্তাব নয়, কিন্তু ইসারা, যে আপনি ভাববেন একটু চেষ্টা করলে কাছে পাবেন, যদি তাই ভাবেন তবে ধরা পড়ার সম্ভাবনা শতভাগ। আপনাকে তাদের আস্তানায় নিবে, তারপর আর কিছু আপনার করা লাগবে না। সব হারাবেন। মেয়ে দিয়ে ব্লাক মেইল করবে।

৫। গাবতলি, সায়েদাবাদ, কিংবা সদরঘাট , মাওয়া, আরিচা, দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে বসে আছেন, দেখলেন যে বাইরে তাস, লুডু ইত্যাদি খেলছে, কাছে গেলেন কি ফেঁসে গেলেন।

৬। যাত্রাপথে অপরিচিত লোক এর সাথে মতবিনিময় করবেন খুবই কম। আপনি যে স্থানে যাবেন সে স্থান যেন আপনার পরিচিত।

৭। রেলগাড়ির ছাঁদে চলাচল করা থেকে বিরত থাকবেন, কারণ এক দল ছেলে পাওয়া যায়, যারা রেলের ছাদের উপর থেকে ছিনতাই করে ছাদ থাকে ফেলে দেয়।

৮। লঞ্চ এ কম যাত্রী থাকলে উঠবেন না।

৯। যারা দ্রুত যাতায়াত এর জন্য স্পীড বোট এ যাতায়াত করবেন তারা টাকা বা মুল্যবান কিছু সাথে নিবেন না। কারণ দেখা গিয়েছে যে, এক দল আছে যারা বোট ছাড়ার পর নির্জন স্থানে বোট ভিড়িয়ে ছিনতাই করে আপনাকে নামিয়ে দিতে পারে।

১০। হেঁটে যেতে হলে বিভিন্ন বাসের মাঝখান দিয়ে যাওয়া অনুচিত কারণ নেশাখোর ওঁত পেতে থাকে ছিনতাই এর জন্য।








প্রেমের কারণে গোসল করেননি ৬০ বছর, বিস্তারিত পড়ুন

চরম গরম আবহাওয়ার মধ্যে থেকেও টানা ৬০ বছর গোসল করেননি। তবু তিনি দিব্যি আছেন। কী বিশ্বাস হচ্ছে না তো। এমন ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ইরানে।

দক্ষিণ ইরানের একটি গ্রামের বাসিন্দা আমু হাজি-র। বয়স ৮০ ছুঁয়েছে। সে গেলো ৬০ বছর ধরে গোসল করা বন্ধ করে দিয়েছে। বেঁচে চলেছে এক অদ্ভুত জীবন। কিন্তু কেন এমন জীবন বেছে নিয়েছে মানুষটা?

একা একা থাকতে থাকতে একাকীত্বের সঙ্গে লড়াইটা আমু জিতে গেছে ঠিকই। কিন্তু মাঝে মাঝে সাপের বিষের মতো একা থাকার কষ্টটা কেমন যেন রক্তে মিশতে থাকে ৮০ বছরের বৃদ্ধের। তখন মাথা ঠিক থাকে না। মনে হয় একটু ধূমপান করলে ভালো হত। সে সময় আমু ধূমপান করে। বাতাসকে ভারি করে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয় ধোঁয়ার জাল। তবে তিনি তামাক দিয়ে ধূমপান না করে তার পছন্দ প্রাণীদের শুকিয়ে যাওয়া বিষ্ঠা দিয়ে ধূমপান করেন। এমন জিনিস দিয়ে নেশা করলে নাকি দারুণ আমেজ তৈরি হয় বলে দাবি এই আজব মানুষটির।

আমু হাজি-র হঠাৎ একদিন মনে হয়েছিল গোসল করলে নাকি সে অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই সে ২০ বছরের পর থেকে গায়ে পানি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। শুধু তাই নয় তার খাওয়া-দাওয়াও সাধারণ মানুষদের মতো নয়।

আমু খিদে পেলে ভাত-রুটি খায় না তার প্রথম পছন্দ পচে যাওয়া সজারু। আর এমনটা সে ১-২ বছর নয় টানা ৬০ বছর ধরে খেয়ে আসছে। যখন তার দাঁড়ি অনেকটাই বড় হয়ে যায় তখন অতিরিক্ত অংশটা কেটে না ফেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতেই সে ভালবাসে। তবে কেন করেন এমনটা? এই প্রশ্নের উত্তর একবার আমু জানিয়েছিল, স্নান না করলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে সবসময়ই তার মন চায়। তাই তো সে এমনটা করে থাকে।

তবে যে গ্রামে আমুর ২০ বছর কেটেছে সেই গ্রামের বাসিন্দারা জানায় আমু প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর পরই একটি মেয়েকে খুব ভালবেসে ফেলেছিল। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাসে সেই মেয়েটি তাকে ছেড়ে চলে যায়। সেই যন্ত্রণায় সারা জীবন একা থাকার সিদ্ধান্ত নেন আমু হাজি। সেই থেকেই তার বাস জঙ্গলে জঙ্গলে। বন্ধ গোসল খাওয়া-দাওয়া।

তবে ডাক্তাররা ভেবেছিলে নোংরাভাবে থাকতে থাকতে, নোংরা খাবার এবং পানি খেতে খেতে আমুর শরীরটা নিশ্চয় বিষাক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আজব ব্যাপার, বাস্তবে এমনটা হয়নি। ওই চিকিৎসক আমুর শরীর পরীক্ষা করে দেখেন এত অত্যাচারের পরেও তার শরীরে কোনো রোগ বাসা বাঁধেনি। শুধু তাই নয়, সবদিক থেকে মানুষটা বেজায় সুস্থও আছেন। কিভাবে যে এমনটা সম্ভব হল, সে উত্তর আজ পর্যন্ত কেউ পায়নি।

এদিকে আমু জানান, এমন জীবনে তিনি খুব খুশি। তার মতে, যারা বড় বড় অট্টালিকায় থাকে তাদের অনেক কিছু হারানোর ভয় থাকে। তার কাছে কিছু নেই হারানোর মতো, যা ছিল তা অনেক আগেই সে হারিয়ে ফলেছে। তাই এই পৃথিবীতে তার থেকে খুশি মানুষ আর দ্বিতীয় কেউ নেই।