-রফি আমায় বিয়ের জন্য বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে।
-বাসায় আমাদের রিলেশনের কথা জানিয়ে দাও।
-তুমি এখনো কোনো জব করোনা।আব্বু কখনোই আমায় তোমার হাতে তুলে দিবেনা।
-চেষ্টা করে যাচ্ছিতো।বলে দেখো যদি আমায় কিছুটা সময় দিতে রাজি হয়।
-আচ্ছা
-হুম,আমিও আমার বাসায় জানাচ্ছি।এবার যা হবার হবে।
-বাদ দাও,তোমার দাড়ি কত্ত বড় হয়ে গিয়েছে,কাল একদম ক্লিন সেভ হবা।
-শর্ত আছে
-কি শর্ত
-তবে এখন একটা পাপ্পি দাও
-হিহিহি
.
মিমের সাথে পাঁচ বছরের রিলেশন।
এই পাঁচ বছরে দুজন দুজনের মাঝে মিশে গিয়েছি।
*
অনার্স পাশ করেও কোনো চাকরী যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছি।
এই যুগে যে টাকা আর মামা-খালু ছাড়া দামী সার্টিফিকেটও দুষ্কর।
এদিকে মিমকে হারানোর ভয় মনের মাঝে প্রতিটা সময় বিরাজ করছে।
উপায়হীন হয়ে বাসায় জানাতে বাধ্য হলাম।
আব্বু-আম্মু তাতে কিছুতেই সম্মতি জানালেন না।
মিমের কাছ হতে জানতে পারলাম তারো একি অবস্থা।
সেদিন খুব অসহায় লাগছিলো নিজেকে।
এই কি ভালবাসার পরিণতি!দুটি নিষ্পাপ মনের ভালবাসার কি কোনো দাম নেই!
*
সকালে ঘুমিয়ে আছি।৮টায় মিম কখনো ফোন দেয়না।
হয়তো তাঁর জানা,এই সময়টা আমি ঘুমাতে পছন্দ করি।
কিন্তু স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হলাম,মিম ফোন দিয়েছে।
-হ্যালো মিম
-রফি প্লিজ আমার সাথে আজ এখনি দেখা করো[কান্না জড়িত কন্ঠে]
-ক্যানো কি হয়েছে!সব ঠিক আছেতো?
-কিচ্ছু ঠিক নেই,তাড়াতাড়ি সেই বট গাছটার ওখানে আসো।
-আচ্ছা আমি আসছি।
.
আর কিছু না ভেবে কোনো রকম ফ্রেস হয়ে রওনা দিলাম।
যেতে মুটামাটি ১০মিনিট লেগে গেলো।
মিম আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে:
-রফি আব্বু আমাদের রিলেশনের কথা শুনে আমার সাথে আব্বুর এক ফ্রেন্ডের ছেলের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
প্লিজ আমায় তোমার সাথে নিয়ে চলো[কান্নার কন্ঠে]
-তুমি চিন্তা করোনা।আমি দেখি কিছু টাকা জোগাড় করে কালকেই দুজনে কোথাও চলে যাবো
-সত্যি তো
-হুম
*
সেদিন কথা রাখতে ব্যর্থ হই।
বেকারত্ব আর ভাগ্যের খেলায় অল্প কিছু টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলাম।
যেটা দিয়ে হয়তো কাজী অফিসে দুজনের বিয়েটা সম্পূর্ণ করাও সম্ভব হতোনা।
.
চির চেনা বট সেই গাছটার নিচে বসে নিকোটিনের ধোয়াই বুকের পাজড়কে জ্বালিয়ে দিচ্ছি।
আর কল্পনায় ভাবছি,মিম হয়তো এখন বিয়ে নিয়ে কতোইনা ব্যস্ত!
কিন্তু সব কল্পনা মনের ভ্রম ভেঙে মিম দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো।
-তুমি এখানে ক্যানো
-তুমি ভাবলে কি করে,আমি তোমায় ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো
-জানি,কিন্তু এখন কি হবে
-মৃত্যু
-মানে
-দুজনে এক সাথে বাঁচতে না পারলেও,মরতে তো পারবো
*
সেটা আবেগ নাকি ভালবাসা আমার অজানা।
তবে দুজনেই বিষ পান করি।
ভেবেছিলাম সব শেষ।
নাহ্ আসলে কিছুই শেষ হয়নি।
ভালবাসা হোক বা ভাগ্য কিছু একটার টানে দুজন সেদিন বেঁচে যাই।
.
বিষ পান কড়ার পর সেখানকার কিছু লোক অবস্থাটা বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যায়।
আমাদের দুজনেরি বাসার লোক খবর পেয়ে ছুটে আসে।
পেরেছিলাম সেদিন ভালবাসাকে জয় করতে।
সমাজ,জাত-পাত,ধর্ম সব কিছুকে উপেক্ষা করে মিমকে নিজের করে পেতে।
দুজনের পরিবারি অবশেষ হার মেনেই নেয়।
.
কিন্তু এখানেই সব শেষ হলে হয়তো অজানাই রয়ে যেতো ভালবাসার পরিণতি।
আমার বেকারত্বের কারণে উভয়ের পরিবার থেকেই সিদ্ধান্ত নেয় আমায় বিদেশে পাঠানোর।
বিবাহিত জিবনের সবেমাত্র ৫মাস বয়স।
এখনি মিমকে ছেড়ে দূরে থাকতে হবে,ভাবতেই বুকের মাঝটা কেঁপে ওঠে।
কিন্তু আবারো সমাজের কাছে পরাজিত হই।
মিমকে দেশে রেখেই পা বাড়াতে হয় বিদেশের উদ্দেশ্যে।
এয়ারপোর্টে মিম জড়িয়ে ধরে কতোই না কান্না।
একদম বাচ্চা মেয়ের মতন।
আমিও ফেলেছিলাম দু-ফোটা চোখের পানি।
তবে সেটা আড়ালে।
.
বিদেশে এসে ৪মাসে মুটামাটি সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি।
এরি মাঝে বাড়ি দুবার টাকাও পাঠিয়েছি।
এবং মিমের সাথে কথা বলতে একটি এন্ড্রয়েড ফোনো পাঠিয়ে দিই।
প্রতি তিন দিনে কাজের ফাকে একবার করে কথা হতো।
হাজার মাইল দূরত্বের মাঝেও আমাদের ভালবাসায় কোনো কমতি ছিলোনা।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো দুটি বছর।
এখন বাড়ি যাবার পালা।
মিমকে জানাতেই সেকি খুশি।
আমিও এক অন্যরকম ভালোলাগা নিয়ে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
মনের মাঝে সবার জন্য কত্ত কথা জমে আছে সেটা শুধু এই মনটাই জানে।
.
এয়ারপোর্টে নেমে কিছুটা আবাক হলাম।আব্বু-আম্মু কাকা-কাকী সবাই এসেছে শুধু মিম আসেনি।
-আম্মু মিম আসেনি?
-নাহ্,ও বললো তোর জন্য আজ খুব স্পেশাল রান্না করবে।তাই বাড়ি থেকে গেছে।
-একা বাসায়?
-হুম।
-ধ্যাত একা রেখে আসতে গেলে ক্যানো!
-আরে সমস্যা নেই।বুঝিতো!বাসায় গেলেই দেখতে পাবি।
*
বাসায় এসেই অবাক,ঘর খোলা।
মিম বলে ডাক দিয়েও কোনো সাড়া পেলাম না।
প্রতিটা ঘর খুঁজলাম,কিন্তু মিম কোথাও নেই।
আম্মু বললো হয়তো পাশের বাসায় গেছে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে কোথাও পেলাম না।
থানায় মিসিং কম্পেলেন করলাম।
দুই দিন কেটে যায় তিন দিন কেটে যায় চার দিন কেটে যায় মিম আরে ফিরে আসেনা।
আমার সবটা চেষ্টা দিয়েও খুঁজে পেলাম না।
.
কেটে গেলো চারাটি মাস।
সারাদিন মিমের ভাবনায়ি পরে থাকি।
মন বলছিলো মিম হয়তো একদিন পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে রফি আমি চলে এসেছি।
কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠলোনা।
সবাই ধরে নিয়েছে মিমকে কেউ কিডন্যাপ করে মেরে ফেলেছে।
সময়ের সাথে আমিও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি।
.
বিকেলে নদীর ধার দিয়ে হাঁটছি আর পুরোনো দিনগুলো ভাবছি।
এই নদীর ধারে কতোইনা মিমের হাতে হাত রেখে স্রতের সাথে ঢেউএর খেলা দেখেছি।
মিম পাশে থাকলে হয়তো আজো আগের মতন করেই দিনটা ফিরে পেতে পারতাম।
হঠাত ফোনটা বেজে উঠলো।
স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বুকের বাম-পাশটা দুমড়ে-মুচড়ে গেলো।
-মিম কোথায় তুমি?ভালো আছো তো?তোমার কিছু হয়নিতো?
-এত্ত কিছু বাদ দাও,আমার ডিভোর্স চাই।
-মা...মানে।মিম কোথায় তুমি একবার বলো প্লিজ।
-সময় হলে বলবো।আমি এখন রিহানকে ভালবাসি,আর তাকেই বিয়ে করবো।তোমার ডিভোর্সের অপেক্ষায় শুধুমাত্র সম্ভব হচ্ছেনা।
-কি বলছো এগুলো
-তুমি বিদেশ যাবার পর কিভাবে যেন রিহানের সাথে জড়িয়ে যাই।আস্তে আস্তে অনেকটাই ভালবেসে ফেলি রিহানকে।যেদিন তুমি বিদেশ থেকে ফিরে আসবে সেদিন আমি ইচ্ছে করেই এয়ারপোর্টে যাইনি।প্লান অনুযায়ী রিহানের সাথে পালিয়ে যাই।কিন্তু আমরা এখনো বিয়ে করতে পারিনি।প্লিজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভাব আমায় মুক্তি দাও।
*
সেদিন বুকের মাঝে হাজারো অভিমান বিরাজ করেছিলো।
বুঝতে পারিনি এ নিয়তির কোন খেলা।
অশ্রু ভেজা চোখে মিমকে আমার থেকে মুক্তি দিয়ে দিই।
মনের মাঝে তখন প্রশ্নের ছড়া ছড়ি।
তবুও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি মিম যেখানেই থাকুক যেভাবেই থাকুক ভালো থাকুক।
<আব্বু-আম্মুর সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিলে,
হয়তো জিবনের গল্পটা এমন হতোনা।>
-Bristipatuiary (collect